নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাদা কালো দর্পণে আঁকাআঁকি

আকিব আরিয়ান

রাত্রির নির্জনতায় নিঃসঙ্গ কেঁদে কেঁদে, একদিন হয়তো তুই অজান্তেই মরে যাবি, তবুও তুই জানবি না পাষাণ এ বুকে কতটুকু ভালবাসা তোর জন্যে জমা রাখি।

আকিব আরিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

অভিনয় (গল্প)

০১ লা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৮:২১

'তুমি কি মনে করো হুম? তুমি না করলেই আমি শুনব? একশবার আমি তাকে ফোন দিব। হাজারবার দিব। ও যদি না ধরে তবুও দিতে থাকব' অদ্রি বেশ উঁচু গলায় বলে গেল, নিঃশব্দে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে তার।

'চুপ! অনেক বলছো। বহুত সহ্য করেছি। আর না।' রাতুলেরও কাটা কাটা জবাব। আজ আর রাতুল ছাড় দিতে রাজি নয়, অনেক হয়েছে।

ফোনটা বেজে উঠল অদ্রির।

'থামো, আস্তে কথা বলো। আমার মা ফোন দিয়েছে দেশ থেকে।'

রাতুল চুপ হয়ে গেল। একটু সরে গিয়ে সামনের জানালার পাশে দাঁড়াল।

অদ্রি চোখ মুছে ফোন ধরল, 'হুম, মা। এইতো মা ভাল আছি। হ্যাঁ ফাহিমাও ভালো আছে। না না তোমার জামাই ঘরেই আছে। কাজে যাই নি আজকে। আচ্ছা মা, তুমি ফোনটা রাখো আমি পরে ব্যাক করছি।'

ফিসফিস করে বললেও শুনতে পেল রাতুল। অদ্রি ফোন রেখে দিয়েছে হয়তো পরে ফোন দিবে।

'কোথায় যাচ্ছ? ফাহিমার যে সর্দি করেছে খবর আছে?' রাতুল ঘাড় ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করল।

'আমি কেমিস্টের কাছে যাচ্ছি। ঔষধ নিয়ে ফিরব।' অদ্রি আর কথা না বলে সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেল। রাতুল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আর কত? একটা মানুষকে আর কত মনে রাখা যায়? কতই বা ভালবাসা যায়? অদ্রির উপর দীর্ঘদিনের পুষে রাখা রাগটা আজ ফেটে পড়েছে তার। কোথাকার কোন ছেলেকে ভালবাসত তাকে এখনো মনে করে কাঁদতে হবে রাতভর? মাথা কাজ করছে না রাতুলের। একটা সিগারেট ধরিয়ে রকিং চেয়ালে গা এলিয়ে দিল। ফাহিমা গুটি পাকিয়ে ঘুমোচ্ছে। একটা বাচ্চাও আছে তবুও কি ঐ কুলাঙ্গার কে মনে করে কাঁদা উচিত? তাকে ছেড়ে আরেকজনকে এখনো ভালবাসা উচিত? ভালবাসা বড়ই অদ্ভূত। রাতুল খুব ভালবাসে অদ্রিকে, তাই অনেক কিছু বলতে গিয়েও বলে না। অদ্রির মন খুশি রাখতে গিয়ে ঐ কুলাঙ্গারের সাথে কথা বলতেও দিয়েছে, যদি কথা বলে অদ্রি শান্তি পায়, গোমড়া মুখ করে যেন বসে না থাকে। রাতুল আর চিন্তা করতে পারছে না। সিগারেটটা ফেলে উঠে দাঁড়ায়।







