নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্বজোড়া পাঠশালাতে সবাই ছাত্র-ছাত্রী, \nনিত্য নতুন শিখছি মোরা সদাই দিবা-রাত্রী!

নীল আকাশ

এই ব্লগ-বাড়ির সমস্ত লেখা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। লেখকের অনুমতি ছাড়া এই ব্লগ-বাড়ির কোনো লেখা অন্যকোথাও প্রকাশ করা যাবে না।

নীল আকাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জশনে জুলুছে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ পালনের নামে আজকাল কী চলছে? নিজেদের ঈমান নষ্ট করছেন না তো?

২০ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:১৪

[সকল প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য, যিনি আমাদেরকে সর্বোত্তম দীনের অনুসারী ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উম্মত হওয়ার তৌফিক দান করেছেন। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক হযরত মুহাম্মাদ ইব‌ন আব্দুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উপর, যিনি আমাদেরকে কল্যাণকর সকল পথ বাতলে দিয়েছেন ও সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে সতর্ক করেছেন। আরও সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর পরিবারবর্গ (আহলুল বাইয়াত) এবং উনার সাথীদের উপর, যারা তার আনীত দ্বীন ও আদর্শকে পরবর্তী উম্মতের নিকট যথাযথ ভাবে পৌঁছে দিয়েছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত যারা তাদের অনুসরণ করবে তাদের সবার উপর।]

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ-
১। খুলাফায়ে রাশিদীনের প্রথম খলিফা হচ্ছেন হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু, যাকে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাহিস ওয়াসাল্লাম নিজের বন্ধু হিসেবে ঘোষনা করে গেছেন। ঈদে মিলাদুন্নবী যদি মহানবীর সম্মানের জন্য করা হয়, কেন হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার বন্ধুর জন্য এই আয়োজন করেনি?
২। খুলাফায়ে রাশিদীনের দ্বিতীয় খলিফা হচ্ছেন হযরত উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাহিস ওয়াসাল্লাম নিজেই বলে গেছেন শয়তান পর্যন্ত হযরত উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু’কে ভয় পেতেন। যিনি ইসলামী খিলাফতে শরীয়ত আইনের সর্বোচ্চ বাস্তবায়ন করে গেছেন। ঈদে মিলাদুন্নবী যদি মহানবীর সম্মানের জন্য করা হয়, কেন হযরত উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু এই আয়োজন করেননি?
৩। খুলাফায়ে রাশিদীনের তৃতীয় খলিফা হচ্ছেন হযরত উসমান বিন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু। উনার উপাধি ছিল ‘জুন্নুরাইন’ যার অর্থ ‘দুই আলোর অধিকারী’, উনি মহানবীর দুইজন কন্যাকে বিবাহ করেছিলেন। মিলাদ যদি মহানবীর সম্মানের জন্য করা হয়, তাহলে কেন হযরত উসমান বিন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজের শ্বশুরের জন্য ঈদে মিলাদুন্নবী আয়োজন করেননি?
৪। খুলাফায়ে রাশিদীনের চর্তুথ খলিফা হচ্ছেন হযরত আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাহিস ওয়াসাল্লাম তাকে আপণ সন্তানের মতো করে নিজের ঘরে লালন পালন করেছেন এবং নিজের সবচেয়ে আদরের কন্যা হযরত ফাতিমা জাহরা রাদিয়াল্লাহু আনহার সাথে বিবাহ দিয়েছেন। বলা হয়ে থাকে মহানবী যদি জ্ঞানের নগরী হন তাহলে হযরত আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু সেটাতে প্রবেশের দরজা। ঈদে মিলাদুন্নবী যদি মহানবীর সম্মানের জন্য করা হয়, তাহলে কেন হযরত আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু পিতৃতূল্য শ্বশুরের জন্য ঈদে মিলাদুন্নবী আয়োজন করেননি?

এটা সর্বসম্মতিক্রমে একনিষ্ঠভাবে প্রমানিত যে, বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ২৩ বছর, খুলাফায়ে রাশেদীনের আনুমানিক ৩০ বৎসর, এরপর প্রায় ২২০ হিজরী পর্যন্ত তাবেঈন, তাবে তাবেঈনের যুগ, এরপর প্রায় ৪০০ হিজরী পর্যন্ত ইমাম ও মুজতাহিদীনের যুগ, এরপর প্রায় ৬০৩ হিজরী পর্যন্ত ইসলামের স্বর্নযুগেও প্রচলিত ঈদে মিলাদুন্নবী, মিলাদ, কিয়াম এর কোন অস্তিত্ব ছিল না। সর্বপ্রথম ৬০৪ হিজরী মোতাবেক ১২১৩ খৃষ্টাব্দে আনুষ্ঠানিকভাবে এইগুলির প্রচলন হয়।

