নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এ জীবন সহজ হোক, সরল হোক,সুন্দর হোক...

নিয়ামুলবাসার

সহজ ভাবনাই সরল জীবন..

নিয়ামুলবাসার › বিস্তারিত পোস্টঃ

হায়দারাবাদের ডায়েরী….

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ২:২৭

হায়দারাবাদের ডায়েরী….
নেহেরু জুলজিক্যাল পার্ক, চারমিনার ও মক্কা মসজিদ দেখার অভিঙ্গতা… (১৬/১১/২০১৪)
গত একমাস ভয়াবহ ব্যস্ত সময় পার করেছি। সকাল ৯:০০ টা থেকে রাত ৮:০০ টা পর্যন্ত ক্লাস । এসাইনমেন্ট ও এক্সামের প্রেসারতো আছেই… সবকিছু মিলিয়ে বেশ হাপিয়ে উঠেছি… পরিবর্তন দরকার…
আজ রবিবার… । প্লান করেছি সারাদিন ঘুরে কাটাবো… এর কোন ব্যত্যয় হবে না….
মোবাইলে এলার্ম দিয়ে রেখেছিলাম। ভোর বেলাতেই ঘুম থেকে উঠে পরেছি।তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। সঙ্গে ব্যাচমেট রঞ্জিত ও বাবু। নীল আকাশ। বাতাসে শীতকালের আগমনি গন্ধ । বাইরে বেরিয়ে মন ভালো হয়ে গেল…
আমাদের ক্যাম্পাস থেকে নেহেরু জুলজিক্যাল পার্ক খুব বেশি দূরে নয়। পনের কি:মি: মতো হবে। একটি অটো নিয়ে নিলাম। অল্প সময়ের মধ্যেই পৌছে গেলাম। ছুটির দিন হওয়ার কারনে পার্কের গেটে বেশ ভির। দলে-দলে মানুষ আসছে। বেশির ভাগই মুসলিম ফ্যামেলি। মহিলারা গাঢ় কালো রংয়ের বোরকা দিয়ে আচ্ছাদিত। বন্ধু রঞ্জিতের মাধ্যমে জানা গেল, পার্কের আশে-পাশের পুরো এলাকাটাতেই মুসলিমদের বসবাস।
আমরা টিকিট কেটে জুলজিক্যাল পার্কে ঢুকে পড়লাম। পুরো জুলজিক্যাল পার্কটি ঘুরে দেখার জন্য চার রকমের ব্যবস্থা আছে। এক-নম্বর ব্যবস্থা হলো পায়ে হেটে। দু-নম্বর ব্যবস্থা হলো ছোট ট্রেনে করে। তিন-নম্বর ব্যবস্থা হলো ব্যাটারিচালিত অটো রিক্সা দিয়ে। আর চার নম্বর ব্যবস্থা হলো বাইসাইকেল ভাড়া করে… আমরা ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সার টিকিট কাটার জন্য লাইনে দাড়ালাম। লম্বা লাইন। টিকিট কাটতে বেশ সময় লেগে গেল।
টিকিট কেটে অটোতে উঠে পড়লাম। অটোতে দশ-বারোজনের বসার ব্যবস্থা। আমাদের সাথে আরও তিনটি ফ্যামিলি। কিছুদূর চলে অটো এসে থামলো বাঘ পল্লিতে। প্রথমেই সাদা রংয়ের দোরাকাটা বাঘ। তারপর অতি পরিচিত রয়েল বেঙ্গল টাইগার। তারপর লেপার্ড। তারপর… চিতাবাঘ। বাঘ পল্লি শেষ করে আবার ফিরে আসলাম অটোতে। অটো এবার নিয়ে গেল সিংহ পল্লিতে। সিংহ পল্লি থেকে গন্ডার । তারপর ক্রোকোডাইল, হিপ্পোটমাস, গন্ডার। তারপর জিরাপ পল্লি। তারপর সাপ। তারপর…মনে নেই। চারিদিকে অসংখ্য মানুষ। বেশিরভাগ পরিবারই বাসা থেকে খাবার নিয়ে এসেছে। তারা গোল হয়ে পিকনিকের মতো আয়োজন করে আয়েশ করে খাবার খাচ্ছে। ওদের খাবারের আয়োজন দেখে আমাদের ক্ষুদা পেয়ে গেল। পার্কের ভেতরে একটি সবুজে আচ্ছাদিত হোটেলে ঢুকলাম। সেল্ফ সার্ভিস হোটেল। কিছু ফাস্টফুড খেয়ে বেড়িয়ে এলাম।
একটি দৃশ্য দেখে দাড়িয়ে গেলাম। একটি খোলা মাঠে স্কুল ড্রেস পরে জনা পঞ্চাশেক ছেলে-মেয়ে একসাথে খেলছে। তাদের পরনে গাঢ় শর্শে হলুদ রংয়ের জামা ও কালো রংয়ের প্যান্ট। দেখতে অদ্ভূত লাগছিল। ছেলে-মেয়েগুলোর বয়স চার-পাঁচ বছর হবে। সবাই খুব মজা করছে। দেখে মনে হলো সত্যিকারের পার্কে বেড়াতে এসেছি…
