নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাদা কালো দর্পণে আঁকাআঁকি

আকিব আরিয়ান

রাত্রির নির্জনতায় নিঃসঙ্গ কেঁদে কেঁদে, একদিন হয়তো তুই অজান্তেই মরে যাবি, তবুও তুই জানবি না পাষাণ এ বুকে কতটুকু ভালবাসা তোর জন্যে জমা রাখি।

আকিব আরিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

অশরীরী (২য় পর্ব)

৩০ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৩

অশরীরী (১ম পর্ব) --- Click This Link





(গ)

''জানেন রাফাকে নিয়ে আমার একবার পতেঙ্গা যাওয়ার কথা ছিল। আমি একদিন ঘুম থেকে উঠি। উঠেই মনে হল কোন এক বিকেল বেলা পতেঙ্গা সৈকতের একবারে পানির কাছের একটা পাথরের উপর আমি আর ও পা ঝুলিয়ে বসে থাকব। আমাদের পা ছুঁয়ে যাবে ঢেউয়ে ভেসে আসা পানি। ওর পায়ে থাকবে আমার কিনে দেয়া পায়েলটা। আমার ডান কাঁধে মাথা কাত করে ও দূর সমুদ্রে তাকিয়ে থাকবে আর আমিও তার কাত করা মাথায় আমার গাল ঠেসে দিয়ে দূরে বহুদূরে তাকিয়ে থাকব। গত সপ্তাহে হয়েছে কি জানেন? হঠাত্‍ রাফাই এসব বায়না ধরল। সে নাকি পতেঙ্গায় যাবে। তো আমরা যখন বিকেল বেলায় এমন করে ঐদিন বসে আছি হঠাত্‍ মনে হল ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হিসাবে যেন বাজছিলো 'এক পায়ে নূপুর তোমার, অন্য পা খালি;

একপাশে সাগর আর এক পাশে বালি।

আমার ছোট তরী বলো যাবে কি?'

রাফা ঠিক আগের মতো করেই বলল, 'তরীতে জায়গা না হলে কিন্তু ঠেলে ফেলে দিব।'

আমি হোহোহো করে হেসে দিলাম। আমার হাসি দেখে বলে উঠল, 'তোমাকে না না করছি এমন ভাবে হাসবা না? ঘোড়ার মত হাসো ক্যান!!'

তবুও ওকে রাগানোর হাসতে হাসতে লাগলাম''



রাজু যখন এসব কথা ডাক্তারকে বলছিল, আমি যে কি ভালোই না লাগছিল। আমার আকাশে উড়তে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু এই মূহুর্তে আকাশে উড়লে এদের বাকী কথা শোনা হবে না। এই ছেলেটা আমাকে এত এত ভালোবাসে এত দিন পর্যন্ত। আমি আসলে ভাবতে পারি না কিভাবে এত ভালবাসে। তাই তো আমিও তাকে ছাড়া থাকতে পারি না।

ডাক্তার সাহেব মাথা ঝুঁকে চশমার উপর দিয়ে তাকালেন। তারপর রাজুকে প্রশ্ন করলেন, 'রাফা যেন মারা গেছে ক মাস?'

_আট মাস একুশ দিন।

_গত সপ্তাহে পতেঙ্গা তাকে নিয়ে ঘুরতে গেছিলেন?

_হুম।

রাজু দিশেহারা ভঙ্গিতে ডাক্তারের দিকে তাকাল। ডাক্তারের উপর আমার এখন খুব রাগ উঠছে। শালার বেটা রাজুর অসুখ নাই তবুও ভান ধরে আছে। জানে সবকিছু আবার প্রশ্নও করে। ওকে পুরোপুরি বিভ্রান্ত করতেছে। রাজু যদি সত্যিই বুঝে যায় যে সে অসুস্থ তবে কি হবে? আমি আর ভাবতে চাই না। আমার খুব মাথা ধরছে।

ডাক্তার একগাধা ঘুমের ঔষধ লিখে দিয়েছে রাজুকে। সে বেঘুরে ঘুমাচ্ছে। টানা দুদিন হয়েছে ঘুম থেকে উঠার কোন লক্ষণই নেই। আমার কিছুই ভালো লাগতেছে না। রাজু সারাদিন ঘুমায় আর আমি চেয়ারে বসে বসে তার ঘুমন্ত মুখ দেখি। তার সাথে কথা বলতে ঘুম ইচ্ছে হয় কিন্তু জাগাতে পারি না।







(ঘ)

