![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রমজানের চাঁদ দেখার রাতেই যখন সবাই নিশ্চিত হয়ে গেলো কাল ভোর রাত থেকে সেহরি খেতে হবে, তখন সে রাতেই সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পরই গেলাম কয়েক হালি কলা কিনতে আমার পরিচিত কলা বিক্রেতার কাছে। যেখানে প্রতিদিন পনেরো টাকা হালি, আজ দোকানদার বলল, 'ভাই, আজ থেকে হালি পঁচিশ টাকা।' আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,”কেনো?” সে জবাবে বলল যে পাইকারি বিক্রেতা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। দোকানদার যেহেতু বেশী দামে কিনে এনেছে, সুতরাং বিক্রিও করতে হবে বেশি দামে। আমি বাধ্য হয়ে বিশ টাকা করে হালি কিনলাম। মনে মনে ভাবলাম, বাহ! সাধারণ মানুষদের সিয়াম সাধনা শুরু হবার আগেই পাইকারি বিক্রেতা বা মজুতদারদের সিয়াম সাধনা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।
তাকওয়া অর্জনের মাস রমজান মাস। মূলত সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থেকে গরীব, ক্ষুধার্ত মানুষদের দুঃখ আর যন্ত্রণা উপলব্ধি করতে পারা এবং রিপুর দমন করে আত্মিক পবিত্রতা অর্জন করাটাই হচ্ছে সিয়াম সাধনার অন্যতম লক্ষ। যদিও আমাদের দেশে রোজা রাখা বা সিয়াম সাধনা বলতে বেশীরভাগ মানুষ বুঝেন, ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্রেফ না খেয়ে থাকা। আর কোনোমতে ঘুমিয়ে, কিংবা টেলিভিশন দেখে সময়টা কাটিয়ে দেওয়া।
এতো গেল সাধারণের রোজার কথা। কিন্তু রমজান মাসে আমাদের সমাজের অসাধু ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য কি শুধু বাসিমুখে সারাদিন কাটিয়ে দেওয়া, নাকি সারামাস ভোক্তাদের রক্ত চুষে চুষে খাওয়া? পানাহার থেকে বিরত থেকে গরীবের পেটের জ্বালা বুজতে সক্ষম হওয়া, নাকি উল্টো গরীবের পেটে লাথি মেরে এই গোটা মাসে ধনকুবের হবার সাধনায় লিপ্ত হওয়া? তাদের জন্য রমজান মাস কি সিয়াম সাধনার মাস, নাকি ধনী হবার সাধনার মাস?
যাদের সামর্থ্য আছে তারা না হয় নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেলেও গা বাঁচিয়ে মাস কাটিয়ে দেবে, কিন্তু যারা আর্থিক দিক দিয়ে দুর্বল, সীমিত আয়ের মানুষ কিংবা শ্রমিক, এরা কিভাবে দিন কাটাবে? একমাসের জন্য তো আর সীমিত আয়ের মানুষদের বেতনও বাড়বে না আর শ্রমিকরা যদি ঝগড়াঝাঁটি করে দুটো পয়সা বেশী আদায় না করতে পারে তাহলে তাদের দিন কিভাবে কাটবে?
আমার এখনও পরিষ্কার মনে পড়ে বিগত কয়েক বছর আগে এক রিকশা শ্রমিকের কথা। তখন রমজান মাস শেষ হতে আর হাতেগুণা প্রায় কয়েকদিন বাকি। বাজার থেকে যখন বাড়িতে এসে রিকশা ছাড়লাম, নির্দিষ্ট রেটের ভাড়া দিলাম, তখন বেচারা করুণ মুখে আমাকে বলেছিল,'ভাইজান! আরো দশটা টাকা বেশী দেন না। সব কিছুর দাম বেশী। কি করুম, কন? আমার ছোট মাইয়্যাটা একটা নতুন জামার জন্য কানতাসে। সামনে ঈদ। কেমনে দিমু ভাইজান?' বেদনার্ত আমি তাকে কিছু টাকা বাড়তি দিলাম ঠিকই, কিন্তু নিজের বিবেককে প্রশ্ন করলাম, এই কি শেষ? সামান্য কিছু বেশী টাকা দিলে তার না হয় সাময়িক উপকার হবে, কিন্তু কিভাবে শেষ হবে এই অভাগার চির ভোগান্তি? আমি কোন সদুত্তর খোঁজে পাইনি।
স্রষ্টা আমাদের উপর রোজা ফরজ করেছেন এক উদ্দেশ্যে, আর আমাদের প্রবৃত্তির তাড়নায় আমরা সেই রোজাকে ব্যবহার করি এ কোন উদ্দেশ্যে? আত্মশুদ্ধির মধ্য দিয়ে তাকওয়া অর্জন করতে হয়। কিন্তু আত্মশুদ্ধি করতে হলেও নূন্যতম মানুষের শরীরের ভেতরে আত্মা থাকতে হয়। আত্মা তো আমরা প্রবৃত্তির তাড়নায় শরীরের চাহিদা মেটাতে গিয়ে অনেক আগেই বিক্রি করে দিয়েছি। যেখানে আমাদের আত্মাই নেই, সেখানে ‘আত্মশুদ্ধি’ আসবে কোথা থেকে? ভোক্তারা ভুগবে, আর অসাধু ব্যবসায়ী কিংবা মজুতদারদের লাভ বাড়বে। তারপর সেই লাভবান ব্যবসায়ী আর তাদের সন্তানেরা সদর্পে মাস শেষে ঈদের আগে দামি শপিং মলে যাবে শরীর সাজাতে!
এই হচ্ছে আমাদের সিয়াম সাধনা। স্রষ্টার কাছে এর দায়ভার অর্পণ করে আর এর সঠিক সমাধান কামনা করে আজ বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভালো থাকবেন।
২| ০৭ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ১২:৩১
নাজিম সৌরভ বলেছেন: এই এক মাস ব্যবসা করে উনারা তো বিল গেটস হয়ে যাবেন, তাই জনসাধারণের গলা কাটতে থাকেন !
০৭ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৬
অনন্ত নিগার বলেছেন: অন্তত ব্যবসায়ীদের তাই ধারণা। এক মাসে সারা বছরের ইনকাম একসাথে করে ফেলতে চান।
৩| ০৭ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ১:০৫
ফেনা বলেছেন: বাস্তবতার চমতকার উপস্থাপন।
এই অসাধুদের হাত হতে বাচতে হলে সরকারের পাশাপাশি জনগণকেই সচেতন হতে হবে।
০৭ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ২:৩৪
অনন্ত নিগার বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
৪| ০৭ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:৩১
রাজীব নুর বলেছেন: আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা ভন্ড। তাদের চিন্তা একটাই কিভাবে কাস্টমারদের ঠকানো যায়।
৫| ০৭ ই জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২০
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: বাংলাদেশের মুসলিম ব্যবসায়ীরা প্রকৃত ইসলাম ধারণ করছে না। তাই তাদের জন্য হেদায়েত কামনা করা ছাড়া কিছুই করার নেই...
৬| ০৮ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:১৯
মঈনুদ্দিন অারিফ মিরসরায়ী বলেছেন: জাজাকাল্লাহ
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ১২:২৮
বিজন রয় বলেছেন: আমাদের দেশে ব্যবসায়ীরা কোন ভাল ব্যবসা করে না।
সিয়াম তো দূরের কথা।