নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিমগ্ন নির্জন

নিমগ্ন নির্জন › বিস্তারিত পোস্টঃ

হিসিনল

৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:০৩




দু'হাজার সালের ভয়ঙ্কর বন্যা। চারিদিকে জল থৈ থৈ। ডাঙা প্রায় নেই বললেই চলে। যত দূরে চোখ যায় ধনী-দরিদ্রের সকল আস্ফালন-অভিমান বন্যার ঘোলা জলে মিলেমিশে আরো তেজিয়ান। জল বাড়ছে বই কমছে না। জাতি-ধর্ম-বর্ণ আজ মিলেমিশে একাকার। একই গাছে মানুষ-সাপ জড়াজড়ি ক'রে একটু বাঁচতে চাইছে একসাথে। কেউ কারো ক্ষতি করছে না। চাইছেও না। গ্রাম-শহরের পাকা স্কুলবাড়ি রকমারী আশ্রিতে পরিপূর্ণ। কত মানুষের কত রকম ক্ষতি-অসহায়তা---তবু যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ-----একটু বেঁচে যাই----"বারে বারে আর আসা হবে না---ও মন আমার----

#
এই প্রবল বন্যায়ও আংড়াইলের লতিফ মিয়ার ঘরে জল ঢোকে নি। উঁচু আড়ার উপরে লতিফের বাপ-দাদার ভিটে। জল উঠতে উঠতে বারান্দার ঠিক দু-আঙ্গুল নীচে থমকে গেছে। সবাই রিলিফ সেন্টারে গেলেও খানিকটা বাড়ানি করেই লতিফ আর তার বৌ ফুলজান বিবি রয়ে গেছে সেই ভিটেতেই--! অসুবিধা কিছুই নেই। পাশের ছোট একতলা বাড়ির ছাদে প্রতিবেশী অনন্ত মন্ডলও আছে। বাঁশের খুঁটোয় বাধা নৌকা চ'ড়ে প্রয়োজনে বেরোলেই হলো----! জীবন চালানোর সব কিছুই ঘরে মজুত। শুধু ইট্টু হাগু-মুতু'তেই যা সমস্যা। তাতেও খুব একটা অসুবিধা নেই, পেছনের বারান্দায় চটা'র আড়ালে খবরের কাগজে হাগু ক'রে, কাগজ মুড়িয়ে টান মারলেই দুলতে দুলতে আস্তে আস্তে বিশ্ব-চরাচরে সব মিলেমিশে একাকার। আহা কী অদ্ভুত সমাপতন--- আহার দিলেন যিনি--ফিরিয়েও নিলেন তিনি! মুতু'-তে তো আরো কোনো সমস্যাই নেই---জলে জল মেশানো পলিসি । সমাপ্ত হ'লেই প্রমাণের চিহ্ন লোপাট---

#
সেদিন কোজাগরী পূর্ণিমা'র চাঁদ উঠেছে ঝকমকিয়ে, গরীবের ছেলের কয়লা দিয়ে মাজা দাঁতের বিজ্ঞাপনের মত। রাতের জলে পূর্ণিমার আলোয় রুপো খ'সে খ'সে প'ড়ে ঘোলা জলে মিশে যাচ্ছে অনায়াসে। নিজেকে এক বড় নাওয়ের বাঁধা ঘাটের মাঝি অথবা ইতিহাস বইতে পড়া রাজরাজাদের জলমহলের বিশ্রামরত সম্রাট মনে হচ্ছে।

