নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্বজোড়া পাঠশালাতে সবাই ছাত্র-ছাত্রী, নিত্য নতুন শিখছি মোরা সদাই দিবা-রাত্রী!

নীল আকাশ

এই ব্লগের সমস্ত লেখা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। আমার অনুমতি ছাড়া এই ব্লগের লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ করা যাবে না।এই ব্লগের সমস্ত লেখা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। আমার অনুমতি ছাড়া এই ব্লগের লেখা অন্যকোথাও প্রকাশ করা যাবে না।

নীল আকাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাহিত্যচর্চাকে ব্যাপকভাবে বাণিজ্যিকীকরন...

১৫ ই মার্চ, ২০২২ বিকাল ৪:১১

বাংলাদেশে সাহিত্যচর্চাকে আজকাল ব্যাপকভাবে বাণিজ্যিকীকরণ করা শুরু হয়েছে। শুনতে অবাক লাগলেও আজকাল একটা বইয়ের জনপ্রিয় হওয়ার জন্য বইয়ের লেখার গুণগতমানের চাইতে বাণিজ্যিক বিষয়গুলো অনেক বেশি ভূমিকা রাখে। আলোচিত বেশ কয়েকটা বইয়ের মারাত্মক সব রিভিউকে বিশ্বাস করে বই কিনে পড়তে যেয়ে সচেতন অনেক পাঠক-পাঠিকা ব্যাপকভাবে হোঁচট খেয়েছেন।‌ বিভিন্ন সাহিত্য গ্রুপগুলিতে এদের মন্তব্য বা পোস্ট পড়লেই এদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানা যায়। এরা অনেকেই নিজেদের টাকা নষ্ট হবার জন্য ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন।
.
পাঠক হিসাবে আমার অভিজ্ঞতা আরো করুণ।‌ গতবছর প্রায় সাড়ে চারশো পৃষ্ঠার আলোচিত একটা বই পড়তে যেয়ে দেখি পুরো বইটি অন্য দুজন লেখক লেখিকার কাছ থেকে কাট-কপি-পেস্ট করা।‌ একজন বাংলাদেশের বিখ্যাত হুমায়ূন আহমেদ এবং অপরজন কলকাতার নামকরা একজন লেখিকা। এই নামকরা লেখক দিব্যি এই দুজনের বই থেকে অর্ধেক/অর্ধেক লেখা নিয়ে নিজের নামের বই প্রকাশ করে ফেলেছেন‌। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্য যে এই বইয়ের রিভিউগুলো এতটাই মিথ্যাচারের পরিপূর্ণ ছিল যে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। অথচ হুমায়ুন আহমেদের সেই ব্যাপক আলোচিত বইটা পড়েননি এমন পাঠকের সংখ্যা খুবই কম থাকার কথা। ‌ কলিকাতার সেই বইটাও খুব নামকরা। কিন্তু সচেতনভাবেই অনেক রিভিউয়ারা এই বইয়ের প্রশংসা করতে করতে মুখে ফেনা পর ফেনা তুলে ফেলেছিল।
.
ঠিক তখন থেকেই বইয়ের কিছু রিভিউয়ের উপর আমার বিশ্বাস পুরোপুরি উঠে গিয়েছিলো। ‌ ভালোমতো খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, আজকাল বইয়ের রিভিউয়ের সাথে বাণিজ্যিক বিষয় জড়িত হয়ে পড়েছে, যাদের বলা হয় পেইড রিভিউয়ার। এদের কাজ হচ্ছে যত জঘন্যই হোক, যত চুরি করা বই হোক, যত বাজে তার লেখার ধরনই হোক, রিভিউ করতে যেয়ে সেই বইটিকে আসমানে তুলে দিতে হবে। বইয়ের মারকিং দিতে হবে ৫ মধ্যে ৪.৯৫ বা এর কাছাকাছি। ৫ই দিয়ে দিতো কিন্তু পাব্লিক আবার কী বলবে ভেবে দেয় না হয়তো!
.
