নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নীল নক্ষত্র

আমি একজন অতি সাধারন মানুষ। সুন্দরেরসন্ধানে ঘুরে বেড়াই জলে স্থলে অন্তরীক্ষে।

মোঃ খালিদ উমর

আমি এক জন অতি সাধারন মানুষ। সুন্দরের সন্ধানে ঘুরে বেড়াই জলে স্থলে অন্তরীক্ষে।

মোঃ খালিদ উমর › বিস্তারিত পোস্টঃ

নির্বাক বসন্ত [মোট ২৫ পর্ব] পর্ব-১৭

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:২২





আজ নিশাত ঘুম থেকে উঠেই লক্ষ করল জাহাজের ইঞ্জিন চলছে না থেমে আছে। কি ব্যাপার জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে জাহাজ চলছে না এবং কোন রোলিং হচ্ছে না, নোঙর করে রয়েছে। কাছা কাছি আরও অনেক জাহাজ এমনি নোঙ্গরে রয়েছে। সউদি আরবের সবুজ সাদা পতাকা উড়ছে। কেবিন থেকে বের হয়ে ওই ডেক থেকে নেমে মেইন ডেকে এসে বাইরে দেখে এটা এক নতুন দেশ। সুয়েজ খালের পাশে যেমন দেখেছে অনেকটা ওই রকম। সামনে একটা ডকইয়ার্ড দেখা যাচ্ছে আশে পাশে বেশ কয়েকটা বিশাল বিশাল জাহাজ নোঙ্গর করে আছে। ওইতো দূরে কিনারা দেখা যাচ্ছ। একটু একটু ওগুলি কি মাটির ঘর, না কী ওগুলি? সুয়েজের দুই পাড়ে আরব দেশগুলিতে এমন দেখেছে। অন্যান্য সমুদ্র বন্দর যেমন হয় ছোট ছোট অনেক বোট এবং পালের বোট এদিক ওদিক চলে যাচ্ছে। ওইতো সমুদ্রের মাঝখানে জেটি দেখা যাচ্ছে, অনেকগুলি জাহাজ ভিড়ে রয়েছে। মনে হয় সবগুলি ট্যাংকার হবে, একটারও মাস্তুল বা ক্রেন নেই। নিশাত অবাক হয়ে শুধু দেখছে। নাস্তা খাবার কথা ভুলে গেছে। মিডল ইস্টের প্রচণ্ড গরমেও ওর খেয়াল নেই। লন্ডন থেকে এখানে আসার পথে এ পর্যন্ত কতগুলি দেশ এবং সাগর দেখে নিয়েছে। মনে মনে শুধু ভাবছে, এ কোথায় এসেছি! কত কি দেখছি! কি আনন্দের চাকরী! তন্ময় হয়ে যখন দেখছে আর ভাবছে তখন ব্রিজ থেকে অরুণ’দা ডাকল ‘এই নিশাত ওখানে কি করছ?’ নিশাতের সম্বিত ফিরে এলো। পিছনে ফিরে উপরের দিকে তাকিয়ে দেখল অরুণ’দা ডাকছে! দেখছি অরুণ’দা! কাপড় বদলে ব্রিজে চলে আস!

আচ্ছা আসছি!

এ কি, তুমি এখনও মুখ ধোওনি?

না অরুণ’দা ঘুম থেকে উঠেই দেখার জন্য ডেকে চলে গিয়েছিলাম।

আচ্ছা যাও ডিউটির জন্য রেডি হয়ে এসো।

একবারে নাস্তা খেয়ে এসো!

আচ্ছা, বলে নিচে চলে এলো।

দুপুর ১২টা নাগাদ নিশাত ব্রিজেই রইল। কখনও বাইনোকুলার চোখে দিয়ে আবার কখনও রাডারের পর্দায় শুধু দেখছিল। প্রায় দুইটার দিকে সউদি রাস্তানুরাহ পাইলট এসে ওদের জেটিতে নিয়ে গেল। ইমিগ্রেশন, কাস্টম ইত্যাদি ঝামেলা সেরে ছয়টার পরে একটা পিক আপ এসে জাহাজের পাশে দাঁড়াল। পিক আপ থেকে দুই জন লোক নীল রঙের বয়লার স্যুট পড়নে হাতে টুল বক্স নিয়ে জাহাজের সিঁড়ি বেয়ে উঠে এলো। টুল বক্স রেখে আবার পিক আপে গিয়ে একটা রাবারের মোটা হোস পাইপ এনে জাহাজের পাইপের মুখের সাথে আগে কানেকশন করে পরে আর এক মাথা জেটির পাইপের সাথে কানেকশন করে দিয়ে চলে গেল। নিশাত ওদের কানেকশন দেয়ার ঢং দেখে অবাক হয়ে চেয়ে রইল। কি দক্ষ এরা! কেমন করে এই টুক সময়ের মধ্যে সেরে ফেলল। পাম্প ম্যান গেট ভাল্ব খুলে দিল। ভাল্ব কতটা খুলছে তা বেশ সুন্দর ভাবে একটা কাঠি দিয়ে দেখা যাচ্ছে, নিশাতকে বুঝিয়ে দিল বিষয়টা। একটু পরে দেখতে পেল একোমডেশন ডেক থেকে ক্যাপ্টেন এদিকে এগিয়ে আসছে, পিছনে তার স্ত্রী। এগিয়ে এসে জিগ্যেস করল

