নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রূদ্রনীল আকাশ যদি কালো হয়ে যায়, কি\'ইবা করার আছে, কে\'ইবা করতে চায়!

নিহান ওয়াহিদ

রুদ্রনিল আকাশ যদি কালো হয়ে যায়,

নিহান ওয়াহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার ছেলেবেলা এবং আমি

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৫

অতি ছোটবেলায় যখন বিকট গর্জন এবং ঘন বর্ষনের ফলে চারিদিক জলাঞ্জলি, মনের মধ্যে তখন ক্ষিন আশা জাগত, আজকে মনে হয় স্যার আসবেন না। তবুও, যেহেতু সাবধানের মাইর নাই তাই একদম কায়মনোবাক্যে বিধাতার কাছে প্রার্থনা থাকতো, আরেকটু বৃষ্টি দাও হেঁ। আবার অনেক অদ্ভুত চিন্তাও মাথায় আসতো। আজকে যদি স্যার পিচ্ছিল পথে ধরাশায়ী হয়ে কাদামাখা হয়ে যান, যদি স্যারের সেই শতবর্ষ আয়ুপ্রাপ্ত নিস্তেজ ছাতাখানা আরও নিস্তেজ হয়ে যায়, যদি স্যারের শয্যাশায়ী স্ত্রী আকস্মিক ব্যাথায় কাতর হয়ে যান!
কিন্তু শত পিচ্ছিল পথ অতিক্রম করে, ছাতার নিস্তেজতাকে পাত্তা না দিয়ে স্যার আসতেন, একসময় দেখা যেত পথের ওপারে হলদে আলোর উঁকি। যেহেতু স্যারের শয্যাশায়ী স্ত্রীকে তিনি পেছনে ফেলে এসেছেন, তাই আমাকেই শয্যাশায়ীর ভূমিকায় অভিনয় করতে হত। বিছানায় গা এলিয়ে, কৃত্রিম পেটব্যাথায় আক্রান্ত হয়ে বিছানায় এপাশ ওপাশ করতাম, হয়তো মা তা বুঝতেন। চা-নাস্তার সাথে খবর পাঠিয়ে দিতেন "আজকে ও পড়বে না।"

আমি কখনই মঞ্চনাটকের সাথে যুক্ত ছিলাম না। তাই একটানা বেশীক্ষণ অভিনয় চালিয়ে যাওয়া ছিল আমার পক্ষে দুঃসাধ্য। একটু পরেই ইতস্তত করতে করতে, বিছানা থেকে নামতে নামতে, হারিকেনের ঘোলাটে আলোয় কাঁথা সেলাইয়ে ব্যস্ত মাকে পাশ কাটিয়ে যেতাম। মনের মধ্যে একটা ভয়ও দানা বাঁধতো, কি জানি কখন পেটব্যথার উপশম হিসেবে কোন কুৎসিত স্বাদযুক্ত তরল গলাধঃকরণের ফরমায়েশ এসে যায়! এহেন অবস্থায় সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছিল আমার পিতামহীর কক্ষটি। তখনকার দিনে চায়ের সাথে সবসময় নাস্তার প্রচলন না থাকলেও দাদিমার কক্ষে নিরাপত্তার সাথে দুয়েকটা গল্প পাওয়া যেত, শোনা যেত হরদমই।

নিরাপত্তা নিশ্চিতে হোক অথবা গল্প শোনার লোভে, তখন আমি ভীড়তাম দাদীমার কাছে। 'বড় তসবি' জপ করতে ব্যস্ত দাদীমাকে গল্প বলায় বাধ্য করাই ছিল তখনকার সংকল্প। একসময় হাতের তসবিখানায় চুমো দিয়ে কপালে ঠেকিয়ে আলতো করে বালিশের নিচে স্থলাভিষিক্ত করতেন, আর আমাকে স্থলাভিষিক্ত করতেন নিজের আরও কাছে। তিনি গল্প শুরু করতেন, প্রায়শই সেই গল্প জুড়ে থাকতো কোন এক রাজা। সে কোথাকার রাজা, কবেকার রাজা, কোন রাজা ইত্যাদি প্রশ্নে দাদীমাকে জর্জরিত করতাম না মোটেই। এইসব প্রশ্ন তখন চিত্তে উদয়ও হতো না। হয়তো আমি সচেতন শ্রোতা ছিলাম না!