বই পড়ার পর পাঠকদের বইয়ের রিভিউ দেয়া খারাপ কিছু না। সমস্যা হচ্ছে যখন পেইড রিভিউ দেয়া হয়। এসব রিভিউ মাটিতে শুয়ে থাকা উচিত বইকেও সাত আসমানে তুলে দেয়। ফলে পাঠক যখন বইটা পড়া শেষ করে নিচে তাকায়, আর সিঁড়ি দেখতে পায় না। সপ্ত আসমান থেকে ধুপ করে নিচে পড়ে যায়। তখন রিভিউয়ার এবং লেখক দুজনের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করে। পেইড রিভিউয়ার বিষয়টা অত্যন্ত নোংরা জিনিস, একজন সাহিত্যের মানুষ হয়ে লেখকরা এত নোংরা বাণিজ্যিক একটা বিষয়ে কীভাবে জড়িয়ে যান সেটা আসলেই বিস্ময়ের ব্যাপার। এটা এখন সুস্পষ্ট যে, অনেকেই এখন শুধুমাত্র টাকার জন্য লেখেন, সুষ্ঠু সাহিত্য চর্চার জন্য লিখেন না। বাণিজ্যিক লেখালেখির সারমর্ম খুবই নগণ্য।
.
একজন সচেতন পাঠকের রিভিউতে পছন্দ-অপছন্দ, দোষ ত্রুটি সবকিছুই উঠে আসা উচিত। কিন্তু আজকাল বেশিরভাগই ক্ষেত্রেই দেখা যায় তিলকে তাল বানিয়ে ১০ এর মধ্যে ৯.৭৫ মার্ক দিয়ে বই রিভিউ ছাপায়। এরা কী ধরনের রিভিউ করে এখান থেকেই বুঝা যায়? সম্ভবত রিভিউতে মারকিংয়ের নাম্বারের সাথে পেইড আমাউন্ট সমানুপাতিক।
.
আজকাল অনেক পাঠক পাঠিকাই আছেন যারা বই কেনার আগে বইয়ের পজিটিভ রিভিউ তন্ন তন্ন করে খুঁজতে থাকেন। ‌অন্যের দেয়া পজিটিভ রিভিউ দেখে খুশিতে বাকবাকুম হয়েছে বইটা কিনে নিয়ে আসেন। আপনার কীভাবে ধারণা হলো আপনার রুচি এবং যিনি রিভিউ লিখেছেন তার রুচি হুবহু একই রকম হবে? তার পছন্দ আপনার পছন্দের সাথে মিলে যাবে? দুজন পাঠকের রুচি কখনো এক হতে পারে না। আরেকজনের পছন্দে আপনি বই কিনবেন কেন? আরেকজনের রিভিউ পড়ে যারা বই কেনে তারা আসলে বুঝতেই পারে না কোনটা ভালো বই, কোনটা খারাপ বই।‌ যারা এই কাজ করে, তারা বইটা পড়েও বুঝতে পারে না, আসলে ভালো লাগলো, না খারাপ লাগলো।
.
আমি এইসব পাঠক-পাঠিকাদের কাছে একান্ত অনুরোধ করবো, এসব রিভিউ পুরোপুরি বিশ্বাস না করে যদি সম্ভব হয়, বইটা হাতে নিয়ে কয়েক পাতা উল্টে পড়ে দেখবেন। আজকাল অনলাইন বুকশপগুলিতেও বইয়ের কয়েকটা পাতা পড়ার সুযোগ থাকে। দরকার পড়লে কয়েকটা পাতা পড়ে দেখুন‌। লেখকের লেখার টোন বুঝার জন্য এক বা দুই পাতাই যথেষ্ট। বেশিরভাগ রিভিউ এখন আসে পেইড প্রমোশন থেকে। তারা আপনার বিশ্বাসকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলে।
.
দিনশেষে আপনি একটা বাজে বই কিনে নিয়ে আসলে আপনার দুই ধরনের ক্ষতি হবে। এক হচ্ছে অর্থনৈতিক ক্ষতি, দুই হচ্ছে আরেকটি ভালো বই না পড়তে পারার ক্ষতি। যে টাকা দিয়ে আপনি একটা বাজে বই কিনে নিয়ে এসেছেন, সেটা না কিনে আপনি হয়তো দুর্দান্ত কোন একটা বই কিনতে পারতেন, যেটা পড়লে আপনার খুব ভালো লাগতো। পেইড রিভিউ প্রমোশন বিষয়টা খুবই নোংরা এবং আপত্তিজনক। যারা এভাবে পেইড রিভিউ পড়ে বই পড়ে ঠকেছেন তারাই জানেন বিষয়টা কত বেশি বিব্রতকর এবং লজ্জাজনক।
.