লোডিং শুরু হয়েছে?

না এখন হয়নি, এই মাত্র কানেকশন করে গেল

কখন শুরু করবে কিছু বলেছে?

না।

আচ্ছা ঠিক আছে লোড শুরু হলে আমাকে বলবে।

আচ্ছা বলব।

ওরা ডেকের উপরে একোমডেশন ডেক থেকে মেইন ডেকের উপর দিয়ে ফোর ক্যাসেলে যাবার কাঠের ব্রিজ দিয়ে কিছুক্ষণ হাটা হাটি করে চলে গেল।

জাহাজের পাম্প ম্যান গেট ভাল্ব খুলে অপেক্ষা করছে কখন লোডিং শুরু করবে। মুকিত ভাই ডেকে গিয়ে আবার সব ট্যাঙ্ক, কানেকশন, ভাল্ব সব দেখে ডেকের উপরেই হাটা হাটি করছে সাথে নিশাত সব কিছু দেখছে। অরুণ’দা এসে বলল

মুকিত যাও রেস্ট নাও, ও ভালো কথা লোডিং এর ব্যাপারে কিছু বলেছে?

না, ওরা এসে শুধু পাইপ কানেকশন করে গেছে, কখন স্টার্ট করবে তা কিছু বলে নাই।

আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যাও, আমি দেখছি।

ওহ ভালো কথা, অরুণ’দা নিশাতকে একটু দেখিয়ে দিবেন।

হ্যাঁ হ্যাঁ যাও সে আর তোমাকে বলতে হবে না।

মুকিত চলে গেল। ডেকে আর দুই জন জিপি ডিউটি করছিল, শাহিন এবং জয়নুল। অরুণ শাহিনকে ডেকে নিশাতকে নিয়ে শুধু ব্রিজ বাদে জাহাজের আগা গোরা সব কিছু দেখিয়ে আনতে বলে দিল। শাহিন নিশাতকে নিয়ে প্রথমে জাহাজের ফোর ক্যাসেলে (জাহাজের সামনের ভাগ, যেখান থেকে নোঙ্গর ফেলা হয়, তোলা হয় এবং জাহাজ সামনের দিকে বাধা হয়) সেখানে নিয়ে গেল। এখানে কোন জিনিসের, কোন অংশের কি নাম কি কাজ এসব দেখিয়ে নিয়ে এলো ফোর ক্যাসেলের নিচে। এখানে নোঙ্গরের চেইন কোথায় থাকে, রঙ ব্রাশের স্টোর, আরও যা যা থাকে সব দেখিয়ে নিয়ে গেল পিছনের ডেকে। ওখানে কি ভাবে জাহাজ বাধা হয় ছাড়া হয় সব কিছু দেখিয়ে দিল। গ্যালিতে গিয়ে দুই জনে চা খেতে খেতে কিছু গল্প করে আবার ডেকে নিয়ে গেল।

কি নিশাত দেখেছ?

হ্যাঁ দেখলাম।

এই মহসিন ওকে ডেকের পাইপ লাইন গুলি বুঝিয়ে দাও, বলেই আবার বলল না ঠিক আছে তুমি থাক নিশাত আমার সাথে এসো।

এখানে জাহাজের কয়টা ট্যাঙ্ক, বিভিন্ন রঙ দিয়ে আলাদা করা পাইপ লাইন তার সাথের ভাল্ব, মেইন গেট, কোন লাইনের তেল কোন ট্যাঙ্কে যায় কি ভাবে লাইন ব্যবস্থা করতে হয়, তেলের প্রেশার মিটার, টেম্পারেচার দেখার থার্মো মিটার সব কিছু দেখিয়ে দিয়ে বলল,

