নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্বজোড়া পাঠশালাতে সবাই ছাত্র-ছাত্রী, \nনিত্য নতুন শিখছি মোরা সদাই দিবা-রাত্রী!

নীল আকাশ

এই ব্লগ-বাড়ির সমস্ত লেখা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। লেখকের অনুমতি ছাড়া এই ব্লগ-বাড়ির কোনো লেখা অন্যকোথাও প্রকাশ করা যাবে না।

নীল আকাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাঠ প্রতিক্রিয়া ৩: যে সূর্যটা রানুর জন্য উঠেছিল

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৭


বইয়ের নামঃ যে সূর্যটা রানুর জন্য উঠেছিল
বইয়ের ধরণঃ গল্প গ্রন্থ / গল্প সংকোলন
লেখকঃ ফয়সাল রকি
লেখকের পরিচয়ঃ কথা সাহিত্যিক, গল্পকার এবং সামহোয়্যারইন ব্লগের সুপরিচিত ব্লগার
প্রকাশকঃ নৈঋতা ক্যাফে
প্রকাশকালঃ অমর একুশে গ্রন্থমেলা, ফেব্রুয়ারী ২০২০
প্রচ্ছদঃ আনিছুর রহমান
বইয়ের মূল্যঃ ২৫০ টাকা
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৯৬, মোট গল্পঃ ৯টা
রকমারি’র লিংকঃ লিংক

গতবারের ২০২০ একুশে বইমেলায় ‘নৈঋতা ক্যাফে’ ষ্টল থেকে আমি বইটা নিজেই কিনে আনি। ইচ্ছে ছিল ফয়সাল রকি ভাইয়ের কাছ থেকে অটোগ্রাফ সহ বইটা নেবো। কিন্তু উনার সাথে দেখা হয়নি। করোনার কারণে এখন বাসায় থাকা হচ্ছে বেশি। এইসময়টাকে কাজে লাগিয়ে ভাবছি বইমেলায় কেনা বইগুলিকে এক এক করে পড়বো এবং পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখে ফেলবো। এটাই হচ্ছে আমার লেখা প্রথম প্রকাশিত বইয়ের পাঠ-প্রতিক্রিয়া। সুপ্রিয় ফয়সাল ভাইয়ের বই দিয়েই এই কাজ শুরু করলাম। কেন যেন এটা ব্লগে আগে আমি প্রকাশ করিনি!

সর্বমোট নয়টা ছোট গল্প এটাতে জায়গা পেয়েছে।
১। ব্যতিক্রম, পৃষ্ঠা ১১-১৮
২। ফেলে আসা মনোলগ, পৃষ্ঠা ১৯-২২
৩। তিন নাম্বার বেড, পৃষ্ঠা ২৩-৩৩
৪। অপরিচিতা, পৃষ্ঠা ৩৪-৩৯
৫। কানামাছি, পৃষ্ঠা ৪০-৪৮
৬। আষাঢ়ে গল্প, পৃষ্ঠা ৪৯-৫৮
৭। যে সূর্যটা রানুর জন্য উঠেছিল, পৃষ্ঠা ৫৯-৬৯
৮। কথোপকথন, পৃষ্ঠা ৭০-৭৫
৯। অভিশপ্ত, পৃষ্ঠা ৭৬-৯৫

-পুরো বইটা পড়ার পর মনে হলো বইয়ের আকার বইমেলার অন্য বইগুলির তুলনায় বেশ ছোট, যার কারণে পৃষ্ঠা সংখ্যা অযথাই বেড়ে গেছে। যেটা ৫ ফর্মার মধ্যেই নিশ্চিত হয়ে যেত, সেটা বেড়ে যেয়ে ৬ ফর্মা লেগেছে। বইয়ের দামও সাইজ এবং পৃষ্ঠা সংখ্যার সাথে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি মনে হয়েছে।

-সবগুলি গল্পেই প্রচুর ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় প্রচলিত বাংলা শব্দ ব্যবহার না করেই ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। পৃষ্ঠা ১২’তে ‘ম্যানেজ’ না বলে ‘যোগাড়’ বললেই সুন্দর হতো। ১৩ পৃষ্ঠায় ‘ডিটেইল নিতে হবে’ না বলে ‘বিস্তারিত জানতে হবে’ লিখলে মানানসই হতো। এখন বাংলায় লিখতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই কথ্যভাষায় প্রচলিত বেশ কিছু ইংরেজি শব্দ চলে আসে। তাতে আমি কোন সমস্যা দেখি না কিন্তু যেইসমস্ত শব্দ বাংলাতেই বেশি ব্যবহৃত সেই ইংরেজি শব্দগুলি এড়িয়ে যেতে পারলে ভালো হতো। কিছু ইংরেজি শব্দের যথার্থ ব্যবহারও হয়নি। পৃষ্ঠা ১৩’তে ‘কিউব’ না হয়ে হবে ‘কিউবিকল’। আজকাল অফিসে সবার বসার জন্য আলাদা আলাদা যে খোপ বানিয়ে দেয়া হয় সেটাকে ‘কিউবিকল’ বলে। পৃষ্ঠা ১৫’তে ‘খাওয়া’ না হয়ে হতো ‘অপ্রকৃতিস্থ’, এখানে ‘খাওয়া’ শব্দ একদম মানায় নি। ‘তিন নাম্বার বেড’ গল্পটাতে প্রচুর ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, কিন্তু মোটেও সেটা চোখে লাগেনি। কারণ সেই শব্দগুলির যথার্থ বাংলা প্রতিশব্দ অপ্রচলিত। পৃষ্ঠা ৪৯’এ ‘উইকেন্ডে’ না ব্যবহার না করে ‘সাপ্তাহিক ছুটির দিনে’ ইচ্ছে করলেই ব্যবহার করা যেত। কিছু জায়গায় ‘সায়েন্স’ ব্যবহার করা হয়েছে যেটা ইচ্ছে করলেই ‘বিজ্ঞান’ দিয়ে প্রতিস্থাপণ করা যেত।

-বাংলা বানান নিয়ে বেশ কিছু সমস্যা দেখা গেছে। প্রুফ রিডারের কাজ ভালোমতো হয় নি। অনেক জায়গায়তেই ছোটখাট ভুলগুলি চোখে পড়ে যায়। প্রায় সবজায়গাতেই ‘বলল’ লেখা হয়েছে, আসলে শব্দটা হবে ‘বললো’। কিছু জায়গায় ‘কী/কি’ এই দুইটা সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়নি।
-কথোপকথনের ফরম্যাট নিয়ে সবগল্পেই মিশ্র একটা পদ্ধতি দেখা গেছে যেটা দৃষ্টিকটু। যদিও বেশিরভাগ অংশেই কথোপকথনের শুরু হয়েছে আলাদা লাইনে সামনে হাইফেন (-) দিয়ে, কিন্তু হুট করেই মাঝখানে এবং শেষদিকে লাইনের মাঝেই “” দিয়ে কথোপকথন দেয়া হয়েছে। এটা সর্ম্পূণভাবে প্রুফ রিডারের দোষ। মনোযোগ দিয়ে প্রুফ না করার ফলাফল এটা! পৃষ্ঠা ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭………
লেখক’কে অনুরোধ রইলো যেকোন একটা পদ্ধতি ব্যবহার করা জন্য, না হলে সেটা বইতে লেখার সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়।
-নামকরণও অন্যভাবে করা যেত। এটা একটা গল্প সংকোলন কিন্তু নয়টা গল্পের মধ্যে মাত্র একটা গল্পের নাম দিয়ে এটার নামকরণ করা হয়েছে। বইয়ের নাম দেখে বুঝা যায় না যে, এটা গল্প সংকোলন বা গল্প সমগ্র। তাছাড়া বইতে গল্পগুলি অন্য সিরিয়ালেও দেয়া যতো। বইয়ের শুরুতে এবং একদম শেষে সেরা গল্প দিতে হয়, যেন পাঠক যেই মুগ্ধতা নিয়ে বই পড়া শুরু করবে এবং শেষ করবে একই মুগ্ধতা নিয়ে। পাঠক পাঠ প্রতিক্রিয়া মুগ্ধতায় ভরে থাকবে। বইটা পড়ার জন্য অপরকে বলবে।

গল্পগুলিকে তুলনামূলকভাবে রেটিং জন্য নিন্মোক্ত পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে-
* থীম / প্লট - ১
* কথোপকথন - ১
* চরিত্র বিন্যাস - ১
* গল্পে ট্যুইষ্ট / পাঠকের আকর্ষন - ১
* লেখার মুন্সিয়ানা - ১

১। ব্যতিক্রম, পৃষ্ঠা ১১-১৮
থীমঃ একজন (অফিসের ইডি স্যার) অসুস্থ মানুষ’কে রক্তদান করা নিয়ে গল্পটা এগিয়ে গেছে, যিনি (কিবরিয়া ভাই) রক্ত দেবেন তিনি বিশ্বাস করেন যাকে উনি রক্ত দেবেন তিনি মারা যাবেন কারণ আগেও এই ঘটনা অনেকবার ঘটেছে……..

গল্প ভালো লেগেছে। গল্পের শেষে বিয়োগান্তক-দৃশ্যটা গল্পে সুন্দর একটা ট্যুইস্ট এনে দিয়েছে। তবে কিবরিয়া ভাইয়ের মৃত্যু না হলেও মন্দ হতো না। সমাজের প্রচলিত কুসংষ্কারের বিরুদ্ধে লেখা হয়ে যেত এটা। পৃষ্ঠা ১৮’তে ‘বাতে’ হবে না, ‘রাতে’ হবে। ‘হার্ট এ্যাটাক করে মারা গেছেন’ না হয়ে ‘হার্ট এ্যাটাকে মারা গেছেন’ বললে বেশি মানাতো। ছোট গল্প হিসেবে একদম ঝরঝরে হয়েছে। চরিত্রগুলোতে লেখার কোন অতিরঞ্জন নেই, অযথাই কোন চরিত্র তৈরিও করা হয়নি। একটানে পড়ে ফেলার মতো গল্প। সবাই’কে পড়ার জন্য অনুরোধ করার মতো।

* রেটিং ৪.৫ (৫ এর মধ্যে) [প্রকাশক/প্রুফ রিডারের দোষ আমি লেখক’কে দেবো না!

২। ফেলে আসা মনোলগ, পৃষ্ঠা ১৯-২২
থীমঃ বহুবছর পর একটা মেয়ে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলে এবং স্বামীকে নিয়ে ঘুরতে এসেছে। হঠাৎ একটা চিত্র প্রদর্শনী দেখা যায় তার ছবি আঁকা। কেন এখানে তার ছবি?......

এই বইয়ের সেরা গল্প। মুগ্ধ হয়ে পড়েছি। মাত্র চারপৃষ্ঠা লেখা কিন্তু লেখার গভীরতা অনেক বেশি। পড়ার পর হৃদয়ে অনুভবের শিহরণ সৃষ্টি করে। হুট করে টেনে নিয়ে যায় পিছু ফেলে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর সবস্মৃতিতে। চমৎকার ভালোলাগা এই গল্পটার জন্য। গল্পের থীম দুর্দান্ত। সার্থক ছোটগল্পের চমৎকার উদাহরণ। শেষ হয়েও যেন হলো না শেষ! শেষ পৃষ্টায় ‘নিকট ভবিষ্যতে” না লিখে ‘নিকট ভবিষ্যতেও’ এবং একদম শেষলাইনে ‘দূরে’ না হয়ে ‘দূরেই’ হলে আরও বেশি মানাতো।

* রেটিং ৫ (৫ এর মধ্যে)

৩। তিন নাম্বার বেড, পৃষ্ঠা ২৩-৩৩
থীমঃ একজন দাতের ডাক্তারের কাছে দাঁত তুলে গেছে। দাঁত তোলার সময়ে রোগীর অনুভূতি এবং প্রতিক্রিয়া নিয়েই এগিয়ে গেছে এই গল্প………

চমৎকার গল্প। সুন্দর কাহিনী বিন্যাস। গল্পের শেষ অংশে প্যান্টের পকেটে দাতের টুকরো খুঁজে পাওয়া সুন্দর একটা ট্যুইষ্ট এনে দিয়েছে। এই গল্পেও কথোপকথনের ফরম্যাট নিয়ে একই সমস্যা। “” / - নিয়ে এলোমেলো বিন্যাস, যেটা প্রুফ রিডারের কাজে ফাঁকি দেয়ার ফলাফল। দুইবার অ্যানেস্থেশিয়া দেবার পরও চোয়াল স্বাভাবিকভাবে নাড়ানো বেখাপ্পা এবং অবিশ্বাস্য লেগেছে। তবে ড্রিল মেশিন, ছেনি, হাতুড়ি, দিয়ে ঠুকে ঠুকে দিয়ে দাঁত কেটে বের করা দৃশ্য দুর্দান্ত হয়েছে। একদম শেষ প্যারায় একটা লাইন অন্যরকমভাবে লিখলে ভালো হতো। “অ্যানেস্থেশিয়ার দুর্দান্ত প্রভাবে নেহাতই কি একটা দুঃস্বপ্ন দেখলাম?”

* রেটিং ৪.৫ (৫ এর মধ্যে)

৪। অপরিচিতা, পৃষ্ঠা ৩৪-৩৯
থীমঃ চরিত্রহীন স্বামীর পরকিয়া প্রেমিকা’কে দেখতে লাবনী সুদূর গাজিপুর থেকে মতিঝিল এসেছে। তারপর একটা ক্যাফের দোতলার ডানপাশের কর্নারে বসা পরকিয়া প্রেমিকা মীরা’র সাথে লাবনীর কিছু কথোপকথন নিয়েই এগিয়ে গেছে এই গল্প…….

চমৎকার গল্প। সুন্দর কাহিনী বিন্যাস। কারও ঘর কেউ ভাঙ্গলে যে একদিন নিজের ঘরও ভেঙ্গে যায় নিয়তিও খেলায় সেটা ফুটে উঠেছে। গল্পের শেষ অংশে “লাবণী কে?” এই প্রশ্ন সবপাঠকের কাছে রেখে গেলেন লেখক! তবে লাবনীর আবেগের উপস্থাপনায় কিছুটা ঘাটতি আছে। লাবনী’কে আরও সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা যেত। সাঈদের হালকা একটা প্রতিক্রিয়া দেখানে জমতো ভালো। যেমন, সামান্য কাঁপাস্বরে জিজ্ঞেস করলো, “লাবণী কে?” কথোপকথনের ফরম্যাট নিয়ে সমস্যা এখানে নেই।

এই গল্পটা এই বইয়ের শেষ গল্প হিসেবে দিলে অনেক ভালো হতো! কেন সেটা শেষ গল্পের প্রতিক্রিয়ায় লেখা থাকবে।

* রেটিং ৫ (৫ এর মধ্যে)

৫। কানামাছি, পৃষ্ঠা ৪০-৪৮
থীমঃ খালাতো বোন টুম্পার সাথে প্রেম করা শান্ত কুরবানি ঈদে (আমি ইদ শব্দ পছন্দ করিনা) সবার সাথে বেড়াতে নানাবাড়ি এসেছে। সেখানে প্রেমিকা’কে খুশি করতে এক আজব আবদার পালন করার চেষ্টা করে যায় শান্ত.....

খুব সাধারণ থীম। কিছু অংশ পড়ার সময় মনে হয়েছে টেনে অযথাই বড় করা হয়েছে। তেমন কোন নাটকীয়তাও নেই।
শেষ লাইনেও কথোপকথনে ফরম্যাটে পরিবর্তন হলেও যথারীতি প্রুফ রিডার ঘুমিয়ে ছিল!

* রেটিং ২.৫ (৫ এর মধ্যে)

৬। আষাঢ়ে গল্প, পৃষ্ঠা ৪৯-৫৮
থীমঃ সাপ্তাহিক ছুটিতে বৌকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে বেরাতে যেয়ে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হলো রফিকের। পরিচিত একটা বাচ্চা মেয়ে সাপের কামড়ে মারা গেলে কাহিনী কাহিনী আরও জট পাঁকে......

পুরোপুরি ছন্নছাড়া একটা গল্প। মনোযোগ দিয়ে পড়লে একসাথে বিভিন্ন সময়কালের ঘটনা নিয়ে লেখা দেখা যায়। নিষাদ এখানে একেবারেই অপ্রয়োজনীয় চরিত্র হলেও গল্পের বেশকিছু অংশ এই মেয়েকে নিয়ে লেখা। মিরাজুল ইসলাম স্যারের সাথে রাতের বেলা পুকুর পাড়ে দেখা হবার দৃশ্য আসলেই কি প্রয়োজন ছিল? সম্ভবত লেখক মিরাজুল ইসলাম স্যার’কে নিয়ে অন্যকোন প্লট চিন্তা করেছিলেন যেটা পরের লেখাগুলির সাথে কোন মিল নেই। নিষাদ যেহেতু ডাক্তার, আশেপাশেই আছে এখন, প্রথমে বাচ্চাটাকে নিষাদের কাছে চিকিৎসার জন্য দেখালে এবং তারপরে মারা গেল ওঝা এসে বাঁচানোও দৃশ্য দেখালে লেখাটা সুন্দরভাবে ফুটে উঠতো। এই গল্পে মূলত দুইটা সমস্যা। এক, এতে কোন থ্রীল নেই। দুই, লেখাগুলির মাঝে কিছু লিংক অদৃশ্য। এর ফলে এই গল্পটা থ্রীলার, ভৌতিক বা সায়েন্স ফিকশন কোন ক্যাটাগরিতেই পরে না। অতিপ্রাকৃতিক কিংবা ভৌতিক গল্প লিখলে সেটা পুরোপুরি সেই আবহ দিয়ে লেখা উচিৎ।

গল্প/উপন্যাস/কবিতা ইত্যাদির লেখার নামকরণ লেখকের নিজস্ব চিন্তার ফসল হিসেবে আমি ধরে নেই। এবং এটা নিয়ে আমি কিছু বলি না। কিন্তু এই গল্পটার নামকরন পছন্দ হয়নি। পড়া শুরুর আগেই কোন লেখার নাম দেখে পাঠকের মনে আবছা একটা আইডিয়া তৈরি হয়ে যায়, যা পড়ার সাথে সাথেই এগিয়ে যায়। এই গল্পের নাম প্রথমেই লেখাটাকে মারাত্মক হালকা করে দিয়েছে।

* রেটিং ২.০ (৫ এর মধ্যে) (* বই প্রকাশে সময় এই গল্পটা বাদ দিলেই ভালো হতো)


৭। যে সূর্যটা রানুর জন্য উঠেছিল, পৃষ্ঠা ৫৯-৬৯
থীমঃ ঢাকা কলেজে পড়া মাজেদ তার চাচাতো বোন রানু’র উত্তরাতে নতুন ভাড়া নেয়া বাসায় বেড়াতে আসলে ঘটনার সূত্রপাত হয়। অবহেলার কারণে এই বাসায় একটা ভয়ংকর দুর্ঘটনা ঘটলে বাসার দাড়োয়ান রানু’কে হাসপাতালে নিয়ে যান……….

চমৎকার গল্প, সুন্দর কাহিনীর বিস্তৃতি, আকর্ষনীয় থীম, কথোপকথনও প্রাঞ্জল। গল্প হিসেবে অবশ্যই পছন্দ করার মতো। ঢাকা শহরে মানুষের ব্যস্ততাময় জীবনে এইধরণের ঘটনাগুলি ঘটা খুবই স্বাভাবিক। তবে পড়ার সময় পাঠকরা কিছু কিছু জায়গায় হোঁচট খাবে ঘটনার সময়কাল নিয়ে তাল মিলাতে না পেরে। এক্ষেত্রে লেখক যদি আলাদা প্যারা করে লিখতেন তাহলেই এই সমস্যা হতো না। তবে এই গল্পের সবচেয়ে বড় ত্রুটি হচ্ছে একদম শেষে অংশে লেখক হুট করে লেখার টোন পরিবর্তন করে সরাসরি পাঠকের সাথে কথোপকথনে জড়িয়ে গেছেন। রানুকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে এই পর্যন্তই যথেষ্ঠ ছিল। কারণ এতটুকু পড়লেই পাঠক ভাবতে বাধ্য হবে এবং লেখার করুন রসটুকু বুঝে নেবে। একজন গল্পকারের উচিৎ পাঠক’কে যতদুর সম্ভব লেখার সাথে সম্পৃক্ত করে রাখা। শেষ অংশের কথোপকথনে এখানে অপ্রয়োজনীয় এবং লেখার মান কমিয়ে দিয়েছে। কথোপকথনে ফরম্যাট পরিবর্তন নিয়ে এখানেও হালকা সমস্যা আছে।

* রেটিং ৪.৫ (৫ এর মধ্যে) (* শেষ অংশ বাদ দিলে আমি অবশ্যই ৫ দিতাম)

৮। কথোপকথন, পৃষ্ঠা ৭০-৭৫
থীমঃ সংগীতা নিজের বিয়ে ঠিক হয়ে যাবার পর তার বর্তমান প্রেমিক রফিকের সাথে দেখা করতে এসেছে। বিয়ে এবং দুইজনের মাঝে সর্ম্পক নিয়ে বিভিন্ন কথোপকথন ঘিরেই এগিয়ে চলেছে এই লেখা......

লেখার শেষ অংশে দেয়া ট্যুইস্ট লেখাটাকে দুর্দান্ত করে তুলেছে। পাঠক’কে ভাবতে বাধ্য করেছ কী হতে পারে শেষ পর্যন্ত! একদম শেষে নরমাল মিরিন্ডা হবে না, হবে ঠান্ডা মিরিন্ডা। কারণ ঠান্ডা মিরিন্ডাই হোটেলের বয়’কে দিয়ে যেতে বলা হয়েছিল। এখানে বেশ কিছু ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করলেও কথ্যভাষায় এইশব্দগুলি নিয়মিত ব্যবহার করা হয় দেখে খারাপ লাগেনি। তাছাড়া গল্পকার তো আগেই পাঠক’কে ইংগিত দিয়েছেন লেখাটা কথোপকথন নিয়ে হবে। এটাই নামকরণের সার্থকতা। তবে লেখার শেষ অংশে লেখক ইচ্ছে করলেই ট্যুইস্ট’টা আরও যুতসইভাবে দিতে পারতেন। গল্প’টাও আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠতো।

* রেটিং ৪.৭৫ (৫ এর মধ্যে)

৯। অভিশপ্ত, পৃষ্ঠা ৭৬- ৯৫
থীমঃ মায়া সভ্যতার নিয়ে জড়িত টিকাল শহরের একটা সরাইখানায় বাংলাদেশী দুইজন প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষক সালমা, জামাল এবং সাইজন নামক একটা দেবতার কাহিনী। তার সাথে যুক্ত হয়েছে নোরা নামের একজন পতিতা এবং বুড়ি নামের একটা নারী চরিত্র……..

গল্পকার আসলে এখানে কী থীমের উপর লিখেছে সেটা বুঝা বড় মুস্কিল! একগাদা চরিত্র নিয়ে আসা হয়েছে যাদের আসলে মূলগল্পে কোন ভূমিকাই নেই। অযথাই নোরা নামের একটা মেয়ে’কে দোতলা থেকে কথা বলতে দেখা যায়। এর মাঝে আবার ফ্রয়েডীয় সাইকোলজিকেও নিয়ে আসা হয়েছে। জামালের অত্যাধিক হেঁয়ালি পূর্ণ আচরণ, কিছুক্ষণ পর পর ঘড়ি নিয়ে কথা বলা লেখাটাকে একেবারেই সাদামাটা করে ফেলেছে। একই স্বপ্ন কেন সবাই দেখে আবার এর সাথে অভিশপ্ত বাক্যের উচ্চারণ করার মাঝে লিংক স্পষ্ট নয়। গল্পে অপ্রয়োজনীয় অনেক কিছু এসেছে কিন্তু দরকারী কিছু জিনিস বাদ পরে গেছে। কথোপকথনের অতিরিক্ততা পাঠকের মনে বিরক্তও এনে দিতে পারে। পড়া শুরু করলে পাঠক কিছুক্ষণ পরেই লেখার খেই হারিয়ে ফেলে হোঁচট খেতে থাকবে।

প্রুফ রিডারের কাজের মান নিয়ে যে সন্দেহ ছিল সেটা এই গল্প এসে পরিপূর্ণ হয়েছে। বই প্রকাশের সময় এই গল্প কোনভাবেই দেয়া ঠিক হয় নি। বইয়ের একদম শেষে এটা দিয়ে মারাত্মক সর্বনাশ করেছে। দুর্দান্ত বেশকিছু গল্প পড়ে আসার পর পাঠক যখন এই গল্পটা পড়ে বইটা শেষ করবে তখন তার অনুভূতি কী হবে সেটা সহজেই অনুমেয়!

* রেটিং ২.০ (৫ এর মধ্যে) (* বই প্রকাশের সময় এই গল্পটা বাদ দিলে সবচেয়ে ভালো হতো)

পাঠকদের জন্যঃ
এই বইয়ের লেখক ‘ফয়সাল রকি’ সামহ্যোয়ারইন ব্লগের একজন সুপ্রতিষ্ঠিত গল্পকার। গল্পের এই বইতে বেশ কিছু অসাধারণ গল্প আছে যা সহজেই আপনাকে মুগ্ধ করবে। ছোট গল্প লেখা এবং সেটা পাঠক’কে মুগ্ধ করা দারুন কঠিন ব্যাপার। ফয়সাল ভাই দারুন ভাবেই সেটা এই বইয়ের কিছু গল্পে সেটা করে দেখিয়েছেন। অভিনন্দন রইলো গল্পকার’কে।

একুশে বইমেলা ২০২০ প্রকাশিত এই বইটা সবাই’কে পড়ার জন্য আমন্ত্রণ দিচ্ছি।

সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইল।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীল আকাশ, ফেব্রুয়ারী ২০২১

মন্তব্য ৪৩ টি রেটিং +৯/-০

মন্তব্য (৪৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩০

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: খুব ভালো লাগলো। রিভিউ এমন হওয়াই কাম্য।যিনি রিভিউ করবেন খোলামনে এমনটাই কাম্য। আপনার রিভিউ পড়ে রকি ভাইয়ের বইয়ের বেশ ভালো একটা ধারণা পেয়েছি।
পরিশ্রমী একটি কাজ করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভেচ্ছা আপনাদের দুজনকেই।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:২২

নীল আকাশ বলেছেন: প্রথম মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
প্রতিটা পাঠ প্রতিক্রিয়া লেখার সময়ে আমি শতভাগ সততার সাথে লিখি। আমার কাছে যেটা যেটা মনে হয় ঠিক সেটাই লিখে ফেলি।
রকি ভাই ছোট গল্প বেশ ভালো লিখেন।

২| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪৮

নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: রিভিউ ভালো লেগেছে

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:২২

নীল আকাশ বলেছেন: পড়ার এবং মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

৩| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫৪

নিঃশব্দ অভিযাত্রী বলেছেন: পাঠ প্রতিক্রিয়া ভালো লেগেছে।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:২৩

নীল আকাশ বলেছেন: পড়ার এবং মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

৪| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:১৯

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনি বই পড়লে, বই'এর বিষয়বস্তু ও লেখককে বুঝতে পারেন? আপনি কোন বই'এর উপর রিভিউ জাতীয় কিছু করলে, সেই বইয়ের পাঠক অবশ্যই কমে যাবে।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:২৫

নীল আকাশ বলেছেন: সারমেয়দের লেজ যতই টানা হোক না কেন, কোনদিনও সোজা হয় না।
এ আর নতুন কী?

৫| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:২৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


ফয়সাল রকি কি জানেন যে, আপনি উনার বই'এর উপর কিছু (রিভিউ ) লিখবেন?

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:৪১

নীল আকাশ বলেছেন: রিভিউ কি সেটা জানেন?
না বেহুদাই ফাও প্যাচাল পারতে এসেছেন?

৬| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:২৫

ওমেরা বলেছেন: ব্লগে উনার গল্প পড়ছি , আমার কাছে ভালো লাগে উনার গল্প । উনার জন্য শুভ কামনা আপনাকে ধন্যবাদ ।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:৩২

নীল আকাশ বলেছেন: জী উনি বেশ ভালো ছোট গল্প লিখেন।
পড়ার এবং মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

৭| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:৩২

আখেনাটেন বলেছেন: ফয়সাল রকি গুণী লেখক। উনার গল্পগুলোয় সামাজিক জীবনের টানাপোড়েন বেশ চমৎকারভাবে ফুটে।

ব্লগে এখন যে কয়জন ভালো গল্প লিখেন উনিও তাদের মধ্যে অন্যতম।

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:৫৩

নীল আকাশ বলেছেন: ফয়সাল রকি গুণী লেখক। উনার গল্পগুলোয় সামাজিক জীবনের টানাপোড়েন বেশ চমৎকারভাবে ফুটে।
শতভাগ সহমত। বইয়ের কয়েকটা গল্প বেশ ভাল লেগেছে আমার।
উনার গল্প আমিও ব্লগে পেলে পড়ি।

৮| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:৪২

এল গ্যাস্ত্রিকো ডি প্রবলেমো বলেছেন: ফয়সাল রকির গল্প এই ব্লগে পড়েছি। বেশ প্রাঞ্জল লেখা। আপনার নির্মোহ রিভিউ ভালো লাগলো।

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:৫১

নীল আকাশ বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
রকিভাইয়ের এই বইয়ে বেশ কয়েকটা ভালো ভালো ছোট গল্প আছে।
রিভিউ ভালো লাগার জন্য ধন্যবাদ।
এর আগে আরো দুইটা লিখেছিলাম। পড়ে দেখতে পারেন।

৯| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: না পড়ে আরাম পেলাম না। বেশী ভনিতা করে ফেলেছেন।

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:৫০

নীল আকাশ বলেছেন: ভুয়া উস্তাদের লাইন ধরলেন নাকি?
এটা যে পাঠ প্রতিক্রিয়া হেডিংয়ে লেখা আছে দেখেছেন?
এর আগেও কয়েকবার কিন্তু ভুয়া মন্তব্য দিয়ে ফেসে গিয়েছিলেন আমার ব্লগে!
এই পোস্ট পড়েছেন?
কোন জায়গায় ভনিতা করেছি বলেন দেখি?

১০| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১:২১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: বইয়ের রিভিউ এমন হওয়া উচিত। সব কিছু সুন্দর বর্ণনা করা

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:৪৭

নীল আকাশ বলেছেন: জী ভাই। আমি বইয়ের রিভিউ লেখা একটা স্ট্যান্ডার্ড ফর্ম দাড়া করিয়েছি। আমার সব রিভিউ একই টাইপের হবে।

১১| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ৯:৫৪

নীল আকাশ ৩৯ বলেছেন: সুন্দর হয়েছে।

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:৪৫

নীল আকাশ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

১২| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:১২

সোহানী বলেছেন: ভাইরে, আপনি যেভাবে খুঁইটা খুঁইটা ব্ই এর রিভিউ করতাছেন আমিতো মোটামুটি হার্টফেল করার অবস্থা। কারন আমি জানি আপনি আমার বইটা কালেক্ট করছেন :(( :(( :(( :(( :(( :((

আকাশ ভাই, আমার জন্য কি রিভিউতে কোন বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করা যায় :(( :(( :(( :(( :(( :(( !!! একটু নরম রিভিউ কইরেন ভাই.....................

রিভিউতে এ+। রকি ভাইকে বাসি শুভকামনা। জানা ছিল না যে উনি বই বের করেছেন।

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:৪৪

নীল আকাশ বলেছেন: আপনার বই পড়তে শুরু করেছি। কয়েকটা গল্প বেশ ভালো লেগেছে।
আপনার আর আমার লেখার টপিক প্রায়শই একই বিষয় হয়।
বইটা পড়তে যেয়ে অদ্ভুত এই মিল চোখে পড়লো।
শুভ কামনা গল্পকার।

১৩| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:৪৭

করুণাধারা বলেছেন: রিভিউ চমৎকার। অনেক কিছু শেখা হলো, রিভিউ কীভাবে লিখতে হয় জানলাম...

আমি অভিধান ধরনের একটা বই লিখতে চাচ্ছি, ভাবছি এক পর্ব ব্লগে দিব আপনার রিভিউ এর জন্য, আপনার মতামত জেনে ঠিক করবো আর আগে যাবো কিনা...

শুভকামনা রইল।

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:২৭

নীল আকাশ বলেছেন: আমি সব সময় ব্যতিক্রমই লেখক। পাঠ প্রতিক্রিয়া লেখার এই ফরম্যাট আমি সব বইতেই ব্যবহার করতে পারবো।
আপনি পর্ব দিন। এক্সপেরিমেন্ট করে দেখি এটা সেখানে কতটুকু কার্যকর হয়!
শুভ কামনা আপনার জন্য।

১৪| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: “ধান ভানতে শিবের গীত “। এর অর্থ কাজের সময় অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতরনিকা করা ।

সমস্যা অযথা সময় নষ্ট এবং কাজের কাজ ফেলে প্রসঙ্গান্তরে চলে যাওয়ার জন্য প্রকৃত কাজের ক্ষতি করা ।

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:২৮

নীল আকাশ বলেছেন: আপনার মন্তব্যটা পড়ার পর আমারও সেটাই মনে হলো!

১৫| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২৯

ফয়সাল রকি বলেছেন: রিভিউয়ের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। যদিও ফেসবুকে আগেই পড়েছিলাম তারপরও সামুর ব্যাপারটাই আলাদা। আমার দুইটা গল্প গ্রন্থ প্রকাশ হলেও সামুতে এটাই প্রথম রিভিউ পেলাম। কাজেই খুবই আনন্দিত বোধ করছি। ধন্যবাদ।

রিভিউ যেহেতু দিলেন তাই আত্মপক্ষ সমর্থনের একটা বিষয় থাকে।
চেষ্টা করছি।
শুরুতেই বলি, আপনার সাথে আমার বেসিক কিছু বিষয়ে মতামত মিলে না বলে আমি ধারণা পোষণ করি। যেমন, গল্পের শুরুতে বা শেষে এটা/ওটা না থাকলেই ভালো হতো.. জাতীয় কিছু বিষয়। কাজেই সেদিক টা নিয়ে বলছি না। সেটা আপনার ব্যক্তিগত মতামত, মিলতে নাই বা পারে।

ইংরেজি শব্দের ব্যবহার সম্পর্কে যে বলেছেন, প্রথম গল্প ব্যতিক্রম-এ, সেখানে বলতে বাধ্য হচ্ছি, আপনি প্রেক্ষাপট বুঝতে পারেননি। একটা কর্পোরেট অফিস, যেখানে সবাই ঠুসঠাস হরহামেশাই ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করে সেখানে ম্যানেজ, ডিটেইল নিতে হবে জাতীয় শব্দের ব্যবহার স্বাভাবিক বিষয়। আরেকটা কথা, একই গল্পে
ইউনুস আলীকে যে তিনিই মৌখিক অনুমতি দিয়েছিলেন সেটা বেমালুম ভুলে গেলেন এবং বললেন, ‘যদি আমি উনিশ টাকা বলে থাকি তাহলে তখন আমি খাওয়া ছিলাম!’ ইউরোপে পড়াশোনা করা মানুষ, তিনি যে মাঝে মাঝেই রঙ্গিন তরল খান সেটা কম-বেশি সবাই জানি। --- এই অংশে খাওয়া ছিলাম- বিষয়টা নেহাতই একটা মানুষের ব্যক্তিগত শব্দ চয়ণ, এটা হতেই পারে। দোষের কিছু দেখি না।
তবে 'রাতে' যদি 'বাতে' হয়ে যায় তাতে প্রুফ রিডারের খানিকটা দায় তো থাকেই।

প্রত্যেকটা গল্পকে আলাদা আলাদাভাবে রেটিং করেছেন, যা খুবই আনন্দের বিষয়। তবে এখানেও আপনার সাথে আমার মতের বেশ অমিল দেখি। যেমন, কথোপকথন নামক গল্পটা, যেটা ২০০৯ সালে সামুতে দিয়েছিলাম, পরবর্তীতে খানিকটা এডিট করে প্রকাশ করেছি, সেটাকে আপনি দিলেন ৪.৭৫। অথচ আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এটা ২ পাবার যোগ্য। আমার প্রথম গল্পগ্রন্থ ধোঁয়াটে শহরে অসহায় মানুষ যা ২০১৯-এ প্রকাশিত হয় সেখানে আমি এ গল্পটা ইচ্ছা করেই রাখিনি।
আবার, অভিশপ্ত যে গল্পটাকে আপনি ২ দিলেন, সেটা ৪.৫+ ডিজার্ভ করে বলে আমি মনে করি। কারণ, এখানেও আপনি গল্পটা বুঝতে পারেননি। এটা একটা ফ্যান্টাসি গল্প। সময় থাকলে আরেকবার পড়ে দেখতে পারেন। এবং সামুতে প্রকাশের পরেও গ্রুফে গিয়ে আরো খানিকটা এডিট করা হয়েছে।
আষাঢ়ে গল্প যেটাকে আপনি বাদ দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন, সেটাও আরেকবার বিবেচনা করা যেতে পারে।

যাইহোক, আমার কেন যেন মনে হয়, শবনমের পাঠ প্রতিক্রিয়ায় আমি যেসব সমস্যার কথা তুলেছিলাম, আপনিও আমার সেসব সমস্যা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। যেমন, আমি ইংরেজি শব্দের ব্যবহার নিয়ে বলেছিলাম, আপনিও বললেন; এছাড়াও গ্রুপ, লাইন স্পেসিং, এলাইনমেন্ট.... এমনকি নামকরণ!

তবে আপনার পোষ্টে আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। শুরুতেই বলেছি, এটা সামুতে আমার বই নিয়ে প্রথম রিভিউ।
মন্তব্যটিকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন বলে আশা রাখছি।
নিজেকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করবো, ভুল শোধরানোর চেষ্টা করবো।
ধন্যবাদ।

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৪৫

নীল আকাশ বলেছেন: সুস্বাগতম রকি ভাই।
আমি প্রচুর বই পড়ি। তার মাঝে শুধুমাত্র যেই বইগুলি আমার ভাল লাগে সেইগুলিরই পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখি। পাঠ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে একটা বই পড়ার পর পাঠকের নিজস্ব অনুভূতি। এটা একান্তই পাঠকের নিজের ভাবনা। অন্যকারো সাথে মতের মিল না হতেই পারে। আমি বই খুব খুটিয়ে খুটিয়ে পড়ি। এইজন্যই এত বিস্তৃতভাবে আমি পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখতে পারি। খুব কম পাঠকই এত মনোযোগ দিয়ে বই পড়ে।

যারা এর আগে বই প্রকাশ করেনি তারা জানেও না, লাইন ফরম্যাট, বুক মেকআপ এবং লাইন স্পেছিং, 'লেফট/জাস্টিফাইড এ্যালাইন' ফন্ট ব্যবহার লেখকের ইচ্ছামতো হয় না। এটাও প্রকাশকের দায়িত্ব ছিল। বেশ কিছু ভুলের ব্যাপারে আমি এখানে সরাসরি প্রুফ রিডারকেই দায়ী করেছি, আপনাকে না।

আমি আলাদা আলাদা করে প্রতিটা গল্প নিয়ে আমার মতামত দিয়েছে যেন আপনি বুঝতে পারেন ঠিক কোন জিনিসটার জন্য একজন পাঠক পছন্দ করেনি। এটা একজন লেখকের জানা জরুরী।

নামকরণ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। সেটা গল্প বা উপন্যাস বা কবিতা যাই হোক। "আষাঢ়ে গল্প" শুধুমাত্র একটা স্যাটায়ার জাতীয় লেখাতেই ব্যবহার করা যেতে পারে। গল্প সংকোলনের নাম ভিন্ন ধাঁচের হয়। অভিশপ্ত গল্পে জামালের কথোপকথন কিংবা একই কথা বারবার পুনরাবৃত্তি বোরিং ছিল। একবার পাঠক হিসেবে পড়ে দেখবেন, কেন বলেছি তখন বুঝবেন।

একই বইয়ে সব জায়গায় একই ফরম্যাট ব্যবহার করা উচিত। পরের বইগুলিতে এইসব মাথায় রাখবেন। আমি শবনম থেকে অনেক কিছু শিখেছি। শবনম প্রচুর বিক্রি হয়েছে। অনেকেই আমাকে আলাদা করে তাদের চোখে যা যা অড লেগেছে জানিয়েছে। পরের বই লেখার সময়ে এই ভুলগুলি এড়িয়ে গেছি।

নিজেকে শোধরানোর জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টাই একজন লেখককে উৎকর্ষের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

শুভ কামনা আপনার লেখার জন্য।

১৬| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ভোর ৫:২১

মলাসইলমুইনা বলেছেন: নীল আকাশ,
" আকাশ ভাই, আমার জন্য কি রিভিউতে কোন বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করা যায় :...!! একটু নরম রিভিউ কইরেন ভাই...."
আপনি আমার বইটাও কিনেছেন আর রিভিউও করবেন পড়া হলে সেটাও বলেছেন ।সোহানীর এই মন্তব্যের সূত্র ধরে আপনাকে এই মুহূর্তে একটা অনুরোধ না করলেই নয় সেটা হলো আমার জন্য মানে আমার বইয়ের রিভিয়ের জন্য কি অটোপাসের কোনো সুযোগ রাখা যায় (মানে কম কম পড়েই ভালো ভালো কথা বলা আর কি !)? সে' রকম অটোপাশমুলক রিভিউ করার সুযোগ থাকলে আর সেই সুযোগ নিয়ে বিনাদ্বিধায় আমার বইয়ের ব্লগ রিভিউ হলে আমার কোনো রকম অভিযোগ থাকবে না বলে আগেই জানানো থাকলো ।ভালো থাকুন ।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:৪৩

নীল আকাশ বলেছেন: আমি এখন খুব ব্যস্ত। কাজে ফাকে ফাকে মন্তব্য লিখছি। না হয় মনে করবেন আপনার মন্তব্য পড়িনি।
বই পড়ার জন্য আলাদা করে সময় দরকার হয়। এখন কিছুদিন হয়তো পাবো না।
তবে আমি ইচ্ছে করেই বইমেলায় রানিং বইয়ের পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখি না, শুধু রিভিউ লিখি।
কারণ চিন্তা করে বের করুন!

১৭| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:৪৩

চাঁদগাজী বলেছেন:



গরুর রচনা সব যায়গায় চালিয়ে দেন, ফয়সাল রকি ঠিকই আপনার ম্যাঁওপ্যাঁও বুঝতে পেরেছেন।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:৪৫

নীল আকাশ বলেছেন: আপনি চিনতে পেরেছেন গরুর রচনা? সাবাস, গরুরাই নিজের জিনিস চিনতে পারে!
দিশি গরুর বিদিশি হাম্বা হাম্বা!!

১৮| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:৩৯

জুল ভার্ন বলেছেন: অনেক পরিশ্রমী লেখা।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:১৯

নীল আকাশ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে পড়ার এবং মন্তব্য করার জন্য।

১৯| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪৪

সৈয়দ তাজুল ইসলাম বলেছেন: এতকা সুন্দর পর্যালোচনা তুলে ধরলেন যা বইটি পড়তে আগ্রহ সৃষ্টি হয়ে গেলো।
পর্যালোচনায় প্লাস++++

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:০৩

নীল আকাশ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে লেখাটা পড়ার জন্য।
পাঠকের আগ্রহ তৈরি করারটাই লেখা মূল উদ্দেশ্য ছিল।

২০| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫৫

মলাসইলমুইনা বলেছেন: নীল আকাশ,
আমি মনে হয় বইমেলায় এসেছে এমন নতুন বইয়ের পাঠ প্রতিক্রিয়া না লেখার কারণটা বুঝতে পেরেছি আপনার । কিন্তু কোনো বই পড়ে আপনার ভালো লাগলে সেটা জানালেও ক্ষতি নেই কারণ তাতে পাঠকরা বইটা একনার আগে একটা ধারণা পেতে পারেন । সেটা দরকার। এক্সট্রিম খারাপ ধারণা হলেও বলা দরকার একই কারণে। রিভিউয়ে ইমপার্শিয়াল থাকতে পারলেই কোনো সমস্যা নেই মনে হয় আমার কাছে তা রিভিউ বইমেলার যে সময়েই হোক না কেন। আর আমার নিজের বইয়ের ব্যাপারে বলি সেটা নিয়ে আমার আলাদা কোনো টেনশন নেই। প্রথম বই হিসেবে একটা টেস্ট কেস হিসেবে দেখছি পুরো ব্যাপারটা। ধন্যবাদ নিন ।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:২৪

নীল আকাশ বলেছেন: ধন্যবাদ আবার ফিরে আসা জন্য।
ঠিক ধরেছেন। তবে পড়ে ভালো লাগলে আমি সাথে সাথেই লিখে ফেলি।
ইদানিং খুব ব্যস্ততার জন্য কোন বই নিয়েই বসতে পারছি না। আপনার বই সিরিয়ালে তিন নাম্বারে আছে।
আমি পাঠ প্রতিক্রিয়াতে ইমপার্শিয়াল থাকতে আপ্রাণ চেষ্টা করি। এটা পড়ে দেখুনঃ পাঠ প্রতিক্রিয়া ২ - শায়মা হক এর “বসন্তদিন (বরুণা ও প্রতিফলন)”
শুভ কামনা।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:২৮

নীল আকাশ বলেছেন: এবার আপনার বই নিয়ে বসেছি। ‌ এরপরে রিভিউ আপনার বইয়ের উপরে হবে।

২১| ২৫ শে মে, ২০২১ রাত ১০:০৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: পাঠ প্রতিক্রিয়ায় পাঠক হিসেবে এ পোস্ট লেখকের অত্যন্ত মনযোগী পাঠের স্বাক্ষর রয়েছে। সুন্দর একটি স্বনির্ধারিত ছক ধরে তিনি পাঠ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন এবং বইটির গল্পগুলোর সাথে ব্লগের পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। পাঠ প্রতিক্রিয়া পড়ে মনে হয়েছে, লেখক এ ব্যাপারে বস্তুনিষ্ঠ থাকতে সচেষ্ট ছিলেন।

পদাতিক চৌধুরিআখেনাটেন এর মন্তব্যদুটো ভাল লেগেছে এবং আমিও তাদের মন্তব্যের সাথে বহুলাংশে একমত।

আত্মপক্ষ সমর্থনে ফয়সাল রকি এর ব্যাখ্যা ভাল লেগেছে এবং আপনার প্রতিমন্তব্যও।

২৬ শে মে, ২০২১ সকাল ১০:২৪

নীল আকাশ বলেছেন: আমি হিপোক্রেসি পছন্দ করি না। আমি যখন কোন লেখা পড়ে পাঠ প্রতিক্রিয়া দেই, সেটা অবশ্যই বই খুটিয়ে খুটিয়ে পড়ি।
শুধু শুধু পিঠ চাপড়ানো মন্তব্য লেখকের লাভের চাইতে ক্ষতিই বেশি করে। শায়মা আপুর বসন্তদিনের পাঠ প্রতিক্রিয়া তো পড়েছেন আপনি!

আমি রকি ভাইয়ের লেখা পছন্দ করি। ব্লগে খুব কম মানুষই উনার বই কিনেছে। আমি সম্ভবত উনার বই প্রকাশের পর স্টলে প্রথম কিনেছি। দোকানদার যা বললো। আমি ব্যক্তিগতভাবে ব্লগাররা বই বের করলে তাদের বই কিনে সার্পোট করি। এটা আমাদের করা উচিত। আমি এবারও অনেকগুলি কিনেছি।

আমি পাঠ প্রতিক্রিয়া খুব ভালো ভাবে লিখি। কারণ আমার কাছে মনে হয়েছে এর থেকে লেখক যদি সামান্য কিছুও উপকার পায় তাহলেও অনেক। উনি একজন নতুন লেখক। আমি কিছুটা গাইড করার চেষ্টা করেছি। উনি যদি গ্রহন করে পরের বইগুলিতে সাবধান হোন তাহলে উনার উপকারই হবে। যে প্রকাশন সংস্থা বের করেছে, তারা উনার বই ভালো করে পড়েও দেখেনি। প্রুফ রাইটার একেবারেই বাজে ছিল।

কিছুদিন আগের একটা লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.