নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্বজোড়া পাঠশালাতে সবাই ছাত্র-ছাত্রী, \nনিত্য নতুন শিখছি মোরা সদাই দিবা-রাত্রী!

নীল আকাশ

এই ব্লগ-বাড়ির সমস্ত লেখা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। লেখকের অনুমতি ছাড়া এই ব্লগ-বাড়ির কোনো লেখা অন্যকোথাও প্রকাশ করা যাবে না।

নীল আকাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটা সৌজন্য কপি কি দেয়া যাবে লেখক মশাই?

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:১৯



বই যেহেতু ফ্রি চাইছেন তার মানে আপনারা পাঠক। কিন্তু একটা বই প্রকাশ করার সাথে কতগুলো ধারাবাহিক কাজ সম্পর্কিত এটা কি কখনো আন্দাজ করেছেন আপনারা?
বুঝার চেষ্টা করেছেন কখনো?

একজন লেখক দিনের পর দিন, রাতের পর রাত, ঘন্টার পর ঘন্টা মোবাইলে কিংবা কম্পিউটারে টাইপ করে করে একটা বইয়ের পান্ডুলিপি তৈরি করেন প্রচন্ড পরিশ্রম করে। পান্ডুলিপি লেখা হলে আবার তিনি সেটা নিয়ে বসেন বানান ও ব্যাকরণগত ভুল সংশোধনের জন্য। এছাড়াও আনুষঙ্গিক অন্যান্য সবকিছু ঠিক করতেও আবার তাকে দীর্ঘদিন পরিশ্রম করতে হয়। এত কষ্ট করার পরে যখন পান্ডুলিপিটা লেখা শেষ হয়, তারপর তিনি সেটা প্রকাশকের কাছে বুকে অনেক আশা নিয়ে পাঠান দুরু দুরু বুকে।

একজন প্রকাশকের কাছে শত শত লেখক তার পান্ডুলিপি পাঠান প্রকাশ করার জন্য। সেই শত শত পান্ডুলিপি থেকে একজন প্রকাশককে দিনের পর দিন পরিশ্রম করে, বাছাই করে, সেরা পান্ডুলিপিটা বের করে নিয়ে আসতে হয়। একটা পান্ডুলিপি লেখা যতটা কষ্টকর, একজন প্রকাশকের পক্ষে শত শত পান্ডুলিপি বেছে একটা সেরা পান্ডুলিপি বের করে নিয়ে আসাও প্রায় একই রকমের কষ্টকর কাজ হয়। এই কাজে ভুল করলে তার প্রকাশনীর সুনাম ও আর্থিক ক্ষতি দুইটাই হবে।

একটা বই প্রকাশ করা কোনোভাবেই সমাজসেবামূলক কোনো কাজ নয়। এটা একজন প্রকাশকের বাণিজ্যিক কার্যক্রম। ‌তার রুটি রোজগার এটার উপরে নির্ভর করে। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন এটা থেকেই দিতে হয়। সুতরাং বই প্রকাশের সময় একজন প্রকাশককে অনেকগুলো বিষয় যথেষ্ট সতর্কতার সাথে দেখে রাখতে হয়।

কোনো পান্ডুলিপি পছন্দ হলে এরপর একজন প্রফেশন্যাল প্রুফ রিডারকে দিয়ে সেই পান্ডুলিপি ভালোভাবে সংশোধন করে ছাপানোর উপযুক্ত করতে হয়। প্রুফ রিডারকে এজন্য যথেষ্ট পরিমাণে টাকা পয়সা দিতে হয়। কারণ প্রুফ রিডারের কাজ যদি ভালো না হয় তাহলে বইয়ের সাড়ে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

এরপর বইটা প্রকাশকের নিজের পকেট থেকে অনেক টাকা খরচ করে ছাপাতে দিতে হয় এবং তারপর সেটা বাইন্ডিং করতে হয়। বাইন্ডিং করার আগে একজন প্রচ্ছদ শিল্পীকে আবার টাকা পয়সা দিয়ে পছন্দসই একটা ভালো মানের প্রচ্ছদ সেটা বানিয়ে নিতে হয়। প্রচ্ছদ ছাপানোর পরে বই বাইন্ডিং করে প্রচ্ছদটা লাগিয়ে বইটা এবার বিক্রির জন্য উপযুক্ত করা হয় প্রকাশনীর পক্ষ থেকে। ‌

