নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিক্ষক, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। ফেসবুকে যুক্ত হোনঃ www.facebook.com/dev.d.nipun

...নিপুণ কথন...

সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।

...নিপুণ কথন... › বিস্তারিত পোস্টঃ

বোয়ালমারীর ভোটার হলে আমি লিটু শরীফকে ভোট দিতাম না। কেন?

০২ রা জুন, ২০২৪ ভোর ৫:১০


বোয়ালমারীর ভোটার হলে আমি লিটু শরীফকে ভোট দিতাম না। কিন্তু কেন?

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অতি সন্নিকটে। স্থানীয় মন্ত্রী মহোদয়ের পরিচিত অনুসারীরা বিশেষ করে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রান্ত সিদ্দিকি সরাসরি প্রচারণায় নেমেছেন চতুল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লিটু শরীফের পক্ষে। তবুও সুষ্ঠ ভোট হলে বারবার নির্বাচিত জনপ্রিয় উপজেলা চেয়ারম্যান মুশা মিয়াকে তিনি হারাতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সন্দীহান এলাকাবাসী। দীর্ঘ অর্ধদশক ওই এলাকায় চাকরির সুবাদে ঐ এলাকার স্থানীয়দের সাথে আমার যে হৃদ্যতা হয়েছে, তা থেকেই এটা জানতে পারলাম। জেলা প্রশাসক মহোদয় যে কড়া বার্তা দিয়েছেন, তাতে তিনি অটল থাকলে সুষ্ঠ ভোট হওয়া উচিত।

লিটু শরীফের সাথে আমার পরিচয় বছর তিনেক আগে এক অনুষ্ঠানে। তারপর তাঁর ইউনিউয়ন পরিষদে আমি সৌজন্য সাক্ষাত করতে গিয়েছি। আলাপচারিতার এক পর্যায়ে তিনি জানতে চাইলে বোয়ালমারী সরকারি কলেজের সাবেক এই ভিপিকে কলেজের দুরবস্থা, বিজ্ঞানে মাত্র একজন শিক্ষার্থী থাকা, নানা অনিয়ম-অসঙ্গতি, জামায়াতের সুরা কমিটির সদস্য কলেজের অধ্যক্ষ পদে থাকা, কলেজে জাতীয় শোক দিবস পালিত না হওয়া, ঠিকমতো ক্লাস না হওয়া ইত্যাদি সম্পর্কে জানাই। কিন্তু তিনি এ নিয়ে জানামতে স্থানীয়দের নিয়ে কলেজের জন্য সাবেক ভিপি হিসেবে কোনো ধরণের পদক্ষেপ নেননি। এরপর দীর্ঘকাল আমাদের মাঝে আর যোগাযোগ না হলেও একে অন্যের ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে ছিলাম। এরপর কলেজে অধ্যক্ষ পদে কয়েকবার পরিবর্তন এসেছে।
.
মাস দুয়েক আগে হঠাৎ আমার একটি রহস্যজনক বদলি হয় বোয়ালমারী থেকে প্রায় ৫০০ কিমি দূরে লালমনিরহাট। বোয়ালমারী উপজেলায় পাঁচ বছর ওয়ান ম্যান পোস্টে 'বিভাগীয় প্রধান' হিসেবে থেকে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১ থেকে ১০ এ উন্নীত করে জেলা পর্যায়ে লালমনিরহাটের সবচেয়ে বড় কলেজে গিয়েছি, যেখানে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। আবার চাকরিও স্থায়ী হয়েছে দুটি মিথ্যা বিরূপ মন্তব্য, দণ্ড, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ইত্যাদি কাটিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করে। তবুও আমার এই বদলিতে আমি, আমার মা, শুভাকাঙ্ক্ষী, বোয়ালমারীর অধিকাংশ সহকর্মী, কর্মচারী, শিক্ষার্থী,অভিভাবকরা খুশী না। কেন? কারণটা হচ্ছে, শিক্ষা ক্যাডারে সাধারণত এতটা দূরে কাউকে বদলি করে না। সারা জীবন একই কর্মস্থলে একই কলেজে চাকরি করছেন এমন রেকর্ড খোদ ফরিদপুর শহরেই অনেক আছে। সম্প্রতি কুকি চীনের নাথান বমের স্ত্রীকেও একই এলাকায় বদলি করা হয়েছে। তাই অনেকের ধারণা সরকারের কাছেও আমি নাথান বমের মতই কেউ!
.
মা অসুস্থ বলে অনেক দিন ধরেই অপেক্ষায় ছিলাম অবকাশকালীন ছুটির সময়ে আসার। সে অনুযায়ী নিজের অসুস্থতাকে জয় করে আমার সরকারী ও মায়ের সাধারণ পাসপোর্ট করে অনেক নথিপত্র রেডি করে অনেক কষ্টে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কামরুল স্যারের অনুপস্থিতিতে তাঁর দায়িত্ব দেওয়া খুরশীদ স্যারের সাইন নিয়ে তা ডাকযোগে ঢাকা মাউশিতে পাঠাতে যাই। তখন কর্মস্থলে আমার দীর্ঘদিনের শত্রু ও জামায়াত গোষ্ঠীর ঘনিষ্ট খুরশীদ স্যার আমাকে হাসিমুখে পরামর্শ দেন মাউশীতে গিয়ে ঘুষ না দিলে ছুটি নাকি আমি পাব না। আমি যখন কাগজ সাইন করাতে কলেজে, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্যার তখন মাউশীতে গিয়ে আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে এসেছেন বলে জেনেছি। এ কথা জানতে পেরে ডাকযোগে ছুটির আবেদন পাঠালেও হাতে সময় কম থাকায়, মায়ের ভিসার প্রয়োজনে আর ডিজি স্যারকে সহকারী অধ্যাপক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্যারের দায়িত্ব নেওয়াটা যে দুজন সহযোগী অধ্যাপককে ডিঙ্গিয়ে বিতর্কিত প্রক্রিয়ায় হয়েছে, তা জানাতে ও আমার সম্পর্কে দেওয়া ভুল তথ্য সম্পর্কে আমার ব্যাখ্যা দিতে ঢাকা যেতে বাধ্য হই।

