নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাযাবর ...

নীলাভ্র নিরব

ভাবলাম....কিন্তু বলার মতো কিছুই পেলাম না.......!!!

নীলাভ্র নিরব › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বার্থ....

২১ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ৮:০৯




স্টেশন, বড় আজব আর করুণ একটি জায়গা।বিষণ্ণ বিকেলগুলোতে মন খারাপ করে দেয়ার মতো অসংখ্য উপকরণ ছড়ানো ছিটানো থাকে এই স্টেশনগগুলোতে।যার একটি ই মনের মধ্যে হাহাকার ডেকে আনার জন্য যথেষ্ট।
দাদুবাড়ি ময়মনসিংহ থেকে নানুবাড়িতে আসছিলাম। ট্রেনে করে যাবো। কিন্তু ট্রেন আসতে তখনো প্রায় দু-তিন ঘন্টা।প্রচণ্ড রোদের কারণে একটু ছায়ার আশায় যখন এদিন-ওদিক তাকাচ্ছি তখনি চোখ পড়লো একপাশে সাজিয়ে রাখা সারি সারি টিনের কৌটার দিকে।যার ইই এএকটু ছায়া পড়ছে তপ্ত প্লাটফরমে।একটু ছায়ার লোভে সেই ডিব্বাগুলোর পাশে দাঁড়াতেই একটা দৃশ্য দেখে আমার চোখ আটকে গেলো।
সারি সারি ডিব্বার পাশে একজন রুগ্ন মহিলা তার ৬/৭ মাসের বাচ্চাটিকে নিয়ে এলোমেলো ঘুমিয়ে আছেন।সারা রাজ্যের ক্লান্তি ভর করেছে তাঁর চোখে-মুখে।অথচ কি অবলীলায় ই না তারা ঘুমাচ্ছে!!নোংরা প্লাটফরম, লোকজনের কোলাহল, সূর্য রশ্নী কোনো কিছুই তাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারছে না।এই মহিলার হাহাকার বোঝার জন্য নিশ্চয়৪ই কোনো মনো-বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই।যে কেউ তাকালেই বুঝতে পারবে তাদের দীনতা,দারিদ্র্যতাতার কথা।কিন্তু কত মানুষ এই ঘুমন্ত মা-ছেলের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে কিন্তু ভুলেও কেউ ঘুরে তাকাচ্ছে নাহ।আর দু'একজলেও চোখে মুখে একটা বিরক্তিকর ভঙির রেখা টানছে।আবার অনেকে এমনভাবে তাকাচ্ছে যেন এটাই স্বাভাবিক!!!এখনকার পৃথিবীতে অন্যের দুঃখ,দীর্ণতা,হতাশায় কারোর ই কিছু যায় আসে না।

সব কিছুকে গা-সওয়াভাবে গ্রহণ করার আশ্চর্য এক ইকক্ষমতা আমরা অর্জন করে ফেলেছি...।কৃত্তিমতার এই পৃথিবীতে এই ক্ষমতা থাকাটা জরুরী।
শিশুটি জেঁগে উঠেছে।কাঁদছে না, বা কোনো হৈইচৈই ও করছে নাহ।অদ্ভুত এক নিঃসঙ্গতা নিয়ে বসে আছে শিশুটি।আশ্চর্য চোখে দেখছে স্টেশন নামের এই জায়গাটির ব্যস্ততা।দেখছে অন্যের বাড়ি ফেরার আকুলতা।কিন্তু এই শিশুটি কি কখনো বাড়ি ফেরার স্বাদ উপলব্ধি করতে পারবে?
হয়তো এবার শিশুটির ক্ষিধে লেগেছে।তাই সে তার মাকে জাগানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে।কিন্তু রুগ্ন মায়ের কানে যেন ক্ষুধার্ত শিশুর আর্তনাদ ঢুকছে না।অনেকক্ষণ ব্যর্থ চেষ্টার পর এটাই যেন স্বাভাবিক এমন ভান করে হামাগুড়ি দিয়ে বাদামের খোসা মুখে পুরছিলো শিশুটি।
হয়তো এই শিশুটির মাও জানে না কে এর বাবা।হয়তো শিশুটি আরেকটু বড় হলেই তার মা তাকে ফেলে চলে যাবে কোনো অজানা গন্ত্যবের ট্রেনে। বিশাল এই স্ট্যাশনের বুকে জায়গা আদায় করে নিবে শিশুটি।কি নাম হবে তার জানেন? হ্যাঁ,স্টেশন সন্তান।এখানেই সে হামাগুড়ি দিয়ে হাঁটা শিখবে।পেটের তাগিদে ভিক্ষা করবে,ছোটোখাটো চুরি-বাটপারিতে ধীরে ধীরে জড়িয়ে পরবে।৭/৮ বছরে বিড়ি ফুঁকবে।এক্টা সময় পর আরো ভয়াবহ কাজে জড়িয়ে পরবে হয়তো।এভাবেই সে বড় হবে জিবনের বিকৃত দিকগুলোকে সঙ্গী করে।এটাই যে তার নিয়তি।
নিয়তির নিয়ম ভেঙে বেরিয়ে আসার শক্তি প্রকৃতি সবাইকে দেয় না।প্রকৃতি যে বড়ই নিষ্ঠুর।

কি ভেবে পকেট থেকে একটা একশ টাকার নোট বের করে ঘুমন্ত মায়ের কাছ দিয়ে যেতে চেয়েও পারলাম না।কারণ তার দুঃখের চেয়ে আমার ১০০ টাকার দাম অনেক বেশি।আমিও যে এই কৃত্তিম পৃথিবী থেকেই স্বার্থপর হওয়ার শিক্ষাটা অর্জন করে নিয়েছি।



[বিঃদ্রঃ সত্য ঘটনা অবলম্বন]

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ৮:২৩

চাঁদগাজী বলেছেন:




যাক, কিছুটা অনুধাবন করতে পেরেছেন নিজের দেশের মানুষকে

২১ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ৯:৫৮

নীলাভ্র নিরব বলেছেন: সবসময় ই চেষ্টা করি।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

২| ২১ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ৯:১৮

উড়ালপক্ষী বলেছেন: ভাই অনেক সুন্দর লিখেছেন। চালিয়ে যান।

২১ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:০০

নীলাভ্র নিরব বলেছেন: জ্বী ভাই,অসংখ্য ধন্যবাদ।আপনারা পাশে থাকলে থাকবো ইনশাল্লাহ।

৩| ২১ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:০২

মাহমুদুল হাসান (সুমন)। বলেছেন: হুমায়ূন আহমেদ এর মত লেখার স্টাইল....কেন??

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.