#
বেগম সাহেবা ফুলজান বিবি একটু আগেই শয্যা নিয়েছেন। সম্রাট লতিফ মিয়া রাতের হিসিটুকু সেরেই বিছানায় উঠবেন। হাঁটুমুড়ে বসে কর্ম সম্পাদনা চলছে। নিঃঝুম পরিবেশে একটু আওয়াজই অতিরিক্ত মনে হয়। এমন সময় হঠাৎ 'হিসিনল'-এ কিসের কামড় !! উরি আল্লা--এ কী জ্বালা--!! সরাসরি আক্রমণ। হাতের মধ্যেই কিলবিলিয়ে ওঠে ইয়া বড়ো মোটা এক অজানা জীব। ও ফুলজান আলো নিয়ে শিগগিরি এসোগো---। ও গো দ্যাখোগো আমারে কিশি খেলো গো---! ফুলজান বিবি হতচকিত হয়ে টেমি হাতে এসে দ্যাখে প্রায় চার হাত লম্বা-মোটা এক কুকুরে জলঢোড়া সাপ মোতানল পু্রোটা মুখে পুরে দাপনা পেঁচিয়ে শরীর মোচড়াচ্ছে। অদ্ভুত শরীরি গর্জন। অবুঝ জলঢোড়া কোলাব্যাঙ ভেবে এমন এক অজানা বস্তুতে কামড় বসিয়েছে। নির্ভুল শিকার ঠিকই ধরেছে। শোষক নলের সাহায্যে অন্তর্টানে শিকার উদরস্ত করবার চেষ্টাও করছে- কিন্তু গিলতে না পারায় অধৈর্য্যে আরো জোরে চেপে দাঁত বসাচ্ছে। ওদিকে লতিফের জীবন আরো যায় যায় অবস্থা----ও আম্মা---আব্বাগো---এ আমার কী হলো---!--- ও আল্লা-আল্লারে--এ কী কল্লা রে---!!!

#
ভয়ডর ত্যাগ ক'রে লতিফের পরনের লুঙ্গি সাপের পেটে পেঁচিয়ে জোর টানাটানি করেও ফুলজান বিবি হতাশ। কামড় ছাড়ছে না কিছুতেই। টানাটানির চোটে হিসিনল গোড়া থেকে ছিঁড়ে না যায়--! নিঝুম রাতের চিল্লামিল্লিতে পাশের বাড়ির অনন্ত খুড়োও জল ভেঙে এসে পড়েছেন। সব্বোনাশ এ কী অবস্থা!--ও লতিফ,--এ করিছিস কী!
--আমি কী করলাম,আমারেই তো করে দেলে---কাকা গো-----, মুতে শুয়ে পরবো,-উল্টে ব্যাঙ ভেবে কী কামড়ডাই না দেলে,-!!--শালা মোটে ছাইড়তেস্ না--।--বারান্দায় শুয়ে লতিফ মিয়া যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে আর শিকার উদরস্ত না করতে পেরে মোটাপাকাশ জলঢোরা সাপ লুঙ্গির ভিতরে তোলপাড় করছে। উপায় না দেখে অনন্তখুড়ো উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে জলভেঙে সোজা পৌঁছেছেন কাছের বি.এস.এফ ক্যাম্পে। গভীর বন্যার এই মহা সঙ্কটেও সীমান্ত রক্ষীদের পাহারায় বিরাম নেই এতটুকু। কিছুক্ষণের মধ্যেই স্পীডবোটের মৃদুগর্জন ও টর্চের তীব্র আলোয় তিনজন বি.এস.এফ এর দ্রুত আগমন। বাপরে বাপ, ইয়ে তো--সত্যনাশ হো গ্যয়া। ওরাও কিছুক্ষণ টানাটানি করার পরেও সাপের মুখে হাত দেবার সাহস না পেয়ে কাঠি দিয়ে খুঁচিয়েও কোনো উপায়ান্তর না দেখে সোজা হসপিটালে আসবার জন্য মনস্থির করে ফেলে। দ্রুতবেগে বন্যার জল কেটে স্রোতের বিপরীতে উর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে থাকে স্পীডবোট্। সাপ তখনো গজরাচ্ছে। যত টানাটানি-- তত জোরে কামড় । হিসিনলের সাথে ঝুলন্ত মোটর ঘরও এবার আক্রান্ত হবার আশঙ্কা। লতিফকে জোর করে জাগিয়ে রাখা হয়েছে। শোনা যায় ঊনসত্তর রকমের জলঢোড়া আছে। এটা কোন্ জাতের কে জানে! বাঁধন দেবারও জায়গা নেই। আর পারছে না লতিফ।