দুনিয়ায় আল্লাহ তাআলা প্রেরিত শেষ নবী মুহাম্মদ (সাল্লালাহু আলাহিস ওয়াসাল্লাম) ঠিক কবে জন্ম গ্রহন করেছেন সেই ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোন তথ্য প্রমান নেই। আগের ঐতিহাসিকদের মধ্যে কেউ কেউ অবশ্য ৫৭০ খ্রিস্টাব্দ তাঁর জন্ম বছর বলে উল্লেখ করেন। আবার কেউ কেউ বলেন ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে পিতা আবদুল্লাহর ঔরসে ও মাতা আমেনার গর্ভে তিনি আগমন করেন। ৫৭১ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভূমিষ্ঠ হন। খ্রিস্টীয় পঞ্জিকা অনুযায়ী তাঁর জন্ম তারিখ ২০ এপ্রিল। আরবি হিজরি সন অনুযায়ী তারিখটি ৯ রবিউল আউয়াল। কোনো কোনো ইতিহাসবিদ বলেছেন, ১২ রবিউল আউয়াল। তবে দিন হিসেবে সোমবার সম্পর্কে মতভেদ নেই। কারণ জীবনচরিতকাররা একমত যে রবিউল আউয়াল মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে সোমবার দিন নবী মুহাম্মদ (সাল্লালাহু আলাহিস ওয়াসাল্লাম)-এর জন্ম। এই সোমবার ৮ অথবা ৯ কিংবা ১২ যে কোন দিন হতে পারে। (ইসলামী বিশ্বকোষ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা) তবে নবী (সাল্লালাহু আলাহিস ওয়াসাল্লাম)-এর প্রথমদিকের জীবনীকারদের অন্যতম ইবনে হিশাম তাঁর গ্রন্থের পাদটীকায় উল্লেখ করেছেন, ‘রাসুল (সাল্লালাহু আলাহিস ওয়াসাল্লাম)-এর জন্ম সম্পর্কে সাধারণত প্রসিদ্ধ উক্তি এই যে তিনি রবিউল আউয়াল মাসে আবির্ভূত হন। তবে যুবায়র বলেছেন, তিনি রমজান মাসে জন্মগ্রহণ করেন। কারো কারো মতে, আমিনা গর্ভধারণ করেন আইয়ামে তাশরিকে—অর্থাৎ জিলহজ মাসের মাঝামাঝি সময়। এ উক্তি সঠিক হলে রাসুল (সাল্লালাহু আলাহিস ওয়াসাল্লাম)-এর রমজানে জন্মগ্রহণের অভিমত সঠিক। সংখ্যাগুরু ঐতিহাসিকদের বক্তব্য এই যে হাতিবাহিনী মক্কা শরিফে এসেছিল মহরম মাসে এবং এর ৫০ দিন পর তিনি আবির্ভূত হন। এ মতটিই অধিক প্রচলিত এবং সর্বাধিক প্রসিদ্ধ। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, সৌর হিসাবে তাঁর জন্ম তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর। তিনি জন্মগ্রহণ করেন মক্কা শরিফের পাহাড়ের উপত্যকায় অবস্থিত বাড়িতে। কারো কারো মতে, সাফা পর্বতের কাছে অবস্থিত বাড়িতে।
[সূত্র - ইবনে হিশামঃ সিরাতুন্ নবী (সাল্লালাহু আলাহিস ওয়াসাল্লাম), ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ঢাকা, ২০১৩ (তৃতীয় সংস্করণ), পৃষ্ঠা ১৫৭]

নবী (সাল্লালাহু আলাহিস ওয়াসাল্লাম)-এর জন্ম কাহিনীতে হস্তীবর্ষ বা হাতিবাহিনী শব্দগুলো জুড়ে রয়েছে। এটা হলো সুরা ফিলে বর্ণিত ইয়েমেনের বাদশাহ আবরাহা কর্তৃক কাবাঘর ধ্বংস করার অভিযানের বছরের কথা অথবা সে কাহিনীর কথা। ঐতিহাসিকরা মনে করেন, ৫৭১ খ্রিস্টাব্দে আবরাহা কাবাঘর ধ্বংসের জন্য অভিযান পরিচালনা করেছিল। এর ৫০ দিন পরই নবী (সাল্লালাহু আলাহিস ওয়াসাল্লাম) কাবাঘরের সন্নিকটে তাঁর পিতৃভূমিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আরব ঐতিহাসিকদের মধ্যে প্রথমদিকে যাঁরা নবী (সাল্লালাহু আলাহিস ওয়াসাল্লাম)-এর জীবনী লিখেছেন, তাঁদের মধ্যে ইবনে ইসহাক অন্যতম। ইবনে হিশাম তাঁর গ্রন্থ থেকে অনেক তথ্য ও সূত্র উল্লেখ করেছেন। মুহাম্মদ ইবনে ইসহাকের গ্রন্থের নাম ‘কিতাবুল মুবতাদা’। এ গ্রন্থে ইবনে ইসহাক জনৈক কায়েস ইবনে মাখরামার সাক্ষাত্কার প্রকাশ করেন, যেখানে কায়েস বলেছেন, ‘আমি এবং রাসুল (সাল্লালাহু আলাহিস ওয়াসাল্লাম) আবরাহার হামলার বছর জন্মগ্রহণ করি। তাই আমরা সমবয়সী’। এ থেকে নবী (সাল্লালাহু আলাহিস ওয়াসাল্লাম)-এর জন্ম বছরটি ৫৭১ খ্রিস্টাব্দ হিসেবে সঠিক আছে।

বর্তমান যুগের জীবনীকার মুফতি মুহাম্মদ শফী (রহিমাহুল্লাহ ) নবী (সাল্লালাহু আলাহিস ওয়াসাল্লাম)-এর জন্ম তারিখ সম্পর্কে আরো ভিন্ন ভিন্ন মত তাঁর গ্রন্থে পর্যালোচনার জন্য গ্রহণ করেছেন। তিনি লিখেছেন: ‘এ বিষয়ে সবাই একমত যে নবী করিম (সাল্লালাহু আলাহিস ওয়াসাল্লাম)-এর জন্ম রবিউল আউয়াল মাসের সোমবার দিন হয়েছিল। কিন্তু তারিখ নির্ধারণে চারটি রেওয়ায়েত (বর্ণনা) প্রসিদ্ধ রয়েছে। ২, ৮, ১০ ও ১২ তারিখ। তন্মধ্যে হাফিজ মুগলতাই (রহিমাহুল্লাহ ) ২ তারিখের রেওয়ায়েত গ্রহণ করে অন্য রেওয়ায়েতগুলোকে দুর্বল বলে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু প্রসিদ্ধ হচ্ছে ১২ তারিখের রেওয়ায়েত। হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহিমাহুল্লাহ ) এই মতে সবাই একমত বলে দাবি করেছেন। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ইবনে আসিরের ‘আল কামিল’ গ্রন্থে এই তারিখই গ্রহণ করা হয়েছে। মাহমুদ পাশা মিসরি গণনার মাধ্যমে ৯ তারিখ গ্রহণ করলেও তা সবার মতের বিপরীত ও সনদবিহীন উক্তি। যেহেতু চাঁদ উদয়ের স্থান বিভিন্ন, তাই গণনার ওপর এতটুকু বিশ্বাস ও নির্ভরতা জন্মায় না যে তার ওপর ভিত্তি করে সবার বিরোধিতা করা যাবে। [মুফতি মুহাম্মদ শফি (রহিমাহুল্লাহ ), করাচি : সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া, ইসলামিয়া কুতুবখানা, ঢাকা, ১৯৯৬, পৃষ্ঠা ১৭]

সুতরাং কেউ যদি সুনির্দিষ্ট করে কোন দিনকে শেষ নবী মুহাম্মদ (সাল্লালাহু আলাহিস ওয়াসাল্লাম) এর জন্মদিবস হিসেবে পালন করে তা হলে সেটা কীসের ভিত্তিতে করা হচ্ছে?
কোন উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে?