ছুটি নিয়ে বহিঃবাংলাদেশ ছুটির জন্য ঢাকা গিয়ে জানতে পারি তিনদিনেও ডাক বিভাগের মাধ্যমে আমার আবেদন আসেনি মাউশীতে; যদিও জিইপি করে পাঠানো পত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রাপকের হাতে যাওয়ার কথা। সেই পত্রের খোঁজে জিপিওতে গিয়ে অনেক খুঁজে দেখি প্রাপকে মীর রাহাত মাসুম স্যারের সাইন দেওয়া, যিনি আমার কলেজ শাখার বিজ্ঞানের এডি। তিনি আমাকে ফোনে পত্র প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর সরকারি কলেজ শাখা থেকে ফোন করে এক পিয়ন আমাকে জানায় আমার আবেদনে নাকি পর্যাপ্ত কাগজপত্র সংযুক্ত নাই, তাই এসে দেখা না করলে ছুটি নাকি পাব না! তাই আমাকে বাধ্য হয়ে মাউশিতে ঢুকতে হয়। না হলে আমার ইচ্ছা ছিলো ছুটি কাটিয়ে এসে ডিজি স্যারের সাথে দেখা করে আমাকে নিয়ে প্রচারিত ভুল ভাঙাবো। মাউশিতে গিয়ে পিয়নকে বলি যে আপনি তুলে দেন, কাগজ সব ঠিক আছে। আসলে তিনি আমাকে কাছে ইঙ্গিতে অর্থ দাবি করেন, যা আমি দেইনি বলে সরকারি কলেজ শাখা ও নিচে পত্র শাখায় কর্মচারীদের দ্বারা অপমানিত হই। কিন্তু তা নিয়ে অভিযোগ দিয়ে লাভ নেই বিধায় দেইনি। অপরদিকে রাহাত মাসুম স্যার বলেন ফলো আপের জন্য যাচ্ছি কথাটা যেহেতু উল্লেখ আছে, তাই সমস্যা নাই, কাজ হবে। তাঁকে স্মরণ করিয়ে দেই চাকরির ৭ বছরের মাঝে দীর্ঘ ৬ বছরই উপজেলায় ওয়ান ম্যান পোস্টে আছি, এবার ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে যেতে চাই। আমার যুক্তি ছিলো, আমার মেধা ও রেজাল্টের চেয়ে অপেক্ষাকৃত পরের সিরিয়ালের অফিসার (আমি ৩৫ বিসিএসে ৪র্থ, আমার কিছুটা পরের সিরিয়ালের উৎপলদা) রাজেন্দ্র কলেজে থাকলে আমি কেন অসুস্থ মায়ের পাশে থাকতে পারবো না? কেন আমাকে ৪০ কিমি দূরে ৫+ বছর ধরে ১০ জন স্টুডেন্ট নিয়ে মেধা শেষ করতে হবে? রাহাত স্যার তখন আমাকে ডিজি স্যারের সাথে দেখা করে এ নিয়ে আলাপ করার পরামর্শ দেন। কে জানতো আমি ফাঁদে পা দিচ্ছি?