#
হসপিটালের এমার্জেন্সি আউটডোরের বেডের পাশে বেশ ভিড় জমেছে। এমন জ্যান্তসাপ অঙ্গে-বাঁধা পেশেন্ট ডাক্তারবাবু আগে কখনো দেখেন নি। কেউ কেউ সাপটাকে মেরে দিতে বলছেন। অন্য সময় হলে কী করতেন জানা নেই,--ডিউটি পোষাক পরিহিত সীমান্তের জওয়ান দেখে ডাক্তার বাবু সিদ্ধান্ত নিলেন সামান্য ডোজের লোকাল এনাস্থেসিয়া করা হবে! সেই মতো এরেঞ্জমেন্টও রেডি। সূচ বাগিয়ে ইনজেকশন দিতে গিয়েই নাছোড় সরীসৃপ আবারো প্রবল কামড়ে লতিফের হিসিনল কামড়ে মুচড়ে কেটে নিতে চাইছে। ডাক্তারের হাত প্রবল বিক্রমে জড়িয়ে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিতে চাইছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই নেতিয়ে পড়েছে হৃষ্টপুষ্ট মাছ-ব্যাঙ খেকো শীতল রক্তের সরীসৃপ। এই সুযোগে অবাধ্য চোয়ালের তীব্র চাপ কাটিয়ে বহু কষ্টে প্রায় গিলে ফেলা কোলাব্যাঙ- ওরফে 'হিসিনল' উদ্ধারে সফল হলেন চিকিৎসক।
আধো অজ্ঞানতায় আচ্ছন হয়ে রইলো মানুষ-সরীসৃপ উভয়েই। দীর্ঘক্ষণ অজানা মুখগহ্বরে আটকা পড়ে ফ্যাকাশে হয়েছে 'হিসিনল'। অজস্র কাটাছেঁড়ায় রক্তাক্ত অঙ্গ। জলঢোড়া এমনই কামড়ায়। খ্যাচোর-ম্যাচোর নাছোড় কামড়। ওই নলে আর কোনো কাজ হবে কিনা কে জানে!!

#
এতক্ষণে লতিফকে যত্ন করে সুন্দর ভাবে ড্রেসিং করে দেওয়া হয়েছে। একরাত হসপিটালে থাকতেই হবে। এমার্জেন্সির দরজার বাইরে মোটাসোটা হলুদ কালো ডোরাকাটা শরীরটা এবার একটু একটু করে নড়তে শুরু করেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রায় পুনরায় আগের মতোই চঞ্চল শক্তিধর গলা তোলা তার। আবার পুনরায় ক্ষিপ্র।পেটে শিকার ফস্কানো ক্ষিদে। দুজন সিকিউরিটি পাতলা ফলের পেটি'র কাঠে আলগোছে তুলে বেশ দূরে নর্দমার কাছে পৌঁছে দিয়েছে তাকে। হিলহিলিয়ে এগোচ্ছে সে। আবারো চোখের সামনেই একটা সত্যিকারের জলজ্যান্ত চকচকে কোলাব্যাঙ। কিন্তু এইমুহূর্তে কোলাব্যাঙে আগ্রহ হারিয়েছে সে ! কিছু কিছু কোলাব্যাঙ মুখে পুরলেও পুরোপুরি গেলা যায় না---শেষটুকু কোথাও যেন বাঁধা থাকে----এতো জোরে টেনেও ছিঁড়ে আনা যায় না---শেষমেষ-----!!!

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:৫১

চাঁদগাজী বলেছেন:



জঘন্য ছবি দিয়েছেন পোষ্টে।

২| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:৫৮

চাঁদগাজী বলেছেন:


আজগুবি ভাবনা মাথায়?