প্রকাশকের প্রতিটা কাজই টাকা পয়সার সাথে সম্পর্কিত। এরপর প্রকাশক একটা বইয়ের পিছনে যত টাকা খরচ করেছেন তার লাভ ও লেখককে রয়েলিটি ফি দেয়ার কথা চিন্তা করে সেটার হিসাব করে প্রতিটা বইয়ের ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করেন যেন সব পাঠক বইটা কিনতে পারে।

কোনো লেখক যদি নতুন হয়, তাহলে প্রকাশকের টেনশন আরো বেড়ে যায়। নতুন লেখকদের বই প্রথমবার আসলে খুব কমই বিক্রি হয়, এটা চিরন্তন সত্য কথা। ন্যূনতম সংখ্যাও যদি বিক্রি না হয় তাহলে প্রকাশকের মাথায় হাত দেওয়ার মতন অবস্থা হয়। নতুন লেখকরা তখন বেশ আতঙ্কের মধ্যে থাকেন। কারণ ন্যূনতম সংখ্যার বইও যদি বিক্রি না হয় এবং সেই প্রকাশক যদি এই বইটা বের করে বাণিজ্যিকভাবে লোকসানের মধ্যে পড়েন, তাহলে সেই প্রকাশক আর কখনোই সেই লেখকের বই ছাপাবেন না।

এতগুলো কাজ শেষ হওয়ার পর বইটা বিক্রি করার জন্য বইমেলা কিংবা বুকে স্টলগুলোতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তারপর সেই বইগুলো ধাপে ধাপে বিক্রি করার চেষ্টা করা হয়। এই বই বিক্রির সাথে আবারো টাকা খরচ করে বই প্রচার করার কাজও করা হ্য়।

এতকিছু করার পরে যখন সেই লেখক কিংবা প্রকাশকের কাছে বিভিন্ন মানুষজন বিভিন্ন সম্পর্কের অজুহাত দিয়ে হাত পাতে ফ্রি বই নেওয়ার জন্য, তখন একবার ভেবে দেখুন তো সেই প্রকাশক কিংবা লেখকের মনের অবস্থা কী হয় আপনার সেই আবদার শুনে?

প্রকাশক ও লেখক উভয়ই তখন প্রচন্ড টেনশনে আছেন বইয়ের খরচের টাকা উঠানোর জন্য। পরিচিত লোকজনই তো বই কিনবে একজন লেখকের ও প্রকাশকের। অথচ তারা বই তো কিনছেন না, বরং ফ্রি বই নেয়ার আশায় বসে আছেন। এইরকমভাবে ফ্রি বই চেয়ে প্রকাশক ও লেখকের উভয়কে আরও বড় বিপদে ফেলার পায়তারা করছেন।

কোনো লেখক বা প্রকাশকের কাছে ফ্রি বই চাইবার আগে, একবার নিজেকে সেই লেখক কিংবা প্রকাশকের জায়গায় কল্পনা করুন। একবার ভেবে দেখুন, আপনি যদি সেই জায়গায় থাকতেন আর আশেপাশের পরিচিত মানুষজন আপনার কাছে এভাবেই বই না কিনে ফ্রি বই চাইতো তখন আপনার কেমন লাগতো?