স্যারের কথামতো সেই রোজার মাসে সারাদিন অভুক্ত থেকে প্রায় ৩-৪ ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকে ডিজি স্যারকে পেলেও, ডিজি নেহাল আহমেদ স্যার এসেই আমাকে দেখে সরাসরি মিটিঙয়ে ঢুকে যান আর একের পর এক মিটিং করতে থাকেন। তখন বিসিএস শিক্ষা সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শওকত স্যার সেখানে আসেন এবং তিনিও আমাকে ডিজি স্যারের সাথে দেখা করার পরামর্শ দেন। মাউশীতে যাদেরকে আপন ভাবি, যাদের জন্য ভোট চাই, সেই পরিচালক শাহেদ স্যার, এডি তানভীর স্যার, এ,সি,আরের দিদার ভাই, ব্যাচমেট শরিফুল-- কেউই আমাকে ন্যুনতম একটা সতর্কবার্তাও দেননি যে ভেতরে আমার জন্য কী বিপদ অপেক্ষা করছে! আমার অভিভাবক আমার সাথে এমনটা করবেন আমি আন্দাজও করতে পারিনি। (তিনি অবসরে গিয়েও আরও এক বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন)
.
যাহোক, অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর ইফতারির আগে আগে অপেক্ষারতদের ডাকা হয় ডিজি স্যারের রুমের দরজা খুলে। অন্যদের সাথে সারাদিন অভুক্ত তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা আমিও স্যারকে সালাম জানিয়ে ভেতরে ঢুকে যাই। যাওয়ার আগে পিওদের কাউকেই ডেস্কে ও ফোনে পাইনি, এমনকি দারোয়ানও আমাদের ঢুকতে বাঁধা দেয়নি। তবুও ভেতরে ঢুকার পর মাত্র দুজন পলিটিকাল লোকের সাথে ডিজি স্যারের কথা হওয়ার পর ডিজি স্যারকে দেখিয়ে অফিস সহকারী সাইফুল আমাদেরকে দেখিয়ে বলে, 'স্যার, এরা অনুমতি ছাড়া ঢুকেছে"। সাইফুল এটা গোলাম ফারুক স্যার ডিজি থাকতেও করেছে, কিন্তু স্যার তখন এটা ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে আমাকে কিছু বলেননি। সে আমাকে ফরিদপুর থেকে অন্যায়ভাবে বদলির কারিগর অসীম সাহা, রমা সাহা স্যারদের ঘনিষ্ট এবং মাউশিতে প্রশিক্ষণের পরিচালক প্রবীর ভট্টাচার্য স্যারের অনুগত। প্রবীর স্যার আমার সকল বদলি, ট্রেনিং আটকে দেওয়া ইত্যাদির কারিগর, স্ত্রীকে নিয়ে মাউশি অফিসে অনেক বছর ধরে সুখে আছেন। তিনি কিছুক্ষণ আগেই আমার নমস্কার গ্রহণ করে ডিজি স্যারের রুমে ঢুকে চেয়ারে বসেছেন। আমি ডিজি স্যারদের রুমে ঢুকতে গেলেই গত ৭ বছর ধরে তিনি এই একই কাজ করেন। স্যারের কানে কী দেন আমার নামে, আমি জানি না, তবে ফল আমার জন্য ভালো হয় না। এই প্রবীর স্যারের বাড়িও ফরিদপুরের বোয়ালমারী-আলফাডাঙ্গা এলাকায়। তিনিই আমাকে তাঁর এলাকায় পদায়ন করিয়ে এই ৫ বছর নির্যাতন করিয়ে শেষ করতে না পেরে এবার ৫০০ কিমি দূরে পাঠালেন?
.
তখন আমার দিকে ডিজি স্যার তাকিয়ে ধমক দিয়ে পরিচয় জানতে চাইলে আমি পরিচয় দেই। কেন এসেছি জানতে চাইলে মায়ের সসুস্থতার জন্য ছুটির আবেদনের কথা জানাই, আর জানাই অনুমতি নিয়েই এসেছি। তবুও তিনি আমাকে শোকজ দিতে বলে বের করে দেন, রাগের চোটে টেবিল চাপড়ান দুই হাত দিয়ে। আমি হাত জোড় করে সরি বলেও রেহাই পাইনি। সাইফুল আমার গায়ে হাত তুলতে আসলে আমি তাকে সতর্ক করি এবং নিজেই বেরিয়ে আসি। এর মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে ডিজি স্যার তাঁর একক ক্ষমতাবলে একক সাক্ষরে আমাকে ৫০০ কিমি দূরে বদলি করেন। আমার সাথে অচেনা আরও যারা গিয়েছিলো সিসি ক্যামেরা চেক করলে দেখা যাবে জানামতে তাদের আর কাউকে তিনি শাস্তি দেননি।
.
বিষয়টা কি আপনাদের কাছে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে? আমার মনে হয়নি। শুরুতে ভেবেছিলাম এর পিছে হয়তো শুধু সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ স্যার, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাড: সুবল চন্দ্র সাহা, সাবেক কাউন্সিলর তৃষ্ণা সাহা গঙ্গদেরই হাত আছে, কিন্তু পরে আমার ভুল ভাঙল। অনেক জায়গায় ঘুরেও বদলি ঠেকাতে না পেরে ফরিদপুরের বর্তমান মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার আব্দুর রহমান স্যারের কাছে যাই। কয়েক দিনের প্রচেষ্টায় ঢাকায় তাঁর ভবনে ঢুকতে পারলেও, আসলে কাজের কাজ হয়নি। বোয়ালমারী কলেজের এক স্টাফ আমাকে জানায়, কিছুদিন আগে লিটু শরীফ তাকে বলেছিলেন আমাকে যেন সতর্ক করা হয়, আমার নাকি সামনে অনেক বিপদ। আমার ফেসবুক আইডি থেকে নাকি ধর্ম অবমাননার পোস্ট যাচ্ছে। এ কথা সেই সুহৃদ কর্মচারী আমাকে বদলির আগে জানাননি। জানালে আমি নিজে গিয়ে লিটু ভাইয়ের সাথে দেখা করে জানাতাম যে আমার আইডি হ্যাকড হয়েছিলো।