আমি এটা মানছি যে বইয়ের প্রচার প্রসারে রিভিউ গুরুত্বপূর্ণভূমিকা রাখে। বিশেষ করে নতুন লেখকদের বই অনেকটাই নির্ভর করেই রিভিউয়ের ওপর এবং সেই সাথে যিনি রিভিউ দিচ্ছেন তার রিভিউ দেয়ার ক্ষমতার উপর। সাধারণত কোন পাঠক অপরিচিত লেখক বা লেখিকার বই না জেনে কিনতে চায় না। পাঠকদের দোষও দেয়া যায় না এক্ষেত্রে। তারা তখন সেই বইয়ের রিভিউয়ের অপেক্ষায় থাকেন, তারপর পজিটিভ রিভিউ হলে বইটি কিনেন, নয়তো সেই বইয়ের নাম মাথা থেকে ঝেরে ফেলেন। সবচেয়ে বেশি এই বিষয়টা নতুন বা দুই একজন বইয়ের লেখকদের ক্ষেত্রে চরম মাত্রায় দেখা যায়।
.
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, একটা বই কেনার ক্ষেত্রে আপনি কেন অন্যের ওপর নির্ভর করবেন? হ্যাঁ সে ভালো আলোচনা অথবা রিভিউ দিতে পারে বলেই কি তার মতামত সবসময় গ্রহণযোগ্য হবে? ‘নিজের টাকা দিয়ে কিনবো, নিজের রিস্কে নিজে নেবো। অন্যের কথায় আমি কেন বই কিনবো?’এই থিওরীতে বই কিনুন। অযথাই বই কেনার সময়ে ঠকে যাওয়ার পরিমান অনেকাংশেই কমে যাবে। তাই রিভিউ দেখেই বই না কিনে কিনে আগে বইটা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নিন। যদি মনে হয় আপ্নার রুচির সাথে মিলে যায় তখনই বইটা কিনুন।
.
একটা বই অবশ্যই সোশাল মিডিয়ায় প্রচারের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। বইয়ের ভালো দিকগুলো, জনরা ইত্যাদি তুলে ধরতে হবে পাঠকদের সামনে। বিনা স্পয়লারের রিভিউ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা দুটোই করতে হবে। এতে নতুন পাঠকরা বইটি সম্পর্কে অন্ততঃ কিছু জিনিস ধারণা করতে পারবেন।
.
একজন রিভিউ খারাপ দিলেই সেই বই নেতিবাচক হয়ে যাবে সেটা মনে করার কোন কারন নেই। এক বই সবার ভালো নাও লাগতে পারে। সবার রুচি কোনদিন এক হতে পারে না। কিন্তু
আজকাল বেশিরভাগ নিরপেক্ষ রিভিউ করেন না। বইটা খারাপ লাগলেও, সেটা অনেকেই প্রকাশ করতে চান না বইয়ের লেখকের বিরাগভাজন হবেন চিন্তা করে। প্রতিটি মানুষের লেখা পড়ার পছন্দের ভিন্নতা আছে বলেই সারা পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন জনরার লেখা দিয়ে বিশ্ব সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছে। যারা রিভিউ লেখেন তাদেরও কিছু বিষয় মাথায় রেখে লেখা উচিত, তার কাছে ভালো লাগেনি বলে যে আর কারো কাছে ভালো লাগবে না, এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করাও ঠিক নয়।
.
অনেস্ট রিভিউ দিতে গেলেও অনেক ঝামেলা পোহাতে হয় অনেক। তারপরেও আমি সবাইকে অনুরোধ করবো সত্য প্রকাশে দ্বিধা করবেন না। অনেস্ট রিভিউ খুব খুব দরকার। বিশেষ করে সাধারণ পাঠকদের জন্য যাদের কাছে বই কিনতেখাজনার চেয়ে বাজনা বেশি হয়ে যায়। এরা কয়েকটা আলোচিত বই কিনে এনে যখন দেখে অখাদ্য কুখাদ্য, তখন বই পড়ার রুচিই এদের নষ্ট হয়ে যায়।
.
নিজের মত প্রকাশ করতে ভয় পাবেন না, বাংলা ভাষার জন্য এবং বাংলা সাহিত্যের জন্য হলেও সত্যকে প্রকাশ্যে তুলে ধরুন। এভাবে আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলা সাহিত্যকে নোংরা হতে দেবেন না।
.
সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইলো
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীল আকাশ, মার্চ ২০২২