দাদীমা গল্প বলে যেতেন, গল্পের সেই রাজার ছিল এক রানী, আর ছিল এক রাজকুমার। তাদের ছিল সুন্দর মনোহর এক রাজ্য। কিন্তু হঠাৎ অকালে কোন এক কাল-এর গ্রাসে পড়ে রানী হয়ে যেতেন শয্যাগত। অনেক ডাক্তার বদ্যির পথ্যেও অসুখ কমতো না; কত মানত, পূজা, তপস্যায়ও মুক্তি মিলতো না; শতজনের শতকথায় কতকি কৌশল অবলম্বন করেও উপায় পাওয়া যেত না। একসময় রানী পরপারে পারাপার হতেন। কিছুটা কালবিলম্ব করে শোকে কাতর রাজা আরেকটি বিয়ে করতেন। অতঃপর সৎমায়ের তত্ত্বাবধানে রাজকুমারের জীবনে নেমে আসতো ভয়াবহ দূর্যোগ। কত অত্যাচার মেনে নেয়া, কত দুপুর না খেয়ে কাটিয়ে দেওয়া, কত গালমন্দ মুখ বুজে সহ্য করা। কিশোর বালকের দুর্দশা দেখে মনের গহীন থেকে একরাশ হতাশা মিশ্রিত দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গল্পের বাকি অংশ বলার জন্য তাগিদ দিয়ে বলতাম, "তারপর!"

তারপর? তারপর একসময় মনের দুঃখে রাজকুমার সেই সুন্দর মনোহর রাজ্যকে পেছনে ফেলে, নিজ পিতাকে ফেলে আপন পঙ্খীরাজ নিয়ে নিরুদ্দেশ হত। কল্পনাতীত দ্রুতবেগে চলা সেই পঙ্খীরাজে চড়ে, কত গহীন বন মাড়িয়ে, নাম না জানা কত জনপদ লোক-লোকান্তর এড়িয়ে, দেশ থেকে দেশান্তরে ঘুরে বেড়াতো।

আচ্ছা, এরকম একটা পঙ্খিরাজ যদি আমাদের থাকতো! আমি তাতে চড়ে ইস্কুলে যেতে পারতাম, আমার বাবা তাতে চড়ে কর্মস্থলে যেতে পারতেন, ফিরবার সময় বাজার সদাই করে নিয়ে আসতে পারতেন, তার পেছনে ঠেলাগাড়ির মত কিছু একটা যুক্ত করে তাতে সবাই বোঝাই হয়ে মাতুলালয়ে গমন করতে পারতাম! এরকম হরেক কিসিমের চিন্তা মাথায় আসলেও তা বেশীক্ষণ স্থায়ী হত না।

সে যাই হোক, এভাবে চলতে থাকা রাজকুমার কোন এক গহীন বনের কোন এক দানবের কাছে বন্দী কোন এক রাজকুমারীর সাক্ষাৎ পেত। তো কখনো দৈহিক বলে, কখনোবা বুদ্ধির ছলে কিভাবে কোন উপায়ে রাজকুমার সেই দানবকে পরাস্ত করতো, সে ছিল এক দারুণ রোমাঞ্চকর কাহিনী।

এভাবে গল্প চলতে থাকে, কিন্তু ক্লান্ত এবং আরামে শ্রান্ত, নিদ্রাকাতর আমার চোখ দুটি বন্ধ হত ধীরে ধীরে, স্বপ্ন এসে হানা দিত। সেই স্বপ্নে ছাতাওয়ালা কোন মাস্টারমশাই থাকতো না,থাকতো পঙ্খীরাজ, ব্যাঙ্গমা- ব্যাঙ্গমী, সেখানে থাকতো এক গহীন বন, আর থাকতাম আমি।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫২

ফারিহা নোভা বলেছেন: বাহ সুন্দর স্মৃতিচারণ । আহ ছোট বেলা 8-|

২| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:৫৭

নিহান ওয়াহিদ বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ১৭ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১:৩৬

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: অনেক কিছুতেই নিজের সাথে মিল পেলাম। লিখার জন্য ধন্যবাদ।

১৭ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:১৩

নিহান ওয়াহিদ বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ। যারা গ্রামে থাকেন বা গ্রামে শৈশব কেটেছে তাদের সকলের ছোটবেলাই প্রায় একই রকম। যেন সবাই একই মায়ের কোলে বেড়ে ওঠা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.