![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাত্রির নির্জনতায় নিঃসঙ্গ কেঁদে কেঁদে, একদিন হয়তো তুই অজান্তেই মরে যাবি, তবুও তুই জানবি না পাষাণ এ বুকে কতটুকু ভালবাসা তোর জন্যে জমা রাখি।
তখন সম্ভবত ২০১১সালের শুরুর দিক। সিলেটে থাকি তখন। আড্ডা দিই শুধু তেমন কাজ নেই। সারাদিন চা স্টলেই বিড়িসিগারেট খেয়ে কাটিয়ে দেই। একদিন এরকম আড্ডা দিচ্ছি আমি আর আমার এক বন্ধু (কাহিনীটা আসলে তারে নিয়ে, তার নামটা বলব না। কেউ কেউ কাহিনীটা জানে, কাহিনী পড়লে বুঝতে পারবে সে কে, আর যারা জানে না তাদের জানার দরকার নাই, কাহিনী মনে থাকলেই হবে)।
চা খাচ্ছি আর আড্ডা দিচ্ছি। হঠাত্ বলতেছে সে, 'দোস্ত আমি তো সিরিয়াস প্রেম করতাছি এইটা।' আমার মুখে চা ছিল আমি মারাত্নক বিষম খেয়ে চা মুখ থেকে ফেলে দিলাম। হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলাম, 'এটা তর কত নাম্বার প্রেম জানি?'
উল্লেখ্য, সে গৌরবর্ণের এবং হ্যান্ডসাম। কোয়ালিটি হচ্ছে গানবাজনা করে। ইতিমধ্যে সে আটদশটা প্রেম করেছে ক্লাস নাইন থেকে। প্রথম প্রেমে বিশাল ছ্যাঁক খেয়ে, পরের প্রত্যেকটাতে মেয়েদের চরম কষ্ট দিয়ে ছেড়েছে। তো হাসির কারণটা বুঝতে পারতেছেন। একটা আফসোস, কেন জানি না আমার প্রত্যেকটা রিয়েল লাইফ ফ্রেন্ড ছেলেমেয়ে উভয়েই অত্যন্ত ফর্সা, গৌরবর্ণের। ছেলেদের সাথে যখন থাকি তখন যদি রিকশায় কোন মেয়ে যায় তবে আমার দিকে কেউ তাকায় না, পাশেরটার দিকেই শুধু থাকায়।
তো সে তার সিরিয়াস প্রেম সিরিয়াসলি করতেছিল। আর আমি বোহেমিয়ানগিরি। বছরের মাঝামাঝি আসার পর একদিন জানালো যে মেয়ের বাসায় জেনে গেছে সম্পর্কের কথা। ওরা মেয়েকে টর্চার করেছে। মেয়ের বাড়ি সিলেট থেকে অনেকদূর, চাঁদপুর শহরে। এর আগে সে বেশ কয়েকবার মেয়ের সাথে চাঁদপুরে গিয়ে দেখা করেছে। মেয়ের মাও তাকে চিনে বন্ধু হিসেবে। তখন কিছুদির পর সমস্যা সমাধান হয়। মেয়ের সাথে ফোনে কথা বলা শুরু হয় আবার। মেয়েকে তার মা মোবাইল ফিরিয়ে দিলে।
এরও বেশ কিছুদিন পরে আমি তখন তার বাসায়ই থাকি। মেসে সিট ঠিকই ছিল কিন্তু তার বাসায় থাকতাম অন্য কারণে। তার বাসা থেকে আমার ছাত্রীদের বাসাগুলো কাছাকাছি ছিল তাই। এসময় তার আবার ক্যাড়া উঠল। একরাতে ঢাকা যাওয়ার কথা বলে তার বাসায় চলে গেল চাঁদপুরে। শুধু আমিই জানতাম সে কোথায় গেছে।