মন্তব্য ১৯ টি রেটিং +১২/-০

মন্তব্য (১৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই মার্চ, ২০২২ বিকাল ৫:০৬

ঢাবিয়ান বলেছেন: একজন লেখক হিসেবে আপনি যে বর্তমানের চাল চিত্র তুলে ধরেছেন তার জন্য প্রথমেই সাধুবাদ জানাই। রিভিউ শুনেছি আজকাল টাকার বিনিময়ে দেয়া হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রেই অনুরোধের ঢেকি গিলে বন্ধু বান্ধব বা পরিচিতজনের জন্য লিখতে হয় যে কারনে অনেস্ট রিভিউর দেখা পাওয়া মুশকিল। ব্লগার ম হাসান বেশ কয়েকবার কিছু তথাকথিত লেখকদের বইমেলায় প্রকাশিত বই এর অনেস্ট রিভিউ দিয়েছেন। ফলাফলস্বরুপ সেইসব লেখকেরা ব্লগ ত্যাগ করেছিল।

১৫ ই মার্চ, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১৫

নীল আকাশ বলেছেন: যেইসব লেখক সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না তারা লেখক হবার যোগ্য নন। কোন লেখকই ফেরেস্তা নন যে তারা লেখায় কোন ভুল করেন না। সুতরাং ভুল হতেই পারে, সমালোচনা আস লতেই পারে। সেইগুলি থেকে নিজেকে ঠিক করে নেয়া সঠিক লেখকের দায়িত্ব।

বেশিরভাগ লেখকরাই ব্লগে আসতে ভয় পান কারন এখানে যৌক্তিক আলোচনা করা হয়। এরা ফেসবুকীয় সাহিত্যে অভ্যস্ত কারন সেখানে তাদের পেইড বাহিনী থাকে বিপদে রক্ষা করার জন্য।

ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটা মন্তব্য করার জন্য।
আমার এই পোস্ট ফেসবুকের সাহিত্যগ্রুপগুলিতে এপ্রুভ করতেই সাহস পায়নি। এখন বুঝুন তাহলে এদের গ্রুপগুলিতে আসলে সাহিত্য চর্চার নামে আদতে কী চলে।

২| ১৫ ই মার্চ, ২০২২ রাত ১০:২০

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ভালো বিশ্লেষণ করেছেন। দেশের অনেক বিখ্যাত লেখকও শুনেছি অর্থের বিনিময়ে রিভিউ লিখে থাকেন। এই ধরণের প্রবণতা সাহিত্যের জন্য ক্ষতিকর।

১৫ ই মার্চ, ২০২২ রাত ১১:০৭

নীল আকাশ বলেছেন: আমার এই লেখা ক্যানভাস, বই পোকাদের আড্ডাখানা সহ বেশ কিছু গ্রুপে এপ্রুভ করার সাহসই পায়নি।
সম্ভবত এইসব গ্রুপে পেইড রিভিউইয়ার'রাই পোস্ট এপ্রুভ করে নাকি কে জানে?
এখন বুঝুন তাহলে অবস্থা?

