নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রমজানে রবের সাথে রাসূল সা.-এর আচরণ
হেদায়েতের নবী মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন তাবৎ সৃষ্টিকুলের মাঝে আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত, তার হকের প্রতি সর্বাধিক লক্ষ্য প্রদানকারী। আল্লাহ তাআলার উবুদিয়াত ও দাসত্ব, যাবতীয় ক্ষেত্রে তার প্রতি নতজানু হওয়া, মানবিক পূর্ণতার রূপায়ণে ক্রমান্বয় স্তর অতিক্রম—ইত্যাদি ক্ষেত্রে তিনি স্তর-ক্রম পেরিয়ে এক সময় উপনীত হয়েছেন পূর্ণতর মনজিলে, উচ্চতর অধিষ্ঠানে। সম্মান ও মর্যাদার এমন এক উচ্চতা ছুঁয়েছেন, সৃষ্টিকুলের কেউ যেখানে পৌঁছোতে সক্ষম হয়নি। তার পূর্বাপর যাবতীয় পাপ ও গোনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন।
উচ্চতার এমন স্তরে সমাসীন হওয়া সত্ত্বেও, রাসূল দীর্ঘ সময় এবাদতে রাত্রি যাপন করতেন, এমনকি, তার পবিত্র পদ-যুগল স্ফীত হয়ে যেত, ফেটে যেত অসহ্য ব্যথায়। আবু বকর তনয়া আয়েশা সিদ্দীকা অবাক হয়ে তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে উত্তরে তিনি বলেন:—
أفلا أحب أن أكون عبداً شكوراً؟!
আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হতে পছন্দ করব না ?
রাসূল কাঁদতেন ভীত-নতজানু হয়ে, আল্লাহকে ডাকতেন বিপদগ্রস্তের অবিকল। সাহাবি আব্দুল্লাহ বিন শাখীর মন্তব্য করেন :—
رأيت رسول الله صلى الله عليه و سلم يصلي، وفي صدره أزيز كأزيز الرحى من البكاء صلى الله عليه و سلم.
কান্নার ফলে বুকে চাকার মৃদু ধ্বনি নিয়ে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাত আদায় করতে দেখেছি।
আয়েশা রা., উম্মুল মোমিনীন ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয়তমা সহধর্মিণী, এক আশ্চর্য বিষয়ের বর্ণনা দিয়ে বলেন :—
لما كان ليلة من الليالي قال: يا عائشة ذريني أتعبد لربي، قالت: والله إني لأحب قربك، وأحب ما سرَّك، قالت: فقام فتطهر ثم قام يصلي، قالت: فلم يزل يبكي حتى بلَّ حجره، قالت: ثم بكى فلم يزل يبكي حتى بلَّ لحيته، قالت: ثم بكى فلم يزل يبكي حتى بلَّ الأرض، فجاء بلال يؤذنه بالصلاة؛ فلما رآه يبكي قال: يا رسول الله، لِمَ تبكي وقد غفر الله لك ما تقدم من ذنبك وما تأخر؟! قال: أفلا أكون عبداً شكوراً، لقد نزلت عليّ الليلة آية، ويل لمن قرأها ولم يتفكر فيها: إن في خلق السماوات و الأرض... الآية كلها
এক রাতে রাসূল আমাকে বললেন : আয়েশা ! এখন আমি রবের এবাদতে মগ্ন হব। আয়েশা বললেন : আল্লাহর শপথ ! আমি নিশ্চয় আপনার নৈকট্য-সান্নিধ্য পছন্দ করি। কিন্তু, সাথে-সাথে পছন্দ করি এমন বিষয়, যা আপনাকে আনন্দ প্রদান করে। আয়েশা বলেন : অত:পর রাসূল উঠে গিয়ে পবিত্র হলেন এবং সালাতে দণ্ডায়মান হলেন। আয়েশা বলেন : অত:পর তিনি এত ক্রন্দন করলেন যে, তার বক্ষ ভিজে গেল। অথবা—তিনি এতটা ক্রন্দন করলেন যে, তার দাঁড়ি সিক্ত হল। কিংবা—তিনি এতটা ক্রন্দন করলেন যে, তার সম্মুখস্থ জমি ভিজে গেল। অত:পর সময় ঘনালে বেলাল রা. সালাতের আজান দিতে আগমন করলেন, তাকে ক্রন্দনরত দেখে বেলাল বললেন : হে আল্লাহর রাসূল ! কাঁদছেন কেন, আল্লাহ তো আপনার পূর্বাপর সকল পাপ ক্ষমা করে দিয়েছেন ? উত্তরে তিনি এরশাদ করেন : আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হব না ? আজ রাতে আমার নিকট একটি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। পাঠ করেও যে ব্যক্তি এ আয়াতে মনোনিবেশ করবে না, তার ভাগ্যে ধ্বংস আছে—‘নিশ্চয় আকাশমণ্ডলী ও ভূমি মাঝে...এ আয়াত পুরোটি।’
ভেবে দেখুন ! এ এমন ব্যক্তির পক্ষ হতে আল্লাহর নির্দেশের পূর্ণাঙ্গ রূপায়ণ, যিনি ছিলেন আদম সন্তানদের নেতা। আল্লাহ প্রদত্ত সংবাদের ভিত্তিতেই তিনি অবগত ছিলেন যে, জান্নাতের অতি উঁচু স্তরে হবে তার অবস্থান। এ সত্ত্বেও, তিনি এবাদত ও আল্লাহর আনুগত্য জ্ঞাপনের ক্ষেত্রে নিজেকে এমন উজাড় করে দিতে কুণ্ঠিত হতেন না বিন্দুমাত্র। লীন করে দিতেন আল্লাহর দরবারে ; আল্লাহ-ভীতি, ভয় ও আশায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠতেন—আত্মা, মনন ও চেতনায়।
পক্ষান্তরে, নববী এ আদর্শের আলোকে আমরা যখন নিজেদের বিবেচনা করি, বিশ্লেষণ করি প্রতিটি কর্ম ও আচরণ, গ্রাস করে সীমাহীন আতঙ্ক—এবাদত ও আনুগত্যের ব্যাপারে কেউ হয়তো অলস ও উদ্যমহীন, হামেশা পাপে নিমজ্জিত কেউ, আল্লাহ প্রেমের ঘাটতি সত্ত্বেও বিন্দুমাত্র বিচলিত নয় ; তুমি বরং দেখতে পাবে যে, অলসতা ও বিবেক-শূন্যতা যেন জগদ্দল পাথরের মত তাদের চেতনায় জমে বসেছে। দেখতে পাবে, এত কিছুর পরও, নিজেকে ভাবছে সে আল্লাহর যাবতীয় পাকড়াও হতে মুক্ত, বিপদ হতে শত-হস্ত দূর ! যেন কোন ভয়হীন একাধিপত্য ভোগ করছে সে। নববী আদর্শের উক্ত দৃষ্টান্তকে সামনে রেখে আমরা উভয়ের মাঝের যোজন যোজন পার্থক্য সহজে অনুভব করতে পারি। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন, ক্ষমা করুন তিনি, টেনে তুলুন এ বিপদ হতে।
রমজান মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে আচরণ ও কর্ম নিয়ে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হতেন, তা সকলের জন্য জীবন্ত এক উদাহরণ ; তিনি তার এবাদত ও বিনয়-লীন আনুগত্য আল্লাহর কাছে উপস্থাপন করতেন। নানাভাবে শোভিত-মহিমান্বিত করতেন তার এ সময়গুলোকে।
©somewhere in net ltd.