নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিক্ষক, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। ফেসবুকে যুক্ত হোনঃ www.facebook.com/dev.d.nipun

...নিপুণ কথন...

সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।

...নিপুণ কথন... › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাতিসংঘে প্রফেসর ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশ। কী আছে কপালে?

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৩৭


বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূস যখন 'ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন' শেষে প্যারিস থেকে দেশে ফিরলেন ক্ষমতা গ্রহণ করতে, তখন তাঁকে বহনকারী বিমানটি দেশের মাটিতে নামার অনেক আগে থেকেই তা লাইভ সম্প্রচার করেছিলো দেশের টিভি চ্যানেলগুলো। কিন্তু আজ ভোরে তিনি যখন জাতিসংঘের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে তাঁর ঘনিষ্ট মিত্র আমেরিকায় গেলেন, যখন কেউ লাইভ সম্প্রচার দূরে থাক, সেই সময়ের কোনো ভিডিওই সম্প্রচার করলো না! অনেক খুঁজে তাঁর সফরের আনুষ্ঠানিকতার কোনো ভিডিও পেলাম না। একটা দেশের সরকার প্রধান জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন কেন, যেকোনো সরকারি সফরে গেলেই বিমানবন্দরের তাঁকে সরকারের মন্ত্রী/উপদেষ্টাসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বিদায় দেন, আবার ফিরে এলে ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেন। এখানে কেন তার ব্যাতিক্রম হলো, বুঝতে পারলাম না। এটা নিয়ে অনেকে জলঘোলা করছে। ভারতের সাংবাদিক তরুণ ঘোষ তাঁর ইউটিউব চ্যানেল National Dialogues-এ তো দাবি করে বসেছিলেন ডক্টর ইউনুস নাকি ভোরে একরকম পালিয়ে গেছেন! শেখ হাসিনা যে বিমানটা নিয়ে যেতেন, তিনি নাকি সেটাও নিয়ে যাননি!!

জাতিসংঘের অধিবেশনে সরকার প্রধান হিসেবে কি কোনো ভাষণ দেবেন ডক্টর ইউনূস? তেমন কিছু জানা যায়নি। ভাষণ দেয়ার সুযোগ পেলে তিনি গোটা বিশ্বের কাছে দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা তুলে ধরার সুযোগ পাবেন। জানা গেছে তিনি অনেকগুলো মিটিং করবেন। সাধারণ অধিবেশনে সরকার প্রধান ছাড়া কেউ ভাষণ দিতে পারেন কিনা তা জানা নেই। তিনি ভাষণ না দিলে অনেকের ধারণাই সত্যি হবে, যারা বলাবলি করছে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি, তাই পদত্যাগপত্র জাতিসংঘে যায়নি, তাই সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনাকেই আমন্ত্রণ জানিয়েছে জাতিসংঘ। যদি তাই হয়, তবে তিনি সেখানে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে নয়, বরং দেশের ক্ষমতা কীভাবে কী প্রক্রিয়ায় তাঁর হাতে গেলো, কারা তাঁকে এই পদে বসাল, তা নিয়ে তাঁর বৈশ্বিক বন্ধুদের ও আন্তর্জাতিক নেতাদের প্রশ্নের জবাব দিতে যাচ্ছেন বলা হতে পারে। একটি সূত্র জানালও, ২৭ তারিখ তিনি ভাষণ দেবেন। আমরাও চাই তিনি ভাষণ দিয়ে বিশ্ববাসীকে আমাদের বর্তমান অবস্থা জানান।

প্রফেসর ইউনূস আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক যে হচ্ছে না, তা অনেক আগে থেকেই নিশ্চিত। বাংলাদেশী মিডিয়া তা জানিয়েছে অনেক পরে, সব রকম চেষ্টা করেও সেটা আয়োজন করা সম্ভব না হওয়ার পর। ভুলে গেলে চলবে না, তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে এখন ডক্টর ইউনুসের রাজনৈতিক দল নাগরিক শক্তির ছাত্র সংগঠন ছাত্রশক্তির নেতা ছাত্র-উপদেষ্টা নাহিদ। নরেন্দ্র মোদী জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনেই থাকছেন না ডক্টর ইউনূসকে মুখ দেখাবেন না বলে-- এমন কথাও বলছে ভারতের কেউ কেউ। তাঁর বদলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস, জয়শংকর সেখানে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন। বাংলাদেশের মিডিয়া বলছে সেখানে ভারত-বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী-উপদেষ্টা পর্যায়ে বৈঠক হতে পারে। জয়শংকরকে বলা হয় ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। তাই এটা নিশ্চিত, মোদির কথার বাইরে তিনি কিছু বলবেন না ও করবেন না। তাই, এই বৈঠকের পর ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের উন্নতির সম্ভাবনা নেই। এমনকি ইলিশ দিয়েও নেই, কারণ ভারতীয়রা বলছে তারা গঙ্গার ইলিশ খাবে, অন্য প্রদেশ থেকে এনে খাবে, কিন্তু পদ্মার ইলিশ খাবে না। কারণ, ইলিশ নিয়ে অনেক খোটা তাদেরকে দিয়েছে অনেক বাংলাদেশী। খোদ মৎস্য উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার (ফরহাদ মজহারের 'স্ত্রী' ) ইলিশ নিয়ে কম খোঁচা দেনননি ভারতকে! টাকা দিয়ে কিনে খোটা শুনবে কেন তারা? কেউ না খেলে, এই ইলিশ এত টাকা দিয়ে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা কিনবে কেন? সুতরাং রাজনৈতিক মাছ ইলিশঘেষা ডিপ্লোম্যাসি এবার মাঠে মারা যাচ্ছে।