৩| ১৫ ই মার্চ, ২০২২ রাত ১০:৩৭

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: খুবই ভালো লিখেছেন। বর্তমান সময়ে লেখালেখির এক ভয়ঙ্কর চিত্র তুলে ধরেছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো থাকবেন সবসময়।

১৫ ই মার্চ, ২০২২ রাত ১১:০৩

নীল আকাশ বলেছেন: আপনাকে মেসেজ দিয়েছি আমি। দেখেছেন?

৪| ১৫ ই মার্চ, ২০২২ রাত ১১:২৮

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: ও সরি খেয়াল না করার জন্য দুঃখিত। আগামী বছর একুশে বইমেলা সশরীরে হাজির হয়ে আপনার নামানুষ সংগ্রহ করে পড়বো। ততদিন না হয় অপেক্ষা করতেই হবে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভেচ্ছা নমানুষকে। শুভেচ্ছা আপনাকে।

৫| ১৫ ই মার্চ, ২০২২ রাত ১১:৩১

প্রামানিক বলেছেন: অনেক ভালো লিখেছেন।

৬| ১৬ ই মার্চ, ২০২২ রাত ১২:২০

মনিরা সুলতানা বলেছেন: এসব বলতে মানা, সাথে পুশ সেল হাবিজাবি। গত মেলায় তো হুলুস্থুল দেখেছিলাম ,কবিতা চুরি নিয়ে।
ধন্যবাদ বাস্তবতা তুলে আনার জন্যে।

৭| ১৬ ই মার্চ, ২০২২ রাত ১:০২

রাজীব নুর বলেছেন: যা বলেছেন, ভুল কথা বলেন নি।
বাংলা একাডেমির একটু নড়ে চড়ে বসা উচিৎ।

৮| ১৬ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ১০:২০

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: সুন্দর বিষয়ের উপর চমৎকার গঠনমূলক আলোচনা করেছেন ও পরামর্শ দিয়েছেন।

রিভিউ পড়ে বই কিনেছি এমন ঘটনা আমার বেলায় কখনো ঘটেছে কিনা মনে করতে পারছি না। বই কেনার আগে রিভিউ পড়তে হবে, এটাকেও আমি সমর্থন করছি না। তবে, বইয়ের রিভিউ পড়তে ভালো লাগে, কিন্তু রিভিউ পড়ার পর ঐ বই আর কেনা হয়েছে কিনা, সেটাও মনে করতে পারছি না :) এটা একান্তই আমার নিজস্ব মতামত ও নিজস্ব অভ্যাস।

রিভিউর উদ্দেশ্য কি বইয়ের বিজ্ঞাপন? রিভিউ কি সবাই করতে পারেন? রিভিউ হলো একটা বইয়ের উপর মূল্যায়ন বা অ্যাসেসমেন্ট, সেই সাথে লেখকের লেখক-সত্তার উপরও মূল্যায়ন। রিভিউ করে থাকেন তারা, যারা এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ, তবে একটা বই পড়ার পর যে-কোনো পাঠকও পাঠ-প্রতিক্রিয়া জানাতে/প্রকাশ করতে পারেন। পাঠ-প্রতিক্রিয়ায় আবেগ-অনুভূতি প্রাধান্য পায়; রিভিউতে আবেগের স্থান খুব কম।

তবে, ব্যাপারটা দুঃখজনকই না শুধু, আমার কাছে লজ্জাকর ও নীতিহীনতাই মনে হচ্ছে যে, একজন রিভিউয়ার লেখক বা প্রকাশকের কাছ থেকে টাকা খেয়ে টাকার অঙ্কের অনুপাতে বইয়ের রেটিং করবেন, বইয়ের বাজারে বইয়ের কাটতি বাড়ানোর জন্য। এটাও দুর্নীতি ও নোংরামি। আমাদের এতখানি নীচে নামা মানায় না, লেখকরা তো সমাজের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর, সমাজ সঞ্চালক ও সংস্কারক; তারা কীভাবে আদর্শচ্যুত হোন এভাবে?

