নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগ-বাড়ির সমস্ত লেখা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। লেখকের অনুমতি ছাড়া এই ব্লগ-বাড়ির কোনো লেখা অন্যকোথাও প্রকাশ করা যাবে না।
আমাকে এখন বিয়ে করতে পারবে? এই মুর্হুতে?
আমার খাটে বসে নীলা পা দোলাতে দোলাতে আমাকে জিগ্গেস করলো।
আমি হতম্ভব হয়ে দিকে তাকিয়ে আছি। বলে কি এই মেয়ে!
এখন মানে এখন। পাঁচ মিনিট সময় দিলাম তোমাকে। চিন্তা ভাবনা করে বলো পারবে কিনা?
আমার মাথায় এখন অনেক কিছু ঘুরছে। সব কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে!
আগের বার ডিছিসন নিতে পার নি, এক বছর পর আসলাম। পরের বার যে আবার আসব, সেটা তোমাকে কে বলেছে?
কথা একেবারে ঠিক। নির্ভেজাল সত্য কথা।
গতবার আমতা আমতা করছিলাম। কেবল ২ মাস হলো প্রথম চাকরি পেয়েছি। মেসে থাকি। বাসাও নিতে পারিনি।
বেতনও খুব একটা ভালো না। মধ্যবিত্ত পরিবারে ছেলে। জীবন নানা সমস্যা জর্জরিত। হ্যাঁ না কিছুই বলতে পারি নি। শুধু তাকিয়ে ছিলাম অনেকক্ষন। কোন কুলক্ষনেও ভাবি নি এই মেয়ে এত বড় অঘটন ঘটাবে। হাসি মুখে আমার মেস থেকে চলে গেল। পরের তিন দিন কোন খোঁজ নেই । আমি পাগলের মতো সব জায়গায় খুঁজেছি। মোবাইল ফোন বন্ধ । আমার মাথা খারাপ অবস্থা। মেয়ে কৈ আছে জানিনা। চার দিন পরে মেসেজ পেলাম। "আমি বিয়ে করে ফেলেছি। তুমি বসে ভাবতে থাকো। বেশী করে ভাবো। আমার এত ভাবার সময় নেই। বিয়ে করতে ইচ্ছে করছিল। তোমার প্রয়োজন না থাকতে পারে কিন্তু আমার বয়সী মেয়ে কতদিন একা থাকতে পারে? তুমি তো বুঝলে না।" তারপর কলিকাতার একটা গানের প্রথম লাইন মেসেজ করলো।
"আর কতকাল একা থাকবো?"
কলিকাতার কোনো কিছুই আমার এমনি তেই ভালো লাগে না, তারপর এই গান শুনে পুরোপুরি মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। শালার নটী গায়িকা! এই সব গান না গেয়ে রাস্তায় যেয়ে দাড়ালেই তো পারতো! কিছু ইনকামও হতো!
সুতরাং আর ওয়েট করার প্রশ্নই আসে না।
এই মেয়ে পারে না এমন কিছু আছে নাকি আমি জানি না।
বাসায় লুন্গি পরে আছি। চেন্জ করার শুধু সময় চাইলাম। লুন্গি পড়ে তো আর বিয়ে করতে যাওয়া যাবে না। বাথরুম থেকে ড্রেস চেন্জ করে এসে দেখি লাল টকটকে লিপষ্টিক লাগাচ্ছে। বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকা যায় না। মেয়ে বেশী ফর্সা না কিন্তু মাথা খারাপ টাইপের ফিগার। একটা হাসি দিলে দুনিয়া ঠান্ডা। যখন হাসে তখন মনে হয় সারা দুনিয়া ওর সাথে হাসে! প্রথম বার এই হাসি দেখেই আমি নীলার প্রেমে পড়ি। ওর হাসি একটা ঘোরের মতো। মনে হয় না এটা থেকে কখনো বের হতে পারবো! ও যাই করে আমি কোন প্রতিবাদ করতে পারিনা। ওর কোন কিছুতে না বলার সাহস ও কখনো হয়নি আমার। আমি শুধু চাইতাম ও আমার পাশে বসে থাকুক আর সুন্দর করে হাসুক। আর আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবো! ও এটা জানতো। কিভাবে জানত আমি জানি না। কখনো বলিনি ওকে। কারনে অকারনে আমার সামনে শুধু হাসতো। আর আমি ওর প্রেমের ঘোরের ছোট জাল থেকে আরো বড় জালে জড়িয়ে যেতাম।
ড্রয়ার থেকে টাকা বার করলাম। বিয়ে তো আর ফ্রি করা যাবে না। আর ওকে নিয়ে আমার একটা গোপন ইচ্ছে আছে। বিয়ের পর ওকে আমি আমি একটা নীল কাতান শাড়ী কিনে দেব। ও যখন এই শাড়ী টা পড়ে নীল পরী হয়ে আমার সামনে আসবে তখন আমি সাহস করে একবার জড়িয়ে ধরব। ও শুধু আমাকে বকা দিত, বলত আমি একটা ভীতুর ডিম। ওর হাত ধরতেও সাহস পেতাম না। একবার ওর সামনে সাহসী পুরুষ হতে চাই!
