![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন মুসলিম। এটাই আমার একমাত্র পরিচয়। একা এসেছি, একাই যেতে হবে।
আমরা বৈশ্বিক এক মহা সঙ্কটের মুখোমুখি অবস্থান করছি। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গোটা বিশ্বেই অর্থনৈতিক মন্দা তৈরি হচ্ছে।
দেশে দেশে লকডাউনের ফলে মধ্যম ও নিম্ন আয়ের লোকগুলো দিশেহারা হয়ে পড়ছে। অনেকের ঘরেই খাদ্যসামগ্রীর সঙ্কট প্রকটভাবে দেখা দিচ্ছে।
যারা দিনমজুর, তারা পরিবার নিয়ে অভুক্ত থাকছে। ঘর বাজারসদাই শূন্য। আয়ের সবরকম উৎস বন্ধ। কোত্থেকে দু'বেলা খাবারের ব্যবস্থা হবে তা তারা নিজেরাও জানে না।
তাই বাধ্য হয়ে অপেক্ষার প্রহর গোনছে, কেউ এসে দু'মুঠো খাবার তাদের দেয় কিনা!
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিমধ্যে আমরা দেখতে পেয়েছি, টানা দু'দিন না খেয়ে থাকা বৃদ্ধের খাবারের জন্য আহাজারির দৃশ্য। এরকম এক-দু'জন নয়, হাজার হাজার দরিদ্র দিনমজুর অনাহারে মৃত্যুর প্রহর গোনছে।
এই সঙ্কটপূর্ণ মুহূর্তে ইসলাম আমাদের শেখায় মানবিক হতে। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে। তাদের দুমুঠো খাবারের ব্যবস্থা করে দিতে।
মানবতার মুক্তির দূত, বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) মানব সেবার জন্য আরবের যুবকদের নিয়ে গঠন করেছিলেন হিলফুল ফুজুল। দরিদ্র ও দুস্থদের সহায়তা করেছেন নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে। মানব সেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন চূড়ান্ত পর্যায়ের।
তাইতো তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের আসনে আসীন হয়েছেন।
আসলে আমাদের সৃষ্টিই করা একে অপরের কল্যাণকামীতার জন্য। বিপদে-আপদে একে অন্যের পাশে থাকা ও সহযোগিতার হাতকে সম্প্রসারণের জন্য।
আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির পরিচয় এভাবে তুলে ধরেছেন, তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, মানুষের কল্যাণের জন্য তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১১০)
অভুক্ত ব্যক্তিকে আহার্য দেয়ার ফজিলত বলতে গিয়ে রাসূল (সা.) বলেছেন, মানুষের কল্যাণ-সংশ্লিষ্ট যত কাজ আছে, তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম হচ্ছে দরিদ্র ও ক্ষুধার্তকে খাবার দান করা। (বুখারি, হাদিস : ১২)
রাসূল (সা.) আরও বলেছেন, ‘কোনো বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্যরত থাকে, আল্লাহ তায়ালাও ততোক্ষণ তাকে সাহায্য করতে থাকেন।’ (তিরমিজি)
মানবতার সবক শেখাতে গিয়ে রাসূল (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাকে জিজ্ঞেস করবেন, আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম, তুমি আমাকে আহার্য দাওনি। আমি তৃষ্ণার্ত ছিলাম, তুমি আমাকে পানি দাওনি। আমি অসুখে ভুগছিলাম, তুমি আমার সেবা করনি। (কেন?)
বান্দা তখন অবাক হয়ে বলবে, হে আমার প্রতিপালক, তুমি যে অভাবমুক্ত, তুমি তো খাও না, পান কর না, তুমি কীভাবে ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত ও অসুস্থ হতে পার?