কোনো লেখকের বই কেনার সামর্থ্য যদি না থাকে তবে তাকে ভদ্র ভাষায় শুভকামনা জানান, তার বই জনপ্রিয় হোক ও পাঠপ্রিয়তা পাক সেই কামনা করুন।

অন্তত তার কাছে ফ্রি বই চেয়ে সেই লেখক ও তার প্রকাশককে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলবেন না।

ধন্যবাদ ও শুভকামনা।

সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইল
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীল আকাশ, ফেব্রুয়ারি ২০২৩

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:৩৫

নতুন নকিব বলেছেন:



বই ফ্রি চাওয়াটা অন্যায়। কোন লেখক বিশেষ সম্পর্কের কারণে কাউকে ফ্রি গিফট করলে সেটা ভিন্ন ব্যাপার। এই যেমন ধরুন, আপনার সাথে আমার সম্পর্ক তো নিশ্চিতভাবেই অত্যন্ত চমৎকার। আমাদের দীর্ঘ দিনের পারস্পারিক এই আন্তরিক সম্পর্কের কারণে আপনি যদি আপনার নতুন প্রকাশিত একটি বই আমাকে উপহার দেন, আমি তো আপনার মন রক্ষার্থে হলেও তা গ্রহণ করে নিতে বাধ্য হবো। :)

ক্ষমা করবেন, আমি কিন্তু বই চাইনি।

আসলে ফাও খাওয়ার মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা সম্ভব হলেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে পারে।

শুভকামনা।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:১৩

নীল আকাশ বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য। যে কোনো নতুন লেখক লেখিকা এই বিড়ম্বনায় পড়েন।
বিশ্বাস করুন এখন পর্যন্ত আমার কাছে একটাও নিজের কাছে কলুষ এর কপি নেই।
অফিসের ব্যস্ততার জন্য ঢাকায় যেতেও পারছি না। নিজের বইটা ছুয়ে দেখতে খুব ইচ্ছা করছে।
সবাইকে বাস্তবতা বুঝানোর জন্যই এই পোস্ট লিখেছি।


২| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:৩৭

শেরজা তপন বলেছেন: সহমত- আমি দেখেছি ফ্রি বই বেশীরভাগ পাঠক সেলফে সাজিয়ে রাখে শুধু পড়তে চায় না।
পয়সা দিয়ে কিনলে দরদ থাকে।

৩| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৩

নেওয়াজ আলি বলেছেন: আমি বই কিনি মাগনা চাই না কখনো

৪| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৫

অপু তানভীর বলেছেন: বই ফ্রি চায় মূলত সুবিধাবাদী ও চোগলখোরেরা !
যারা ফ্রি বই চায় তাদের ধরে থাপড়ানো উচিৎ ।

৫| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৯

কৌতুহলী বয় বলেছেন: একটা বই লিখতে কি পরিমান শ্রম দিতে হয় কত পড়তে হয় কত রাত জাগতে হয় এগুলো সবাই বুঝে না । তাই হুট করেই সৌজন্য কপি চেয়ে ফেলে ।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৪:৪২

নীল আকাশ বলেছেন: একদম সত্য কথা বলেছেন। এটাই এই লেখায় বুঝাতে চেয়েছি।
আমার ব্লগ বাড়িতে সুস্বাগতম।

৬| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:০৬

সোনাগাজী বলেছেন:



বাংলাদেশী লেখকদের শতকরা ৮০ জনের বই ঠোংগা বানানোর জন্য উপযুক্ত; এসব বই পড়ার জন্য লেখক ঘন্টায় ৮০ ডলার করে দিলেও আমি পড়বো না।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৪:৪২

নীল আকাশ বলেছেন: আপনার লেখার যেই মান, সেটা টয়লেট ট্যিসু হিসাবে ব্যবহারেরও উপযুক্ত না।

৭| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:২৫

রানার ব্লগ বলেছেন: সোনাগাজী বলেছেন: বাংলাদেশী লেখকদের শতকরা ৮০ জনের বই ঠোংগা বানানোর জন্য উপযুক্ত; এসব বই পড়ার জন্য লেখক ঘন্টায় ৮০ ডলার করে দিলেও আমি পড়বো না।