৩| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:২১

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: আজগুবি শুনে আর এগুলাম না।

৪| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:৫৯

নিমগ্ন নির্জন বলেছেন: এই ছবিটা তে জঘন্যতার কী দেখলেন ??
একটু বিস্তারিত জানতে পারলে , নিজে থেকে এলার্ট হয়ে যেতাম--

অবশ্যই জানাবেন---
আপনার সুচিন্তিত উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম----

৫| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:০৪

নিমগ্ন নির্জন বলেছেন: একটুখানি জানতে ইচ্ছে করছে জীবন আপনি কতটুকু দেখেছেন--!!--??
আপনার আমার জানা শোনার বাইরে এই মহাবিশ্বের কতকিছু পরে আছে-----কতটুকু জানি আমরা---!!

আজগুবী নয়----এটা একটা সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা--
আপনার আজগুবি মনে হলেও এতে কারো কিছু যায় আসে না---

সাহিত্য---তার নির্দিষ্ট পথ ধরে এগোবো----

আমাদের সাধ্য নেই তার পথ অবরুদ্ধ করার----

৬| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:০৫

নিমগ্ন নির্জন বলেছেন: একটুখানি জানতে ইচ্ছে করছে জীবন আপনি কতটুকু দেখেছেন--!!--??
আপনার আমার জানা শোনার বাইরে এই মহাবিশ্বের কতকিছু পরে আছে-----কতটুকু জানি আমরা---!!

আজগুবী নয়----এটা একটা সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা--
আপনার আজগুবি মনে হলেও এতে কারো কিছু যায় আসে না---

সাহিত্য---তার নির্দিষ্ট পথ ধরে এগোবো----

আমাদের সাধ্য নেই তার পথ অবরুদ্ধ করার----

৭| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:০৮

নিমগ্ন নির্জন বলেছেন: খুব ভালো করেছেন---
সব কিছু সবার জন্য নয়---

বাস্তবের আঙিনায় নির্মেদ হাস্য রস সবার সহ্য হবে এমন কোনো কথা নেই----

নিজের চোখ জ্বেলে পথ চলুন----
হোঁচট খেলেও সামলাতে পারবেন---

৮| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:১৮

চাঁদগাজী বলেছেন:



নিমগ্ন নির্জন বলেছেন, " এই ছবিটা তে জঘন্যতার কী দেখলেন ?? "

-প্রকৃতিতে জীবনচক্রের কারণে নিষ্ঠুরতা আছে; কিন্তু উহাকে ছবি আকারে যুক্ত করা সাহিত্যের কাজ নয়।

৯| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:২১

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনার প্লটে বাস্তবতা আছে বলছেন; আপনি যতটুকু ও যেখানে লিখেছেন, অতুকু বাস্তবতা নেই। আপনি সাহিত্যিক, খবরের পাঠক নন।

১০| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: সন্ধ্যা থেকে আমার মাথা ব্যথা শুরু হয়েছে।
একটূ সহজ আর আনন্দময় গল্প হলে আমার জন্য ভালো হতো।

১১| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৩:১২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ছবিতে ব্যাঙকে কি এটা কামড়ে ধরেছে

১২| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:১৯

নিমগ্ন নির্জন বলেছেন: জীবনচক্র কে আবর্তন করেই জীবনের এগিয়ে চলা---
সাহিত্য-সংস্কৃতিতেই তার যথার্থ ব্যবহার---

জীবনের বাস্তবতার বাইরে জীবন নেই----
সাহিত্য কোন বাঁধাধরা নিয়মের আবর্তে আটকে থাকে না---

১৩| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:২৯

নিমগ্ন নির্জন বলেছেন: অসাধারণ--অস্বাভাবিক মন্তব্য আপনার--
সব কিছু আপনার জন্য---নয়তো---

এটা বুঝবেন তো----না কী----!!!!

১৪| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৫৬

তারেক ফাহিম বলেছেন: “হিসিনল” আমার জন্য নতুন শব্দ।

পুরোটা পড়ে অনেক হাসছিলাম।

:D

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:৩৫

নিমগ্ন নির্জন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.