শুধুমাত্র রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রদর্শিত পথে যা যা অনুসরন করা হয় তাই ইবাদত। যদি রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সুন্নতকে, তার প্রদর্শিত আদর্শকে বাদ দিয়ে নতুন কোন তরীকা কিংবা নতুন উদ্ভাবিত আকীদায় কাজ করা হয় তাকে বিদআত বলে। বিদআত মানে হল ধর্মের নামে নতুন কাজ, বেশী বুঝা, যা কিছুর প্রয়োজন নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও আল্লাহ মনে করেননি নিজেরা সেটা আবিষ্কার করা (হতে পারে সেটা দেখতে ভালো কিংবা মন্দ) এবং সেটা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নামে মিথ্যাচার করে চালিয়ে দেয়া। বিদআত শব্দের আভিধানিক অর্থ হল : اَلشَّيْءُ الْمُخْتَرَعُ عَلٰى غَيْرِ مِثَالٍ سَابِقٍ অর্থাৎ পূর্ববর্তী কোন নমুনা ছাড়াই নতুন আবিষ্কৃত বিষয়।
(সূত্রঃ আন-নিহায়াহ, পৃঃ ৬৯, কাওয়ায়েদ মা’রিফাতিল বিদআ’হ, পৃঃ ১৭) আর শরীয়তের পরিভাষায়-
مَا أُحْدِثَ فِى دِيْنِ اللهِ وَلَيْسَ لَهُ أَصْلٌ عَامٌ وَلاَخَاصٌّ يَدُلُّ عَلَيْهِ. অর্থাৎ আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে নতুন করে যার প্রচলন করা হয়েছে এবং এর পক্ষে শরীয়তের কোন ব্যাপক ও সাধারণ কিংবা খাস ও সুনির্দিষ্ট দলীল নেই।
(সূত্রঃ কাওয়ায়েদ মা’রিফাতিল বিদআ’হ, পৃঃ ২৪)
এ সংজ্ঞটিতে তিনটি বিষয় সুস্পষ্টভাবে লক্ষনীয়ঃ
১) নতুনভাবে প্রচলন অর্থাৎ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও সাহাবায়ে কিরামের যুগে এর কোন প্রচলন ছিল না এবং এর কোন নমুনাও ছিল না।
২) এ নব প্রচলিত বিষয়টিকে দ্বীনের মধ্যে সংযোজন করা এবং ধারণা করা যে, এটি দ্বীনের অংশ।
৩) নব প্রচলিত এ বিষয়টি শরীয়তের কোন ‘আম বা খাস দলীল ছাড়াই চালু ও উদ্ভাবন করা।

সংজ্ঞার এ তিনটি বিষয়ের একত্রিত রূপ হচ্ছে বিদআত, যা থেকে বিরত থাকার কঠোর নির্দেশ শরীয়তে এসেছে। কঠোর নিষেধাজ্ঞার এ বিষয়টি হাদীসে বারবার উচ্চারিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ
(وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُ(রাঃ)مُوْرِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ) رواه أبو داود والترمذى وقال حديث حسن صحيح.
‘‘তোমরা (দ্বীনের) নব প্রচলিত বিষয়সমূহ থেকে সতর্ক থাক। কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয় বিদআ‘ত এবং প্রত্যেক বিদআত ভ্রষ্টতা’’। [সূত্রঃ সূনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৯৯১ ও সূনানে আত-তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৭৬। তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান ও সহীহ বলেছেন।]
মহানবী রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর এক খুতবায় বলেছেন:
إِنَّ أَصْدَقَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللهِ وَأَحْسَنَ الْهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ وَشَرُّ الأُمُوْرِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ وَكُلُّ ضَلاَلَةٍ فِي النَّارِ. رواه مسلم والنسائى واللفظ للنسائى
“নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদের আদর্শ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হলো (দ্বীনের মধ্যে) নব উদ্ভাবিত বিষয়। আর নব উদ্ভাবিত প্রত্যেক বিষয় বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত হলো ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম”। (সহী মুসলিম, হাদীস নাম্বার ১৫৩৫ ও সুনান আন-নাসায়ী, হাদীস নং ১৫৬০, হাদীসের শব্দচয়ন নাসায়ী থেকে)

বিদআতের তিনটি মৌলিক নীতিমালা রয়েছে। সেগুলো হচ্ছেঃ
১) এমন আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সাওয়াবের আশা করা যা শরীয়ত সিদ্ধ নয়। কেননা শরীয়তের স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম হলো এমন আমল দ্বারা আল্লাহর নিকট সাওয়াবের আশা করতে হবে যা কুরআনে আল্লাহ নিজে কিংবা সহীহ হাদীসে তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অনুমোদন করেছেন। তাহলেই কাজটি ইবাদাত বলে গণ্য হবে। পক্ষান্তরে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে আমল অনুমোদন করেননি সে আমলের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদাত করা হবে বিদআত।
২) দ্বীনের অনুমোদিত ব্যবস্থা ও পদ্ধতির বাইরে অন্য ব্যবস্থার অনুসরণ ও স্বীকৃতি প্রদান। ইসলামে একথা স্বতঃসিদ্ধ যে, শরীয়তের বেঁধে দেয়া পদ্ধতি ও বিধানের মধ্যে থাকা ওয়াজিব। যে ব্যক্তি ইসলামী শরীয়ত ব্যতীত অন্য বিধান ও পদ্ধতি অনুসরণ করল ও তার প্রতি আনুগত্যের স্বীকৃতি প্রদান করলো সে বিদআতে লিপ্ত হল।
৩) যে সকল কর্মকান্ড সরাসরি বিদআত না হলেও বিদআতের দিকে পরিচালিত করে এবং পরিশেষে মানুষকে বিদআতে লিপ্ত করে, সেগুলোর হুকুম বিদআতেরই অনুরূপ।
(সূত্রঃ বিদআত পরিচিতির মূলনীতি, লেখকঃ মোহাম্মাদ মানজুরে ইলাইহি, ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রিয়াদ)

