নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্বজোড়া পাঠশালাতে সবাই ছাত্র-ছাত্রী, নিত্য নতুন শিখছি মোরা সদাই দিবা-রাত্রী!

নীল আকাশ

এই ব্লগের সমস্ত লেখা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। আমার অনুমতি ছাড়া এই ব্লগের লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ করা যাবে না।এই ব্লগের সমস্ত লেখা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। আমার অনুমতি ছাড়া এই ব্লগের লেখা অন্যকোথাও প্রকাশ করা যাবে না।

নীল আকাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ অপরাজিতা নন্দিনী

৩০ শে এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৪:০২



কেবলই ভোর হয়েছে…
ঘন ঘন কয়েকটা হুইসেল দিয়ে আন্তঃনগর এক্সপ্রেসের একটা ট্রেন ময়মনসিংহের গৌরিপুর জংশন স্টেশনে এসে থামলো। এখন শীতকাল, বাইরে স্পষ্ট কুয়াশার আভা। স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে পা রাখতেই হু হু করে ঠান্ডা বাতাসের এক ঝাপটা মুখে এসে লাগলো। বিশ্বজিত গা’য়ের চাদর ভালোমতো জড়িয়ে নিয়ে মাফলার এবং কানটুপিও পরে নিলো। ইতিউতি তাকিয়ে স্টেশনের পাশের বদ্যিনাথের চায়ের দোকানে যেয়ে বসলো ও। এত বছরেও এই দোকানের কোন পরিবর্তনই হয়নি। বদ্যিনাথ সেই ঠিক আগের মতোই আছে, শুধু দশটা বছরে চেহারায় কিছুটা বয়সের আঁকিঝুঁকি লেগে গেছে। বিশাল একটা কেটলি থেকে আগুনে গরম চায়ের লিকারের সাথে গরুর খাঁটি দুধ মিশানো ঘন চা'টাকে মনে হচ্ছিল যেন স্বর্গীয় অমৃত সুধা। কয়েকটা চুমুক দিতেই ওর শীত শীত ভাব কমে আসলো। বেশ কিছুক্ষণ পরে বিশ্বজিত’কে দেখা গেলো মুক্তাগাছায় এসে মিষ্টির দোকান থেকে মন্ডা কিনতে। হাতে কয়েক কেজি মন্ডা কিনে বাসার দিকে যাত্রা শুরু করলো ও। বাসা এখান থেকে কয়েক ক্রোশ দূরেই হবে। হেঁটেই রওনা হলো বিশ্বজিত। দশবছর পরে গ্রামে নিজের বাড়িতে ফিরেছে আজ ও। একের পর এক ধানক্ষেতের চিকন আইল ধরে হাঁটতে হাঁটতে পুরাতন অনেক স্মৃতিই আজ মনে পড়ছে ওর। দশ বছর, একশ বিশ মাস, প্রায় সাড়ে তিন হাজার দিন। দেখতে দেখতে কিভাবে যেন দিনগুলি কেটে গেল। জীবনের বহতা স্রোতের উল্টোদিকে চলতে চলতে হুট করেই কয়েকদিন আগে বিশ্বজিতের মনে হলো আর কতকাল এই ছন্নছাড়া জীবন? শিকড়ের টান উপড়ে ফেলা এত সহজ না। কিছু কিছু শিকড় বুকের এত গভীরে প্রোথিত থাকে যে এর কোন কূলকিনারাই খুঁজে পাওয়া যায় না।

বিকালবেলা বিশ্বজিতের ছোটবোন বিথীকা বড় ভাইয়ের সাথে দেখা করার জন্য শ্বশুড়বাড়ি থেকে চলে আসলো। বিশ্বজিত বিদেশে চলে যাবার কয়েকবছর পরে বিথীকার বিয়ে হয়েছিল। সুযোগ বুঝে আলাদা করে ডেকে নিয়ে বিথীকা’র কাছে একটা গোপণ বিষয় জানতে চাইলো বিশ্বজিত। মুহূর্তেই গভীর বিষাদে মুখ ঢেকে গেল বিথীকার।
-দাদা ও ভালো নেই। এতকিছুর পর কী করে ভালো থাকে বলো? তোমরা সবাই মিলে যা করেছ ওর সাথে?
-কেন রে লগ্নজিতার আবার কী হয়েছে?
-ওমা দাদা, তুমি দেখি কিছুই জানো না!

