![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১.
নিজের সঙ্গে অনেক লড়ইয়ের পর, ক্লান্ত অনিকেত-আয়নায় নিজেকে দেখে। চিনতে পারেনা,তার ছায়াছবি। আচ্ছা, মানুষ এত স্বার্থপর হয়? কেমনে!... নিজের কপালটা আলতো করে ছুঁয়ে দেখে; পাড়ার কোন নতুন মা হওয়া নারীর সন্তানকে কোন আত্মীয় যেভাবে ছোঁয়-- ঠিক সে রকম করে । নিজের মধ্যে ফিরে আসতে বেশ সময় লাগে... কানে বাজে সমুদ্রের গর্জন। ছেড়াদ্বীপের জলোৎসব। আহা! সমুদ্র--বইছো! কষ্টে, নাকি সুখে--তাও জানার সুযোগ নেই। বয়েই যাচ্ছে, কারও সুখ আর কারও দুঃখের গল্প নিয়ে।
২.
মাস কয়েক আগের একরাত। মেয়েটা যখন অনিকেতকে ডাকে, নিজের সব সীমাবদ্ধতা ভুলে সে হাত বাড়ায়। নদী ভাঙনের হাহাকার থেকে মুক্তির জন্য সব পেছনে রেখে ছোটা শহরের বসতিতে ছোটা পরিবার প্রধানের মত, তেমনি, সেও। কী অদ্ভূত। অথচ এটা তার স্বভাবের সঙ্গে একেবা্রেই যায় না। তবুও, নিজের সঙ্গে কিছুটা কমপ্রোমাইজ করে--- নতুন আলো দেখে চোখের সামনে... সেই আলোয় নিজেকে বিশুদ্ধ করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে চল্লিশ পেরোনো পুরষ অনিতেক!
৩.
বহু নারী সঙ্গ উপভোগের পর, তার যখন শেষটা এমন যে, নারী সঙ্গ মানে দু-চারদিনের কথা, ডেট অতপর-- শরীর-কাব্য। এই মেয়ের সঙ্গে তার তেমন কিছুই হয়নি। মাস দু'য়েকের মত সম্পর্ক হবে, টেনে টুনে। কিন্তু এর মধ্যে সে একটা স্বর্গীয় অনুভূতি পায়। এ অন্য রকম --বলে কয়ে-- ব্যাখ্যা করে বোঝানো অসম্ভব। সহজ করে বললে, যার ছোঁয়ায় বদলে যায় তার জীবন। দখিনা বাতাসে যেমন রোগ বালাই মাড়িয়ে মানুষের শরীরে সতেজতা ফিরে, তেমনই। অথবা বসন্ত বাতাস... মনের দুয়ারে জেগে ওঠা সুর, ফুলের সৗরভ-- আচমকা ডাকা কোকিলের কুহুতান। অথবা শেষ বিকালে শিষ দিতে দিতে যে কিশোর নিজের দিকে চেয়ে মুগ্ধ হয়, নিজের সুরে। সে রকমই কিছু হবে।
৪.
বয়সের লম্বা তফাত---সমাজের ভ্রুকূটি; অনাদর -- অবহেলা-- সবই তার ফিরিয়ে দেয়ার যোগ্যতা আছে, সম্ভব হলে তাই করতো .. অনিকেত। কিন্তু আচমকা একটা শব্দ কাব্য তার কান ভারি করে তোলে। প্রাণপণে দু-হাতে সে শব্দ সরাতে গিয়ে, কেবলই তার মনে হতে থাকে--- অনিকেত, তুমি আর কতটা নীচে নামবে! নিজের জন্য। মানুষ-- স্বার্থপর হয়। তাই বলে এতটা! ...নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারানোর পুরুষ কীভাবে যেন তা ফেরত পায়। এর আগে, আরও দুয়েকবার নিজের স্বার্থের কথা বুঝতে পেরেছিল...তবুও ফিরতে পারেনি। তার কেবলই মনে হচ্ছিলো, জীবনে ভালো থাকার, ভালো হয়ে যাওয়ার সুযোগটা হাতছাড়া হবে! এবার, সে নিজেকে সামলে নিলো। ভালো থাকার ওষুধ তার আগে থেকেই আছে... সতরাং আরেকজনের জীবনে কষ্ট ডেকে, আরেকটা ছেলের স্বপ্ন পুড়ে কেন তাকে পেতে হবে কাউকে! নিজেকে খুব করে বুঝিয়ে ফেরত আনার চেষ্টায় অনিতেক।
৫.
লম্বা একটা নি:শ্বাস নেয়, অনিকেত। কষ্টের না। দম আকটানোর নি:শ্বাসও, না। নিজেকে রিফ্রেশ করার-- নি:শ্বাস। সুন্দরবনের জঙ্গলে গেলে সে, এ রকম প্রাণভরে নি:শ্বাস নেয়। ঠিক, এ রকমই। যেন, কচিখালীতে বাঘের ডেরায়, আপন মনে সে তার শুদ্ধ জীবনে ফেরার প্রচণ্ড আনন্দ উপভোগ করছে। পেছনে পড়ে থাকে মেয়েটার মুখ, কিছু দিনের স্মৃতি আর তার জন্য তুলে আনা দশক খানেকের পুরনো প্রেমিকের সমুদ্র-কাব্য-ছবি। কী অদ্ভূত! মানুষ তবুও ভালোবাসে।
©somewhere in net ltd.