নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি পুতুল, পুতুলদের কোন বয়স থাকে না।

যখন আমি হবো শুধুই স্মৃতি, আমার এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা গুলো সবার সামনে আমাকে আরো স্মৃতিময় করে তুলবে।

ঋফায রহমান

Sun will forget to shine, Stars will forger to bright, But I will not forget you.. নটরডেম কলেজে পড়ছি। ২য় বর্ষ। বিজ্ঞান বিভাগ। জন্ম ২রা জুন, ১৯৯২। জন্মস্থান রাজশাহী জেলার মিশন হাসপাতাল।

ঋফায রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: হাতের লেখা

০৯ ই অক্টোবর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৫০

‘গরিব মানুষ, হাতের লেখা খারাপ, পাখি দিয়া হালচাষ করি’ কোনো এক কবির এই লাইনকয়টা বড় আপু বিন্তিকে প্রায়ই বলতে শোনে টিংকু। ছোট্ট টিংকুর মাথায় ঢোকে না, হাতের লেখা খারাপের সঙ্গে গরিব মানুষের সম্পর্ক কী?

টিংকুর হাতের লেখা খুব খারাপ, যাকে বলে একেবারে যাচ্ছে তা ধরনের খারাপ। টিংকু ছাড়া অন্য কেউ ওর লেখা বুঝতেই পারে না। এই নিয়ে টিংকুর ভোগান্তিরও শেষ নেই। টিচারদের নিয়মিত বকুনি আর দাঁত খিটমিট চেহারা দেখাটা ওর রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বড় আপু বিন্তিও সুযোগ পেলেই টিপ্পনি কাটে- ‘দুর্বোধ্য ছবি যেমন আর্ট কম্পিটিশানে অ্যাওয়ার্ড পায়, তেমনি লাইন ড্রয়িং গ্রুপে টিংকুর হাতের লেখা পাঠালে নির্ঘাৎ অ্যাওয়ার্ড পেয়ে যাবে।’

এতোসব টিপ্পনি আর বকুনি টিংকুর কোনো পরিবর্তন ঘটাতে পারে না। বরং হাতের লেখা ক্রমশ দুর্বোধ্য ক্যালিওগ্রাফির দিকে টার্ন নিতে থাকে। হাতের লেখা সুন্দর বা স্পষ্ট করার বিষয়ে টিংকুর কোনো আগ্রহই নেই। সুন্দর হাতের লেখা দিয়ে সে কী করবে? সে কি বড় হয়ে দলিল লেখক হবে নাকি সাইনবোর্ড লেখক হবে? কোনোটাই সে হবে না। তার চেয়ে ভালো বড় হয়ে ট্রাক ড্রাইভার হওয়া। ট্রাক ড্রাইভারদের কতো সম্মান! ওরা কতো বড় বড় গাড়ি চালায়! তার ওপর সবাই ওস্তাদ ডেকে কী সম্মানটাই না করে! না, তাকে ট্রাক ড্রাইভার হতেই হবে। আর ট্রেন ড্রাইভার হতে পারলে তো কথাই নেই।

ছোট আপু তিন্নির ইচ্ছে কিন্তু অন্য রকম। টিংকুর এই বাজে হাতের লেখা দেখার পর থেকেই আপুর ধারণা হয়েছে, বড় হয়ে টিংকু ডাক্তার হবে। কারণ, ডাক্তারদের হাতের লেখাও এমন অস্পষ্ট আর দুর্বোধ্য। ছোটবেলায় এমন প্রতিভার লক্ষণ খুব কমই চোখে পড়ে। টিংকু ডাক্তার না হয়েই পারে না।

টিংকু স্কুলে ভর্তি হয়েছে ছয় মাস হয়ে গেলো। এর মাঝে ক্লাসে কয়েকটা পরীক্ষাও দিয়েছে। সবগুলোতেই ও শূন্য পেয়েছে। খাতায় সবগুলো প্রশ্নের জবাবই টিংকু যত্ন করে লেখে। টিচাররা বুঝতে না পারলে ও কী করবে! ওর কী দোষ! ও তো আর ইচ্ছে করে এমন করে না।

টিংকুর মাঝে মাঝে ভীষণ মন খারাপ হয়ে যায়। ওর হাতের লেখা নিয়ে সবার এতো মাথা ব্যথা অথচ আব্বু আর ভাইয়া যে কাগজ কলমেই লিখে না, সে নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই। আব্বু আর ভাইয়া সব কিছু লিখেন কম্পিউটারে। ঠকঠক করে টাইপ করে কাগজ ঢুকিয়ে প্রিন্ট দেন, কী সুন্দর ছাপা লেখা বেরিয়ে আসে! টিংকুরও ইচ্ছে হয় এমনভাবে লিখতে। এতো সুন্দর ব্যবস্থা থাকতে কষ্ট করে হাতে লেখার দরকারটা কী! কিন্তু কে শোনে কার কথা। কম্পিউটারে বসলেই বিন্তি আপু ধমকে ওঠেন। টিংকুর মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে বাড়ি থেকে চলে যেতে, বাড়ির সামনের ট্রাক স্ট্যান্ডে গিয়ে মছুয়া কোনো আঙ্কেলকে ধরে ট্রাক চালানো শিখে নিতে। তারপর বিন্তি আপুকে এসে বলবে- ‘তোমার কচুর কম্পিউটার আমার লাগবে না।’