না না এমনটা একদম না । প্রতিভাবান অনেকেই আসছেন তাদের লেখা নিয়ে । আমার মনে হয় আপনার উচিৎ নতুন লেখকদের বই পড়া। সবাই যে যুক্তিধর্মীয় বই লিখবে এমন কিন্তু না। কেউ কবিতা কেউ গল্প কেউ প্রবন্দ কেউ জীবনমুখী বা কেউবা ভ্রমন কাহিনী লিখবে । শরতচন্দ্র নজরুল রবীন্দ্রনাথ বঙ্কিম এরা কিন্তু গল্প আর কবিতা লিখেই পাঠক পরিচিতি পেয়েছেন । হ্যা এটা ঠিক আজকাল সিনেমার নায়ক নায়িকারা বই লিখে অটগ্রাফ দেবার জন্য লাইনের মাথায় দাঁড়িয়ে থাকে এটা তাদের নির্বুদ্ধিতা আর কিছু ধান্দাবাজ প্রকাশকের অসৎ উদ্দেশ্য । কিন্তু তরুন লেখকরাও লিখছে ভালো ভালো গল্প কাব্য প্রবন্দ !!

৮| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৬

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: কিছুটা আক্রমণাত্মক হয়ে গেলো। আসলে বই গিফট হিসেবে দারুন । আবার ভালোমানের বই টাকা খরচ করে কেনার মানুষের অভাব হয় না। একটা বই মানে প্রচুর পরিশ্রমের বিষয় । লেখকের প্রকাশকের। সেদিক বিবেচনায় বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না টাইপ বক্তব্য বেশি কার্যকরি মনে হয় । অনেক তরুণ প্রতিভাবান লেখক আছেন। আবার অনেক প্রতিভাবান লিখতে লিখেতে পরিপক্কতার শিখরে অবস্থান করছেন। অনেকে একুশে বই মেলার শেষ দিন ফ্রি বই সংগ্রহের জন্য মুখিয়ে থাকে। আসলে বই পড়ার নেশা অথবা লোভ সীমাহীন হলেও এমন হতে পারে।

৯| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:৫৬

সোনাগাজী বলেছেন:



পাঠ প্রতিক্রিয়া-৮, আবার পড়বো নাকি?

১০| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: অনেক লেখক আছেন, নিজ থেকেই অনেককে বই দেন। কাউকে কাউকে কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দেন।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:১৩

নীল আকাশ বলেছেন: নিজের টাকায় আজেবাজে গার্বেজ ছাপালে সেইগুলো বিলি না করে উপায় কী?
প্রকাশক নিজেই ছাপালে এইসব আর সম্ভব না। প্রকাশকের কাছে বইয়ের প্রতি কপির হিসাব থাকে।

১১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৯:১৫

মোঃ রাশেদ হাসান চৌধুর বলেছেন: ভালো লিখেছেন।।।

১২| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:০৬

যুবায়ের আহমেদ বলেছেন: লেখকের কাছে বইয়ের সৌজন্য কপি চাওয়া, ফ্রি বা উপহার হিসেবে বই চাওয়া খুব নিকৃষ্ট কাজের একটি।অথচ এই কাজটি অবলীলায় করে আমাদের দেশের বহু মানুষ।
অবশ্য এর পেছনে কিছু বাঙ্গালির সহজাত মাগনা চাওয়া পাওয়ার সহজাত স্বভাবের পাশাপাশি একটা সময়ের নামধারী কিছু লেখকও দায়ী, যারা শখের বশে লেখতো এবং প্রকাশক থেকে পাওয়া কপিগুলো সৌজন্যকপি হিসেবে বিলি করতো। লেখক থেকে বই সৌজন্য কপি, ফ্রি, উপহার পাওয়া যায়, এটা তখন থেকেই দাবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে।
লেখক নিজ থেকে নিজের লেখা বই উপহার দিলে সেটা ভিন্ন কথা। কোন বই উপহার পেতে চাইলে সেটা লেখকের কাছে না চেয়ে অন্য কারো কাছে চান, যিনি আপনাকে বই কিনে দিতে পারবে---এই কথাগুলো আমি ফেইসবুকে পোষ্ট করেছিলাম ৩ দিন আগে।

১৩| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:২৩

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: বই কিনে পড়তেই ভাল লাগে।

১৪| ০২ রা এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ১০:০১

নিঃশব্দ অভিযাত্রী বলেছেন: অনেকেই এভাবে বই চায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.