৯| ১৬ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ১০:২১

জুল ভার্ন বলেছেন: অসাধারন সুন্দর লিখেছেন!
পাঠপ্রক্রিয়া সম্পর্কে আমার কিছু অপ্রিয় অভিজ্ঞতা হয়েছে গত দুই বছরে।
গতবছর বই মেলায় প্রকাশিত একজন বন্ধুর বইয়ের পাঠপ্রতিক্রিয়া লিখেছিলাম- যেখানে আমার পক্ষপাত্হীন নির্দোষ বিশ্লেষণ ছিলো। অর্থাৎ ভালো মন্দ দুটোই লিখেছিলাম। তারপর থেকে সেই বন্ধু ফেসবুক এবং ব্লগে আমার লেখা বর্জন করে চলছেন।

চলতি বছর আরো একজনের একটা সাড়া জাগানো(বিরামহীন বইয়ের বিজ্ঞাপনে সাড়া জাগানো) বই পড়ে পাঠপ্রতিক্রিয়া লিখেছিলাম। তারপর বইয়ের লেখক এতটাই উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন আমার একটা ফান পোস্টে। তিনি আমাকে বেশ কিছু কথা শুনিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন- একটা বই লিখে প্রকাশ করার জন্য!

১০| ১৬ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ১১:২৭

মলাসইলমুইনা বলেছেন: নীল আকাশ,
আমি একটু দ্বিমত করি আপনার সাথে বুক রিভিউয়ের ব্যাপারে । আমার দ্বিমতের জায়গাটা বলি । রিভিউ মানেই হলো কারো লেখা সম্পর্কে অন্য আরেকজনের মতামত। বইয়ের ক্ষেত্রে সেই মতামত লেখকের সাথে বা বইয়ের ব্যাপারে অন্য পাঠকের সাথে অনেকখানিই পার্থক্য হতে পারে । তাতে অনেকে কোনো ক্ষেত্রে বই পড়তে যেমন কোনো পাঠক উৎসাহী হতে পারে তেমন অনেক ক্ষেত্রে পাঠক নিরুৎসাহিতও হতে পারে। দুটোই স্বাভাবিক।সমস্যা এতে না। প্রশ্নটা হলো আপনি কার রিভিউটা পড়ছেন। নাম না জানা কোনো ফেসবুকারের রিভিউ পড়ে, আপনি যদি সেই রিভিউয়ার সম্পর্কে একেবারেই অপরিচিত হোন, তাহলে তার মতামত গ্রহণযোগ্য মনে করার ক্ষেত্রে সতর্কতা আপনাকেই নিতে হবে। এখানেই আমি যারা বা যে সব পাঠক ফেসবুক বা যে কোনো অনলাইন পোর্টালে কোনো বই রিভিউ পড়ে বই কিনে নিরাশ হন আর কমপ্লেইন করতে থাকেন তাদের এপ্রোচ সম্পর্কে হতাশ হই । অপরিচিত একজন রিভিউয়ারের রিভিউ পুরো বিশ্বাস করার দায়টা আসলে তাদের বলেই আমার মনে হয়।এটা যারা পেইড রিভিউয়ার তাদের রিভিউ সম্পর্কেও প্রযোজ্য।এই পেইড রিভিউয়াররা নিশ্চই নামি দামি কোনো সাহিত্যিক না তাহলে তাদের রিভিউকে বাইবেল বলে মানতে হবে কেন ? একটা কথা বলে শেষ করি । আমি স্কুলে ক্লাসনাইন বা টেনে থাকতে ইন্ডিয়ান ইনফর্মেশন সেন্টারে যেতাম খুব । অনেক আগে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ছিল ইন্ডিয়ান ইনফর্মেশন সেন্টার । ওখানকার রেফারেন্স থেকে স্কুলের কিছু সাবজেক্টের পড়াশোনাও করতাম । বই পড়ার চেয়েও সেটার জন্যই ওখানে বেশি যেতাম । ওখান থেকে সম্ভবত একটা মাসিক ম্যাগাজিন বের হতো । দেশের নামি সাহিত্যিকরাও ওই ম্যাগাজিনে লিখতো (নামটা ভুলে গেলাম ।আলসেমি করে আর খুঁজে বের করতে ইচ্ছে করছে না)। যাহোক একদিন রাজশাহী ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর মাজহারুল ইসলামের একটা লেখা পড়লাম বাংলাদেশের আধুনিক কবিতা সম্পর্কে । ওখানে দুর্বোধ্যতার জন্য উনি শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হককে চরম সমালোচনা করলেন ।তাদের কবিতার গঠন, উপমা উৎপ্রেক্ষার দুর্বোধ্যতা এসব নিয়েই তাদের কবিতা সম্পর্কে খুবই কঠিন সমালোচনা পুরো লেখা জুড়েই । ওখানে প্রসঙ্গক্রমে উনি সুনীলের 'কেউ কথা রাখেনি' কবিতার সারল্যের কথা, সহজবোধ্যতা কথা বললেন । চমৎকার একটা রিভিউ পুরো কবিতার । কিন্তু কবিতাটার প্রথম দু একটা লাইন ছাড়া আর কিছুর উল্লেখ নেই । আমি সেই দুই লাইন পরেই মুগ্ধ। পরে পুরো কবিতাটা খুজে যখন পড়লাম তখন যে কি ভালোলাগায় আপ্লুত হলাম সেটা বলি কি ভাবে ! আজ প্রায় কয়েক যুগ পরেও সেটা এখনো আমার প্রিয় একটা কবিতা হয়েই আছে । রিভিউ থেকেই খুঁজে পড়া একটা কবিতা কিন্তু সেটা !তাই লাইকমাইণ্ডেড না হলে আরেকজনের রিভিউয়ের রিভিউ পরে সেই অনুযায়ী আশা করে বই কিনে নিরাশ হবার দায় অসচেতন পাঠকের ওপর বর্তায় বলেই আমার ধারণা। রিভিউটা কোন নিউজ আউটলেটে পাবলিশ হচ্ছে, রিভিউয়ারটা কে এগুলো খুব জরুরি। এগুলো ইগনোর করে শুধু যারতার রিভিউ পড়েই কোনো বই সম্পর্কে ভালো বা খারাপ যেকোনো ধারণ করা আর সেই ধারণার ভিত্তিতে বই কেনাও অনুচিত সেটাই আমার মনে হয়। এগুলো আমার নিজের অভিজ্ঞগতার থেকেই বললাম । যাহোক ভালো থাকুন । নতুন উপন্যাসের জন্য শুভ কামনা ।