রাস্তায় নেমে অদ্রির মনটা খারাপ হয়ে যায় আরও। হুসহাস করে কয়েকটা গাড়ি তাকে পাশ কাটিয়ে যায়। ঠোঁট উল্টিয়ে কান্না আসছে তার। সে তো চায় নি এ রকম জীবন কিন্তু কেন তার জীবনটা এরকম হলো? হাঁটতে হাঁটতে বাসার অদূরে এক পার্কের পাশে এসে দাঁড়ায়। বেলহাম স্ট্রীটের এই পার্কটাতে এলে তার মনটা ভালো হয়ে যায়। আজ আরও খারাপ লাগছে। মাকে ফোন দিতে হবে, ফোনটা বের করে সে। আকাশটা কালো হয়ে আসছে। ইদানীং টিপটিপ বৃষ্টি পড়ে এ অচেনা শহরে। বাংলাদেশের সাথে এই বৃষ্টির তুলনা হয় না। ইটপাথরে গড়া হাজারো ইমারতের মাঝে এ বৃষ্টি যেন দীর্ঘশ্বাসের প্রতিধ্বনি। জীবনটা বড়ই এলোমেলো তার, দিন দিন বাড়ছে বিষণ্ণতা। তার অজান্তেই হয়ে যাচ্ছে সব। কিন্তু এসব সে চায় না। চায়নি সে এভাবে তূর্য্যকে ছেড়ে থাকতে, চেয়েছিলো ছোট্ট একটি ঘরে টোনাটুনির বাসর।



'বন্ধুর পথে বন্ধু হয়ে হাতটা ধরেছিলে

মিথ্যে এ বাঁধনে আমার হয়েছিলে

আমি চাইনি এ সুখের

সাজানো আসর, আমি

চাই না এ রঙের বাসর

অগোচরে এলে আমায় ভাসালে,

আমি চাইনা এ ভুলের সাগর'

টপটপ করে চোখ বেয়ে পানি পড়ছে তার। মাকে ফোন আরও পরে দেওয়া যাবে, এখন ফোন দিবে তূর্য্যকে।







হাতটা ভালো করে ঢলছে, যত ভালো করে ঢলবে ততই মিহি হবে। তামাকবিহীন সিগারেটের খোসার মধ্যে অতি সাবধানে ঢালছে গাঁজার গুড়া যেন একটুও না পড়ে। ফোনটা বেজেই চলছে তূর্য্যের। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে একমনে গাঁজা বানিয়ে যাচ্ছে।

'ঐ হালায় ধর, বানাইছি। আগে তুই জ্বালা, সিদ্ধির শেষটা আমি টান দিমু।' কাদিরকে এগিয়ে দিল। বাসার ছাদে বসেছে যেন গন্ধটা বাতাসে দ্রুত কেটে পড়ে এলাকা থেকে। ফোনটা নিয়ে দেখল তার মায়ের কল ছিল। ব্যাক করল, 'হুম আম্মা। না পড়তেছিলাম। মোবাইল তো সাইলেন্ট তাই টের পাইনি তুমি যে ফোন দিছো।'

-'মন দিয়া পড় বাবা। একটা মাত্র ছেলে তুই আমার। বাপ মার মানইজ্জতটা রাখ। তর বাপে অনেক কষ্ট কইরা টাকা দেয়। বাপের কথা একটু চিন্তা করিছ।'

-'চিন্তা কইরো না আম্মা পড়তাছি ঠিক মতো।'

-'বাসায় কবে আসবি?'

-'পরীক্ষা শেষ হোক তারপর।'

ফোন রেখে দিল।

'কিরে পরীক্ষা দিবি এবার?' কাদির ধোঁয়া নাক দিয়ে আস্তে করে ছাড়তে ছাড়তে জিজ্ঞেস করল।

'পড়ালেখা ত বাদ দিয়াই দিছি। ঐ শালা চুপ একদম চুপ। ফোন আসছে কথা বলবি না।' মোবাইলের স্ক্রীনে অদ্রির নাম দেখে ফোনটা রিসিভ করল। কেন যেন এ ফোনটা পেলে দুনিয়ার সবকিছু ভুলে যায়। কোর্টে কাঠঘড়ায় দাঁড়ানো অবস্থায়ও যদি ফোন আসে তবুও রিসিভ করবে সে। তূর্য্য উঠে সরে গেল ছাদের ঐ কোনায়।

-হ্যালো। ভালো আছো?

