![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাত্রির নির্জনতায় নিঃসঙ্গ কেঁদে কেঁদে, একদিন হয়তো তুই অজান্তেই মরে যাবি, তবুও তুই জানবি না পাষাণ এ বুকে কতটুকু ভালবাসা তোর জন্যে জমা রাখি।
ঠিক এই মূহুর্তে আমি তাজমহল রোডে একটা ভ্যানের উপর বসে আছি। পাশ দিয়ে সাঁসোঁ করে রাতের দ্রুতগতির গাড়িগুলো চলে যাচ্ছে। রাস্তার পাশে বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ল্যাম্পপোস্টরা বিষাদ ছড়িয়ে দিচ্ছে বৈরাগ্যের হলদে রঙে। আকাশ জুড়ে বিশাল একখানা চাঁদ, রুপোর থালার মতো ঝলঝল করছে। আমার আসার কথা ছিল না এখন এখানে, আমাকে একজন জোর করে ধরে নিয়ে এসেছে। সে এগারোটার দিকে তার প্রেমিকাকে বলে এসেছে, 'আজকে কি রাত জানো?'
মুঠোফোনের ওপাশে মেয়েটা হয়ত বলেছিলো অনুমান করলাম, 'কিসের রাত?'
'সুপার-মুন, রাত ঠিক বারোটা দশে ছাদে উঠতে পারবা?'
'এত রাতে ছাদে যাওয়া যাবে না।'
'তাহলে ব্যালকনিতে এসে চাঁদটা দেখে যেও।'
সে তার প্রেমিকাকে বলে নি আচমকা এসে যে ভড়কে দেবে, ভড়কে দেওয়ার পর তার চেহারা কেমন হবে তা ভেবে সে বেশ উত্তেজিত।
আমি এখন ঠোঁটে সিগারেট গুঁজে তার পাশে হাঁটছি খালি পায়ে হলদে আলোয় আকাশ ভরা জোছনায়। আজ রাতে আমার হিমু হতে ইচ্ছে করছে খুব!
হাঁটাহাঁটি করে এসে ফুটপাতে বসলাম, এমন একটা অবস্থান যে যেখান থেকে ছেলেটা তার প্রেমিকাকে দেখতে পাচ্ছে আর আমাকেও দেখা যাচ্ছে না। আমার ঠিক পিছনে একটা কুকুর বসা, কিছুক্ষন আগে ডানপাশে বসা ছিল। বসা থেকে উঠে চারপাশে হেঁটে চক্কর দিয়ে আবার এসেছে, আমাকে বারবার দেখছে আড়চোখে, আমিও ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন দিকে দেখছি। প্রথমবার এসে বসার আগেও একবার আমার চারপাশে চক্কর দিয়েছে। কুকুরের পাশ তেকে সরে এসে আমি উঠে দাঁড়ালাম ঐ ছেলেটার কথায়, 'ভাই চাঁদ দেখবা না? ১২:১২ বাজে।'
উল্টোদিকে ফিরে আকাশে চাঁদ দেখছি ল্যাম্পপোস্টে জড়িয়ে থাকা হাজারো তারের ফাঁক দিয়ে। আকাশে অনেক সাদা সাদা মেঘ, মেঘগুলো চাঁদকে পিছনে ফেলে চলে যাচ্ছে গড়িয়ে কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে চাঁদটিই যেন মেঘের ফাঁকে দ্রুতগতিতে দৌড়াচ্ছে। ছেলেটি তার প্রেমিকার সাথে মুঠোফোনে কথা বলছে দূরে দাঁড়িয়ে। জোছনা কারো জন্যে ভালবাসা নিয়ে আসে, আর কারো জন্যে খালি পায়ে বৈরাগ্য ও শূণ্যতা নিয়ে আসে।
আমি খানিকটা হেঁটে ঘুরে ফিরে জোছনা দেখে দূরে একটা দোকানের সিঁড়িতে বসলাম। কিছুক্ষন পর দেখি এখানেও একটা কুকুর এসে আমার পাশে বসতে চাইছে। মনে হলো এটা হয়ত আগের কুকুরই, একই রঙের, তবে সোডিয়ামের আলোতে সবকিছুকেই একরঙা মনে হয়, সব হলদে রঙা। আমার হাতে কোন কাজ নেই, এখানে বসে ল্যাম্পপোস্টের হলদে বাতির ফাঁক দিয়ে সাদা জোছনা দেখছি, ফিনকি দিয়ে জোছনা চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে। পাশে কেউ নেই কথা বলার মতো, ছেলেটি অনেক দূরে রয়ে গেছে, একটা ল্যাম্প পোস্টে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে তার প্রেমিকাকে। তাই কুকুরের সাথে কথা বলা শুরু করলাম, 'কী রে মন খারাপ? কেউ মারছে? না ঘুম পাইছে?'