.
যাহোক, মন্ত্রী মহোদয়ের ঢাকার অ্যাপার্টমেন্টে যাওয়ার আগে সকালেই লিটু শরীফকে ফোন করে আইডি হ্যাকের বিষয়টা জানিয়ে ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটানোর অনুরোধ জানালে বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে তিনি আলাপ করবেন বলে জানান। আমি অবাক হয়ে যাই, মন্ত্রী মহোদয়ের বাসায় গিয়ে সেদিনই লিটু ভাইকে পেয়ে। প্রথমে খুশী হই এইভেবে যে ভাই আমার পক্ষে বলবেন, কিন্তু পরে আমার ভুল ভাঙে।
.
আমার বদলির সময় মন্ত্রী মহোদয় হজে ছিলেন। হজ থেকে ফিরে এসেছেন জেনে পরেরদিন সকালেই আমি তখন তাঁর বাসার নিচে অপেক্ষায়। প্রায় ৩ ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকার পর মন্ত্রী মহোদয় নিচে নামলে আমি তাঁর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে আমার বদলির বিষয়টা জানাই, জানাই আমার জমিসংক্রান্ত বিরোধ তাঁর অনুসারী শহর মৎস্যজীবী লীগের আহবায়ক মনতোষ সাহা, শ্রী অঙ্গন গঙয়ের দ্বারা নির্যাতিত হবার কথা। তার কিছুক্ষণ আগেই মাইক্রোবাস ভরে কিছু হুজুর টাইপের লোক এসে মন্ত্রী মহোদয়ের রুম থেকে ফিরে আমার আশেপাশে বসেন। নিচে নামার পর আমার সাথে কথা বলতে বলতে তাঁদেরকে দেখেই মন্ত্রী মহোদয়ের আচরণ পাল্টে যায়। তিনি তাঁদের সাথে কানেমুখে কী কথা বলার পর আমাকে দেখে বলেন, 'ওর তো সমস্যা আছে'।
.
হঠাৎ এমন বদলি, ঘুমহীনতা, দুশ্চিন্তায় অসুস্থ আমি কথাটা মেনে নিয়ে বলি, 'স্যার, কেউই ত্রুটির ঊর্ধে না। আমার ভুল থাকলে শুধরে দিয়ে আমাকে অন্তত অসুস্থ বিধবা মায়ের কথা ভেবে হলেও আমাকে ফরিদপুরে রাখেন'। বোয়ালমারী সরকারি কলেজের কী শুভ পরিবর্তন এনেছি গত ৫ বছরে তা বলতে শুরু করেও শেষ করতে পারিনি। তবে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছিলো না বলায় তিনি লিটু শরীফের দিকে তাকান প্রশ্নের দৃষ্টিতে। লিটু ভাই তা অস্বীকার করেন এবং আমার মিত্র সেজে আমাকে চুপ থাকতে বলেন। তখন মন্ত্রী মহোদয় তাঁর পিওকে দিয়ে বোয়ালমারী বাদে ফরিদপুরের অন্য কোনো কলেজে পদায়নের সুপারিশ করে আমাকে কাগজ দিয়ে সচিবালয়ে তাঁর এপিএসের কাছে পাঠান।
.
কিন্তু সেখানে গেলেও আমার কাজ হয়নি। বরং মন্ত্রণালয়েও আমি দুর্ব্যবহার পেয়েছি মন্ত্রী মহোদয়ের পিএস শাহগীর স্যার, সচিব স্যারের পিওদের থেকে। সচিব স্যারের সাথে দেখা করতে পারিনি তাঁর বিশেষ সহকারীর সাথে দেখা করেও। আমি বুঝতে পারি, স্থানীয় মন্ত্রী মহোদয় অথবা তাঁর হজে যাওয়ার সময়ে তাঁর অনুসারী কাছের কেউই হয়তো আমার বদলি করিয়েছেন। নাহলে এত প্রভাবশালী স্থানীয় মন্ত্রী মহোদয়ের কথা শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় না রাখার কথা না। এটা করতে পারেন ঐ লিটু শরীফ ভাই, যিনি হয়তো আমি যাব শুনে আগেই মন্ত্রী মহোদয়ের ঢাকার বাসায় গিয়ে আগেই আমার নামে ব্রিফ করে আমার বিরুদ্ধে তাঁকে হয়তো খেপিয়ে তুলেছেন এবং উক্ত মাইক্রোবাসে করে ইমাম সাহেব ও স্থানীয় মৌলবাদী ঘরানার লোকদের ডেকে এনে উপরে মন্ত্রীর রুমে গিয়ে আমাকে বদলির কেন করেছে তা জানিয়ে এসেছেন। আবার এমনও হতে পারে যে প্রান্ত সিদ্দিকীকে আমি ছোটভাই ভাবতাম সে আর সভাপতি সৈয়দ তমালও এর পিছে আছে, কেননা Pinaki Bhattacharya - পিনাকী ভট্টাচার্য ফেব্রুয়ারিতে 'মোদির আগা কাইটা আইসেন' শিরোনামে যে ভিডিও প্রকাশ করে, সেখানে আমাকে 'ভারতের দালাল' আখ্যা দিয়ে ভারতে আমার কোটি টাকার সম্পত্তি আছে (১ রুপির সম্পত্তি দেখাতে পারলে উলঙ্গ হয়ে ঘুরবো) বলে কর্মস্থলের মৌলবাদী জামায়াত গোষ্ঠীকে ক্ষেপিয়ে তোলে আমার বিরুদ্ধে, আর এরপর ছাত্রলীগেরই কিছু ছেলে জামাতিদের সাথে মিলে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে থাকে কলেজের উক্ত জামাত মানসিকতার শিক্ষকদের সাথে মিলে আমাকে সরিয়ে দেওয়ার মতলবে।

