নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।
কতো রকমভাবেই তো পালিত হয় জন্মদিন। কেক কেটে মোমবাতি নিভিয়ে যে আয়োজন হয়, সেটাই বেশি প্রচলিত। অথচ খাঁটি বাঙ্গালি উদযাপন কিন্তু এটা নয়। আমরা দিনদিন হারিয়ে ফেলছি বাঙ্গালিয়ানা। আমার মনে পড়ে ছোটবেলার কথা। কারণ, আমার জন্মদিন পালনের বিষয়টাই ছিলো ব্যাতিক্রম, একটি দৃষ্টান্ত। ভালো লাগলে এভাবে জন্মদিন পালন করতে পারেন আপনারাও।
.
১৯ বছর বয়স পর্যন্ত বাবাকে পেয়েছি, প্রতিবারই পালিত হয়েছে আমার জন্মদিন। কিন্তু জন্মদিনে কেক কাটা হোত না কখনই। বাবার মতে ওটা আমাদের সংস্কৃতি নয়। আমার জন্মদিনে তাই আয়োজিত হোত 'শিশুভোজ'। এলাকার সব বাচ্চাদেরকে নিমন্ত্রণ করা হোত তাদের মাসহ। জন্মদিনের নিমন্ত্রণপত্রে আমার নিজের হাতে লেখা থাকতো-- 'লৌকিকতা বর্জনীয়'।
.
জন্মদিনের দিন সবাই আমাদের বাসায় আসতো। কতজন আসতো তার কোন হিসেব থাকতো না। ধারদেনা করে হলেও বাবাকে দেখেছি এই অনুষ্ঠান আয়োজন করতে। বড় বড় পাতিল-কড়াইয়ে রান্না হোত। দূর-দূরান্ত থেকেও মানুষ আসতো। রাস্তা থেকে রিকশায় করে ভিখারী নিয়ে আসতেও দেখেছি বাবাকে। 'লৌকিকতা বর্জনীয়' কথাটা লেখা থাকার পরেও অনেকেই অনেক উপহার নিয়ে আসতো। সেইসব উপহার থেকে শুধু ফুল আর শিক্ষার উপকরণ বাদে বাকি সব উপহার ফিরিয়ে দেয়া হোত। শুধু মানুষের ভালোবাসা, দোয়া/আশীর্বাদ প্রার্থনীয় ছিল।
.
ছোটবেলায় কখনও খারাপ লাগেনি এজন্য। আমার হাতের থেকেও উপহার ফিরিয়ে দেয়া হতো। ওদিকে, সৎপথে চলতো বলে বাবা খুব হিসেবী ছিলো। চাইলেই অনেক কিছু পেতাম না। এমন দামি সব পোষাক, খেলার সামগ্রী ফিরিয়ে দিতে গিয়ে কখনও খারাপ লাগতো না? একদম ছোটবেলায় একটু লাগতো। কিন্তু বাবা খুব সুন্দর করে বুঝাতো, কেন ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে এসব। বাবা বলতো, 'যখনই কেউ দামি উপহার দিয়ে খাবে, তখন সে উপহারের সাথে খাবারের মান মিলিয়ে দেখবে, আর মনে মনে হিসেব মেলাবে- উপহারের টাকাটা উঠে এলো কিনা এই ভেবে। উপহার দিতে না হলে এই হিসেবের বালাঈ থাকবে না, মানুষ শুধু তোমাকে ভালোবাসা দেবে'।
.
একটু বড় হয়েই বাবার নীতি ও আদর্শকে ভালোবাসতে শুরু করলাম, বুঝলাম। এভাবে ধীরে ধীরে বিলাসিতাকে বিদায় দিতে শিখেছিলাম, বাবাকে নিয়ে গর্ব হোত, এখনও হয়। ছোট থেকেই বিলাসিতাকে ত্যাগ করেও কষ্টের মাঝে হাসিমুখে ভালো থেকেছি। জিলা স্কুলে প্রথম সারির ছাত্র ছিলাম। দোচালা টিনের ঘরে গরমে সেদ্ধ হয়ে ঘেমে নেয়ে উঠেও ক্লাস এইটে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলাম। স্কুলের কোন স্যারের কাছে পড়ার সুযোগ হয়নি। প্রথম বাসায় স্যার এলেন ক্লাস টেনে, এসএসসিকে সামনে রেখে। আমার জন্য বাবা তার সবকিছুই বাজি রাখতো, সবরকম চেষ্টা থাকতো আমাকে মানুষ করার। অন্যদেএ বলতে শুনেছি, 'আমার সর্বস্ব দিয়ে ওর (মাথার) মধ্যে পুঁজি ভরে দেবো। এরপর ও ঠিকই করে খেতে পারবে, অনেক বড় হবে'।
.
আজ মনে হয়, বাবা সেই সৎপথে মাথা উঁচু করে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার শিক্ষাটা না দিলে, আজ বাবাহীন এই ৯টি বছর মাকে নিয়ে এই দুর্দিনের পৃথিবীতে হয়তো টিকে থাকতে পারতাম না। বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
.
#কবি_বাবু_ফরিদী
>> দেব দুলাল গুহ
২| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩২
সাদাত তানজির বলেছেন: ভালো লাগলো... এমন বাবা সমাজে খুব বেশি প্রয়োজন...
৩| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:২৮
প্রামানিক বলেছেন: ভালো লাগল আপনার জন্মদিনের স্মৃতিচারণ পড়ে। আপনার সৎ বাবার আত্মার শান্তি কামনা করি।
৪| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৩৭
Syeed Rafiqul Haque বলেছেন: ভালো লেগেছে। আর আপনার পিতার বিদেহীআত্মার শান্তিকামনা করছি।
৫| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:৫৬
প্রশ্নবোধক (?) বলেছেন: আপনার বাবার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:৫০
শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: এখন কি অবস্থা?