নেহেরু পার্ক থেকে বেড়িয়ে ছুটলাম চারমিনার দেখার জন্য। নেহেরু জুলজিক্যাল পার্ক থেকে চারমিনারের দূরত্ব পাঁচ কি:মি: মতো হবে। খুব দ্রুতই পৌছে গেলাম। আমরা এখন হায়দারাবাদ সিটির কেন্দ্র বিন্দুতে। চারমিনারকে কেন্দ্র করেই পুরো হায়দারাবাদ সিটির নকসা করা হয়েছে। এটি ভারতের তালিকাভুক্ত সর্বজনস্বীকৃত একটি স্থাপনা। ১৫৯১ খ্রিস্টাব্দে মোহাম্মদ কূলই কুতুব শাহ চারমিনার তৈরী করেন মসজিদ ও মাদ্রাসা হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্য। চারমিনারের আকার বর্গাকৃতির। যার প্রত্যেক দিকের দৈর্ঘ্য ২০ মিঃ (প্রায় ৬৬ ফুট), যার মধ্যে চারটি বড় বড় খিলান আছে, যা চারটি বড় রাস্তার নির্দেশক।এর প্রত্যেক কোনায় স্তম্ভগুলো সুন্দর কারুকাজ করা। দ্বিস্তর বেলকুনি বিশিষ্ট মিনার, যা কিনা উচ্চতায় ৫৬ মিঃ (প্রায় ১৮৪ ফুট)। প্রত্যেকটি মিনারের মাথায় মুকুটের মতন সুন্দর কারুকাজ করে কাটা। এবং প্রত্যেক মিনারের ভিত্তিতে ফুলের পাপড়ির মতন নকশা করা। চারমিনারের চূড়ায় উঠার জন্য ১৪৯ ধাপসম্পন্ন পেচানো সিড়ি রয়েছে। এই স্থাপনাটি গ্রানাইট, চুনাপাথর ও মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরী।
আমরা টিকিট কেটে চারমিনারের চূড়ায় ওঠার জন্য লাইনে দাড়ালাম। পেচানো সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছি। অন্যরকম একটা অনভূতি হচ্ছে। মনে হচ্ছে চারশ বছর পেছনে চলে এসেছি। কি অসাধারন স্থাপনা। এখনও ঠিক নতুনের মতো... চারমিনারের চূড়ায় উঠে বাইরে তাকাতেই মনে হলো চাররাস্তার কেন্দ্রবিন্দুতে দাড়িয়ে আছি। চারমিনারকে কেন্দ্র করে চারদিকে চারটি রাস্তা চলে গেছে। মিনারের চূড়ায় পর্যটকদের ভির ।কোলাহল...।
চারমিনারের চূড়া থেকে নেমে এসে রাস্তায় দাড়িয়েছি। আমাদের পাশ ঘেষে একটি মার্সিডিসবেঞ্চ গাড়ি এস থামলো। গাড়ি থেকে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে নামলো। মেয়েটির মাথায় সিঁদুর। দেখলাম মেয়েটি অন্য একটি পথ দিয়ে চারমিনারের নিচে ঢুকছে। সেদিকে তাকাতেই চোখে পড়ল একটি সাইনবোর্ড।ভাগ্যলক্ষি মন্দির। বুঝলাম চারমিনারের ঠিক নিচেই একটি মন্দির গড়ে উঠেছে...
চারমিনারের আশাপাশ এলাকা চারমিনার নামেই পরিচিত। এই স্থাপনা হতে পশ্চিম দিকে তাকালেই আরেকটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা দেখা যায়।যার নাম মক্কা মসজিদ।
চারমিনার থেকে বেড়িয়ে আমরা ঢুকলাম মক্কা মসজিদে। অসাধারন স্থাপনা...কুতুব শাহ বংশের পঞ্চম শাসক মুহাম্মদ কুলি কুতুব শাহ মক্কা থেকে ইট আনিয়ে এই মসজিদ নির্মাণ করেন। মক্কা মসজিদের পাশেই একটি কবরস্থান। সেখানে নিজাম এর বংসধরদের কবর দেওয়া হয়েছে। মুসলিম নর-নারীরা সেই কবর জিয়ারত করছেন...
মক্কা মসজিদের গেটে একধরনের মিষ্টি পাওয়া যায়। যা পবিত্র মিস্টি বলে গন্য। রঞ্জিত সেই মিষ্টি কিনল । মিস্টির সাথে নারকেল। মিষ্টি ও নারকেল একসাথে মুখে পূরে দিলাম...
চারমিনার ও মক্কা মসজিদের চারপাশে একটি বিশাল বাজার আছে, যা লাদ বাজার নামে পরিচিত। এই বাজার অলংকারের জন্য পরিচিত, বিশেষভাবে রেশমী চুড়ি এবং মুক্তার জন্য বিখ্যাত। আমার বন্ধু রঞ্জিত একটি পরিসংখ্যান দিলো, সেটি হলো-বর্তমানে চারমিনার বাজারে প্রায় ১৪,০০০ দোকান আছে।
প্রচন্ড ক্ষুদা পেয়েছে। চারমিনার ও মক্কা মসজিদ দেখা শেষ করে ছুটলাম হোটেলের খোঁজে। রোমান হোটেল। এ এলাকার বিখ্যাত হোটেল। অর্ডার দিলাম রুমাল রুটি, পনির ও হায়দারাবাদের বিরানী। ও....। অসাধারন...
সন্ধা হয়ে গেছে। ফুটপাত ধরে হাটছিলাম। রং-বেরং এর আলোতে আলোকিত চারমিনার বাজারের ফুটপাত। পেছনে ফিরে তাকালাম চারমিনারের দিকে। রাতের চারমিনার অন্যরকম রুপ ধারন করেছে...
এবার ফিরতে হবে... আমরা ফেরার আয়োজন শুরু করলাম....









মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ২:৫৫

মামুন ইসলাম বলেছেন: ৬ষ্ঠ বাংলা ব্লগ দিবসের
অভিন্দন ।

২| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:২১

নিয়ামুলবাসার বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ... মামুন ইসলাম... অভিনন্দন আপনাকেও..

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.