আমি ধারণা করি, উক্ত মৌলবাদী জ*ঙ্গী গোষ্ঠীর ভোট পেতেই দল ও সরকারের অনেক বড় জায়গার কেউ বা তাঁর অনুসারীদের কেউ হয়তো আমার বদলি করিয়ে থাকতে পারেন বলেই হয়তো দায়িত্বপ্রাপ্তরা আমাকে এভাবে তাড়িয়ে দিচ্ছেন। অথচ আমার যে পরিচিতি আর যে লবিং, আমি যা করতে পারি তা অনেকেই কোটি টাকা দিয়ে করতে পারে না বলে আমার বন্ধুদের বিশ্বাস। তারা মনে করে শুধু সততা নিয়ে প্রতিবাদী থাকি বলেই আর স্থানীয় বিরোধের কারণে আমার এই দুরবস্থা। তাই তখন নিরুপায় হয়ে আমি আবার চেষ্টা করি বোয়ালমারীতে মন্ত্রী মহোদয়ের বাড়িতে দেখা করার। লালমনিরহাটে জয়েন করে এসে ঈদের পর মন্ত্রী মহোদয়ের বাড়িতে যাই মাইক্রোবাস ভাড়া করে মা ও স্থানীয় মুরুব্বি-সাংবাদিক সমাজকে নিয়ে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম দাদা ফোনে সুপারিশ করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বলেন আমি গেলে নাকি মন্ত্রী স্যার আমার কথা শুনবেন। তিনি ফরিদপুরের এই পরিবর্তনে আমার ভূমিকা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সবার আগে আমার লিখিত অভিযোগের বিষয়টি স্মরণ করেন, যার প্রেক্ষিতে আজ সময়ের পরিক্রমায় বোয়ালমারী-মধুখালী-আলফাডাঙ্গায় একজন যোগ্য দক্ষ অভিজ্ঞ মন্ত্রী পেয়েছে।
.
অথচ মন্ত্রী মহোদয় তখন মধুখালীর ঘটনা নিয়ে প্রচণ্ড ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে আমার পায়ে হাত দিয়ে সালামের জবাব না দিয়ে ও ৫ মিনিটও কথা না বলে শুধু আবেদন রেখে দেন। আমাকে স্যার এক সপ্তাহের ব্যবধানে চিনতে পারলেন না দেখে কষ্ট পেয়েছি। তখন ওসি সাহেব আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। পাশে স্যারের ভাগ্নে লিখন ছিলো, ছিলেন পিও সাহেবরা, সিকিউরিটিও। সবাই আমাকে ভালোভাবে চিনেন। তবে তিনি আমার মায়ের এক লাইনের অনুরোধ শুনেছেন। তিনি আমাকে বকাঝকা দেননি, বের করেও দেননি। শুধু আমি যখন বলেছি, 'আমার ভুলত্রুটি থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, ইচ্ছা হলে তদন্ত করে দেখবেন আমি দোষী কিনা'-এর জবাবে তিনি বলেছেন, 'আমি কি বলেছি তুমি কোনো দোষ করছ?' এমনকি ডিসি যার, এসপি সার, ইউএনও স্যার, ওসি সাহেব, গোয়েন্দা সংস্থা সবাই একবাক্যে বলেছেন আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসেনি, তাঁর প্রেক্ষিতে বদলিও হয়নি।
.
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমি যদি কোনো দোষ না করেই থাকি, তাহলে একজন পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী যিনি একই সাথে মন্ত্রী ও সরকারি দলের প্রেসিডিয়াম মেম্বার, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তিনি সুপারিশ করার পরেও কেন এতদিনেও আমার পুনরায় ফরিদপুরে বদলি হলো না? কেন আমার অসুস্থতার সনদেও কাজ হচ্ছে না? তাহলে কি ওই লিটু শরীফ, ইমাম সাহেব, কামরুল স্যার, খুরশীদ স্যার, লিটন প্রিন্সিপাল, প্রান্ত সিদ্ধিকি যে আমার বিরুদ্ধে পোস্টগুলো দেখিয়ে