নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।
(৭)
নাজমা বেগম ডাইনিং টেবিলের উদ্দেশে ঘর ছাড়েন। ঐশীও তার পিছু নেয়। যাবার আগে একবার শ্রাবণের চোখে চোখ দেখে জিভ দেখায়, তারপর ওড়নায় মুখ ঢাকে।
শ্রাবণ নয়নের দিকে তাকায়। চোখে চোখ পড়তেই ওরা দুজন হেসে ওঠে। শ্রাবণ কিছুটা লজ্জাও পায় নয়নের কাছে। বলে- এ কোন পাগলীর পাল্লায় পড়লাম রে!
-কে ঐ মেয়েটি?
-কী জানি? আশপাশের কেউ হবে হয়তো।
কিছুক্ষণ কী ভেবে বললো- ওসবে আমাদের দরকার নেই। নে, কাপড়চোপড় ছেড়ে হাতমুখ ধুয়ে খেয়ে নিই। খুব ক্ষুধা লাগছে।
-হ্যাঁ, ঠিকই বলেছিস।
নয়ন ঝটপট কাপড় বদলায়। শ্রাবণ বাথরুমে ঢোকে।
কিছুক্ষণ পর বাথরুম থেকে বেরোয় ওরা। মুখ থেকে তোয়ালে সরাতেই শ্রাবণ খাটের ওপর একটি ভাঁজ করা কাগজ দেখতে পেলো। কৌতূহলভরে দ্রুত কাগজটি হাতে তোলে ও। ভাঁজ খুলে চোখের সামনে মেলতেই, খুট করে শব্দ তুলে কে যেন দরজার আড়াল হলো। শ্রাবণের কিছু বুঝতে আর বাকি থাকে না। নয়ন হুমড়ি খেয়ে পড়ে ওটার ওপর। একসাথে দুজনে চোখ বুলায়-
সুন্দর,
রজনীগন্ধার শুভেচ্ছা রইলো। কিছু মনে করেননি তো? খালাকে কিছু বলবেন না যেন। আমার দুষ্টুমি করতে ভালো লাগে। গোমড়ামুখোদের আমার একদম অপছন্দ।
আপনাকে কিন্তু ভালো লেগেছে। আপনি আমার বন্ধু হবেন? আমার কোন ছেলেবন্ধু নেই। ছেলে-মেয়ে বন্ধুত্ব হলে আত্মা উর্বর হয়—মন হয় প্রফুল্ল।
ইতি,
পচা মেয়ে।
চিঠিটা পড়া শেষ হলে নয়ন শ্রাবণের চোখে চোখ রাখে। শ্রাবণ চোখ ওল্টায়। তারপর দুজনেই একসঙ্গে হেসে ফেলে। নয়ন মুখ খোলে- মেয়েটি কিন্তু দারুণ! শহুরে মেয়ে তো! খুবই পরিপাটি। বোধ করি পড়াশুনায়ও ভালো। দেখছিস না, চিঠির ভাষাটা কত মধুর! কপটতার আশ্রয় নেই। নেই বালখিল্য। কত সাবলীল, চমৎকার ভাষাপূর্ণ চিঠি!
শ্রাবণ ওকে থামিয়ে দেয়। নে থাম, থাম। কবি হয়ে গেলি নাকি? কোথাকার কে! তাকে নিয়ে আবার জল্পনা-কল্পনা!
নয়ন থেমে যায়। কিন্তু শ্রাবণের হৃদয় কেমন যেন নাচঘরের আবহে স্বপ্নময়তায় ছেয়ে যায়। নিশ্চয়ই ওকে উদ্দেশ্য করেই লিখেছে মেয়েটি। ওকেই তো জিভ দেখালো, চোখ মারলো! শ্রাবণের মনে যে মফস্বল-মফস্বল ভাবটা কষ্ট দিচ্ছিলো, এ মুহূর্তে তা আর থাকলো না। মনে হলো- এই তো জীবন! এভাবেই তো শুরু। মফস্বল-রাজধানীর কমপ্লেক্সটা শুধুমাত্র মনের ব্যাপার। এটাকে রিচ করা যার পক্ষে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, তার পক্ষে উপরের সিঁড়িতে ওঠাও তত তাড়াতাড়ি সম্ভব।
চিঠিটা হাতের মুঠোয় পুড়ে একটা বড় নিঃশ্বাস ছাড়লো শ্রাবণ। তারপর নয়নের দিকে তাকালো।
নয়ন মুচকি হাসিতে বললো- আমাকে থামিয়ে কিছুক্ষণ স্বপ্নের রাজ্যে ঘুরে এলি বুঝি?
এরই মধ্যে খালা দরজায় এসে বললেন- কিরে, দেরি করছিস কেনো? খেতে আয়!
ওরা চটপট উঠে খাবার ঘরে ঢোকে।
(চলবে)
উপন্যাসঃ নির্জনতার সমুদ্রে অবগাহন,
লেখকঃ কবি বাবু ফরিদী।
©somewhere in net ltd.