নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বর্ষাকাল। বারিধারা অঝরে ঝরে যাচ্ছে। মাঝে-মধ্যে বিদ্যুৎ চমকানোর আলোর ঝলকানি। সাথে গুম....গুমড়....গুম শব্দ। খুব ভাল লাগছিল। কোন গরম নেই। বৃষ্টির স্পর্শে শীতল হয়ে যাওয়া টুকরো-টুকরো বাতাস গায়ে এসে লাগছিল। যাকে বলে পরান জুড়িয়ে যাওয়া। সেরকম একটা অনুভুতি হচ্ছিল দেহ ও মনে। প্রকৃতির কাছে এইতো চাওয়া.....
সরকারি ডাকবাংলোয় নিজের জন্য বরাদ্দকৃত রুমের জানালায় দাড়িয়ে বর্ষাকালের এই রুপ উপভোগ করছিলাম। ঘড়ি দেখলাম। রাত বারটা দশ। ঘুমিয়ে পড়া দরকার। সকালে অফিসে যেতে হবে। মশাড়ি টাঙ্গিয়ে, লাইট বন্ধ করে বিছানায় চলে গেলাম। চারিদিক নিস্তব্দ। বৃষ্টির শব্দ ছাড়া থোকাও কোন শব্দ নেই। চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির শব্দ শুনছিলাম.... কি যে দারুন অনুভুতি ঠিক বলে বোঝানো যাবে না।
কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মনে নেই। সকাল বেলা ঘুম ভেঙ্গে দেখি কেমন মায়া মাখানো একটা সকাল্। বিছানা ছেড়ে প্রয়োজনীয় কাজ-কর্ম সেরে তৈরি হয়ে অফিসের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পড়লাম। বাইরে এসে মায়ায় জড়ানো সকালের সাথে প্রেম করতে করতে একটা রিক্সা ধরলাম। দশ মিনিটের রাস্তা। রিক্সা চলছে। গতকালের বৃষ্টিতে রাস্তার সকল ধুলো মরে গেছে। মফস্বল শহরের নির্মল পরিবেশ। রিক্সা চলছে....।
একটা ব্রিজে ওঠার মুহুর্তে রিক্সার গতি স্লথ হয়ে গেল। দেখলাম একজন মহিলা ভিক্ষুক এই সাতসকালে ব্রিজের এক কোনে শুয়ে আছে। তাঁর সামনে তাঁর পড়নের কাপড়ের একটা অংশ বিছানো। সেখানে এক টাকা -দু টাকার নোট, কয়েন এরই মধ্যে বেশ জমে উঠেছে। ভিক্ষুক মহিলাটি গোঙ্গানোর সুরে অনর্গল বলে যাচ্ছে ভাত খাব একটা-দুইটা টাকা দিয়ে যা। দুইটা কলেজ পড়ুয়া ছেলে -মেয়ে ভিক্ষুক মহিলাটিকে ভিক্ষা দিল। আমাকে বহন করা রিক্সাওয়ালাটিও রিক্সা থামিয়ে তাকে ভিক্ষা দিল। তারপর ভিক্ষুক মহিলাটিকে অতিক্রম করে চলে গেল....
অফিসে এসে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। স্টাফদের নিয়ে মিটিং করলাম। দৈনন্দিন অফিসিয়াল কাজ করলাম। দেখতে-দেখতে অফিস আওয়ার শেষ হয়ে গেল।
অফিস থেকে বেড়িয়ে পড়লাম। সকালের সেই মায়া মাখানো পরিবেশ আর নেই। কেমন একটা ভ্যাপসা গরম পড়েছে। রাস্তায় ধুলো গুলো আমার জীবিত হয়ে উঠেছে। গাড়ির টায়ারের সাথে-সাথে ধুলো গুলো উড়ছে দিকবিদিক....
আমাকে বহন করা রিক্সাটি ব্রিজের ওঠার মুহুর্তে সকাল বেলার মতোই গতি হারাল। সেই ভিক্ষুক মহিলাটি তখনও গোঙ্গানোর শব্দ করে বলছে। ভিক্ষা দিয়ে যা । ভাত খাবো। কেমন একঘেয়ে মগজে ঢুকে যাওয়ার মতো কর্কস ও কঠিন শব্দ...
রিক্সা ডাকবাংলোয় এসে থামল। ভাড়া মিটিয়ে রুমে ঢুকে পড়লাম। আবোল-তাবল , এলোমেলো কিছু কাজকর্ম করে রাত হয়ে গেল। পরের দিনের প্রস্তুতি নিয়ে বিছানায় গেলাম। ঘুম আসছিল না। ভিক্ষুক মহিলাটির গোঙআনো মিশ্রিত শব্দটি তখনও কানে বাজছে। এপাশ-ওপাশ করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
রাত স্বপ্ন দেখলাম। ব্রিজের কোনায় সেই ভিক্ষুক মহিলাটি আর নেই। সেখানে ধুলো-ময়লার মধ্যে আমি শুয়ে আছি। আকাশের দিকে তাকিয়ে আমি কি যেন চাচ্ছি। আকাশ থেকে ঝরে পড়ছে অজস্র বৃষ্টির কনা। আমি দু-হাত ভরে সেই বৃষ্টির কনা সংগ্রহ করছি......
©somewhere in net ltd.