আল্লাহ তা’আলা তাঁর পবিত্র কুরআন শরীফে মানবজাতিকে একটি আদর্শ অনুসরণের ও অনেক বিধিবিধান পালনের নির্দেশ দিয়েছেন, কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই তাঁর বিস্তারিত বিবরণ দেননি। এর ভার ন্যস্ত করেছেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর। তিনি নিজের কথা, কাজ ও আচার-আচরনের মাধ্যমে কুরআনের আদর্শ ও বিধান বাস্তবায়নের পন্থা ও নিয়ম কানুন বলে দিয়েছেন। পবিত্র কুরআন শরীফকে কেন্দ্র করেই তিনি ইসলামের এক পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান পেশ করেছেন।
১। “আর তিনি মনগড়া কথাও বলেন না, এতো ওহী যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ হয়” (সুত্রঃ সূরা আন-নজম, আয়াত ৩ ও ৪)
২। “তিনি যদি আমার নামে কিছু রচনা চালাতে চেষ্টা করতেন আমি অবশ্যই তাঁর ডানহাত ধরে ফেলতাম এবং কেটে নিতাম তাঁর জীবন ধমনী” (সূত্রঃ সূরা আল-হাক্কাহ, আয়াত ৪৪, ৪৫ এবং ৪৬)
৩। “রাসুল তোমাদের যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা তোমাদের নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক।”
(সূরা আল-হাশর, আয়াত ৭)


উপমহাদেশের বিশেষ করে, আমাদের দেশের বিভিন্ন হুজুররা ঈদে মিলাদুন্নবী, মিলাদ, কিয়াম পক্ষে নির্লজ্জের মতো সাফাই গেয়ে বেড়ান। সাধারন মুসলিমদের পক্ষে শরিয়তের নিয়ম কানুন পুরোপুরি জানা কঠিন বিষয়, যেহেতু এইসব বিধি-বিধান আরবীতে লেখা থাকে। এরা এই সুযোগটাই নেয় এবং নিজেরা তো ইতিমধ্যেই অর্থের লোভে পরে পথভ্রষ্ট হয়েছে, কিন্তু সাথে তারা সাধারন মানুষজনকে পথভ্রষ্ট করার অপচেষ্টা চালায়। মিলাদের প্রতি তাদের এত অতি আগ্রহের একমাত্র কারণ হলো অর্থনৈতিক। আজ পর্যন্ত কোন হুজুর’কে বিনা পয়সায় মিলাদ পড়াতে দেখেছেন? অবশ্যই না। শয়তানের ঢোকায় পড়ে এরা নফসকে অনেক আগেই বিক্রি করে দিয়েছে দুনিয়াবী কিছু টাকাপয়সার জন্য। এদের সর্ম্পকে পবিত্র কুরআন শরীফে সুস্পষ্টভাবে লেখা আছেঃ
“আল্লাহ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যারা তা গোপন করে ও তার বিনিময়ে স্বল্প মূল্য গ্রহণ করে, তারা কেবল আগুন দিয়ে আপন পেট পূর্ণ করে। শেষ বিচারের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না এবং তাদেরকে (পাপ-পঙ্কিলতা থেকে) পবিত্রও করবেন না; আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। তারাই সুপথের বদলে কুপথ এবং ক্ষমার বদলে শাস্তি ক্রয় করেছে, (দোযখের) আগুনে তারা কতই না ধৈর্যশীল!” (সূত্রঃ সূরা বাকারা আয়াত ১৭৪ ও ১৭৫)

এইসব ভণ্ড হুজুররা সুকৌশলে বিয়ের পূর্বে, বিয়ে পড়ানোর পরে, নতুন বাড়ি/গাড়ি/ দোকান, কোম্পানি উদ্বোধন, বাড়ির কল্যাণ কামনা, কারো অসুস্থতা কামনা, মৃত্যুবার্ষিকী, চেহলাম, চল্লিশা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্মউৎসব (ঈদে মিলাদুন্নবী যা সর্ম্পূণ হারাম), বিশেষ কোন দিবস পালন বা বিশেষ কোনো উপলক্ষে মিলাদ পালনের জন্য উৎসাহ দেয় এবং নিজেরা এইসব মিলাদ পরিচালনা করে। আচ্ছা এইসব মিলাদে তারা কী করে? বিভিন্ন না’ত এবং দরুদ আবৃত্তি করে দলবব্ধভাবে। অথচ মিলাদ একা কিংবা দলবদ্ধ কোনভাবেই করার শরীয়ত অনুমতি নেই।

ঈদে মিলাদুন্নবী কিংবা মিলাদ সর্ম্পূণ বিদআত, কারণ প্রকৃতপক্ষে ইসলামে এদের কোনো অস্তিত্বই নাই। ইসলামের সোনালী অধ্যায়ের তিন শতাব্দী তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগ, সাহাবীদের যুগ এবং তাবেঈনের যুগ পার হয়ে গেলেও ইতিহাসে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না যে, কোন একজন সাহাবী, তাবেঈ বা তাবে তাবেঈ এইসব উদযাপন করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি তাদের ভালোবাসা কি কম ছিল? না কি তারা ইসলাম বুঝতেন না? কখনই নয়। বরং তাঁরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিজের জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসতেন। হাসিমুখে ইসলামের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতেও একমুহূর্তও দ্বিধা করতেন না। তারা ছিলেন তার সুন্নত-আদর্শ সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী এবং শরীয়ত বিধিবিধান বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অগ্রগামী।

মিলাদ কিংবা ঈদে মিলাদুন্নবী যদি কোন উপকার থাকতো, সওয়াব পাওয়া যেত তবে অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবশ্যই তাঁর উম্মতকে স্পষ্টভাবে তা পালন করার কথা বলে যেতেন। কারণ দুনিয়া-আখিরাতের এমন কোন কল্যাণকর দিক নেই যা তিনি তার উম্মতকে বলে দেননি কিংবা এমন কোন ক্ষতিকর দিক নেই যে ব্যাপারে তিনি সাবধান করেননি। বরং তিনি দ্বীনের ভিতর নতুন নতুন বিদআত তৈরি করার ব্যাপারে কঠিন ভাবে সতর্ক করে গেছেন। তিনি বলেন: وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلالَةٌ
‘‘তোমরা (দ্বীনের) নব প্রচলিত বিষয়সমূহ থেকে সতর্ক থাক। কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয় বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত ভ্রষ্টতা’’। [সূত্রঃ সূনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৯৯১ ও সূনানে আত-তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৭৬। তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান ও সহীহ বলেছেন।]