আমাকে সতর্ক করার নামে চাপে ফেলেছিল, সৈয়দ তমাল, স্থানীয় সাংবাদিক তুরান, ভিডিও ক্যামেরা ভাড়া দেয়া জামাতি জাহাঙ্গীর আলম, যে কলেজে গান-বাজনাকে বেলাল্লাপনা হিসেবে দেখিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলো(নিয়া দিগন্তের ফরিদপুর প্রতিনিধি যার ঘনিষ্ট), আমাকে নিয়ে অপপ্রচারকারী তাসফির আহমেদ নীল গং, আমাকে প্রাণনাশের হুমকিদাতা সজীব আহমেদরাই মন্ত্রী মহোদয়ের আশপাশের কারো মাধ্যমে আমার এই সর্বনাশ করিয়েছে, যার জন্য প্রশাসন-পুলিশও আমার প্রতি পজিটিভ হয়েও আমার জন্য কিছু করতে পারছেন না, আমাকে প্রাণনাশের হুমকিদাতার বিরুদ্ধে এস,এম,এসে প্রমাণসহ অভিযোগ পেয়েও তাঁকে গ্রেপ্তার করছেন না, আমাকে আবার ফরিদপুরে আনতে পারছেন না? যে কারণে মন্ত্রী মহোদয় নিজেও মনে মনে বিব্রত কিন্তু নিজ কর্মীদের চাপে আমার জন্য কিছু করতে অপারগ?
.
প্রিয় বোয়ালমারীবাসী আশা করি সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন। কেননা মৌলবাদ-জ*ঙ্গীবাদ, হিন্দুবিদ্বেষ নিয়ে যারা চলে, সৎ-মেধাবি-প্রতিবাদী অফিসারকে যারা বিনা শোকজে 'জনস্বার্থে' বদলি করায়, যাদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ন-দুর্নীতির অভিযোগের কথা শোনা যায়, যারা বোয়ালমারীকে হিন্দুশূন্য করতে চায় আবার কীর্তনে গিয়ে ভোট চায়, যারা বোয়ালমারী সরকারি কলেজে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গান-বাজনা, বইমেলা, পিঠা উৎসব, জাতীয় শোক দিবস পালন, বঙ্গবন্ধুর ছবি কলেজে স্থাপন ইত্যাদি চালুর পিছের কারিগরকে বদলি করে দেয়, যারা চায় উপজেলাকে অস্থিতিশীল করতে, যারা মধুখালীর ঘটনার আগে ও পরে সাম্প্রদায়িক হামলার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিলো, তারা নির্বাচিত হলে ভালো হবে না খারাপ কিছু হবে তা তাঁরাই ভালো বুঝবেন। একটা ভুল সিদ্ধান্ত মধুখালির মতো বা তার বিপরীত ঘটনা বোয়ালমারীতে ঘটানোর পথ প্রশস্ত করে দিতে পারে এবং হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতিতে ফাটল ধরাতে পারে। এই বদলির ফলে আমি মানসিক ও শারীরকভাবে বিপর্যস্ত, ছুটি না পেয়ে ভারত যেতে না পারায় সেখানে আমার কাকিমা বিনা চিকিৎসায় স্ট্রোক করে মারা গেছেন, আমি ও মা চিকিৎসা করাতে পারিনি নিজেদের, আমার বিড়ালের বাচ্চা মারা গেছে বদলি ঠেকানোর চেষ্টায় আমার ছোটাছুটির সময় খেতে না পেয়ে ফরিদপুরে। আমার ফেসবুক পেইজ গায়েব করে দিয়েছে ওরা হ্যাক করে। দুই মাস ধরে বেতন পাচ্ছি না, বেতন চালু করতেও জটিলতা সৃষ্টি করে রেখেছে। আমি চাই না বোয়ালমারীবাসী বা আর কেউ এমন নরক যন্ত্রণা ভোগ করুক। বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, শেখ হাসিনার বাংলায় আমার বিশ্বাস তেমন কিছু আর হতে দেবেন না বোয়ালমারীর অসাম্প্রদায়িক সচেতন ভোটাররা।
জয় বাংলা।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জুন, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯

ঢাবিয়ান বলেছেন: বিশাল পোস্ট। অনেক জটিলতাই বুঝতে পারি নাই। যাই হোক সরকারী চাকুরিতে বদলি, তদবির, পানিশমেন্ট বদলি ইত্যাদি সম্পর্কে ধারনা আছে। আপনার ক্ষেত্রে মনে হচ্ছে সারা দুনিয়াই আপনার শত্রু! আপনার ভাষ্যমতে জামাতপন্থী , এমনকি আপনার নিজ ধর্মের লোকেরাও আপনার শত্রু। আপনাকে এসব কারন বুঝতে হবে। আপনাকে বুঝতে হবে যে আপনি একজন সরকারী চাকুরে , কোন এম্পি না। যারে তারে জামায়াত , মৌলবাদী বলে আপনি পার পেয়ে যেতে পারেন না। আপনার আরো আহাম্মকি হচ্ছে মানুষজনের নাম ধরে আপনি এই পোস্ট দিয়েছেন! । যারা এই লেখা পড়বে তারা কি খুশী হবে তাদের নামে এইসব অভিযোগ পড়ে ?

বিনা পয়সায় আপনাকে কিছু উপদেশ দেই যাতে ভবিষ্যতে নিরাপদে থাকতে পারেন। প্রথমেই ফেসবুক একাউন্ট ডিএকটিভেট করেন। ফেসবুকের কল্যানেই আপনি এক গাদা শত্রু বানিয়েছেন এতে কোন সন্দেহ নাই। লো প্রোফাইলে থাকুন। মানুষের নামে অভিযোগ করা বন্ধ করেন। কথা যত কম , তত কম শত্রু।

