নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিক্ষক, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। ফেসবুকে যুক্ত হোনঃ www.facebook.com/dev.d.nipun

...নিপুণ কথন...

সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।

...নিপুণ কথন... › বিস্তারিত পোস্টঃ

\'কোনো স্বীকৃতির জন্য বা সুবিধার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি\'

১২ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ২:৪৬


বাবা বেঁচে থাকতে একদিন তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, 'বাবা, তুমি তো মুক্তিযুদ্ধের অনেক গল্প শুনিয়েছো ছোট থেকে, যুদ্ধে অংশ নিয়েছো, ট্রেনিং নিয়ে যুদ্ধ করেছো, গুপ্তচরের ভূমিকাও পালন করেছো, যার কারণে তখন থেকেই তোমার ছদ্মনাম 'বাবু ফরিদী'। ফরিদপুরের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তোমার একটা বইও আছে, যার নাম 'কমলের একাত্তর', প্রকাশিত হয়েছে আশির দশকের দু:সময়ে (পরে যা যুদ্ধাপরাধ টাইব্যুনাল কর্তৃক সংগৃহিত ও সংরক্ষিত হয়েছে)। কিন্তু তুমি কেন সার্টিফিকেট রাখোনি? আজ সনদটা থাকলে আমি সব জায়গায় ভর্তিতে কোটা পেতাম, ভালো চাকরি পেতাম। কেন বাবা?'
.
বাবা জবাবে যা বলেছিলো, তা আমার স্পষ্ট মনে আছে। বাবা বলেছিলো, 'দেখ বাবা, আমিতো কোনো স্বীকৃতির আশায় যুদ্ধ করিনি! আমি যা করেছি তা দেশের জন্য, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য। স্বাধীনতার পর যখন দেখলাম স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী রাজাকার আর মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়েও অনেকে সনদ পাচ্ছে, তখন নিজের ওপর নিজের ঘৃণা হয়, রাগ হয়, এই ভেবে যে কার জন্য কী করেছি? যখন দেখেছি স্বাধীনতার সুযোগের অপব্যবহার করে অনেকেই রাতারাতি ধনী হয়েছে, বাটপারি করে পালটে দিয়েছে ভাগ্য, দেশকে বিক্রি করে খাচ্ছে, তখন আমি আর ওপথে যাইনি। সনদটাই যখন বিতর্কিত, তখন আর ঐ বস্তু দিয়ে কি হবে? এমন দেশ তো আমরা চাইনি! এখন আর কাউকে বলিও না যুদ্ধের কথা, কিন্তু লেখালিখি আর সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। যা করেছি আমি তো জানি! তুই নিজের যোগ্যতায় চান্স পাবি, তোর ওসব লাগবে না।'
.
ফরিদপুর জিলা স্কুল ও নটরডেম কলেজ থেকে দুটো এপ্লাস, তারপর বাবা মারা যাওয়ার পর ঢাবিতে ফিজিক্সে চান্স পেয়েছি, অনার্স মাস্টার্স করেছি প্রথম শ্রেণিতে। তারপর প্রথম চেষ্টাতেই বিসিএস ক্যাডার হয়েছি, শিক্ষা(পদার্থবিজ্ঞান) এ মেধা তালিকায় ফোর্থ। সবটাই কোনো ধরণের কোটা বা সুপারিশ ছাড়া। হয়তো কোটা থাকলে আরও আশানরূপ ক্যাডার পেতাম, কিন্তু বাবার কথাটা বিফলে তো যায়নি! আমি আমার বাবাকে নিয়ে গর্ব করি। মিস ইউ
কবি বাবু ফরিদী।
.
বাবার মৃত্যুর পর যদিও আমি তাঁর নামটি মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির আবেদন করেছিলাম। কিন্তু 'মসলাপাতির' অভাবে সেটা রিজেক্টেড হয়েছে। আবেদন করেছিলাম একটা পরিচয়ের জন্য যে আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, আর কিছুর জন্য নয়। আজকাল তো সনদ ছাড়া কেউ কিছু মানতে চায় না। সবার প্রমাণ চাই। কতোজন কতোভাবে সনদ পেয়ে যাচ্ছে, আর আমি পাই না!
.
আজ কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে, অনেকেই ইনবক্সে আর কমেন্টে ক্ষোভ ঝারছেন যে আমি কেন এটা নিয়ে লিখি না? ভাই/বোন, আমার হাত এখন বাধা, অনেক কিছুই লিখতে পারি না, ওপর থেকে চাপ আসে। শুধু বলি, আমি চাই আর যাই হোক জাতির সূর্যসন্তানদের অসম্মান যাতে না হয়। কোটা একেবারে বাদ না করে সংস্কার হোক। মেধাবিদের মূল্যায়নটা বেশি হোক। জয় বাংলা।

লেখা: দেব দুলাল গুহ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৩:১১

চাঁদগাজী বলেছেন:


দেব দুলাল গুহ কে হন? ব্লগে দেখি অনেকেই উনার লেখা দেন!

শতবার শুনেছি, বাবা কেন সার্টিফিকেট পায়নি। বাবা সার্টিফিকেট পায়নি, কারণ সে ইডিয়ট কোন কমান্ডারের অধীনে যুদ্ধ করেছে।

আমার ভাই স্বয়ং ক্যাপ্টেন এনামের ( ১ নং সেক্টর) অধীনে যুদ্ধ করে সার্টিফিকেট পাননি; ক্যাপ্টেন এনামের অনেক লোক সার্টিফিকেট পাননি; কারণ, লোকটার মাথা খারাপ ছিলো।

২| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৮ ভোর ৫:৩০

বিদেশে কামলা খাটি বলেছেন: কোটা প্রথার আ‌মি এক জন ভুক্ত‌ভোগী। প্রধানমন্ত্রী য‌দি ২০০০ সা‌লে এই ঘোষণা‌টি দি‌তেন তাহ‌লে আ‌মি কি যে খুশী হতাম। ত‌বে আজ‌কের ঘোষণায়ও আ‌মি খুশী। মেধার জয় হোক। কোটা প্রথা নিপাত যাক!

৩| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৭:৫১

তার ছিড়া আমি বলেছেন: মসলাপাতির অভাবে রিজেক্টেড। আপনার কথা গুলো একদম ঠিক। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা কোন ধরনের সার্টিফিকেটের আশায় যুদ্ধ করেননি। আমার বাবা তো দেশ স্বাধীনের পর অস্ত্র জমা দিয়ে গো হাওয়া।

৪| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: দেশে বেশির ভাগই এখন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। কি সুন্দর নানান সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে।
সবচেয়ে দুঃখের কথা এই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারাই আবার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই এর কাজ করছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.