কাহিনীতে আরও প্যাঁচ লাগলো। মেয়ের বড়ভাই মেয়েকে ঘরবন্দী করছে। মোবাইল আটক। স্যারের বাসায় যাওয়া বন্ধ। সে চাঁদপুর গিয়ে ঘোষণা দিল, সে হয় মেয়েকে নিয়ে সিলেট ফিরবে না হয় তার লাশ ফিরবে। একথা শুনে বন্ধুর পরিবার, মেয়ের পরিবার সবাই হতবাক আর আমি কপোকাত। বন্ধুর মাতাজান আমাকে জিজ্ঞেস করতেন আগে, বাবা তুমি এর সম্পর্কে কিছু জানো নাকি? আমি অতি ভদ্রছেলের মত উত্তর দিতাম, না আন্টি। তখন রীতিমতো আন্টি এসে আমাকে জেরা করা লাগালেন। তার বাসায়ই ছিলাম তখন। আমি যথারীতি উত্তর দিলাম, না আন্টি আমি কিছু জানি না। ও তো আমারে কিছু বলে কাজ করে না। আন্টির প্রেশার বাড়তে লাগলো। মেয়ের মা আন্টিকে ফোন দিয়ে জানাল যে ছেলেকে যেন ফিরিয়ে নেন বুঝিয়ে সুজিয়ে নাহলে উনার ছেলে তারে ভর্তা বানিয়ে দিবে। উনার ছেলে ছাত্রলীগ করে তাও আবার দীপুমণির এলাকার।
রাতে সিদ্ধান্ত হল বন্ধুর বাবা মা আর মামা মিলে আমাকে চাঁদপুর যেতে হবে রাতেই যেন তাদের ছেলেটাকে বুঝিয়ে নিয়ে আসি। আমি পড়লাম অকূল পাথারে। রাজিও হয়ে গেলাম বন্ধুর বিপদ বলে কথা। নিজেরে কোরবানির পশু মনে হল। অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিতে যাচ্ছি ভেবে অনেকের কাছ থেকে শেষ বিদায়ও নিয়ে নিলাম। রাতে বাসে করে ঢাকা এবং ভোরে ঢাকা থেকে চাঁদপুর গেলাম।
সেবারের মত তাকে নিয়ে এলাম। মেয়ের ভাইয়ের অনেক পাতাফাঁদ ছিড়ে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হলাম। তারও বেশ কিছুদিন পর। বন্ধু ঢাকাতে আমি সিলেটে। হঠাত্ রাত একটার দিকে ফোন দিয়ে বলল, আমি ওরে কিডন্যাপ করে নিয়ে আসব। আনলে কি তুই সিলেটে লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করতে পারবি? আমি তাকে অভয় দিয়ে বললাম নিয়ে আয় বাকীটা আমি দেখব। মেয়েরে কিডন্যাপ করা লাগে নি। সে নিজে থেকে পরদিন ঢাকা চলে আসে আর বন্ধুটি ওকে রাতে ঢাকা থেকে সিলেটে নিয়ে আসে। এর মাঝেই দুই পরিবারে সাড়া পড়ে গেলো মেয়ে পালিয়ে গেছে ছেলের হাত ধরে। আসন্ন বিপদ আরও ঘনীভূত।
আগের প্লানমাফিক আমি ঐ রাতে আমার আরেক বন্ধুর বাসায় গেলাম রাত কাটানোর সিদ্ধান্তে। ঐ বন্ধুকে নিয়ে রাত আড়াইটায় তাদের রিসিভ করতে। রিসিভ করলাম ভালো কথা। মেয়ে জেদ ধরল। ওরে বলল, দেখো আমি আসছি তোমার বাসায় তুমি আমাকে তোমার বাসায় নিয়ে চলো। এই রাতে এত কাহিনীর পর যদি বন্ধু মেয়ে নিয়ে তার বাসায় যায় তবে অবস্থার আর বাকী থাকবে না। আমার মেজাজ খারাপ হল। মনে চাইল মেয়েটারে কষে দুইটা থাবড়া লাগাই। কিন্তু লাগালাম না কারন প্রথম পরিচয়ে কারো সাথে বাজে ব্যবহার করা উচিত নয় বলে। বিপদ দেখে অন্য বন্ধুটি প্রস্তাব করল, আমার বাসায় নিয়ে চল। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তর আব্বা, আম্মা, ভাই, বোন?