ব্যাস আজ এই পর্যন্তই থাকুক না হলে সব গুলিয়ে ফেলবে, আস্তে আস্তে সব দেখে শুনে বুঝে নিবে, যার কাছে যখন যে সুযোগ পাও দেখবে।

আচ্ছা অরুণ’দা। আপনারা যে ভাবে যা বলবেন সে ভাবেই করবো, ভুল ভ্রান্তি হলে বলবেন। আমি কি ভয়ে ভয়ে এসেছি জানেন, শুধু ভেবেছি কোথায় যাচ্ছি, কারা কারা থাকবে, কাদের সাথে চলতে হবে। ভাবতে পারিনি যে এখানে এসে সব বাঙ্গালি পাব।

একটা কার এসে জাহাজের পাশে জেটিতে দাঁড়াল। এক লোক হাতে ওয়াকি টকি নিয়ে নেমে পাশে এসে জিজ্ঞ্যেস করল

তোমরা কি লোডের জন্য রেডি?

হ্যাঁ আমরা কখন থেকে বসে আছি।

আচ্ছা, তাহলে লোড স্টার্ট করতে বলব?

হ্যাঁ বল, কত স্পীডে আসবে জান?

২৫০ টন।

আচ্ছা ঠিক আছে।

জেটির পাশে দাঁড়ান লোকটা ওয়াকি টকি দিয়ে কাকে বলল ‘স্টার্ট’

একটু পরে পাইপ লাইন দিয়ে ছিট মিট ,পট পট শব্দ করে তেল আসা শুরু হলো। প্রথমে পিছন দিকের ট্যাঙ্কে নিচ্ছে, ওখানে কিছু নিয়ে পরে অন্যান্য গুলিতে নিবে। অরুণ’দা পিছনের ট্যাঙ্কের মুখের পাশে দাঁড়িয়ে আছে, তার সাথে পাম্প ম্যানও আছে। নিশাত কৌতূহল নিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে ট্যাঙ্কের নীচে তাকিয়ে আছে। কি ভাবে তেল আসে তাই দেখার জন্য। একটু পরেই ট্যাঙ্কে তেল আসা শুরু হলো। অরুণ’দা আর পাম্প ম্যান ঘুরে ঘুরে সব ভাল্ব, জয়েন্ট চেক করে দেখে নিলো কোথাও লিক হচ্ছে কি না। এবার ঘড়ি দেখে হিসেব করে বলল বিশ ঘণ্টা লাগবে। মানে কাল দুপুর তিনটা বেজে যাবে। আর আমরা সেইল করতে পারব ধর আরও ঘণ্টা খানিক পর। ঠিক আছে চলুক, আমি ভিতর থেকে আসি। চল, যাবে আমার সাথে চা খেয়ে আসি!

হ্যাঁ খেতে পারি অবশ্য আমি এত চা কখনো খাইনি,

কি যে বল, জাহাজে চাকরি করতে এসেছ এখন দেখবে আগের অভ্যাস অনেক বদলে যাবে।

চা খেয়ে এসে নিশাত এবার একটু একা একা জাহাজের ডেকের উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে দেখছে। তখন ভাটায় পানি অনেক নিচে নেমে গেছে। যখন এখানে এসেছিল তখন জোয়ার ছিল বলে জাহাজের ডেক জেটির বেশ উপরে ছিল। এখন পানি নিচে নেমে গেছে বলে জাহাজের ডেক জেটির লেভেলে চলে এসেছে। জেটির নিচে চোখ পরতেই দেখল জেটির পাইল এবং বিমে নানা ভাষায় নানা রঙ দিয়ে অনেক কিছু লেখা তার কোনটা সে পড়তে পারলো তবে বেশির ভাগই ভিন্ন ভাষা বলে সেগুলি পড়তে পারলো না। প্রায় লেখা গুলির মাঝে যোগ চিহ্ন দিয়ে এ পাশে ও পাশে কারো নাম লেখা, যা পড়তে পেরেছে তার মধ্যেও এই রকম আবার যা পড়তে পারেনি তাতেও এমন অনেক লেখা। কেউ কেউ আবার বিদঘুটে কিছু ছবিও একে গেছে, কেউ আবার জাহাজের নাম লিখে রেখে গেছে, কবে কে এসেছিল তারিখ লিখে তার নিজের নাম, জাহাজের নাম লিখেছে। নিশাত ভাবল তা হলে সেও পারে এমন করে তার নাম লিখে দিতে। না আমার নাম না নিরুর নাম লিখি, না তাইবা কেন নিরু কি একা? ওর সাথে যে আমিও জড়িয়ে আছি! নিশাত কি পারে না এমন করে একটা যোগ চিহ্ন দিয়ে ওর আর নিরুর নাম লিখে দিতে? না, এখানে নতুন এসেছে, সবার সাথে তেমন কোন ঘনিষ্ঠতা হয়নি এরা দেখলেই বা কি ভাববে? একটা ভ্যাবাচ্যাকার মধ্যে পরে গেল। কি করবে। না লিখেই ফেলি। এই লেখার সূত্র ধরে যদি কোন দিন নিরু আমার হয়ে যায় তা হলে মন্দ কি?