অদ্রি অনেকক্ষণ চুপ থেকে কথা বলল।

-হ্যালো। হুম ভালো। তোমার কি খবর? এতদিন পর?

-উ এতদিন পর মানে? তোমাকে কি প্রত্যেকদিন ফোন দিতে হবে নাকি?

-আমি কি বলছি ফোন দিতে? ফোন দিও না।

কিছুক্ষণ নিরব দুজনে। আরও কিছু কথা হলো টুকটাক। কিছু ঠাট্টা মশকারিও করল দুজনে। হঠাত্‍ কথার প্রসঙ্গে অদ্রি বলে উঠল, 'হ্যাঁ আমি অনেক সুখী। বাচ্চা আছে। বাড়ি গাড়ি সব। একটা কাজও হাত দিয়ে করতে হয় না, সব মেশিন দিয়ে। জানো আমাদের প্রত্যেকদিন দুইবার করে *** না করলে তার হয়ই না।

-হাহাহাহাহাহা।

হাসতে হাসতে পড়ে যাচ্ছে তূর্য্য।

-কি ব্যাপার? হাসতেছো কেন?

-এত মজার কথা আমি আমার জীবনেও শুনি নাই। তাই হাসতেছি।

-আরও শুনবা?

-না আর শুনতে চাই না। এইটাকেই জীবনের শ্রেষ্ঠ জোক হিসেবে রাখতে চাই। আরেকটা শুনলে এটার মজা চলে যাবে।

অনেক কথা বলার ছিলো কিছুই বলল না। হঠাত্‍ ফোনটা কেটে গেল, হয়তো ব্যালেন্স শেষ লং ডিসটেন্স কল তো।

ফোন রেখে এসে কাদিরকে ধমক দিয়ে বলতে লাগল, ঐ **** গাঁঞ্জা খাইয়া টাল হয়া গেছস? আমার কই? বানা আরেকটা। এইটা দে, টান দেই। চোখ বুজে জোরে একটা টান দিল। শরীরটা তার রাগে জ্বলে যাচ্ছে। জামাইর সাথে উল্টাপাল্টা করে আবার তাকে শোনায়। ফিল্টার হাত টোকায় ফেলে দিয়ে রাগে গজরাতে থাকে সে। মাটিতে পড়ে ছটফট করতে থাকে, গলার রগ যেন ছিড়ে আসবে তার। চিত্‍কার করতে থাকে অর্থহীনভাবে। এতে হাত কেঁপে কিছুটা গুঁড়া পড়ে গেল কাদিরের।









রাতুল রুমে শুয়ে আছে। ফাহিমা এখনো ঘুমে। দেয়ালে টাঙানো বিয়ের ফটোটা দেখছে সে। 'T' লেখা একটা স্টিকার লাগানো ছবির ভিতরে ঠিক অদ্রির বুকের কাছে। চোখ সরিয়ে নিল। তার মা এসে বললেন, কিরে শরীর খারাপ নাকি? বউ কই?

'না মা ভালো আছি। অদ্রি কেমিস্টের কাছে গেছে। আমি বললাম, আমি যাই না, ও আমাকে যেতে দিবে না।'

'তর দেখি বুদ্ধিসুদ্ধি সব গেছে। বউকে একা ছেড়ে দিলি' বলেই তিনি ঘুরে চলে গেলেন তার রুমের দিকে। দুনিয়াটা আসলেই অদ্ভূত, কাউকে ভিতরের দুঃখ দেখানো যায়না। সে পারছে না তার পরিবারের কাছে বলতে, চায় না অদ্রিকে খারাপ বানাতে সবার সামনে, হয়তো ভালবাসে বলে। অদ্রি চায় না তার বাবামাকে এসব কিছুই জানাতে। সবার সাথেই তারা অভিনয় করে যাচ্ছে কত সুখী দম্পতি তারা। আদৌ সুখের কোন ছায়া নেই দুজনার মাঝে। কত রাত ধরে যে অদ্রির স্পর্শ ছাড়া রাতুল ঘুমাচ্ছে তাই হিসাব করতে পারছে না।