আল্লাহ তায়ালা তখন প্রতিউত্তরে বলবেন, আমার অমুক বান্দা যে ক্ষুধার্ত হয়ে তোমার দুয়ারে হাজির হয়েছিল, তুমি তো তাকে খাবার দাওনি, তাকে দিলে আমাকে দেয়া হতো। পিপাসার্তকে তুমি পানি পান করাওনি, তাকে পানি দিলে আমাকে দেয়া হতো।
রোগশোকে ভোগা ব্যক্তি কষ্টে ছটফট করেত, তার সেবা করলে আমাকে সেবা করা হতো, তুমি কী এটা জানতে না? (মুসলিম)
পবিত্র কোরআনের বহু জায়গায় মহান আল্লাহ তায়ালা গরীব, অসহায়, দিনমজুর ও মিসকিনদের খাবার দান করার কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি তাকে দুটি পথ প্রদর্শন করেছি। অতঃপর সে ধর্মের ঘাঁটিতে প্রবেশ করেনি।
আপনি জানেন, সে ঘাঁটি কী? তা হচ্ছে দাসমুক্ত করা কিংবা দুর্যোগ ও সঙ্কটের দিনে এতিম আত্মীয়স্বজন ও ধুলো-ধূসরিত মিসকীনদের অন্নদান করা।’ (সূরা বালাদ, আয়াত : ১০-১৬)’
ইসলাম আল্লাহ তায়ালার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের কথা যেমন বলে, তেমন বলে মানব সেবার কথাও।
রাসূল (সা.) বলেন, সমস্ত মাখলুক আল্লাহ তায়ালার পরিবারের মতো, আর তোমাদের মধ্যে তারাই আল্লাহর কাছে বেশি পছন্দনীয়, যারা তাঁর পরিবারের প্রতি বেশি দয়াশীল।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, পূর্ব ও পশ্চিমে মুখ ফেরানোতে কোনো পুণ্য নেই; পুণ্য আছে আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতাগণ, সমস্ত কিতাব ও নবীদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলে এবং আল্লাহ তায়ালাকে ভালোবেসে আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, মুসাফির, সাহায্য প্রার্থীদের ও দাসমুক্তির জন্য অর্থ দান করলে, নামাজ কায়েম করলে, জাকাত প্রদান করলে, প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা রক্ষা করলে, অর্থ সংকটে, দুঃখ-কষ্ট ও যুদ্ধ-সংকটে ধৈর্য ধারণ করলে। (মূলত) এরাই হল সত্যপরায়ণ (এবং) এরাই হল আল্লাহভীরু। (সূরা : বাকারা, আয়াত : ১৭৭)
মানব সেবায় আল্লাহর রাসূলের সাহাবিদের দৃষ্টান্তও কম নয়। নিজেরা অভুক্ত থেকে তারা অন্যদের খাওয়াতেন। একবার আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর কাছে এসে নিজের ক্ষুধার কথা জানালে তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কি আজ রাতে তাকে খাওয়াতে পারবে?