মুখ কিছু এগিয়ে এনে ফিসফিস করে বিথীকা দাদা বিদেশে চলে যাবার পর থেকে নিজের বাল্যকালের সখীর হাল হকিকত গড়গড় করে বলে যেতে লাগলো। সবকিছু শোনার পর প্রায় স্তব্ধ বিশ্বজিত শুধু অস্ফুটস্বরে বললোঃ
-ও কোথায় থাকে এখন?
-নিজের বাসায় চলে এসেছে। বিধবাদের তো শ্বশুড়বাড়িতে থাকতে দেয়না। দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে ওকে।
লগ্নজিতা বিথীকা’র সমবয়সী। এখন বয়স আর কত হবে? চব্বিশ বা পঁচিশ? বাবা মারা যাবার পর লগ্নজিতার কপাল আরো পূড়েছে। টাকাপয়সার জন্য নিজের ভাইরা মিলে বোন’কে ঘাটের মড়ার সাথে বিয়ে দেয়। ওর ভাইদের দোষ দিয়ে আর লাভ কী? বিশ্বজিত তো নিজের বাবা মা’কেই রাজী করাতে পারলো না। অবস্থাপন্ন কায়স্থ পরিবারের একমাত্র ছেলে’কে কিছুটা নিন্মবিত্তের মেয়ের সাথে কোনভাবেই বিয়ে দিতে রাজীও হলো না। বিশ্বজিতের বাবা মা দুইজনই খুব গোঁড়াপন্থী। জিদের চোটে দেশ ছেড়েই চলে গিয়েছিল ও। ইচ্ছে করেই দেশের কারো সাথেই যোগাযোগ রাখতো না ও! নিজের না পারার ব্যর্থতায় কূঁকড়ে গেল বিশ্বজিত। লগ্নজিতার মুখামুখি দাঁড়িয়ে একবার জন্যও ও বলে যেতে পারেনি, কেন সেদিন আমৃত্যু হাত ধরে রাখার আশ্বাস দিয়েও চোরের মতো পালিয়ে চলে গিয়েছিল। “লগ্নজিতা, এই পৃথিবীতে তুমি আমার একমাত্র গ্রহ। চারিদিকে হাহাকারে ভরা অসীম মরুভূমিতে তুমিই আমার একটুকরো মরুদ্যান”। বড় বড় কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘর থেকে বের হয়ে আসলো ও।


দুই বিল্ডিং পরেই লগ্নজিতাদের বাসা। আগে কত রকম অজুহাতে এইবাসায় বিশ্বজিতের নিয়মিত আসা হতো। কিন্তু আজ এতদিন পরে কিছুটা হলেও কুন্ঠা হচ্ছে ওর। মৃদুপায়ে বাসার সামনে এসে দাঁড়াতেই বারান্দায় বসা লগ্নজিতার সাথে দেখাঃ
-দাদা, অবশেষে আসলে? এতদিন পরে? আমাকে ভুলেও যেতে পারলে না একদম?
হুট করে কী বলবে সেটা মনের মাঝে খুঁজেও পেলো না বিশ্বজিত।
জন্ম জন্মান্তরের খুব চেনা মানুষটাকেও বিশ্বজিতের ভীষণ অচেনা মনে হলো আজ। বারান্দায় মুখোমুখি এখন দাঁড়িয়ে আছে দুইজন। লগ্নজিতা মেঝের দিকে তাঁকিয়ে আছে। বিশ্বজিতের দিকে মুখ তুলেও তাকাচ্ছে না। হালকা দুই একটা কথা কিংবা প্রশ্নও মেঝের দিকে তাঁকিয়ে বলে যাচ্ছে। বিশ্বজিতের বুকের ভিতরে মুচড়ে উঠলো এক নিদারুণ অপরাধবোধ। সহজ সরল এক অবুঝ বালিকাকে একরাশ স্বপ্ন দেখিয়ে একসাথে ভালোবাসার জীবনসমুদ্র পাড়ি দিবে বলে মাঝপথে হাতটুকু ছেড়ে দেবার সেই অপরাধবোধ, যা এতটা বছর ধরে প্রতিমুহূর্তেই ওকে কূঁড়েকূঁড়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়েছে। বিশ্বজিতের আজন্ম ভালোবাসার প্রিয় মানুষ, ছটফটে হরিণের মতো নরম একটা শরীর। স্নিগ্ধ একটা মুখে ঈশ্বর কী অসীম মায়া রেখে দিয়েছেন। শত ইচ্ছে থাকলেও যে মায়া হাত দিয়ে আজ ও আবার ছুঁয়ে দেখতে পারবে না। কিশোরীর চঞ্চলতায় ভরা লগ্নজিতা এখন অনেক বদলে গেছে, আগের থেকে বেশি শান্ত। হয়তো এইজীবনে না-পাওয়ার হাহাকারগুলি নিঃশব্দে বুকের ভিতরের সবকিছু ভেঙেচুড়ে চুরমার করে দিয়ে গেছে দেখেই আজ এতটা নিশ্চুপ লগ্নজিতা। ক্ষণিকের জন্য লগ্নজিতার সাথে চোখাচোখি হতেই মনে হলো ওর চোখের মাঝে হাজারো অব্যক্ত কথা লুকিয়ে আছে বিশেষ কাউকে বলার জন্য।
-আমার ঘরে এসে বসো দাদা। তোমার সাথে আলাদা করে কিছু কথা আছে।