কুকুরটা দেখি একবার তাকায় আবার চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। আমি বলতে থাকলাম, 'দেখছস আজকে এই রাতে তোরও কেউ নেই, আমারও কেউ নেই। আমি তোর জন্যে আছি আর তুই আমার জন্যে আছিস। ঐ দ্যাখ ওরা কি সুন্দর কথা বলছে!'
কুকুরের কোন আগ্রহ নাই আমার কথা শোনার, আমি টানা একের পর এক সিগারেট জ্বালিয়ে শেষ করছি। গাড়িগুলো এখনও রাস্তায়, হঠাত্ হঠাত্ রিকশা আসছে টুংটাং শব্দ করে। কয়েকজন লোক হেঁটেও যাচ্ছে। আমি হেঁড়ে গলায় গান ধরলাম, কেউ কেউ ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো কে গায় এই রাতে সিগারেট টানতে টানতে।
'আলো আলো আমি কখনও খুঁজে পাবো না
চাঁদের আলো তুমি কখনও আমার হবে না।।'
একটু পর দেখি চাঁদটা একেবারে মেঘের মাঝে হারিয়ে গেছে। হায়রে চাঁদের আলো! আসলেই তুমি আমার হবে না।
দেরি হয়ে যাচ্ছিলো মনে হচ্ছে, রাত মনে হয় দ্রুত ঘুমুতে যাবে। উঠে চলে আসতে লাগলাম, দেখি কুকুরটাও আমার পিছন পিছন আসছে। আমি তখন মেয়েটার বাসার পাশ দিয়ে যাচ্ছি, মনে হচ্ছিলো মেয়েটা আমাকে দেখছে তার প্রেমিককে বাদ দিয়ে; যদিও আমি অন্ধকারে মেয়েটিকে দেখতে পারছিলাম না। মেয়েটা হয়ত চোখ বড় বড় করে দেখছিলো, কুকুরটা আমার পিছন পিছন আসছে যে। মেয়েরা কুকুরকে ভয় পায় কিন্তু কুকুর যাদের সাথে ঘুরে তাদেরকে বেশ সমীহের চোখে দেখে। আমি রাস্তা পার হলাম, সাথে কুকুরটাও; তার সাথে টুকটাক কথাও বলছি, দুঃখের কথা। অবলা প্রাণী হলেও কেন জানি না মনে হলো সে আমার মনের ভিতরের অবস্থা বুঝতে পারছে। হঠাত্ করে রাস্তার ওপারে কুকুরটি আরেকটি কুকুর দেখে চিত্কার শুরু করলো। দৌড়ে ঐপাড়ে চলেও গেলো আমাকে রেখে, ওখানে গিয়ে তারা দুজন মুখে মুখ লাগিয়ে ঘষতে লাগলো, হয়ত আদর করছে কিন্তু আমার কাছে মনে হলো তারা কামড়াকামড়ি করছে। একটু পরে ঐ কুকুরকে নিয়ে আমার পাশে এলো। দুই কুকুর নিয়ে আমি ফুটপাতে বসে রইলাম, টহল পুলিশের গাড়ি আরেকটা আমার পাশ দিয়ে আস্তে করে গেলো, আমি তাদের দিকে না তাকিয়েও বুঝতে পারলাম তারা আমাকে দেখছে। তারা হয়তো কুকুর নিয়ে বসে থাকা ছেলেকে ঘাঁটাতে চায় না, আবার হতে পারে তারা জানে আজ রাতে আকাশে বিশাল এক চাঁদ উঠেছে, দুয়েকটা ছেলে ঘর থেকে বের হতেই পারে! আমার একটু একটু ভয় লাগলো। মনে হলো আবার এসে যদি দেখে তো জিজ্ঞেস করতে পারে, এমনিতেই তিনবার ঘুরে গেছে। আমি ডাক দিতে লাগলাম ঐ ছেলেকে।
অনেকক্ষন পর ছেলেটি চলে আসলো তার প্রেমিকার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে। চলে আসার আগে পা দিয়ে কুকুরের গায়ে আদর করলাম একটু, মাথা নিচু করে আদর নিতে থাকল গলায় আর পিঠে। আমি হাঁটা শুরু করতেই আবার কুকুরটা পিছন পিছন আসতে লাগলো। ভাবতে লাগলাম, অল্পক্ষনেই কুকুরের মায়া জন্মে গেছে আমার প্রতি। একবার সামনে, একবার পাশে হেঁটে হেঁটে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এমন ভাব তার। দূরে আরেকটা কুকুর ডেকে উঠলো, পাল্টা আওয়াজে সে যেন বলে দিলো আমি টের পেলাম, 'ঐ আমার পরিচিত। কোন সমস্যা করিস না।'