মিলাদ এবং কিয়ামের উৎপত্তি নিয়ে ভয়ংকর মিথ্যাচারঃ
এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শতাব্দীতে সংকলিত অর্ধশতাধিক সনদভিত্তিক হাদীসের গ্রন্থ, যাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কর্ম, আচার-আচরণ, কথা, অনুমোদন, আকৃতি, প্রকৃতি ইত্যাদি সংকলিত রয়েছে, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীদের মতামত ও কর্ম সংকলিত হয়েছে, সে সকল গ্রন্থের একটিও সহীহ বা দুর্বল হাদীসে দেখা যায় না যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবদ্দশায় বা তাঁর মৃত্যুর পরে কোন সাহাবী সামাজিকভাবে বা ব্যক্তিগতভাবে তাঁর জন্ম উদযাপন, জন্ম আলোচনা বা জন্ম উপলক্ষে আনন্দ প্রকাশের জন্য নির্দিষ্ট কোন দিনে বা অনির্দিষ্টভাবে বৎসরের কোন সময়ে কোন অনুষ্ঠান করেছেন। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই ছিলেন তাঁদের সকল আলোচনা, সকল চিন্তা চেতনার প্রাণ, সকল কর্মকান্ডের মূল। তাঁরা রাহমাতুল্লিল আলামীনের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) জীবনের ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ঘটনা নিয়ে আলোচনা করেছেন, তাঁর জীবনের বিভিন্ন ঘটনা আলোচনা করে তাঁর ভালোবাসায় চোখের পানিতে বুক ভিজিয়েছেন। তাঁর আকৃতি, প্রকৃতি, পোষাক আশাকের কথা আলোচনা করে জীবন অতিবাহিত করেছেন। কিন্তু তাঁরা কখনো তাঁর জন্মদিন পালন করেননি। এমনকি তাঁর জন্মমুহুর্তের ঘটনাবলী আলোচনার জন্যও তাঁরা কখনো বসেন নি বা কোন দান-সাদকা, তিলাওয়াত ইত্যাদির মাধ্যমেও কখনো তাঁর জন্ম উপলক্ষে আনন্দ প্রকাশ করেননি। তাঁদের পরে তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীদের অবস্থাও তাই ছিল। প্রকৃতপক্ষে কারো জন্ম বা মৃত্যুদিন পালন করার বিষয়টি আরবের মানুষের কাছে একেবারেই অজ্ঞাত ছিল। জন্মদিন পালন ‘‘আ‘জামী’’ বা অনারবীয় সংস্কৃতির অংশ। প্রথম যুগের মুসলিমগ তা জানতেন না। পারস্যের মাজুস (অগ্নি উপাসক) ও বাইযান্টাইন খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল জন্মদিন, মৃত্যুদিন ইত্যাদি পালন করা। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় শতাব্দীতে পারস্য, সিরিয়া, মিসর ও এশিয়া মাইনরের যে সকল মানুষ ইসলামের ছায়াতলে আসেন তাঁরা জীবনের সকল ক্ষেত্রে সাহাবীদের অনুসরণ অনুকরণ করতেন এবং তাঁদের জীবনাচারণে আরবীয় রীতিনীতিরই প্রাধান্য ছিল। হিজরী তৃতীয় শতাব্দী থেকে মুসলিম সাম্রাজ্যে অনারব পারসিয়ান ও তুর্কী মুসলিমদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে মুসলিম সাম্রাজ্যে বিভিন্ন নতুন নতুন সামাজিক ও ধর্মীয় রীতিনীতির প্রচলন ঘটে, তন্মধ্যে পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী অন্যতম।

ঐতিহাসিকগণ বলেন, জন্মদিনের নামে যারা সর্বপ্রথম এই বিদআতকে রূপদান করে তারা হলো ফাতেমী রাজবংশ যারা নিজেদেরকে হযরত আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর বংশধর বলে দাবী করতো। (সূত্রঃ আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ১১/২০২)। ফাতেমীর হচ্ছেন উবাইদ বংশের রাফেযী ইসমাঈলী শিয়াগণ। এরা রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ২ ঈদ ছাড়াও আরো বিভিন্ন দিন পালন করতেন, তন্মধ্যে অধিকাংশই ছিল জন্মদিন। তাঁরা অত্যন্ত আনন্দ, উৎসব ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ৫টি জন্মদিন পালন করতেন: ১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিন, ২) আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর জন্মদিন, ৩) ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহার জন্মদিন, ৪) হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহুর জন্মদিন ও ৫) হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর জন্মদিন। এ ছাড়াও তারা তাদের জীবিত খলীফার জন্মদিন পালন করতেন এবং ‘‘মীলাদ’’ নামে ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মদিন (বড়দিন বা ক্রীসমাস), যা মিশরের খ্রিষ্টানদের মধ্যে প্রচলিত ছিল তা আনন্দপ্রকাশ, মিষ্টি ও উপহার বিতরণের মধ্য দিয়ে উদযাপন করতেন। (সূত্রঃ আল-মাকরীযী, আহমদ বিন আলী, আল-মাওয়ায়িজ ওয়াল ইতিবার বি যিকরিল খুতাতি ওয়াল আসার (মিশর, কাইরো, মাকতাবাতুস সাকাফা আদ দীনীয়্যাহ) ৪৯০-৪৯৫ পৃষ্ঠা)। এই ফাতিমীদের মূল লক্ষ্য/উদ্দেশ্য ছিল, দ্বীন ইসলামের মাঝে পরিবর্তন সাধন করে তার মধ্যে এমন নতুন কিছু ঢুকানো যার অস্তিত্ব দ্বীনের মধ্যে কোনকালেই ছিল না। কারণ, ইসলামী শরীয়ত এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নত থেকে মানুষকে দূরে সরানোর সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হল, তাদেরকে বিদআতের মধ্যে ব্যতিব্যস্ত রাখা। ইতিহাসবিদদের মতে, এদের অবস্থান ইসলাম থেকে শুধু দূরেই নয় বরং এরা ইসলাম ও মুসলমানদের ঘোরতর দুশমন। যদিও এরা বাহ্যিকভাবে তা স্বীকার করে না। উবাইদিয়াদের শাসনামলে মিলাদ চালু হওয়ার পর ধীরে ধীরে তা ব্যাপকতা লাভ করতে লাগল। মুসলমানগণ জিহাদ ছেড়ে দিল এবং তারা রূহানী ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ায় এই বিদআতটি সাধারণ মানুষের মনে শিকড় গেড়ে বসল। এমনকি অনেক মহা মূর্খ মানুষের নিকট এটা আকীদা-বিশ্বাসের একটি অংশ হয়ে দাঁড়ায়।

নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায়ও তাঁর জন্মদিন পালন কিংবা জন্ম উপলক্ষে কখনো কোনো আয়োজন করা হয়নি। নবীজীর ইন্তেকালের পর সাহাবায়ে কেরামের সুদীর্ঘ যুগ থেকেও এমন কোনো ঘটনার প্রমাণ বা সাক্ষী পাওয়া যায় না। এমনকি সাহাবায়ে কেরামের পর যে তাবেঈ ও তাবে-তাবেঈনের যুগেও এইধরণের কোনো উৎসব-আয়োজন ইত্যাদির নজির নেই।

প্রশ্ন জাগে, তাহলে মিলাদুন্নবী আসলো কোত্থেকে?
এর উত্তর হচ্ছে, মিলাদ মূলত হিজরী ৬ষ্ঠ শতাব্দীর পরবর্তী সময়ের উদ্ভাবন। এর আগ পর্যন্ত ‘মিলাদ’ বলতে কোনো উৎসব আয়োজন বা আমল হতে পারে এমন কল্পনাও কারো মাথায় আসেনি। সর্বপ্রথম হিজরী ৬ষ্ঠ শতাব্দীর পর সম্পূর্ণ আমোদ-প্রমোদের উদ্দেশ্যে বাদশা মুজাফফররুদ্দীন আবু সাঈদ কূকুবূরী বিন আরবাল এর উদ্বোধন করেন। (সূত্র: আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া-১৩/১৫৯) সউদী আরবের সাবেক প্রধান মুফতি শাইখ মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহীম আলুশ শাইখ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, “হিজরি ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে এই বিদআত তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মদিবস পালনের প্রথা সর্বপ্রথম চালু করেন আবু সাঈদ কূকুবূরী। [সূত্রঃ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েল ৩/৫৯]

অনুসন্ধানে জানা যায়, ৬০৪ হিজরী সনে ইরাকের মসূল শহরের বাদশাহ আবু সাঈদ মুজাফফর উদ্দীন কূকুবূরী [মৃত-৬৩০ হিজরী] এবং আবুল খাত্তাব ওমর বিন দিহইয়া [মৃত্যু-৬৩৩ হিজরী] এর মাধ্যমে সর্বপ্রথম প্রচলিত পদ্ধতির মিলাদ মাহফিলের সূচনা হয়। বিখ্যাত মুহাদ্দিস হাফিজে হাদীস আল্লামা ইবনে কাছীর রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেনঃ ﻛﺎﻥ ﻳﺼﺮﻑ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﻤﻮﻟﺪ ﻛﻞ ﺳﻨﺔ ﻋﻠﻲ ﺛﻼﺛﺔ ﺍﻟﻒ ﺩﻳﻨﺎﺭ
অর্থ: আরবলের বাদশা হযরত মালিক মুজাফফরুদ্দীন ইবনে যাইনুদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রতি বছর পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী ছউপলক্ষে তিন লক্ষ দিনার ব্যয় করতেন।” (সূত্রঃ আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১৩ তম খন্ড ১৩৭ পৃষ্ঠা) সেইসময়ে শুধুমাত্র ১২ই রবিউল আওয়ালে তা পালন করা হতো। কিন্তু পরবর্তীতে তা যেকোন দুআ’র অনুষ্ঠানেই পালন করা শুরু হয়। উক্ত দরবারী আলেম আবুল খাত্তাব বিন ওমর বিন দিহইয়া সর্বপ্রথম মিলাদ মাহফিলের বৈধতা প্রদান করে “আততানবীর ফী মাওলিদিসসিরাজিম মুনীর” নামে একটি গ্রন্থ রচনা করে। ফলে বাদশা খুশি হয়ে উক্ত আলেম’কে হাজার দিনার বখশীশ দান করেন। (সূত্রঃ- আন নিয়ামাতুল কুবরা আলাল আলম পৃঃ ৭৬, ৯ম শতাব্দী আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি রহমতুল্লাহি আলাইহি এর ফতওয়া সূত্র বর্ণিত) আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত “আল হাবীলিল ফতওয়া” নামক কিতাবে বর্ণনা করেন,“যিনি এই প্রকার মীলাদ মাহফিলের প্রবর্তন করেন, তিনি হলেন আরবালের বাদশাহ্ মালিক মুজাফফর আবূ সাইদ বিন জয়নুদ্দীন।”
আবুল খাত্তাব বিন ওমর বিন দিহইয়া সম্পর্কে আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহিমাহুল্লাহ লিখেন-
كثير الوقيعة في الأئمة وفي السلف من العلماء خبيث اللسان أحمق شديد الكبر قليل النظر في أمور الدين متهاونا
সে পূর্ববতী ইমাম ও আলেম উলামাদের সাথে বেয়াদবীমূলক আচরণ করতো। সে ছিল অশ্লীলভাষী, প্রচন্ড নির্বোধ, অহংকারী দ্বীন সম্পর্কে সংকীর্ণমনা ও অলস। (সূত্রঃ লিসানুল মিযান-১/৩৩৮)