তখন এক আনসারী সাহাবী বললেন, আমি খাওয়াব। সাহাবির নিজের ঘরেই ছিল খাবার সঙ্কট। একজন খেতে পারে এতটুকু খাবারই কেবল অবশিষ্ট ছিল।
তবুও তিনি লোকটিকে তার বাসায় নিয়ে গেলেন এবং স্ত্রীকে বললেন,এই লোক নবীজী (সা.)-এর মেহমান। আমাদের সাধ্যমতো তাকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। স্ত্রী বলল, ঘরে যা খাবার আছে তাতো যথেষ্ট পরিমাণম নয়! তাছাড়া বাচ্চারাও ক্ষুধার্ত।
স্ত্রীর কথা শুনে সাহাবি বললেন,বাচ্চাদের না খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দাও। আমি মেহমান নিয়ে খেতে বসলে তুমি ঘরের বাতি নিভিয়ে দেবে। যেন মেহমান আমি খেলাম কি খেলাম না তা বুঝতে না পারে।
পৃথিবীর বুকে মানবতার এরচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত আর হতে পারে না।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) যখনই খাবার খেতেন, সঙ্গে একজনকে নিয়ে খেতেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা তার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, আর তারা আল্লাহকে ভালোবেসে খাদ্য দান করে মিসকিন, এতিম ও বন্দিদের। তারা বলে, শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা তোমাদের খাদ্য দান করেছি, তোমাদের কাছে আমরা এর জন্য কোনো বিনিময় চাই না এবং কোনো কৃতজ্ঞতাও না।’ (সূরা : দাহর, আয়াত : ৮-৯)
প্রিয় পাঠক, আজ আমাদের আশপাশে কত অভুক্ত, কত অসহায়, কত দরিদ্র, কত দিনমজুর, কত বৃদ্ধ, কত কৃষকরা হাহাকার করছে। রোদন করছে।
তারা যখন কাজ করার সুযোগ পেত, তখনই তো পরিবার নিয়ে দিনাতিপাত করা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে যেত। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাদের পিঠ আজ দেয়ালের সঙ্গে ঠেকে গেছে। জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে অবস্থান করছে তারা । অভুক্ত-অনাহারে মৃত্যুর প্রহর গোনা ছাড়া তাদের কোনো গত্যন্তর নেই ।
আজ তাদের পাশে দাঁড়ানো, দু'বেলা খাবারের ব্যবস্থা করে দেয়া, আমাদের নৈতিক দায়িত্ব! মুক্তির ধর্ম ইসলাম আমাদের এই শিক্ষাই দেয়!
আজই আমাদের মোক্ষম সময়, রাসূলের মহানুভবতা, মানবতা ও আতিথেয়তার নীতি ও আদর্শ বাস্তবায়নের এবং বৃদ্ধ, দিনমজুর, মিসকিন ও শিশুদের মুখে একটুখানি হাসি ফোটানোর
কৃতজ্ঞতাঃ মুহাম্মদ বিন ওয়াহিদ
২| ০২ রা এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:৩০
মাহিরাহি বলেছেন: As Pakistan imposes greater social distancing measures to combat coronavirus, a Muslim law of generosity is helping to save those out of work
৩| ০২ রা এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৩৮
নেওয়াজ আলি বলেছেন:
৪| ০২ রা এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:০২
মেটালক্সাইড বলেছেন: চাঁদগাজী সাহেবের একটি পোস্টে এই ব্যাপারটিকে হাইলাইট করার জন্য ব্লগারদের অনুরোধ করেছিলাম। দুদিন পর আপনার পোস্টে বিষয়টি হালকাভাবে ঊঠে আসল। জাযকাল্লাহু খাইর
একটা বিষয় পরিস্কার হয়ে গেল, সামুতে সবাই বিনোদনের জন্য আসে। সচেতনতা, মানবতা, দেশপ্রেম এগুলো এদের লেখার মুখোশ জনপ্রিয়তার জন্য। একটি জাতির মারাত্নক ক্ষতি করে এই ভাল মানুষের আড়ালে মুখোশধারীগুলো।
ব্যক্তিগত অনুরোধ, যদি সম্ভব হয়, আরো বিস্তারিত ভাবে বিষয়টিকে উপস্থাপন করুন।
৫| ০২ রা এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৪১
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: জানতে ইচ্ছে করে,পৃথিবীতে এমন কোন ধর্ম আছে কি,মানবতার কথা বলে না?
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:১৭
রাজীব নুর বলেছেন: কী একটা ট্রাজেডি! আমেরিকার যুদ্ধজাহাজ থিওডর রুজভেল্টে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। জাহাজটি 'পারমাণবিক শক্তিচালিত' এবং 'বিমানবাহী'। জাহাজের ক্যাপ্টেন জাহাজটিকে খালি করে সবাইকে কোয়ারেন্টিন করার জন্য পেন্টাগনের জরুরি সাহায্য চেয়েছেন কিন্তু মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন!