![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভরা মাসের পোয়াতি আনজু বিবির ক'দিন থেকে শরীরটা মোটেই ভালো যাচ্ছেনা। পেটের মধ্যে দস্যিটার নড়াচড়া কখনো কমছে,- কখনো বাড়ছে। মাঝেমধ্যে একটা গনগনে গজাল্ পেরেক যেন তলপেট ফুঁড়ে উঠে আবার মিলিয়ে যাচ্ছে,-- শূন্যে। ছামাদ মিঁয়া সকালবেলায় পটলের ফুল ছুঁইয়ে মাঠে লাঙ্গল দিতে যাবে। কদিন ধরেই বউয়ের এই নছল্লা আর সহ্য হ'চ্ছে না তার। আজকে কড়া গলায় বলে গেছে যেভাবেই হোক আজই সল্ দিতি হবেই। বাড়ি আইসে কুনো ন্যাকাকতা শোনবেনা সে। আগে পিটোপিটি তিনখান মাইয়ে, তাই এবার তার সল্ চাইই চাই। ভুল হলে কাইটে তিন টুকরো করবে আনজুরে।
আশায় আছে ছামাদ মিয়া।
ক'দিন আগে অন্দকার সন্ধ্যে রাত্তিরি পীরবাবা স্বপ্ন দেসে,- তার ঘরে সল্ আইছে। আর সল্ না হলি,- এই দেড় বিগে ফসলি জমি-লাঙল-বলদ---আড়াই কাঠা মাটির বাড়ি এতো সম্পত্তি সামলাবে কিডা! ভোর সকালে এক থালা পানি-ভাত ঘা দেই এই চড়া কতা বলে দেসে আনজু বিবিরে।
--মাঝিমধ্যিই তো ঝিলিক্ দেস্সে, তা, না হলি কী করবো--ও আল্লা--!!
--আর আল্লারে ডাকপারিস নে মাগি---,পানি ভরা কলসি কোকে নে' পাশের বিশ্বেস দের বাড়িতি গে ঢেকি'র পাড় দিবি ,ব্যাতা এমনিতিই ওটপে। তোর বুকির গটন বলছে আজই তুই বিয়োতি পারবি। আজ শুক্কুরবার। ভালোদিন। মাজারের পড়াপানি মুকি দে দুপুরের কডা রান্না কইরে ঢেকির পাড় দিতি যাবি---- দুপুরে খাতি এইসে যেন্ সলের মুক দেখতি পাই ,--না'ইলে তোরে আর ঐ আগের তিনডে মাইয়েরে কুচিকাটা করবানি, এই বইলে গ্যালাম---
©
আজ আর রান্নার শক্তি নেই আনজু বিবির। আগের দিনের পান্তাভাত চটকে লবন-লঙ্কা দিয়ে মহানন্দে খোল ভরাচ্ছে পুঁচকে তিন বোন।
ওদিকে আগের থেকে অতি যত্নে বাঁচিয়ে রাখা ফলিডলের শিষিটা সাথে নিয়ে এলুমিনিয়াম এর ঘড়ায় অর্ধেক জল ভরে আনজু প্রতিবেশী বিশ্বাস দের বাড়িতে ঢেকির পার পারতে গেছে। যদি এবার ও মেয়ে হয়,- তবে চারজনে মিলে আজ আরো একবার ভাত খাবে ফলিডলের ঝাঁঝালো মৃত্যু স্বাদে---! শেষবারের মতো।
©
গ্রামের স্বাস্থ্য সেবিকা অনিতা'দি মাঝেমধ্যেই গোটা গ্রাম ঘুরে যান। আজ ও এসেছেন।
--কিরে লাইলি-আইলি,-- তোদের মা কোথায়-?-কি খাচ্ছিস তোরা--?
--দেকতিসো না বাত খাচ্সি, তাও জিগাও ক্যান-- তুমি খুব তিতো ওষুদ দ্যাও---খাতি বাল্লাগেনা-- তুমার ওষুদ আব্বা খাতি মানা করিসে- আম্মা'রে। আম্মা বাই অওয়াতি গ্যেসে--
--মানে ,---!!!