ঈদে মিলাদুন্নবী, মিলাদ, কিয়ামের মত নব্য বিদআত আবিস্কার করা এইকথা প্রমান করে যে, আল্লাহ তা’আলা দ্বীনকে উম্মতের জন্য পরিপূর্ণ করেননি। তাই দ্বীনের পরিপূরক হিসেবে এখনও নতুন কিছু আবিস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়াও বুঝা যায় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিজের উম্মতের জন্য কল্যাণকর সকল বিষয়ের প্রচার করে যাননি। যেইকারণে পরবর্তীতে আল্লাহর এবং তার রাশূলের অনুমোদন ব্যতিরেকে শরীয়তে নতুন কিছু আবিষ্কারের প্রয়োজন হয় যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। এটা চুড়ান্ত পর্যায়ের ভুল, আল্লাহর ভুল ধরা মারাত্মক গুনাহের কাজ। এটা আল্লাহর দুশমন ইয়াহুদী-খ্রিষ্টান কর্তৃক তাদের ধর্মে নব প্রথা সংযোজনের সাথে সামঞ্জস্য স্বরূপ এবং আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপর একধরণের মারাত্মক অভিযোগ! অথচ আল্লাহ তা’আলা তাঁর দ্বীনকে পরিপূর্ণ ও বান্দাদের জন্য সকল নিয়ামত সস্পূর্ণ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআন শরীফে সুস্পষ্টভাষায় ঘোষনা করেছেনঃ
اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكَمْ نعْمَتِيْ وَ رَضِيْتُ لَكُم الإِسْلامَ دِيْنًا
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করে দিলাম ও আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম”। (সূত্রঃ সূরা মায়দাহ, আয়াত নাম্বার ৩)

কুরআন ও সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরা এবং খোলাফায়ে রাশেদীন ও তাবেয়ীদের প্রদর্শিত পথে চলার ভিতরেই রয়েছে একমাত্র মুসলমানদের জন্য ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ ও মুক্তি। কারণ আল্লাহর রাসূল সাল্লালাহু আলাহসি ওয়াসাল্লাম আমাদের নির্দেশ দিয়ে গেছেনঃ
“তোমাদের জন্য আবশ্যক আমার ও আমার পরবর্তী হেদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাতকে এমনভাবে আঁকড়ে ধরা যেভাবে দাঁত দিয়ে কোন জিনিস দৃঢ়ভাবে কামড়ে ধরা হয়। আর শরীয়তে নিত্য নতুন জিনিস আবিস্কার করা হতে বেঁচে থাকো। কেননা সকল নবসৃষ্ট বস্তুই বিদআত। আর প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী।“ (সূত্রঃ সূনানে আবু দাউদ, অধ্যায় ৩৫/সুন্নাহ, হাদিস নাম্বার ৪৬০৭)

বর্তমানে ধর্মকে ব্যবসা বানিয়ে আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে এইসব হুজুররা টাকাপয়সা নিয়ে ঈদে মিলাদুন্নবী, মিলাদ, ফাতিহা, ওয়াজ, নসিহত, মৃতের জন্য জানাযার দোয়া সহ ধর্মীয় বিভিন অনুষ্ঠানের আয়োজনে তাগাদা দেয়, যার কোন শরীয়ত ভিত্তি নেই। ইসলামকে পুঁজি করে আগুনখোর এই ধর্মজীবিরাই কুরআন এবং সুন্নাহ থেকে সবাইকে দূরে সরিয়ে রেখে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করছে। যারা আল্লাহর আয়াতকে বিকিকিনির পণ্য বানায় তারা ধর্ম ব্যবসায়ী, যারা সত্য প্রচারের জন্য পারিশ্রমিক নেবার উসিলা বানায় তারাই স্রষ্টার দৃষ্টিতে পথভ্রষ্ট।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআন শরীফ শুরুই করেছেন ইকরা অর্থাৎ পড়ো দিয়ে। তিনি আমাদের জ্ঞান অর্জন করার জন্য সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন। এই পার্থিব জগতের বহু বিষয়ই তো শিখলেন, বুঝলেন। অথচ অনন্তর যে জীবন আমাদের কাটাতে হবে তার জন্য প্রায় কিছুই শিখছেন না। আপনার কি মনে হয় নবীর সুন্নাহ এবং হাদীস প্রকৃতভাবে না মানলে পরকালের জীবন সুখের কাটবে? ইসলামের শত্রুরা অনেকদিন ধরেই এই অপচেষ্টা চালাচ্ছে যেন মুসলিমরা নবীর সুন্নাহ এবং হাদিস এর থেকে মুখ ঘুরিয়ে বিদআত নিয়ে ব্যস্ত হয়ে থাকে। তা না হলে ইসলামে ব্যাপক ক্ষতি করা কখনই সম্ভব না।

ভেবে দেখুন নিজের অজান্তেই এই ভয়ংকর গুনাহের কাজে শরীক হয়ে যাচ্ছেন না তো? সামান্য দুনিয়াবী টাকা পয়সার জন্য ঈমান নষ্ট করছেন না তো? শেষ বিচারের দিন এইসব পাপকাজের কী জবাব দিবেন?

সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইল।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীল আকাশ, অক্টোবর ২০২১

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:২৪

নতুন বলেছেন: জশনে জুলুছে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ পালনের নামে আজকাল কী চলছে? নিজেদের ঈমান নষ্ট করছেন না তো?

ভন্ডামী ধরান চমতকার একটা পথ হইলো। Follow the Money.

যারা এই সব নতুন নতুন জিনিস নিয়ে আসতেছেন তাদের উদ্দেশ্য মুরিদদের থেকে টাকা কালেক্ট করা। কিছু পীরের দরবার থেকে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে পীরের দরবারে দান করাকে ফরজ বলে অনুপ্রানিত করে।

সকল পীর, দরগা,মাদ্রাসা, মাজারের উদ্দেশ্য টাকা আয়। এরা নতুন তরিকা খোজে। আমাদের দেশের মানুষ ধর্মভীরু এদের নতুন কিছুতে টেনে নেওয়া ভন্ডদের জন্য কঠিন কিছু না।

টাকা পয়সা সরিয়ে নিন। এই সব মিছিল আপনে আপ বন্ধ হয়ে যাবে।

২০ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:৪৯

নীল আকাশ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। এখনকার সবগুলি টাকা পয়সার ধান্দায় থাকে। কীসের আল্লাহ বা উনার নবীর জন্য টান।
এদের বাসায় মিলাদ পরানো জন্য ডাকুন আর বলুন টাকা পয়সা দিতে পারবেন না। আল্লাহর ওয়াস্তে করে দিতে হবে।
পিছন দিক দিয়ে ভাগবে সব কয়টা। একটার টিকিটিও পাবেন না।
শুভ কামনা।