পরদিন মেয়ের বাবা মামা চাচা বন্ধুর বাসায় আসল। অনেক কাহিনীর পর মেয়েকে নিয়ে গেল। ঠিক হলো এক সপ্তাহ পর বিয়ে।
বিয়েতে বরযাত্রী ওর পরিবারের লোকের সাথে বাইরের বলতে শুধু আমি। অবশ্য আমি তার পরিবারের লোক হিসেবেই গণ্য হই সবসময়। এত কাহিনীর পর আন্টি দেখল সব কাহিনীই আমার জানা কিন্তু তেমন কিছু বলি নি। মেয়ের ভাই আর ভাইয়ের বন্ধুরা বিয়েতে অনেক মজা করল। এটাই আমার দেখা কোন প্রেমের হ্যাপি এন্ডিং।
বিয়ের রাতটা আমার কাটাই মেয়ের বাড়িতেই। লোকজন অনেক বেশি। থাকার জায়গা কম। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল আমাকে যদি ঘুমাতে হয় তাহলে বরকনের বাসর রাত হবে না। বন্ধু করুণ চেহারায় এসে আমাকে জানাল। আমি বললাম, যা বাসর রাত কর গিয়া। ভাবলাম, জীবনে মানুষের একবারই বাসর হয় বিয়ের রাতে। আমার না ঘুমালেও চলবে। ঐ রাতে সারারাত আড্ডা দিলাম ছাদে মেয়ের ভাইয়ের বন্ধুদের সাথে। সারারাত সিগারেট টানা বিনা খরচে। ভাইয়ের বন্ধুরা একটা শেষ হওয়ার আগেই আরেকটা দিল, আরে ভাই বেরাদার মানুষ লজ্জা পাইয়েন না। টানেন। আমিও টানতে থাকলাম একটার পর একটা।
প্রতিটি মানুষের জীবন থেকেই শিক্ষা নেওয়া যায়। এই ঘটনা থেকেও শিক্ষা নেওয়ার অনেক কিছু আছে। আজ সারাদিন এদের বিয়ের কথা ভেবেছি। বিয়ে হয়েছিল ২রা ডিসেম্বর ২০১১।
১১.০১.১৩
লেখা শুরু রাজাসিটি বাসে বসে মতিঝিল থেকে মোঃপুর আসার পথে। শেষ হলো শহীদ পার্ক মাঠে বসে। মধ্যে বাসায়ও ঘুরে এসেছি।
১২ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:০৯
আকিব আরিয়ান বলেছেন: ০৭ ই জুন, ২০১৩ রাত ৮:৩৩ এ বলেছিলাম: আমার প্রায় প্রত্যেকটা লেখাতেই সিগারেটের কথা থাকে, কোন কোনটাতে বর্ণণাও
২| ১৮ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৮:১০
সোহাগ সকাল বলেছেন: আপনার জন্যেই সিগারেটের দাম বাইড়া গ্যাছে!
মিয়া বিড়ি-টিড়ি কম খান।
১২ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:১০
আকিব আরিয়ান বলেছেন: ১৮ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৪ এ বলেছিলাম: ঐ মিয়া আমি কি করলাম!! দাম বাড়লেও আমার বিড়ি টানা কমে নাই
৩| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:২১
ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: ভালো লাগলো!!!
ঈদের শুভেচ্ছা রইল ।
১২ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:১২
আকিব আরিয়ান বলেছেন: ১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকালে ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১০
এরিস বলেছেন: কাহিনী সুন্দর। হ্যাপি এন্ডিং ভালো লাগে। তবে একটা কথা, সিগারেট কথাটা বারবার টানেন লেখাতে। ব্যাপারটা ভালো লাগেনা মোটেও। ( একান্তই আমার মতামত। )