![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঃজীবনটা বিশ্রী। অসম্ভব বাজেভাবেই বিশ্রী। যারা 'Life is beautiful' বলে বলে গলায় ফেনা তুলে তারা আসলে একধরণের আইরনি করে। Life is not fair. Life is never fair! ফেয়ারই যদি হইতো এই নিস্পাপ ফুটফুটে বাচ্চাটা মৃত্যুর সাথে এমন পাঞ্জা লড়তো না!
--ভাই, সবর দাও। হয়তো এর মাঝে ভালো কিছু নিহিত আছে।
ঃতোর ভালো কিছুর গুল্লি মারি! আমাকে কেন তুলে নিচ্ছে না! আমিই না কত আজেবাজে কাজ করি! কত ফালতু মানুষের সাথে মিশি। কিন্তু, ও তো এর ধারেকাছেও নাই। ও তো বাচ্চা একটা! তবুও কেন ওর মধ্যে এই ফাউল অসুখটা বাসা বাঁধবে!"
চুপ করে গেলাম। কী উত্তর দিব বুঝতে পারছিলাম না। আবীর, ওর ছোট ভাই। বয়স কতইবা হবে আর। এইতো ৫ বা ৬ বৎসর! কী অদ্ভুত মায়াময় আদুরে চেহারা ওর। সবার সাথেই কী আশ্চর্য সদ্ভাব! সবার প্রতি তার তদারকিটাও ছিলো দেখার মতো। বিভিন্ন বিষয়ে কেমন জানি 'বড় মানুষী' কথাবার্তা!
ওর বড় ভাইয়াকে, আমার প্রিয় বন্ধুটিকে, 'ভালুক' নামে ডাকতো। আমি গেলে আমাকে বিভিন্ন সুন্দর অভিযোগ শুনতে হতো... "ভালুব্বাইয়াটা তোমাল বন্টু (বন্ধু) না!?"
- হু, বন্ধু তো।
"তুমি ওকে মালা কলতে পালো না?"
-কী মানা করতাম?
"ছাইপাঁশ লা খাইতে! যদি কিসু হয়ে যায়!"
- কী হবে?
"ঐ যে মুখে লাম লেওয়া যায়না! "
-আচ্ছা, আমি মানা করে দিব!
যখনই ওদের বাসায় যেতাম, দেখতাম এই আবীর কলকল শব্দে সারা ঘর মাতিয়ে রাখছে! দেখেই যে কারো মন ভালো হয়ে যাবে এমন একটা শিশু! ওকে দেখলেই পৃথিবীতে সত্যি সত্যিই ANGEL আছে এই ভাবনাটা আপনার মাথায় আসবেই!
একদিন মাহির আমার কাছে হন্তদন্ত হয়ে এসে বললো, "দোস্ত, কী করব বল আমায়! ভাইটারে আমি এভাবে ছেড়ে যেতে দিবো না আমি! শালার অসুখটার আমি চৌদ্ধগুষ্ঠি বাজাই দিবো... এই জেনেটিক ডিস অর্ডারটা আমার হইবার পারলো না! কী করতাম! What should I do? বল না, প্লীজ! কী করলে ও ভালো হয়ে যাবে? what the bloody thing should I do!? আমি আমার এই ফালতু জীবনটা চাইনা। আমি আমার বাচ্চা ভাইটারে সুস্থ দেখতে চাই..."
আমার বন্ধুটা হরহর করে অনেক কথাই বলে যাচ্ছিলো আর যাচ্ছিলো। চোখ দিয়ে সমানতালে টপাটপ পানি ঝরছিলো। আমি তো জানি ও ওর ছোট্ট ভাইটার জন্য, দরকার হলে, একদম হাসিমুখেই নিজের জীবনটা স্যাক্রিফাইস করতে পারে। ওর লাইফের সবচেয়ে দূর্বলতম স্থান হলো এই ছোট্ট ফুটফুটে ভাইটা। কিন্তু ভয়ংকর ব্যাপারটা হলো, আবীরের বেটা থ্যালাসেমিয়া মেজর(Beta thalassemia major) হয়েছে। বিশ্বে প্রতিলাখে ১ জনের অসুখটা হয়! এবং খুব নগণ্য সংখ্যকই সারভাইভ করতে পারে!!
শেষবার যখন ওকে দেখতে যাই, দেখলাম চেহারাটা একদম ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। চুপচাপ এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। আমাকে দেখে আগেকার মতো হাসি দিয়েই বললো, "নিলব (নীরব) ভাইয়া, আম্মুটা না খালি খালি কাঁদে। আব্বুটা আর ভালুব্বাইয়াটা কচোলেট আলে না। আমাল কি 'ক্যাভডেরি কচোলেট' খাইতে ইচ্ছে কলে না?
আমি যখন আল্লার কাছে চলি যাবো তখন সব ক্যাভডেরি তোমরা খাইয়ো! হুহ!"
বললাম, "কি বলো বাবুই! তুমি ভালো হয়ে ইস্কুলে যাবা কয়েকদিন পর। এত তাড়াতাড়ি কেন আল্লার কাছে যাবে!"
:আমি বুঝিতো! আমি বুঝি! আমার যে ব্যথা হয়! ডাক্তাল আংকেলরা কি কতাগুলা ফুটায় দেয়!..."
ও আরো অনুযোগ অভিযোগ করেই যাচ্ছিলো। মাহির আর না পেরে, চোখ মুছতে মুছতে কেবিন থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে গেলো।কোনো শব্দ মুখ দিয়ে বের হতে চাচ্ছিল না আমার। আমার মত শক্ত হৃদয়ের মানুষটারও যে সেদিন অশ্রু ধরে রাখা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছিলো!
বললাম, "বাবুই, এইসব তো তোমাকে ইস্কুলে তাড়াতাড়ি নেওয়ার জন্যই করা হচ্ছে! দেখবা, খুব তাড়াতাড়ি তুমি ভালো হয়ে যাবা, খুব তাড়াতাড়ি! তোমার জন্য ক্যাডবেরি চকোলেট আমি আনবো"
এরপর ও আর কথা বলেনি আমার সাথে। খালি ওর আম্মুকে "আম্মু, পেটে ব্যথা, পেটে ব্যথা বলে কিছুক্ষণ কেঁদেছে!... "
সেদিন কী বার ছিল মনে নেই। কিছু কিছু বিষয় মনে না আসাটাই ভালো। মনে এলেই হৃৎপিণ্ডটা চ্যাঁৎ করে উঠে না চাইলেই.... তবুও... কেন জানি চলে আসে চুপটি করেই...
আমার বন্ধুটা আবীরের চলে যাওয়ার পর একদম কেমন জানি হয়ে গেছে! আগের মতো এদিকে আর আসেনা। আড্ডাও দেওয়া হয় না সে আগের মতো। একদম অবিশ্বাস্য চুপচাপ! নিশ্চুপ অবগুণ্ঠনে যেন নিজেকে ঢেকে নিয়েছে। ওদের বাসায় গেলে বুকটা খালি হু হু করে উঠে। বাগানের সবচেয়ে সুন্দর ফুলটা ঝরে গিয়ে একেবারে বিবর্ণ হয়ে গেছে যেন...
©somewhere in net ltd.