নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নীল

নীলব্ল্

নীলব্ল্ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রমনীনামা থেকে ওকালতনামা

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩২

আমার মাতামহী স্কুল ও প্রাথমিক শিক্ষা নামক বস্তুটির সাথে পরিচয় ছাড়াই স্বামীগৃহে পা রাখেন চল্লিশের দশকের শেষ দিকে। বৃটিশ ভারত তখন মাত্র দুই টুকরো হয়েছে্ ।বর্তমান বাংলাদেশ তখনো বহন করছে কিছুদিন আগে ঘটে যা্ওয়া ভয়াল দূর্ভিক্ষের ক্ষত ।

চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকে শুধু আমার মাতামহী কেন! পৃথিবীর বৃহৎ অংশের নারীই ছিল প্রাথমিক শিক্ষা ও নারী স্বাস্থ্যের অধিকার সমূহ থেকে বঞ্চিত । তখন নারী ছিল স্ত্রী,মাতা নচেৎ পতিতা ।নারীর কর্মের অর্থনৈতিক মূল্যায়ন বা নারীর অধিকার ও সম্মান রক্ষার জন্য বিশেষ কোন আইন ছিল না বটে কিন্তু কোথা্ও যেন একটা পরিবর্তন হচ্ছিল ।শিক্ষার সুযোগ ও আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত হলেও এই নারীরা তাদের সুপ্ত শক্তিকে ব্যবহার করল পারিবারিক কাঠামোর পরিবর্তনে ৤ আমার মাতামহী নিজে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হল্ওে পঞ্চাশের দশকে তার কন্যাকে স্কুলে পাঠালেন পরিবার ও সমাজের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে ৤ বাংলায় এদের পথ দেখিয়েছিলেন বেগম রোকেয়া ।
ষাট দশকে মাতামহীর হাত ধরে আমার মাতা প্রাথমিক স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে জেলা শহরের মহা বিদ্যালয়ে ।এই দেশের তরুন সমাজের চোখে তখন স্বাধিকারের স্বপ্ন । নারী-পুরুষ ,ধর্ম –বর্ন নির্বিশেষে বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার স্বপ্ন।মাতামহীর কন্যা্ও যোগ দিয়েছেন সেই স্বপ্নে ।স্বাধীন দেশ চাই -সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য যোগ্য কর্মী্ও চাই । চিকিৎসক হ্ওয়ার জন্য মাতামহীর কন্যাটি সুযোগ পেল মেডিকেল কলেজে । সীমিত সুযোগের মধ্য দিয়ে অসংখ্য নারী তখন ঘরের বাইরে পা রেথেছে ৤ নারী তখন এগিয়ে আসছেন বিভিন্ন মিছিলে ,স্কুলে ,বিশ্ববিদ্যালয়ে ,সরকারী দপ্তরে প্রায় সব ক্ষেত্রেই ঘোষনা করেছে তার সরব উপস্থিতি । রাষ্ট্র ও সমাজ বাধ্য হচ্ছে মানুষ হিসেবে নারীর স্বীকৃতি দিতে,তার যোগ্যতার মূল্যায়ন করতে ৤পূর্ব বাংলায় তখন নারী পুরুষ নির্বিশেষ সকলের চোখে স্বাধীন দেশের স্বপ্ন ৤
১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বীর বাঙ্গালী বিশ্বের মানচিত্রে জন্ম দিল বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের৤ গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ তার পবিত্র সংবিধানে সকল মানুষের সমতার স্বীকৃতির সাথে সাথে রাষ্ট্রের সকল কর্মকান্ডে নারীর অংশগ্রহন নিশ্চিত করার ঘোষনা করেছে । পরবর্তীতে পারিবারিক কাঠামোতে নারীর অবস্থান মূল্যায়ন করতে ,নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এই রাষ্ট্র বিভিন্ন আইন প্রনয়ন করছে এবং এই সকল আইনের শক্তিশালী প্রয়োগও আমরা দেখছি ।

একুশ শতকে ক্ষমতার পাদপ্রদীপে ক্ষীন হলেও নারীর মুখ দেখা যাচ্ছে ।মানুষ হিসাবে স্বীকৃতী আদায়ের এই যুদ্ধ কঠিন ছিল বিগত দশকে বিজ্ঞানের প্রকৃত অগ্রগতি আর ২টি বিশ্বযুদ্ধ সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ববস্তাপনায় যে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছি সেই পরিবর্তনের অনেকটা সুফল নারীর পক্ষেই গিয়েছে ৤ বিজ্ঞান নারীর মুঠিতে নিয়ে এসেছে জন্মনিয়ন্ত্রন ৤
বিজ্ঞান বেগ দিয়ে আবেগ কেড়ে নিয়েছে কিনা সে সম্পর্কে বিতর্ক থাকলেও জন্ম নিয়ন্ত্রণ ঔষধ নারীকে দিয়েছে যৌনতার দায় থেকে মুক্তি ৤নারীর শরীর এখন আর যৌনতার সমস্ত ফলাফল ও দায় বহন করতে বাধ্য নয় ৤জন্ম নিয়ন্ত্রণ নারীর মুঠোতে চলে আসায় সমান অধিকারের সাথে সাথে নারীর যৌন স্বাধীনতার বিষয়টি ও জোরে সোরে আলোচনায় চলে আসে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও সমাজ বিষয়টিকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয় ৤
জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আবিষ্কার করে বিজ্ঞান নারীকে দিয়েছে পুরুষের সমান্তরালে পা ফেলার শক্তি ৤