বারান্দার সাথে লাগোয়া একটা দরজা লগ্নজিতা খুলে ভিতরে ডাকলে বিশ্বজিত নিরবে অতি পরিচিত সেই ঘরে এসে ঢুকলো। প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। দরজা লাগিয়ে দিতেই মৃদু অন্ধকারে ঘর ভরে উঠলো। লগ্নজিতা নিঃশব্দে ধীরপায়ে বিশ্বজিতের খুব কাছে এসে দাঁড়ালো। কেবলই নামা জ্যোৎস্নার হালকা আলোতে বিশ্বজিতের বুকটা মৃদু কাঁপতে শুরু করে, অনেক পরিচিত একটা গায়ের ঘ্রাণ ওর নাকে এসে ভীড় জমালো। হঠাৎ লগ্নজিতা শক্ত করে বিশ্বজিতের দুইকাঁধ ধরে নিজের নরম ঠোঁটগুলো বিশ্বজিতের ঠোঁটের ভিতরে শক্ত করে ডাবিয়ে দিলো। স্তব্ধ বিশ্বজিত কাঠের পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে আছে, অপ্রত্যাশিত এই ঘটনায় পুরোপুরি অপ্রস্তুত ও। লগ্নজিতা আজ আর কোনকিছুই মানলো না। বেশ কিছুক্ষণ পরে নিজের ঠোঁট সরিয়ে নিয়ে কঠিনস্বরে বললোঃ
-লজ্জা পাচ্ছো নাকি দাদা? এই ঘরে আমাকে পড়াতে এসে দরজা আড়াল করে জোর করে কতবার চুমু খেয়েছ, কতবার ইচ্ছেমতো জড়িয়ে ধরেছ, মনে আছে সেইসব?
-মনে আছে রে, কোনকিছুই ভুলিনি আমি। এইসব স্মৃতি কিছুতেই ভুলে যাওয়া যায় না।
-তখন ভাবতাম আরেকটু বড় হলেই যখন আমাকে তোমাদের বাসায় নিয়ে যাবে, তখন আমিও তোমাকে ইচ্ছেমতো চুমু দেবো। তোমার চুমুগুলির সব দেনা আমি আদরে আদরে ঠিক ঠিক শোধ করে দেবো। কিন্তু সেই সুযোগ তো আমাকে দাওনি তুমি দাদা!
-তুমি তো আমাকে সত্যিকারের ভালবাসোনি না। বাসলে কোনদিনও স্বার্থপরের মতো এভাবে আমাকে একলা ফেলে চলে যেতে পারতে না। কিন্তু আমি যে তোমাকে বাসতাম সেটার প্রমাণ আজকে ঠিকই দিলাম। আজকে যেটা করেছি, সেটা না করলে তুমি কোনদিনও বুঝতে পারতে না আমি তোমাকে কতখানি ভালোবেসেছি সারাজীবন ধরে!

কথা বলা শেষে লগ্নজিতা বারবার শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে লাগলো। গলা এতটাই আর্দ্র হয়ে উঠলো যে বেশ কয়েকবার গলাখাকারি দিয়ে আর কিছু বলতে পারলো না। খুব অস্তস্তি নিয়ে বিধবা লগ্নজিতার হাত থেকে কুসংস্কারবশত নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলো বিশ্বজিত। কিন্তু নিঃশব্দে বিশ্বজিতের ডানহাতটা আরো শক্ত করে লগ্নজিতা আঁকড়ে ধরে রাখতে চাইলো পরম নির্ভরতায়।
-বাসায় আজকে কেউ নেই। আমার কাছে আজকে রাতটা থেকে যাও দাদা। আমার সাথে সারারাত গল্প করার তোমার না অনেক শখ ছিল বারবার বলতে?
বিশ্বজিত চমকে উঠে দেখলো লগ্নজিতার আজ আর চোখে-মুখে কোনো লজ্জা, দ্বিধাসঙ্কোচ কিছুই নেই। কোনরকমে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বিশ্বজিত ঐ বাসা থেকে বের হয়ে গেলো। বাসা থেকে চলে আসার সময়ে শুনলো ভাঙ্গা গলায় লগ্নজিতা বলছেঃ
-আবারও ভয় পেলে দাদা? এত ভয় নিয়ে আমাকে ভালোবাসার স্বপ্ন দেখিয়েছিলে কেন?


উদ্দেশ্যহীনভাবে গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে চলছে এখন বিশ্বজিত। মাথার উপর পূর্নিমার বড় চাঁদের আলো থাকার পর সামনের সবকিছু আজ ওর চোখে অন্ধকার লাগছে। প্রচণ্ড বিক্ষিপ্ত মন, কিছুই ভালো লাগছে না। হঠাৎই চলে আসার আগে শেষবারের মতো লগ্নজিতার চোখের সুতীব্র আকুতির অর্থ হুট করেই বুঝতে পারলো ও। বুকটা তছনছ হয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত। থমকে দাঁড়ালো ও, মনের ভিতরে উথালপাতাল এখন ঢেউ বইছে। এতটা গভীর ভালোবাসা কিভাবে ওর চোখ এড়িয়ে গেল? ভালোবাসার এতটা কাছে এসেও প্রণয়ের তরীতে উঠতে দ্বিধা করছে ও? আবারও একই ভুল করছে না তো?

মুহুর্তেই ঘুরে দাড়ালো বিশ্বজিত। ঠিক কী হলো ও নিজেও জানে না, পাগলেও মতো ছুটে চলছে এখন ও। এখন আর নিজের উপর ওর কোন স্বাধীনতা নেই। পা দুটো যেদিক যেতে চাইছে সেদিকেই যাচ্ছে ও এখন।

কিছুক্ষণ পরেই খুব চেনা একটা বাসার আরো বেশি চেনা একটা দরজায় যেয়ে জোরে জোরে আঘাত করতে লাগলো ও। দরজাটা খুলতেই ঘরে ঢুকে বিশ্বজিত ভালো করে ভিতর থেকে দরজাটা লাগিয়ে দিলো। সামনে দাঁড়ানো একজনকে সজোরে বুকের ভিতরে টেনে নিলো, অবাধ্য আদরের পরশে শুষে নিতে চাইলো এতদিনের পুরানো সব দেনাকে।
-দাদা তুমি আবার ফিরে এসেছো?
-হ্যাঁরে পাগলি!
-এত দেরী হলো কেন?
-নিঃসঙ্গতার মাঝে থাকতে থাকতে ভালোবাসা চিনতেও ভুলে গিয়েছিলাম। আর এই ভুল হবে না। আর কখনই তোকে ফেলে কোথাও যাবো না।
-সত্য বলছো তো দাদা?
- হ্যাঁ, দেখ তোকে ছুঁয়ে বলছি দেখে!

ঝট করে বিশ্বজিতের মুখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাঁকিয়ে রইলো লগ্নজিতা। লজ্জার আবীরে লগ্নজিতার মুখ আরক্তিম হয়ে উঠলো দ্রুতই। ভেজা ভেজা চোখ মুছে ফেলে লগ্নজিতা পরম নির্ভরতায় বিশ্বজিতের বুকে মাথা ঠেকালো। আলতো করে নিজের দুই হাতে লগ্নজিতার মুখ উঁচু করে ধরলো বিশ্বজিত। লগ্নজিতার ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠেছে বিজয়ীর হাসি। চোখে খুব পরিচিত এক দৃষ্টি।

সেই দৃষ্টিতে বিশ্বজিত সহসাই যেন খুঁজে পেলো বহু বছর আগে ফেলে আসা অসম্ভব আবেগে ঢাকা ভালোবাসার এক অতলান্তিক হাতছানি।


কিছু কথাঃ এই গল্পের পুরো কৃতিত্ব ব্লগার পদাতিক ভাইয়ের। উনার এই গল্পটা পড়ার পর সেটার ফিনিস কেন যেন নতুন করে লিখতে ইচ্ছে করলো। লগ্নজিতা নামটাও উনার দেয়া। মেয়ের এই নামটা মাথার একদম ভিতরে ঢুকে গিয়েছিল। কিছুতেই বাদ দিতে পারলাম না। শুধু ভালোবাসা নির্ভর গল্প আমি সাধারনত লিখি না। তবে সবকিছুরই ব্যতিক্রম থাকে। লগ্নজিতা আমার কাছে ভালোবাসার এক “অপরাজিতা নন্দিনী”!

সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইল।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীল আকাশ, এপ্রিল ২০২১

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৪:৩৭

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: লগ্নজিতার কথাগুলো খুব ভালো লেগেছে। এটা আপনার দক্ষতা।

গল্পটা দারুণ।

একটা জিনিস ক্লিয়ার হই নি। লগ্নজিতার সাথে প্রথমবার বিয়ে না হওয়ার কারণ কী ছিল? বিশ্বজিৎ বিদেশেই বা কেন চলে গিয়েছিল?

৩০ শে এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২০

নীল আকাশ বলেছেন: পদাতিক দা'র গল্প থেকে কারণ বের করে এসে আপনাকে জানাচ্ছি।
আমার কাছে লগ্নজিতা দুর্দান্ত চরিত্র। শুধু ওর উপর নির্ভর করেই এটা লিখেছি। কথপোকথন লেখার সময় বিশেষ মনোযোগ ছিল।
ধন্যবাদ, শুভ কামনা এবং মাহে রামাদানের শুভেচ্ছা।

০৯ ই মে, ২০২১ সকাল ১০:২৭

নীল আকাশ বলেছেন: অনেক দিন পরে ফিরে আসলাম। আপনার প্রথম এবং দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দেয়া বেশ জটিল।
এই গল্পটার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে ব্লগার পদাতিক এর একটা ধারাবাহিক গল্প "সমন্বিতা"। এখানে নায়ক বহুদিন পরে ঘরে ফিরে আসে এবং যেখানে লগ্নজিতার বাবার বাসায় যায়, সেখানেই আবার দেখা হয়, কথা হয় বিধবা লগ্নজিতার সাথে। মূল গল্প ভীতু নায়ক সদ্য বিধবা লগ্নজিতার প্রকাশ্য আহবানেও সামাজিক ভয় ভীতির কারণে নায়িকা'কে ফেলে রেখে চলে আসে।
এভাবে চলে আসাটা আমার ঠিক পছন্দ হয়নি। আমার মনে হয়েছে ফিনিস অন্যভাবেও হতে পারতো। এবং এই চিন্তাভাবনা থেকেই এই গল্প লেখা হয়েছে। বিশ্বজিত আমার দেয়া নাম। মূল গল্পে নায়কের কোন নাম দেয়া ছিল না। উত্তম পুরুষে সেটা লেখা হয়েছিল। সেখানে বিদেশ গমনের জায়গায় উচ্চ শিক্ষার জন্য গ্রাম ছেড়ে কলিকাতায় চলে যাওয়া দেখানো হয়েছে। এবং আর মাঝে ফেরা দেখানো হয়নি।

শুভ কামনা আপনার জন্য।

২| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:২৮

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: যুনাইদ ভাই, আবার এলাম এ গল্পটা সম্পর্কে কিছু বলার জন্য। এ গল্পটা আপনার ভবিষ্যত সাহিত্যিক জীবনে আপনার জন্য কিছু সমালোচনা বয়ে আনতে পারে। ব্যভিচার আইন নিয়ে আলোচনা পোস্ট দেয়ার পর আপনিও আপনার এক লেখায় তার উল্লেখ করেছেন। এ গল্পে মেয়েটা বিধবা। ছেলেটার সাথে তার আগে প্রেম ছিল। পুনর্বার দেখা হবার পর তাদের মধ্যে প্রেম জেগে ওঠে। তারা একঘরে রাত কাটাতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে চুমু খাওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে সেক্স হবে, এটা সহজেই অনুমেয়। ঠিক এই জিনিসটাই বিতর্ক সৃষ্টি করবে। আমাদের প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিকরা বিবাহপূর্ব/বহির্ভূত সেক্স কেউ দেখিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। কেউ দেখালেও তার একটা খারাপ পরিণতি দেখানো হয়েছে। বিবাহ বহির্ভূত সেক্স সমাজে যদিও চলছে, কিন্তু তার বৈধতা কেউ দেয় নি, বা আমাদের সমাহ এটা মেনে নেয় না। শরৎচন্দ্র তার কোনো এক উপন্যাসে (নাম মনে নেই) শুধু একটা চুমু খাওয়া দেখান, তারপরই দেখা যায় বজরা ডুবে যায়, ওটা 'পাপ'-এর পরিণতি হিসাবে দেখানো হয়। রবীন্দ্রনাথের 'নষ্টনীড়'সহ আরো দু একটা গল্পে এরকম থাকলেও তার পরিণতি হয়েছে খারাপ, তা দেখানো হয়েছে।

এ কথাগুলো বললাম এজন্য, গল্পে সমাজের প্রচলিত ধারার বিপরীতে গেলে তার প্রভাব আপনার লেখক ক্যারিয়ারে কীরকম পড়তে পারে সেটা বলার জন্য।

০৯ ই মে, ২০২১ সকাল ১১:০৮

নীল আকাশ বলেছেন: ধন্যবা আপনাকে। খুব ভালো একটা বিষয় তুলে এনেছেন। আমি সবসময় বেশ কঠোরভাবে এই সাম্ভাব্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে জায়গাগুলি এড়িয়ে যাই। সামাজিক প্রচলিত ধারা তো পরের কথা আমি নিজেই এই বিষয়টা ব্যক্তিগত জীবনের পছন্দ করি না। সাধারনত গল্পের শুরুতেই এই অংশগুলি কাটছাট করে লিখতে বসি।
তবে এই গল্পটা লিখতে বসে কিছু ফিনিস পরিবর্তন করতে যেয়ে কিছু জায়গায় কারণ নিয়ে আসতে হয়েছে। কেন লগ্লজিতা এখনো এত অনুরক্ত নায়কের প্রতি সেটা দেখাতেই যেয়ে একটা চুমুর দৃশ্য আনা হয়েছে। তবে রাতে থেকে যাবার যে আহবান লগ্নজিতা করেছে সেটা আসলে এই মেয়ের মরিয়া হয়ে যাওয়া বুঝাতেই ব্যবহার করেছি। এবং তত টুকু যাবার আগেই আমি গল্পটা ফিনিস করে দেয়েছি।

তবে আপনার এই মেসেজ আমার জন্য রেড সিগন্যাল। একজন লেখক হিসেবে কতটুকু যেতে পারবো সেটা সীমারেখা আমাকে দেখিয়ে দেবার জন্য আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা। গল্পে সমাজের প্রচলিত ধারার বিপরীতে আমি অবশ্যই যেতে চাইনা। আপনার এই উপদেশ আমার অনেক অনেক দিন মনে থাকবে। এবং আমার পরবর্তি লেখাগুলির মাঝে এই উপদেশের ছাপ সুস্পষ্টভাবে দেখতে পাবেন।

শুভ কামনা নিরন্তর।

৩| ০১ লা মে, ২০২১ সকাল ৮:০০

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: নায়িকার নামটা সুন্দর। গল্পের শেষটা মিলনাত্মক হয়েছে এটা পজেটিভ দিক। তবে বিদেশ থেকে ফেরার পর লগ্নজিতার সাথে নায়কের যে দেখা হলো ওদের বাড়িতে বাড়ির লোকজনের প্রতিক্রিয়া গল্পে দেখানো হলে আরও ভাল হতো মনে হয়।

০৯ ই মে, ২০২১ দুপুর ১:০৭

নীল আকাশ বলেছেন: নাম আসলে খুব সুন্দর।
আপনি এটার মূল ঘটনা পড়ে নিতে পারেন পদাতিক ভাইয়ের পোস্ট থেকে। আমি ছোট একটা অংশ থেকে লিখেছি।

৪| ০১ লা মে, ২০২১ বিকাল ৩:৪৬

তারেক ফাহিম বলেছেন: লগ্নজিতার বিজয় দেখে ভালো লাগলো।
তবে সেটা বিধিসম্মত হলে আরো ভালো দেখাতো।

০৯ ই মে, ২০২১ দুপুর ১:০৮

নীল আকাশ বলেছেন: ধন্যবাদ। আমি অ-বিধিসম্মত কিছু হবার আগেই গল্প শেষ করে দিয়েছি। বাকিটা আপনি নিজে চিন্তা করে বের করেছেন। ;)