শাহিন ভাই, আপনাদের বোসন্স স্টোরে একটু যাব?

কেন?

আমার একটু রঙ আর ব্রাশ লাগবে।

এখন রঙ ব্রাশ দিয়ে কি করবেন?

কাজ আছে, দেন না একটু

আচ্ছা চলেন দেখিয়ে দিচ্ছি।

স্টোরে ঢুকে রঙ আর একটা ব্রাশ নিয়ে এসে একটা সুবিধা মত জায়গা খুঁজতে লাগল কোথায় লেখা যায়। এমন জায়গায় লিখতে হবে যেন সবার চোখে পড়ে অথচ জেটি মেইনটেনেন্স এর সময় মুছে না যায়। সব জায়গাই ভর্তি। খুঁজতে খুঁজতে একটু খালি জায়গা পেয়ে নাম লেখা শুরু করল। বাংলায় লিখবে না ইংরেজিতে এ আবার আর সমস্যা। ইংরেজিতেই লেখি পৃথিবীর সবাই পড়তে পারবে। নিশাত লিখছে ওর পিছনে শাহিন দেখছে।

লেখা শেষ হলে শাহিন জিগ্যেস করল

কি ভাই কার নাম লিখলেন?

দেখছেন তো।

তা দেখছি কিন্তু এ কে?

কি জানি তা জানি না।

ও বুঝেছি

একটু পরে অরুণ’দা এসে বলল

কি নিশাত ওখানে কি করছ?

কাছে এসে সদ্য লেখা এক মেয়ের নাম দেখে অবাক হয়ে জিগ্যেস করল

ডুবে ডুবে জল খাচ্ছ?

না ডুবে আর খাচ্ছি কোথায়, প্রকাশ্য দিবা লোকেই তো লিখলাম।

হুম তুমি তো বেশ চালাক দেখছি, তা কার নাম লিখলে?

দেখতেই তো পাচ্ছেন।

তা তো পাচ্ছি, কিন্তু এ কে?

জানি না।

ও বুঝেছি। আচ্ছা ঠিক আছে জাহাজ ছাড়তে দাও দেখি।

জাহাজ ছেড়ে দিলে আর দেখবেন কি ভাবে, তার চেয়ে এখনি দেখে নিন, জাহাজ চলে গেলে কিন্তু দেখতে পারবেন না।

কেন?

বা রে, আমি কি জেটিটা সাথে নিয়ে যাব না কি?

ওরে বাব্বা এত দূর! তুমি দেখি সাঙ্ঘাতিক হাবু ডুবু খাচ্ছ! আচ্ছা আচ্ছা তা হলে এই ব্যাপার? তা এই সৌভাগ্যবতীটি কে?

না দাদা প্লিজ আর কিছু জিগ্যেস করবেন না। যা দেখেছেন ওই পর্যন্তই থাক।

আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যদি বলতে না চাও তা হলে জিজ্ঞেস করবো না। তবে কাজটা কিন্তু ভালো হচ্ছে না।

নিশাত হেসে দিল।

এই সব নানা হাসি তামাশার মধ্যে জাহাজের লোডিং চলছে এর মধ্যে ওদের ডিউটির সময় শেষ হয়ে এলো। মুকিত ভাই এসে হাজির। কোন ট্যাঙ্কে কতটা লোড হয়েছে তা সব কিছু মুকিত ভাইকে বুঝিয়ে দিয়ে অরুণ বলল

চল নিশাত আমাদের ছুটি। কিছু খাবে, ক্ষুধা লেগেছে?

হ্যাঁ একটু মনে হচ্ছে, বিকেলে রাতের খাবার খাইনি কখনও, তাই অভ্যাস হতে সময় নিচ্ছে।

আচ্ছা চল তাহলে গ্যালিতে যাই দেখি কি আছে।

[চলবে। এতক্ষণ নিশাতের সাথে নিরুর চায়ের নিমন্ত্রণের অপেক্ষায় থাকুন। ধন্যবাদ]



মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:৪৬

এহসান সাবির বলেছেন: সময় নিয়ে ১ম থেকে শুরু করব ভাবছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.