বেশ কয়েকদিন হয়ে গেছে। রাজু অনেকটা বদলে গেছে। আমার সাথে এখন আর আগের মতো কথা বলে না। সারাদিন টেবিলে বসে কি যেন লিখে। লেখালেখি শেষ করে সন্ধ্যায় নিচে যায়। ঘুরাঘুরি করে। কখনও তার খালাত বোনের বাসায় যায়। ডাক্তারের কাছে এরপরে আরও দুদিন গিয়েছিল। ডাক্তার ও তার খালাত বোনের চেহারায় খুশির আভা বিরাজ করে যখন রাজু তাদের সামনে যায়। তাদের মতে রাজু সুস্থ হয়ে যাচ্ছে। এদিকে রাজু আমার সাথে কথা না বলায় আমার সময় কাটে না। চিলেকোঠার ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠে আমার দিন কাটে। আমি দিন দিন অসহ্য হয়ে পড়ছি রাজুর হাবভাব দেখে। আমাকে যেন চেনেই না। আগের মতো ভালবাসা তো দূরের ব্যাপার।



আমি মনে মনে একটা প্ল্যান তৈরী করে রেখেছি। এভাবে রাজু থাকলে আমার কষ্ট বেড়েই চলবে। দুইজন দুই জগতের বাসিন্দা। তাই রাজুকে আমার জগতে নিয়ে আসতে হবে। তার আগে দরকার রাজুকে আগের মতো আকর্ষণ করতে হবে। রাজু ইদানীং একটা চাকরী করা শুরু করেছে। রোজ রাতে ফিরে। আমি একাকী থাকি। অফিস থেকে ফিরে রাজু কিছু সময় ছাদে হাঁটাহাঁটি করে। এ সময়টাকেই কাজে লাগাতে হবে।



আমি এখন ছাদের কার্ণিশে দাঁড়িয়ে আছি। গত তিনদিন ধরে তৈরি করা প্ল্যানের প্রথম ও প্রধান অংশ এটা। রাজু বরাবরের মতো অফিস থেকে ছাদে হাঁটাহাঁটি করছে। এ মাথা থেকে ও মাথা শুধুই ঘুরছে। আমি পা নাড়লাম যেন পায়েলের আওয়াজ তার কানে যায়। এক, দুই.......ছয় নম্বর বার আওয়াজ করতেই রাজু ঘুরে তাকাল। তাকিয়ে রইল সেই আগের মতো করে। আমি হালকা করে বললাম, 'রাজু আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমায় একটু জড়িয়ে ধরবা?' হাতটা বাড়িয়ে দিলাম। দেখলাম রাজু এগিয়ে আসছে আমাকে জড়িয়ে ধরতে।



আমায় যখন রাজু জড়িয়ে ধরতে আসবে। কার্ণিশে দাঁড়ানো আমায় ছুঁতে পারবে না। আমি অশরীরী। টুপ করে পড়ে যাবে আটতলা থেকে। আর বেঁচে থাকার সম্ভবনা খুবই কম। বেঁচে থাকতেও দিব না। থেঁতলে দিব তার মাথাটা। তারপর হারিয়ে যাব দুজনে। আমার জগতে রাজুকে অর্ভ্যথনা জানাতে হবে। অনেক সাজগোজ করব আমি। কপালে ছোট্ট টিপ, নীলসাদা একটা শাড়ি আর সেই পায়েল। একই জগতে দুজন একসাথে সংসার গড়ব।



কড়া বকুল ফুলের গন্ধ ছড়িয়ে দিলাম। নাক টেনে টেনে গন্ধ শুঁকে নিচ্ছে রাজু। আস্তে আস্তে আমার কাছে চলে আসলো। মাদকতাময় গন্ধে বিভোর রাজু বুঝতে পারল না কোনটা ভ্রম আর কোনটা সত্যি।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৩১

অঘটনঘটনপটীয়সী বলেছেন: সবগুলা পড়ে শেষ করলাম। অসাধারণ গল্প। আমার খুবই পছন্দ হয়েছে। আমি এখন থেকে আপনার এসি। এই কয়দিন ফ্যান ছিলাম। :) :)

২০ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:৪১

আকিব আরিয়ান বলেছেন: হাহাহা, যাক এমনেই যে গরম এদানিং লল

২| ২১ শে মে, ২০১৪ ভোর ৪:৩০

অঘটনঘটনপটীয়সী বলেছেন: B-) B-) B-)

২১ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৪:১৭

আকিব আরিয়ান বলেছেন: =p~ =p~ =p~

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.