২| ০২ রা জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৪৬

এস.এম.সাগর বলেছেন: তৈলবাজ কেউই কমনা!

৩| ০২ রা জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:২২

নতুন বলেছেন: আমিও ঢাবিয়ান ভাইয়ের মতনই বলতে চাইছিলাম যে আপনার লেখা পড়ে মনে হয় সারা দুনিয়াই আপনার শত্রু! আপনার ভাষ্যমতে জামাতপন্থী , এমনকি আপনার নিজ ধর্মের লোকেরাও আপনার শত্রু।

বতর্মানে মানুষ নিজের কাজেই সময় পায় না সেখানে সবাই কেন আপনার পেছনে লেগে থাকে এটা নিয়ে একটু ভেবে দেখতে পারেন।

অনেক সময় আমরা উচিত কথা বলতে গিয়ে অনেকের বিরাগ ভাজন হই। আপনার ক্ষেত্রেও মনে হয় সেটাই হচ্ছে।

মনে রাখতে চেস্টা করবেন সব সময় উচিত কথা বলে জিতে গেলেও পরে তার মাশুল দিতে হয়।

আর আপনি যেই সমস্যার কথা গুলি বলেছেন, সেইগুলির কারন উপরের মানুষগুলি আপনাকে কোন কারনে অপছন্দ করে। কেন করে সেটা বোঝার চেস্টা করুন। আপনি কিন্তু তাদের টাকা পয়শা খেয়ে ফেলেন নাই। তারা আপনার কথায় আপনার উপরে নাখোশ।

মানুষের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকলে আপনি এই সব সমস্যায় পড়তেন না। বরং আপনার মা এর চিকিতসার জন্য আরো সাহাজ্য পেতেন সবার কাছ থেকে।

আপনি রুমীর একটা কথা অনুসরন করে দেখতে পারেন।
" yesterday I Was Clever so I Wanted to Change the World, Today I Am Wise so I Am Changing Myself" - Rumi Quote

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.