আব্বায় কইসে বাই না হলি দুপুরে বাড়ি এসে মায়'রে আর আমাগে পুঁচোয়ে কাটপে---
--আরে বলিস কী--! এসব কথা ছোটদের বলতে নেই,-- মা---
--আব্বায় কইসে তো,--তাই তো ক'লাম--
জানো দি'মনি , আম্মা ডা না, কদিন ধরে খুব কানছে। কিসুই খাস্সেনা----
--আচ্ছা আমি তোর আব্বারে বকে দেবোখন--
--তুমি বকতি যেইয়ে না ,--তালি আব্বা তুমারেও কুপাবেনি--বুইলে--
--আচ্ছা,--মা এলে এই ওষুধ গুলো দিয়ে দিস----
--তুমার ওই ওষুধ আব্বা খাতি বারণ করিসে----ক'লাম না--!
---কেনো, তোর আব্বা কী ডাক্তার---!?
হায় ভগবান কিসের উন্নতি,--কিসের একবিংশ শতাব্দী----- সব তাস আল্লা-ভগবান-গড্ এর হাতে গুঁজে দিয়েছে---ধান্দাবাজ ও অসহায় দু'পক্ষের মানুষ ----
©
জলভরা কলসি কাঁখে চেপে ঢেকি পার দিতে দিতে পেটের দস্যিটা
আরো গুমরাচ্ছে তলপেটে। এবার বাম পা--তারপর আবার ডান পা--উফ্ ঢেকির কাঠাম্ তোলা যাচ্ছেনা---
---আল্লা গো---
যদি শুধু কষ্টভরা জীবনই দিবা,-- তো জন্ম দিলা ক্যান---!!
যদি সবসুময় চোক চিতাইয়া মুক ঘুরাইয়া থায়ো ,---তয় কিসির জন্যি তুমারে এতো পিরানঠুঁসে ডায়াডায়ি---কিসির এতো নামাজ-- কালাম---কিসির এতো ঘন্টাধ্বনী---!!! কিসির এতো মন্তোর পাঠ---উলু---শাঁখ-----!!
©
প্রচন্ড যন্ত্রনা উঠেছে তলপেট বেয়ে। সস্তার শাড়ি ভিজে উঠছে শরীরের ঘোলা জলে। হাতে বাঁশের চটা'র ধারালো ফালি নিয়ে আনজু বিবি নিজের ঘরে দরজা ভেজিয়ে দিয়েছে,- একা।
লাইলি-আইলি-পাইলি তিন বোন ধুলো মেখে গুটিসুটি মেরে মাটির দাওয়ায় অজানা ভয় চোখে বসে আছে। দুপুর গড়াচ্ছে। এক্খুনি আব্বা আইসে পরবে। ঘরের ভেতর নবজাতকের কান্নার আওয়াজ।ফিনকি মারা দলা-দলা রক্তরস ভিজিয়ে দিচ্ছে চটের বস্তা। ছেলে হয়েছে এবার। ছামাদের পরিবারের লাঙল- বলদ চরাবার বংশধর কাঁদছে চিল চিৎকারে।
কোনোমতে বাঁশের চটার লকলকে ফলা দিয়ে জন্মনাড়ি কেটে তাতে ঘুঁটেপোড়া ছাই চেপে ধরেছে আনজু বিবি। নাড়ি কাটা ধন হাত-পা ছুড়ছে সাধ্যমতো !!
©
বাড়ি ঢোকার মুখে বাচ্চার কান্না শুনে ছামাদ, ঐ কাদামাখা হাত পায়েই ঘরে ঢুকে গেছে। বংশধর--বংশধর। আহা কী আনন্দ হস্সে আইজ। নাচতি ইচ্ছে করসে।-- ইট্টু নেচেই নিই--
---ও আল্লা ম্যাঘ দিলি-পানি দিলি--সলও দিলি তুই--
এত্তো খুশি কুতায় রাখি-কুন পাত্তরে থুই---ও আল্লা ম্যাঘ দিলি....
ও আব্বা বাই অইসে--!? ও আব্বা বাই এত কান্দে ক্যান । ও আব্বা বাই এর খিদে পাইসে-- ও আম্মু বাইরে খাতি দাও---
--এই তাইতো,--ও আনজু-- বাপ্ রে খাতি দ্যাও---বুকির দুদ দ্যাও---আনজু ,---ও আনজু সুনা--! দেহিসো,--কান্ডজ্ঞান দেহিসো---ঐটুক্ বাচ্সারে চটের বস্তায় শুয়ায় রাহিসো---!! এই আনজু কী কচ্সি শুনতি পাও না,---দেহিসো,--সলের জম্মো দিয়াই এক্কেরে মাতায় উটি গেসো---!! এই আনজু, বাপেরে বুকি'র দুদ দ্যাও কচ্সি--- দিয়ালে হেলান দিয়া চিত্তির মেইরে রইসো যে--!!--শুনতিসো না--!?---এই আনজু কতা কচ্সোনা ক্যান---এই লাইলি,--তোর আম্মু কতা কয়না ক্যান---এই আনজু---নড়োনা ক্যান---সুনা---! এই লাইলি--আইলি-- তোগো আম্মা'য় কতা কয়না ক্যান---কতা কও---আনজু --একবার-- ----মাত্তর একবার ক-তা ক-ও----
ক তা ক ও...... সুনা...... ও আল্লা আল্লাগো-----আনজু কতা কয়না ক্যান........