৫| ০১ লা মে, ২০২১ রাত ১১:২০

আহমেদ জী এস বলেছেন: নীল আকাশ,




দু'টি হৃদয়ের কাছে আসার গল্প। দীর্ঘ বিচ্ছেদের পরে এমনটাই হয়তো স্বাভাবিক!
তবে গল্পটিতে কাছে আসার দৃশ্যপট যে আঙ্গিকে তুলে ধরেছেন সে প্রসঙ্গে সহব্লগার সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই এর ২ নম্বর মন্তব্যটিও স্মরণে রাখতে বলি।

০৯ ই মে, ২০২১ দুপুর ১:১১

নীল আকাশ বলেছেন: অবশ্যই গুরুজী।
উনাকেও উপরে বলেছি এরপর থেকে আমি সাবধানে থাকবো এই ধরণের বিষয়ে লেখার সময়ে।
দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর হুট করে দেখা হওয়াটা অনেক আবেগঘন ব্যাপার।
শুভ কামনা আপনার জন্য।

৬| ০৩ রা মে, ২০২১ দুপুর ১২:৩১

মনিরা সুলতানা বলেছেন: লগ্নজিতা আমার কাছে ভালোবাসার এক “অপরাজিতা নন্দিনী”!

চমৎকার !

১৫ ই মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১৬

নীল আকাশ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে পড়ার জন্য।
ঈদ মোবারক এবং শুভ কামনা।

৭| ০৫ ই মে, ২০২১ রাত ১২:২০

রাজীব নুর বলেছেন: লগ্নজিতা চমৎকার এক চরিত্র এঁকেছেন।

১৫ ই মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১৮

নীল আকাশ বলেছেন: খুব করে ধন্যবাদ নিবেন ভাই।
দুই মেয়ে কেমন আছে?
ঈদ মোবারক এবং শুভ কামনা।

৮| ০৯ ই মে, ২০২১ রাত ১:২২

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



বেশ একটি দু:সাহসিক গল্প ।
গল্পের নায়ক নায়িকার পরিনিতি শুভ হয়েছে
তবে সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই যা বলেছেন
তাতে করে গল্প লেখকের পরিনতি কি হয় তা
ভেবেই কিছুটা হচ্ছি আকুল । তবে ভয়ের
তেমন কোন কারণ নেই , প্রগতির এই যুগে
এগিয়ে যান নীজের ভাবনা ও লেখনি শক্তির
পরিস্ফুটন ঘটাতে ।

শুভেচ্ছা রইল

১৫ ই মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২২

নীল আকাশ বলেছেন: প্রথমেই সুন্দর এক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
এই গল্পের ফিনিস হতে পারে দুইটা। মিলনাত্মক কিংবা বিচ্ছেদের। পদাতিক দা বিচ্ছেদেরটা লিখেছিলেন। আমার আসলে মনে হয়েছে মিলনাত্মক হলে বেশি আকর্ষনীয় হতো। সেই চিন্তা ভাবনা থেকেই এই গল্পাংশ লেখা হয়েছে।
খলিল ভাই (সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই) যা বলেছেন সেটা আমার ভালোর জন্য বলেছেন। পোস্টে পিঠ চাপড়ানো মন্তব্যের চেয়ে রুক্ষ কিন্তু সত্য মন্তব্যও অনেক বেশি শ্রেয়তর।
আপনার জন্য ঈদ মোবারক এবং শুভ কামনা।

৯| ১৮ ই জুলাই, ২০২১ দুপুর ১:২২

খায়রুল আহসান বলেছেন: এ গল্প পড়ার আগে 'সমন্বিতা' পড়ে এলাম। সেই গল্প পড়ে আপনার মাথায় ঘোরা চিন্তাটাকে এ গল্পের মাধ্যমে বেশ সফলভাবেই প্রকাশ করতে পেরেছেন।

প্রথম অনুচ্ছেদের শেষ লাইনটি থেকে দুটো 'এত'র মধ্যে যে কোন একটিকে উঠিয়ে দিতে পারেন।

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই এর ২ নং মন্তব্যটা এবং তদুত্তরে আপনার প্রতিমন্তব্য- দুটোই ভালো লেগেছে।

গল্পে ৬ষ্ঠ ভাললাগা। + +


আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.