১১| ১৬ ই মার্চ, ২০২২ দুপুর ১২:০০

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
সহমত। সাহিত্যকে বাণিজ্যিকরণ করলে দুধের স্বধ ঘোলে মিঠবে।

১২| ১৬ ই মার্চ, ২০২২ দুপুর ১:০৪

রানার ব্লগ বলেছেন: একটা সময় ছিলো মানুষ বই পড়তো , তারা পাড়ার বইয়ের দোকান থেকে বই কিনে এনে বা পাব্লিক লাইব্রেরী থেকে বই কিনে এনে পড়তো , আমার নিজের কথাই বলি প্রতি দুই মাস অনত আমি মায়ের কাছ থেকে ১০০ টাকা নিয়ে দের মেইল লম্বা রাস্তা হেটে গিয়ে ৫ খানা সেবার বই কিনে আনতাম । আমি চাইলেই বাসে যেতে পারতাম কিন্তু তাতে ১০০ টাকা থেকে আসা যাওয়া বাবদ ১০ টাকা খরচ হবার ভয়ে হেটেই যেতাম । আমার বন্ধুরা আমাকে টিটকারি মারতো, কিন্তু গোপনে তারাই আমার কাছ থেকে বই ধার নিয়ে পড়তো এবং ফেরত দিতে ভুলে যেতো । আসলে বই পড়ার ইচ্ছা থাকা টা জরুরী । এডভেঞ্চারের নেশা , রোমাঞ্চের নেশা এখনকার বাচ্চাদের মধ্যে একদম কমে গেছে। তারা গৃহপালতি হয়ে যাচ্ছে ।