আমেরিকায় ডক্টর ইউনূস অনেকগুলো বৈঠক করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। তার মধ্যে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে তাঁর বৈঠক নিয়ে বাংলাদেশের মিডিয়ায় খুব শোরগোল হচ্ছে। এই বৈঠককে এক অতি বিরল দৃষ্টান্ত বলা হচ্ছে দেশই মিডিয়ায়। জাতিসংঘের অধিবেশনের ফাঁকে জো বাইডেনের সঙ্গে কিছুক্ষণ বৈঠক করবেন ডক্টর ইউনূস। সেটা তিনি প্রধান উপদেষ্টা না হয়েও করতে পারার কথা। কেননা তাঁর ঘনিষ্ট বান্ধবী হিলারি ক্লিনটনের দলেরই নেতা বাইডেন। অনেকে বলে, তাঁরাই তাঁকে নোবেল ও এই পদ দিয়েছেন। অবশ্যই সেটা অনেক বড় সক্ষমতার পরিচয়, আর কোনো বাংলাদেশীর এই সক্ষমতা আছে বলে আমার জানা নেই। অপরদিকে যে নরেন্দ্র মোদী ডক্টর ইউনূস-এর সাথে দেখা করতে চাইছেন না, তিনি বাইডেনের নিজের গ্রামের বাড়িতে ঢুকে (হোয়াইট হাউজ না) বাইডেনের রুমে তাঁর সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নিয়েছেন! এ এক জটিল পরিস্থিতি! ঘরে ঢুকে বেশিক্ষণ আলাপ করা যায় আন্তরিক পরিবেশে, যা অফিসিয়াল পরিবেশে অধিবেশনের ফাঁকে সেভাবে সম্ভব না। তবে কি ডক্টর ইউনূসের চেয়ে নরেন্দ্র মোদীকে বেশি আপন ভাবছে এখন ওয়াশিংটন? জেনে রাখা ভালো, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য ভারতকে স্থায়ী ৫টা দেশের পর ৬ষ্ঠ দেশ বানাতে চাইছে আমেরিকা। সেজন্য ভারতকে ভোট দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। দুমাস পরেই আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সেখানে বাইডেন এবার লড়ছেন না। যদি রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতেন, তবে ভারতের বিজেপির তথা নরেন্দ্র মোদির তথা ইসরায়েলের লাভ এবং মুসলিম দেশগুলো ও ফিলিস্তিনের কপালে ভাঁজ। যদি কমলা হ্যারিস জিতেন, তাহলে ভারতের লাভ। কারণ কমলা হ্যারিসের মা ভারতীয়। কাজেই, দুই মাস পর ভারতের দ্বারা চতুর্মুখী চাপে পড়তেই পারে ডক্টর ইউনূসের সরকার। এমনকি হতে পারে ইনভেশনও!

কী প্রক্রিয়ার ক্ষমতায় এলেন-- এমন প্রশ্নের জবাব দিতে দিতেই অনেকটা সময় চলে যাবে ডক্টর ইউনূসের সফরের। ধারণা করছি, তিনি বলবেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে 'স্বৈরাচারী' হাসিনার পলায়নের পর তাঁকে ছাত্র-জনতা এই পদে বসিয়েছেন। তখন অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারে এটা সংবিধানসম্মত উপায়ে হয়েছে কিনা, সংবিধানমতে তাঁরা নিয়োগ দিতে পারে কিনা, ৫ অগাস্ট সরকার পতনের সাথে ৬ অগাস্ট তাঁর মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণা আটকে যাওয়া ও মুক্তিপ্রাপ্তির কোনো যোগ আছে কিনা, দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন, তা কেন নিয়ন্ত্রণে নেয়া যাচ্ছে না, এটা কি সরকারের ব্যর্থতা কিনা, অর্থনৈতিক অবস্থা, জিডিপি-রিজার্ভ-লোন নিয়েও প্রশ্ন আসতে পারে। প্রশ্ন আসতে পারে CIA, IS নিয়ে, পাকিস্তানের সাথে পারমাণবিক চুক্তির সম্ভাব্যতা নিয়ে, রাশিয়া-ভারতের লোন পরিশোধ নিয়ে, সেন্টমার্টিন দ্বীপে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি নিয়ে। এসব প্রশ্নের জবাবের উপর নির্ভর করছে এই সরকারের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা কেমন হবে তা। আশা করি নোবেলজয়ী প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ ডক্টর ইউনুস সেসব জবাব প্রস্তুত করেই নিয়েছেন।

কেননা বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় আমেরিকার একক আধিপত্য এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। রাশিয়া তার ও তার মিত্রদের সরাসরি বিরুদ্ধে গিয়ে যুদ্ধ করেও বহাল তবিয়তে আছে। চীন তো সমানে সমান টেক্কা দিচ্ছে! ভারত এখন বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ সামরিক পরাশক্তি। পাকিস্তান নিজেদের রুটি জোগাড় করতেই ব্যস্ত, ভিসা ফ্রি করে দিয়ে হলেও বাংলাদেশীদের সেখানে নিয়ে ভারতের ট্যুরিজম ব্যবসা দখল করে নিজের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে চাইছে। তাই, যুদ্ধ বা সংকটে পড়লে আমেরিকা-পাকিস্তানের পক্ষে বাংলাদেশকে সাপোর্ট দেয়ার আগে এই অঞ্চলে ভারত-চীন-রাশিয়ার ভূমিকাই আগে কার্যকর হয়ে যেতে পারে একাত্তরের মতো। বলা যায় জাতিসংঘের এই অধিবেশনেই বাংলাদেশের ভাগ্য অনেকটা নির্ধারিত হয়ে যাবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.