আকাশের দিকে তাকিয়ে অঝোরে কাঁদছে অদ্রি। বৃষ্টির ফোঁটা টপ টপ করে পড়ছে তার গালে চোখে। চোখের জল আর বৃষ্টির ফোঁটা একাকার হয়ে গড়িয়ে পড়ছি গাল বেয়ে। কষ্টগুলো যেন তাকে দুমড়ে মুচড়ে একেবারে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। মাঝে মাঝে মনে হয় অচেনা কোথাও চলে যায় যেখানে কেউ থাকবে না। সে শুধু একা থাকবে। সে নিজে একাকী কষ্ট করে আর ওদিকে তূর্য্য বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঠিকই মজায় থাকে। তার জীবনটাকে এভাবে নষ্ট করে দেয়ার অধিকার তো তূর্য্যের ছিল না। এসব ভাবতে ভাবতে তার বুকটা চৌচির হয়ে কান্না দমকে দমকে আসছে। পারছে না আর নিজেকে সামলাতে।



'ভাঙ্গতে পারি না লোহার শিকল

চেপে থাকা কষ্টে শুধু কান্দি,

শেষ বেলায় হয়েছি তোমাতে পাগল

আমি ভালবাসার খাঁচায় বন্দী।'



হঠাত্‍ করেই বিয়ে হয়ে যায় অদ্রির বছর আড়াই আগে। বাড়ি থেকে হঠাত্‍ করে খবর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা থেকে। গিয়ে দেখে তার বিয়ে ঠিক কোন এক প্রবাসী ছেলের সাথে। মৃত বাবার প্রসঙ্গ টেনে আর আবেগী কথাবার্তা বলে ওকে এক কথায় জোর করেই রাজি করানো হয়। তূর্য্যকে আর জানাতে পারে নি তখন।





গাঁজা খেতে খেতে একটা ভাবের মধ্যে চলে গেছে তূর্য্য। মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে। হাতে জলন্ত সিগারেট কিন্তু টানছে না। ছাইগুলো সরু হয়ে আছে একটু ঠোকা লাগলেই পড়ে যাবে। নিজের জীবনটা তার এখন এই জলন্ত সিগারেটের মত। প্রায় শেষ প্রান্তে চলে এসেছে ভালবাসার আগুনে জ্বলতে জ্বলতে। অদ্রি খুব সুখে আছে তার ধারণা। কি হেসে হেসে কথা বলে। আগের আবেগটুকু আর নেই যেন। শুধু একজন তাকে ভালবাসে বলে হয়তো করুণা করে ফোন দেয়। কষ্টগুলো তূর্য্যকে কুড়েকুড়ে খাচ্ছে। নিজের জীবন, বাবা মায়ের স্বপ্ন সব ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। মাঝে মাঝে মনে হয় এই জগত থেকে যদি সে অন্যকোথাও পালিয়ে যেতে পারত। আত্নহত্যা করার চিন্তা করে মাঝে মাঝে কিন্তু করে না। অপেক্ষায় আছে যদি কোনদিন অদ্রি চলে আসে তার জীবনে ফিরে। হাতটি ধরে আবার হাঁটবে সেই চেনা রাজপথ কিংবা অলিতে গলিতে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুন, ২০১৩ সকাল ১১:০৯

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: ++++++++++++

অসাধারণ।

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:২৯

আকিব আরিয়ান বলেছেন: ২১ শে জুন, ২০১৩ রাত ১০:০০ তে প্লাসের জন্যে ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.