অনেক পথ হেঁটে এগিয়ে দিলো আমায় কুকুরটি। ছেলেটিকে বললাম, 'শালার! কুত্তারও আমার জন্যে মায়া জন্মায়, মানুষের খালি জন্মায় না।'
রিকশায় উঠার আগে পিছন ফিরে দেখি দুহাঁটু গেড়ে বসে আছে সে একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে। আমি হাত নেড়ে বিদায় জানালাম, বসেই রইলো। কুকুরটিকে রেখে আসতে আমারও কেমন জানি লাগছিল, রিকশায় যদি এসে উঠত তবে নিয়ে আসতাম ইন্দিরা রোড পর্যন্ত। হিন্দিতে একটা কথা আছে, 'কুত্তা ভফাদার হোতা হ্যায়।' একটু আদর আর সঙ্গ দেয়ায় সে আমাকে ভালবাসা ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিল যতটুক সম্ভব। অথচ মানুষ? এতটা ভালোবাসার পরেও ছেড়ে চলে যেতে এতটুকও দ্বিধা করে না। মানুষের চেয়ে হয়ত কুকুরই ভালো।
১১ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:০৩
আকিব আরিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:০০
অঘটনঘটনপটীয়সী বলেছেন:
+++
১১ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:০৪
আকিব আরিয়ান বলেছেন: মুড অফ ক্যান?
৩| ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৮
মুনতাসির নাসিফ (দ্যা অ্যানোনিমাস) বলেছেন: ভালো লাগলো লেখা ...
লিখতে থাকেন ...
৩য় ভালোলাগা (+) রইলো ...
১১ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:০৫
আকিব আরিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:০২
হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো হয়েছে ++
১১ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:০৫
আকিব আরিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ
৫| ১২ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:৫৭
সালমাহ্যাপী বলেছেন: সুন্দর... বেশ সুন্দর
১২ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:১৫
আকিব আরিয়ান বলেছেন: খালাআআআ তোমার মতো সুন্দর লেখাটা?
৬| ১২ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:০৬
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সবাই চন্দ্রগ্রস্ত নাকি?
১২ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:১৬
আকিব আরিয়ান বলেছেন: ম্যা বি
৭| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২২
একলা ফড়িং বলেছেন: বাহ ভালো লাগল
প্রতি পূর্ণিমা রাতে আমারও হিমু হতে ইচ্ছা হয় খুব!
ঘর ছাড়িয়া বাহির হইয়া জোছনা ধরতে যাই
হাত ভর্তি চান্দের আলো ধরতে গেলে নাই!
১৪ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৯:০৮
আকিব আরিয়ান বলেছেন: বেশ তো
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:৫৭
লেখোয়াড় বলেছেন:
ভাল লিখেছেন।
++++++++++++++++++++++