বর্তমান সময়ে বিজ্ঞানের অন্যতম আবিষ্কার অবশ্যই ইন্টারনেট ৤ অন্তর্জাল বা ইন্টারনেট আজ এমন পযায়ে অবস্থান করছে যে পৃথিবীর বাইরে থেকে ও মানুষ প্রতি মুহূর্তে একে অপরের যোগাযোগের আ্ওতায় থাকছে ৤আধুনিকতার সকল তথ্য এখন হাতের মুঠোয় ৤ অত্যাধুনিক এই ব্যবস্থা অবশ্যই মানুষের জীবন যাত্রাকে সহজ ও গতিময় করেছে ৤ কিন্তু এই প্রযুক্তির উল্লেখযোগ্য মাত্রার অপব্যবহার আমরা দেখছি নারীর ক্ষেত্রে৤
বর্তমান সময়ে হরহামেশাই মোবাইল,ইন্টারনেট,ভিডিও চিত্রে মেয়েরা শিকার হচ্ছেন অশ্লীল ছবির । প্রিয় পুরুষটির সাথে ধারন করে রাখা প্রিয় মুহূর্ত গুলি যে এক সময় তার জীবনের ভয়ংকর তম বিপযয় ডেকে আনতে পারে সেই সম্পর্কে হয়ত কোন ধারনাই ছিল না উজ্জল কিশোরীটির ।অথবা এমনটি হয়েছে- শুধুই হয়ত ইন্টারনেট পরিচয় বন্ধুত্বের সীমাটি হয়ত ওই পযর্ন্ত কিন্তু নেটে পেষ্ট করা তার একটি ছবি এই বন্ধুটির কল্যানে বিকৃত হয়ে জড়িয়ে গেল অসংখ্য মানুষের কাছে ।

’নিরঞ্জনা বোলোনাকো কথা ওই যুকবের সাথ ’’-আজ নিরঞ্জনার কথা বলার যুবক শুধু একজন নয় ৤বিনে পয়সায় কথা বলার মগ্নতায় নিরঞ্জনা খুলে দেয় অন্তর্জালে ভিডিও অপশন ৤

ভিডিও অপশনটির বিকৃত ব্যবহার নারীর জন্য হয়ে্ উঠতে পারে দু:সহ ।তথ্য প্রযুক্তিতে নারীর শরীর ও সম্মানের অশ্লীল ব্যবহার করা হচ্ছে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই তাকে ও তার পরিবারকে ব্লাকমেইল করার জন্য ।
ইন্টারনেট জগতে কিছু কিছু সাইটে অনেক নারীরাই নাকি প্রতিনিয়ত তাদের উলঙ্গ ছবির শট পাঠায় ৤ নারী তার শরীরকে ইচ্ছা মত অবশ্যই ববহার করতে পারে কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে অপরাধী চক্র যাতে অন্ধকার জগতে তার শরীরকে ববহার করার সুযোগ না পায় ৤ এই সতর্কতা তৈরীর পরিবার ,স্কুল ও সমাজের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ৤
আমার মাতামহীকে অনেক বঞ্চনা সহ্য করতে হয়েছে । কখনোবা পারিবারিক গন্ডিতে হয়ত অনেক অপমানও সয়েছেন । কিন্তু লক্ষ্য মানুষের সামনে এমন উলংগ ধর্ষনের মুখোমুখি তাকে হতে হয়নি যা আমার মেয়েদের বোনেদের হতে হচ্ছে ।

অনেকেই হয়ত বলবেন মেয়েরা এই গুলি করে কেন?? না করলেই পারে !!! মেয়েদের কে নিজের সম্মান রাখতে শিখতে হবে !! ইত্যাদি ইত্যাদি ।
যখন একটি মেয়ে ধর্ষনের মত শারীরিক অপরাধের শিকার । তখনও মেয়েটিকেই এই ধরনের বেশী কথা শুনতে হয় । কিন্তু একজন পুরুষ রাস্তায় অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে দুই দিন পর উদ্ধার হলেও সে বরং সমাজের সহানূভূতি কুড়ায় তখন বিষয়টি দাঁড়ায় যেন শুধুই অপরাধের শিকার তেমনি ইন্টারনেটে বা তথ্য প্রযুক্তিতে যে অপরাধ গুলির শিকার নারীরা হচ্ছেন সেগুলি শুধুই অপরাধ । আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে অপরাধটি করছে তাকে অবশ্যই আইন ও শাস্তির আ্ওতায় আনতে হবে । ইতিমধ্যে আমাদের দেশে তথ্য প্রযুক্তি আইন ও পর্নগ্রাফি এ্যাক্ট নামক দুইটি বিশেষ আইন রয়েছে । এই আইনগুলির বাস্তবায়নের জন্য চাই যথাযথ প্রশিক্ষিত পুলিশ বা তদন্ত বাহিনী ,প্রশিক্ষিত আইনজীবি । সর্বোপরী ব্যাপক সামাজিক সচেতনতা ।সমাজকেই সই করতে হবে এখন প্রযুক্তি অপব্যবহারের ওকালতনামায় ।

লেখিকা: এ্যাডভোকেট ইয়াদিয়া জামান

সুত্র: প্রথমবার্তা.কম

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.