কাজী অফিসে বিয়ে টা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে গেল। রেজিস্টার খাতায় সাইন করার সময় আমার হাতটা একটু কাপছিল। প্রথম বিয়ে বলে কথা! নীলা ওর ভূবন ভুলানো একটা হাসি দিল আমাকে। ওর ঐ হাসি দেখে আমি গত এক বছরের সব দু:খ কষ্ট গুলি ভুলে গেলাম। আমি ওকে ভালোবাসি। পাগলের মতো ভালিবাসি। ওকে ছাড়া আমি বাচবো না। গত একটা বছর আমি কি জাহান্নামের মধ্যে দিয়ে পার করেছি! ওকে ছাড়া বেঁচে থাকা কতটা কঠিন এটা একমাত্র আমিই জানি!
বকশি বাজারের কজী অফিস থেকে বের হয়ে রাস্তায় এসে দাড়ালাম। নীলা এসে আমার হাত ধরলো। আমি আকাশের দিকে তাকালাম। জীবন টা আসলেই সুন্দর! ও আমার পাশে থাকলে আমি মনে হয় হেটে এভারেস্ট এ উঠে যেতে পারবো। এতো দিন পরে নিজেকে একজন পরিপূর্ন মানুষ মনে হচ্ছে।
এখন কি করবো আমরা?
নিউ মার্কেটে এ যাবো তবে আগে খেতে হবে। অনেক দিন হলো তোমাকে কোনো ভালো ট্রিট দেই না। চলো ষ্টার এ যেয়ে কাচ্চি আর বোরহানি খেয়ে আসি। ঐটা ওর ফেভারিট খাবার। না করার প্রশ্নই উঠে না। ওর সুন্দর হাসি তা আবার দেখতে পেলাম। আহ! বেচে থাকা তা সত্যি দারুন।
শাড়ী কিনে বাসায় ফিরছি রিকসায় করে। কতো দিন হলো ওর সাথে এভাবে ঘোরা ঘুরি করি না। ওর ডান হাত টা আমার দুই হাতের মধ্যে শক্ত করে ধরে রাখলাম। একবার ছেড়েছি, আর কখনো এই হাত ছাড়বো না।
রেডি মেইড ব্লাউস টা মনে হয় ভালো ভাবে ফিট হবে না!
না হলে নেই! পরবে না। কি দরকার ব্লাউস এর? আমার জন্য নীল শাড়ী যথেষ্ট! সারা সময় ও হাসে আর এবার আমি দাঁত বের করে একটা হাসি দিলাম। নির্ঘাত কঠিন একটা ঝারি খাবো। ব্যাপার না। অদ্ভুত ব্যাপার হলো। নীলা অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন।
তোমার এতো সাহস কিভাবে হলো?
আমি জানি না। সত্যি জানি না।
তোমার এতো সাহস আগে থাকলে তো এই এক বছর দুই জন কে এতো কষ্ট করতে হতো না।
ঐ ছেলেটা কে ছেড়ে আসলে কেনো?
ও একটা আস্ত রোবট। সারা দিন মনে হতো আমি একটা রোবটের সাথে সংসার করছি। তাও চেস্টা করেছি তোমার ভালবাসা ভূলে যেতে। এক বছর অনেক লম্বা সময়। তাও পারি নি। হৃদয়ের মধ্যে একজনকে রেখে আরেকজনকে নিয়ে সারা জীবন সংসার করা যায় না।
আজকে ওকে এই বিষয়ে কিছু বলতে ইচ্ছে করছেনা। হয়তো ওকে কিছু বলবোও না। ওকে আমি ফিরে পেয়েছি। এটাই যথেষ্ট।
ঘরে ঢুকার পর আমাকে ও বেডরুম থেকে বের করে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। ড্রেস চেন্জ করে শাড়ী টা পড়বে। আমাকে ড্রইং রুমে ওয়েট করতে বলল। সোফায় বসে টিভি টা ছেড়ে দিলাম। যাহ শালা! কার্টুন নেটওর্য়াকে বেন টেন দেখি ধাসুম ধুসুম করে মারামারি করছে। ইস, ওর মতো যদি আমার একটা ঘড়ি থাকতো? এক বছর আগের সব কিছু যদি একবার পাল্টে দিতে পারতাম! আর একবার যদি সেই সুযোগ টা পেতাম!
খুট করে একটা শব্দ হলো নীলা মনে হয় দড়জা খুলে দিয়েছে! ঐবার শুরু হবে আসল ধাসুম ধুসুম! পাক্কা এক বছরে আসল এর সাথে সুদ বেশ বড় হয়ে গেছে! পুরাটা এবার আদাই করবো!
টিভি টা বন্ধ করে বেডরুম এসে ধুকলাম। বেশ সাহস পাচ্ছি। নীলা কে এখন আর আগের মতো ভয় লাগসে না। কি বলেসে বিয়ের পর ছেলে রা ভীতু হয়ে যায়! নীলা এর দিকে তাকিয়ে মাথা ঘুরে গেলো। বজ্জাত মেয়েটা ব্লাউস পড়ে নি। আমি আগেই বলেছি এই মেয়ের পক্ষে অসম্ভব বলে কিছু নাই। আমার দিকে তাকিয়ে ওর ট্রেড মার্ক হাসি দিয়ে বললোঃ
রেডি মেইড ব্লাউস টা ফিট হচ্ছে না। আমার না অনেক লজ্জা লজ্জা লাগছে।
ওকে দেখে মনে হলো না ও কোন লজ্জা পাচ্ছে। ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আমি সারা পৃথিবীর সব কথা ভুলে গেলাম। দৌড়ে যেয়ে ওকে পাগলের মতো জড়িয়ে ধরলাম। ও চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললোঃ
খবরদার আমাকে বেশি ভালোবাসবে না। বেশি ভালোবাসায় আমার অ্যালার্জী হয়!
তোমার অ্যালার্জী এর আমি খ্যাতা পুরি। বিয়ের পর মেয়েদের বেশি প্রশয় দিতে হয় না সব সময়। গভির ভালোবাসায় ওকে আমি বুকে টেনে নিলাম। বাকি টা আর বল্লাম না। নীলা এর সাথে এখন আমারো লজ্জা লজ্জা লাগছে। আচ্ছা আপনারা আমার বেডরুম এ কেন ঢুকেছেন? জানেন না বাসর ঘরে নব বিবাহিত দম্পতি দের ডিস্টারব করতে হয় না.................।
নীলা আমার বিছানায় শুয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার মুখে তখন বিশ্বজয়ের হাসি। বিকালের সোনালী রোদ জানালার ফাঁক গলে তখন আছড়ে পড়ছে আমাদের দুজনের গায়ে। নীলার বাঁধ ভান্গা হাসিতে উদ্ভাসিত চারিদিক। বিকালের শেষ হয়ে আসা আলো সাক্ষী হয়ে রইলো একটি নতুন সূর্যাস্তের আর একজোড়া প্রাণের ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ইতিহাসে।
গল্পটির এখানই সমাপ্তি হতে পারতো কিন্ত আমি করলাম না। কারন প্রেমের গল্পের কোনো সমাপ্তি নেই। সত্যিকারের ভালবাসা কখনো কোন দিন শেষ হয় না, হতে পারে না..................
[আপনি কি জানেন? ৪৩% ভালোবাসা প্রথম দেখাতেই হয়। ৮৯% মেয়েই ছেলেদের চোখের ভাষা বুঝতে পারে। অধিকাংশ ছেলেরা তার ভালোবাসার মানুষকে শাড়ীতে দেখতে পছন্দ করে।]
দায়বদ্ধতা: কত কত লেখা ড্রাফটে রয়ে গেছে! শেষ করার সময় হয় না। মাথায় একটা লেখা আসে, বেশ খানিক টা লেখার পরে আলসেমী চলে আসে। শেষ করি করি বলেও করা হচ্ছিল না। কথার ফুলঝরি! আপুর ঝাড়ি "আলসেমি ভেঙ্গে ড্রাফ্ট এর লেখাগুলো জলদি পোস্ট করুন" মনে হয় টনিক হিসেবে কাজ করেছে। তাই এই লেখাটা আপু কেই উৎসর্গ করলাম। নীল রং টা আপুর জন্য চয়েস করেছি। ছবির মেয়েটা কারো প্রেমিকা হলে আমি পালাই পালাই! গুগল মামা এ জন্য দায়ী। সেই এই ছবি সাপ্লাই করেছে..........
সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইল।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীল আকাশ, আগস্ট, ২০১৮
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৪০
নীল আকাশ বলেছেন: "জীবনে কিছু বিশেষ মানুষের জন্য কোন কিছু চিন্তা না করে এমন হুট করে ডিসিশন নিতে হয় । বাস্তব চিন্তা করলে সেটি ঠিক না কিন্তু ভালোবাসা যে কোন কিছু মানেনা।"
- আমার পুরো গল্পের শানে নযুল আপনি মাত্র ২ লাইনে লিখে দিলেন! বস!
লেখার শেষ অংশটুকু পড়ে মজা পেলাম। আমি সাধারণত কাউকে ঝাড়ি দেইনা, দিতে পারিনা । তবে ইদানিং কেমন পাঁজি হয়ে যাচ্ছি ।
- আপনার ঠেলার জন্যই এই লেখা শেষ হয়েছে। মাঝে মাঝে আমার ব্লগে এসে ঠেলা দিয়ে যাবেন।
আর, আমাকে লেখা উৎসর্গ করে ভালোবাসা ও সম্মান টুকু দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা ভাইয়া । আপনি যে আমাকে তার যোগ্য মনে করেছেন আমি অনেক খুশী।
- আমার এই লেখাটার একটা বড় সমস্যা হয়েছে। এটা কোন ভাবেই প্রথম পাতায় প্রকাশ করতে পারলাম না। তিন দিন চেষ্টা করেছি। আমার খুব খারাপ লেগেছে। নতুন করে আবার লিখতে হয়েছে তবে এবার ছাপা হয়েছ প্রথম পাতায়। আপনার মন্তব্য টা এত ভালো লেগেছে যে আমি আমার এই অরিজিনাল লেখাটা শুধু আপনার এই মন্তব্যের জন্য আমার কাছে রেখে দিচ্ছি। আমার ব্লগের এটা আপনার জন্য এটা থাকবে। আপনার কমেন্ট তো আমি আর কপি করে নতুন টাতে দিতে পারবো না। এটা আপনার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। ভালো থাকবেন, সব সময়।
©somewhere in net ltd.
১| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:৩০
কথার ফুলঝুরি! বলেছেন: পড়লাম। মাঝে কিছুটা হারিয়ে গিয়েছিলাম নিজের ভালোবাসার ভুবনে। ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ে করে আপন ও নিজের করে নেওয়া আমার কাছে যে বিশ্ব জয়ের চাইতেও অনেক বড় কিছু ।
জীবনে কিছু বিশেষ মানুষের জন্য কোন কিছু চিন্তা না করে এমন হুট করে ডিসিশন নিতে হয় । বাস্তব চিন্তা করলে সেটি ঠিক না কিন্তু ভালোবাসা যে কোন কিছু মানেনা ।
আমার ভালোবাসাও যে প্রথম দেখাতেই হয়েছিল ।
লেখার শেষ অংশটুকু পড়ে মজা পেলাম। আমি সাধারণত কাউকে ঝাড়ি দেইনা, দিতে পারিনা । তবে ইদানিং কেমন পাঁজি হয়ে যাচ্ছি । যাক, তবুও যে আমার ঝাড়িতে আপনার লেখার ঝুড়িতে একটি নতুন লেখা জমা হয়েছে তাতে আমি খুশী ।
আর, আমাকে লেখা উৎসর্গ করে ভালোবাসা ও সম্মান টুকু দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা ভাইয়া । আপনি যে আমাকে তার যোগ্য মনে করেছেন আমি অনেক খুশী।
আশা করি ড্রাফট এর বাকী লেখাগুলোও মুখ থুবরে পরে না থেকে পূর্ণতা পাবে।
এবং অনেক দেরী হয়ে গেল আসতে, তার জন্য দুঃখিত ভাইয়া।