সাহিত্য বানিজ্যিকিকরন করা হয়েছে কিছু অলেখক লেখকদের বই কে প্রচারে আনার জন্য । যেমন ধরুন হঠাত করে দেখবেন বই মেলা এলেই বিভিন্ন অভিনেতা অভিনেত্রী বই বাহির করেন, তাতে লেখার মান কতোটুকু থাকে তা নাইবা বললাম। এদের লেখাকে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য মার্কেটিং করাটা জরুরী নতুবা কেইবা বলেন পয়সা খরচ করে এইসব গার্বেজ কিনবে। উধাহারন হিসাবে রাবা খান নামের একজন সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ চর্চিত ব্যক্তিত্ব তিনি আধা বাংলা আধা ইংলিশ মিশ্রিত একটা বই বাহির করলেন যার জন্য কিছু মিডিয়া উঠেপরে লেগে গিয়েছিলো বাংলা সাহিত্যের নতুন মোচড় আসছে বলে ব্যাপক প্রচারনা চালালো ফলাফল মানুষ বই কিনলো এবং ডাস্টবিনে ফেলে দিলো ।

১৬ ই মার্চ, ২০২২ দুপুর ১:৪৮

নীল আকাশ বলেছেন: এখন বই বিক্রি হয় যার পেইড প্রচার বেশি হয়।
কাইকর নামের একজন ব্লগার হবার জন্য এখানে এসেছিলেন। তার নোংরা ভাষা এবং অসভ্য লেখার জন্য জন্য প্রতিনিয়ত সবাই তাকে বলতো। শেষ পর্যন্ত ব্লগে টিকতে না পেরে ভেগেছে।
একটা প্যারাও শুদ্ধ বাংলায় লিখতে পারে না সে। এই অপলেখক বের করেছে বই "বনানী কবরস্থান"। যারা প্রচারের ট্রাপে পরে এই কিনেছে তারাই পড়ার পর অশ্রাব্য বকা দিচ্ছে লেখককে। কিন্তু টাকাপয়সা পেয়ে মিডিয়া এবং সাহিত্য গ্রুপগুলি এই বইয়ের নামে প্রতিনিয়ত প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে। কনটেস্ট চালাচ্ছে। যেয়ে দেখুন।
এই হচ্ছে দেশের সাহিত্য চর্চা। আপনি কেমন লিখতে পারেন সেটা ফ্যাক্টর না।
বই বের করার পর কত টাকা খরচ করে প্রচার চালাতে পারবেন এটাই আসল এখন।
শুভ কামনা।

১৩| ১৬ ই মার্চ, ২০২২ বিকাল ৪:১৮

জ্যাকেল বলেছেন: বাণিজ্য চলুক কিন্তু কর্পোরেট লেভেলের মত করে ফেলতে চাইলে তাহা দু:খজনক। আর স্কাম ব্যবস্থা যে চালু হইল উহা হইবার কথা। যুগের মাইর।

১৬ ই মার্চ, ২০২২ বিকাল ৪:৪৭

নীল আকাশ বলেছেন: এরা পুরো বিষয়টাকে ব্যবসায়িক করে ফেলেছে। রকমারী থেকে শুরু করে সব জায়গায় একই কান্ড করা হয়। শীর্ষ লিস্টের নামে বড় ধরনের বাটপারি চলে। সাহিত্য চর্চা বঙ্গোপসাগরে পালিয়ে চলে গেছে।
শুভ কামনা।

১৪| ১২ ই মে, ২০২২ বিকাল ৩:৪৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: বর্তমানে দেশের সাহিত্য অঙ্গণে বিরাজমান একটি কালো অধ্যায়ের প্রতি আলোকপাত করেছেন, এজন্য ধন্যবাদ।
সাহিত্যাঙ্গণ বাণিজ্যিকীকরণের আধুনিক 'টুলস' হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে 'পেইড রিভিউয়ার' এর আবির্ভাব। আপনি যেমনটি ব্যাখ্যা করেছেন, এদের দ্বারা অতি নিম্ন মানের প্রকাশনাও নকল প্রশংসার গুণে বাজার দখল করে বসে থাকে, সেই সাথে বোদ্ধা পাঠকেরা হতাশ হন।

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, মলাসইলমুইনা, জুল ভার্ন, ঢাবিয়ান প্রমুখের মন্তব্যগুলো ভালো লেগেছে।

পোস্টে দ্বাদশ প্লাস। + +

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.