২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:২১
নিমগ্ন নির্জন বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ----
২| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:২৫
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: আপনি প্রথম পোস্টেই প্রথম পাতায় জায়গা পেয়েছেন দেখে অবাক হলাম। আমার নিজের আড়াই মাস। সেখানে প্রথম পোস্টেই প্রথম পাতায়- আপনি নিঃসন্দেহে সৌভাগ্যবান।
শুভেচ্ছা জানবেন।
২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:২৩
নিমগ্ন নির্জন বলেছেন: এটা আমার তিন নং পোস্ট। বিশেষ কারণ বশতঃ আগের পোস্ট দুটি ড্রাফট এ রেখেছি। আপনার সুচিন্তিত মতামত পেলে খুব খুশি হবো----
৩| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:৩৯
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: চমৎকার ভাবে নির্মোহ বাস্তবতা তুলে ধরেছেন।++
আজ এক বিংশ শতকেও শুধুমাত্র পুত্র সন্তানের লোভে উপমহাদেশের এমন হাজারো আঞ্জুরা চূড়ান্ত অবহেলায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।এ চিত্র কবে অস্তমিত হব জানিনা....
তবে এমন ঘটনা যারা ঘটান তারাতো নিরক্ষর। কিন্তু শহরের শিক্ষিত- একটু খোলসা করে বললে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের প্রিন্সিপাল বাবা এবং কলেজের অধ্যাপিকা মা যখন ভূগোলের স্নাতকোত্তর ও বিবিএস পাঠরতা দুই কন্যাকে কলিযুগের অবসান কল্পে বলিদেন তাতে কুশিক্ষা অন্ধত্ব উপমহাদেশকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে সে কথা বলা বাহুল্য।
প্রথম পোস্ট হলেও আপনার লেখার হাত খুবই ভালো। আগামীতেও এমন পোস্ট পাবো আশা রাখি..
২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:২৭
নিমগ্ন নির্জন বলেছেন: এটি একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা। সব শিক্ষা কুশিক্ষা র আড়ালে এই সমাজ আর কবে সত্যিকারের গ্রহণ যোগ্য হবে----জানি না-----
আমরা সবাই সেই শুভ দিন দেখবার আশায় বসে আছি----
৪| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:০৫
রাজীব নুর বলেছেন: স্বাগতম।
ভালো লিখেছেন।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:৫২
নিমগ্ন নির্জন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে----
৫| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ ভোর ৬:৩৪
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: শুভ দিন দেখার আশায় বসে থাকলে,কোনদিন শুভ দিন আসবে না।চেষ্টা করতে হবে যে যার যায়গা থেকে।পথ না পেলে পথ খুঁজে বের করতে হবে।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:০২
নিমগ্ন নির্জন বলেছেন: একদম ঠিক কথা বলেছেন--স্যার---
৬| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:৫৬
খায়রুল আহসান বলেছেন: মর্মস্পর্শী গল্প। ভাল লিখেছেন। + +
২৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:০১
নিমগ্ন নির্জন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ অপরিচিতেষু----
৭| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:১৬
রক বেনন বলেছেন: ভেতরটা নাড়িয়ে দিয়ে গেল। একরাশ মুগ্ধতা আপনার রচনায়। ভালো থাকবেন ব্লগার। আপনার জন্যে শুভকামনা রইল।
৩০ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:১১
নিমগ্ন নির্জন বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে--
আপনার ভালো লাগায় আমি ধন্য------
৮| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:১৪
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: ব্লগে স্বাগতম।
দারুন গল্প। জীবনের গল্প। ++++++
৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:২৯
নিমগ্ন নির্জন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ---- অপরিচিতেষু------
৯| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:৪১
রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট টা আরেক বার পড়লাম।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:২৩
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: শুভ ব্লগিং।