২| ২০ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:২৭

নতুন নকিব বলেছেন:



অন্যান্য অনেক বিষয়ে দ্বিমত থাকলেও এই জাতীয় কিছু কাজের ব্যাপারে সউদি আরবের রাজতন্ত্রকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। কারণ, তারা জিরো টলারেন্স নীতিতে বিদআতসহ নানাবিধ পাপের উৎস এইসব ধর্মব্যবসাগুলোর অধিকাংশেরই মূলোৎপাটন করতে সক্ষম হয়েছে।

আমাদের দেশেও গভীরে শিকড় গেড়ে বসা এই ব্যবসা রাষ্ট্রীয় কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া বন্ধ হওয়ার আশা করা বৃথা। কিন্তু কথা হচ্ছে, এই কঠোর পদক্ষেপ নিবে টা কে? আমার তো মনে হয়, প্রত্যেকেই এদেরকে থামাতে ভয় পায়। বরং, ধর্মীয় কাজ মনে করে এসবের সাথে দ্বিমত পোষন করতেও সাহসী হয় না। যে কারণে হকপন্থী বোদ্ধাগণ এসব অনাচার অপরাধের বিপক্ষে কখনো কিছু বললেও বিশেষ মহলকে সাধারণতঃ নিরবতাই পালন করতে দেখা যায়। ক্ষেত্রবিশেষে তাদের বরং এসবে সহযোগিতাও দিতে দেখা যায়।

২০ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:৫৬

নীল আকাশ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। এদের মূল এখন অনেক গভীর প্রথিত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের শীর্ষ স্থানে এরা মদদ পায়। ইসলামী ফাউণ্ডেশন এদের বন্ধ করা তো দুরের কথা, উলটো এদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এখন আমাদের একটাই করনীয়। আমরা যারা যারা জানি তাদের ব্যক্তিগত পর্যায়ে এর প্রতিবাদ করতে হবে। সাধারন মানুষজনকে জানাতে হবে। কারন নূন্যতম এইসব প্রতিবাদ করা জিহাদের সমতূল্য। ঈমানের দাবী।
শুভ কামনা নিরন্তর।

৩| ২০ শে অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৪:১৯

চলে যায় দিন রয়ে যায় স্মৃতি বলেছেন: বিদাআত মুক্ত বাংলাদেশ চাই। ভালো একটি পোস্ট।

২০ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ২:২৪

নীল আকাশ বলেছেন: প্রথমেই আমার ব্লগ বাড়িতে এসে পড়ার জন্য ধন্যবাদ দিচ্ছি।
নবীজির দেখানো এবং সাহাবীদের দেখানো পথ ছাড়া বাকি প্রায় সবই বিদায়াতের পর্যায়ে পরে।
আমাদের সবাইকে এইসব ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
শুভ কামনা।

৪| ২০ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট পুরোটা পড়িনি। তবে চোখ বুলিয়েছি।

এই দিনে মিছিল কেন করতে হবে? মসজিদ মাদ্রাসা কেন লাইটিং করতে হবে? তাতে নবিজির কি উপকার হবে?
মিছিলে দেখা যায় একজন হুজুর গাড়িতে বসে আছেন। সেই গাড়ি নানান রকম ফুল দিয়ে সাজানো। হুজুর নেতাদের মতো গাড়ির ভেতর থেকে হাত নাড়েন। কি হচ্ছে এসব?

২০ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ২:২৫

নীল আকাশ বলেছেন: এরা ভণ্ড, এদের রোজগারের বন্দোবস্ত এইসব মিলাদের আয়োজন।
ইসলাম এইদেশে এসে ভন্ডদের খপ্পড়ে পরে বিকৃত হয়ে গেছে।
সাহাবীরা না খেয়ে খালি পেটে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতো আর এরা ভরা পেটে আয়েশ করে
নবীজির সাথে বেইমানী করে বেড়াচ্ছে।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাই।

৫| ২১ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:০৬

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
এসবে বিশ্বাস করা মানে ঈমান নষ্ট করা। চট্টগ্রামে এ বিষয়টা প্রকট। +++++

২০ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ২:২৭

নীল আকাশ বলেছেন: আমি এখানে থাকি দেখেই তো আরো ভালোভাবে জানতে পারছি।
কয়েকদিন আগে একজন এসে বললো ছেলে হয়েছে দেখে হুজুররা গরু কেটে মিলাদ দিতে বলেছে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম আকিকা তাহলে? বলেছে সেটা পরে করলেও চলবে।
বুঝুন এখন।

৬| ১২ ই নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩১

খায়রুল আহসান বলেছেন: অনেক ডিটেইলসে লিখেছেন। আলোচনাটি যৌক্তিক হয়েছে।
শ্রমসাধ্য আপনার এ মহতি প্রয়াসের জন্য সাধুবাদ।
ভালো থাকুন, শুভকামনা....

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৩:৪৩

নীল আকাশ বলেছেন: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার জন্য।
আমি চেষ্টা করেছি ঈদে মিলাদুন্নবী নিয়ে সাধারণ মানুষদের ভুলগুলি ধরিয়ে দেবার জন্য।
শুভ কামনা নিরন্তর।

৭| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৪:৫৬

জাহিদ হাসান বলেছেন: মুসলমানদের এত বিভ্রান্ত হওয়ার কারণ কেবলমাত্র কুরআনের নিরবিচ্ছিন্ন অনুসরণ করা ছেড়ে দেয়া৷
বিদায় হজ্জের ভাষণ দুটি বড় সূত্র আছে, বুখারি শরীফ ও মুসলিম শরীফ। দুটোর হাদিসেই দেখা যায় নবী সাঃ বলছেন - আমি তোমাদের কাছে একটা জিনিস রেখে যাচ্ছি৷ তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব (আল-কুরআন)। তোমরা যতদিন এটি আঁকড়ে ধরে থাকবে ততদিন পথভ্রষ্ট হবে না৷

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:০১

নীল আকাশ বলেছেন: আপনাকে আমি একশতে একশ দিলাম। এটাই একমাত্র মূল কারন।
সাহাবীদের রেখে এখন মানুষ ভণ্ড পীর ফকির অনুসরণ করে। ফলাফলা যা হবার তাই হচ্ছে।
ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.