টিংকু বারান্দায় বসে উদাস দৃষ্টিতে ট্রাকগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে। ওদের বাড়ির সামনেই ট্রাক স্ট্যান্ড। বারান্দায় দাঁড়ালেই সারি সারি ট্রাক চোখে পড়ে। ড্রাইভারদের উচ্চস্বরের কথাবার্তাও শোনা যায়। ইশ, ও যদি ট্রাক চালাতে পারতো! টিংকু মুগ্ধ দৃষ্টিতে ট্রাকের সারি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ে।

মায়ের আলতো আদরে টিংকুর ঘুম ভাঙে। ‘কী রে টিংকু বারান্দায় ঘুমিয়েছিস কেন, শরীর খারাপ?’ মায়ের আদরমাখা প্রশ্নের জবাবে টিংকু মুখ ফসকে বলেই ফেলে ‘মা, আমি ট্রাক চালাবো, ট্রাক ড্রাইভার হবো’। কথা শুনে মা তো হেসেই কুটি কুটি। ‘ঠিক আছে বাবা তাই হবে। কিন্তু ট্রাক চালাতে হলে যে শক্তিরও দরকার হয়। চলো, এক্ষুনি এক গ্লাস দুধ খেয়ে নাও।’ দুধ খেতে টিংকুর একদমই ইচ্ছে করে না। নাম শুনলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। তারপরও টিংকু রাজি হয়ে যায়। কারণ, ট্রাক চালানোর মতো বড় একটা কাজ শেখার জন্য এর চেয়ে জঘন্য জিনিস খেতেও সে রাজি আছে।

মায়ের কোলে চড়ে ঘর পেরোতেই টিংকুর চোখে পড়ে বিন্তি আপু কম্পিউটারে গাড়ি চালাচ্ছে। আরে এ কী! কম্পিউটারেও গাড়ি চালানো যায়! টিংকু অবাক বিস্ময়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। মায়ের কোল থেকে নেমে দৌড়ে কম্পিউটারের দিকে এগিয়ে যায়। বিন্তি খেলতে খেলতেই বিরক্তি কণ্ঠে বলেন- ‘টিংকু, ডিসটার্ব করবি না, দেখছিস না গেইম খেলছি।’

- কী গেইম, আপু?

- রেসিং কার। খেলবি নাকি?

- না আপু, আমি ট্রাক চালাবো।

- হু। ট্রাক চালানোর আগে তোকে ছোট গাড়ি চালানো শিখতে হবে।

- আমি সত্যিকারের গাড়ি চালাবো।

বিন্তি হেসে টিংকুকে আদর করে বলে- কিন্তু প্রথমেই তো সত্যিকারের গাড়ি চালানো যায় না। প্রথমে কম্পিউটারে শিখে তারপর রাস্তায় চালাতে হয়।

- তাই নাকি?

টিংকু বড় বড় চোখে মনিটরে তাকিয়ে থাকে। একটা গাড়ি সাঁই সাঁই করে অন্যগুলোকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বিন্তি কিবোর্ডে ঠকঠক করে দুহাতে আঙুল চালাচ্ছে। খেলতে খেলতেই বিন্তি বলতে থাকে - ‘তোকে আমি গাড়ি চালানো শেখাতে পারি, তবে একটা শর্ত। আমি যা বলি তা তোকে শুনতে হবে।’

গাড়ি চালানো শেখার জন্য টিংকু সব পারে। চেঁচিয়ে বলে ওঠে- ‘কী করতে হবে আপু?’

বিন্তি হেসে বলে- ‘আমাকে আগে সুন্দর হাতের লেখা দেখাতে হবে। তোর লেখা আমাকে খুশি করতে পারলে তবেই তোকে গাড়ি চালানো শেখাবো। যখন তখন কম্পিউটারে বসলেও কিচ্ছু বলবো না।’

টিংকু দৌড়ে পড়ার ঘর থেকে খাতা-পেন্সিল নিয়ে আসে। বড় বড় অক্ষরে নিজের নাম লিখে দেখায়। আপু আদর করে বলে- ‘এবার কয়েকটা ফলের নাম লিখে দেখা তো?’

টিংকু আম জাম কলা লেখার পর বিন্তি তাকে জড়িয়ে ধরে খুশিতে চেঁচিয়ে ওঠে- ‘মা, দেখে যাও, টিংকু কী সুন্দর করে লিখছে !’

মা পাশে এসে দাঁড়ান। মিটিমিটি হেসে টিংকুর মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। চিৎকার শুনে ছোট আপুও এগিয়ে আসেন। টিংকুর সুন্দর হাতের লেখা দেখে মন খারাপ হয়ে যায় তার, বিড়বিড় করে বলতে থাকেন - ‘টিংকুটার আর মনে হয় ডাক্তার হওয়া হলো না! সম্ভাবনা ছিল!’







কাহিনী: খালেদুর রহমান

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই অক্টোবর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৪৫

নিবিড় অভ্র বলেছেন: কিউট!!! :>

০৯ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৯:৪২

ঋফায রহমান বলেছেন: :> :>

থ্যাংকস।

২| ১০ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৮:০৫

বাবুনি সুপ্তি বলেছেন: :) হুম কিউট!

১০ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১১:৪৪

ঋফায রহমান বলেছেন: আপনার নামটাও খুউব খুউব কিউট।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.