নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিক্ষক, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। ফেসবুকে যুক্ত হোনঃ www.facebook.com/dev.d.nipun

...নিপুণ কথন...

সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।

...নিপুণ কথন... › বিস্তারিত পোস্টঃ

কান্তিবন্ধুর জন্য এবারও বর্জন করতে হচ্ছে রামকৃষ্ণ মিশনের অনুষ্ঠান।

০১ লা মার্চ, ২০২৫ রাত ১:৩৫



কান্তিবন্ধুর কারণে এবারও বর্জন করতে বাধ্য হলাম রামকৃষ্ণ মিশনের অনুষ্ঠান।

রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম, ফরিদপুরে গিয়েছিলাম বিকেলে। প্রতি শুক্রবার ওখানকার চিকিৎসালয়ে মাকে বসতে বলেছে, তাই। কিন্তু এখনও চেম্বার খোলেনি বলে মা শুধু ঘুরেফিরে প্রার্থনা করে চলে আসে। ফরিদপুরে থাকলে আমিও সাথে যাই। আজ গিয়েই দেখি ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের জন্মতিথি উপলক্ষ্যে মন্দিরের সামনে ব্যানার টানানো। আগামীকাল একদিনের অনুষ্ঠান। প্রতিবার ৩ দিন হলেও এবার একদিনের, তাও অর্ধবেলা। ৫ মাস ধরে বেতন পাই না। তবুও মন চাইলো প্রতিটি অনুষ্ঠানের মতো এবারও সাধ্যমতো দান করি পূজার কাজে। তাই করলাম।

এরপর সন্ধ্যার প্রার্থনায় অংশ নিলাম, ঠাকুরের গান শুনলাম। তারপর খিচুড়ি প্রসাদ খেয়ে ফেরার পথে অনুষ্ঠানের কার্ডটা চেয়ে নিলাম এবং কথা দিয়ে এলাম যে আগামীকাল ভোরের থেকেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবো। কিন্তু বাড়ি ফিরে কার্ডটা খুলে দেখি এবারও তারা মুখ্য আলোচক হিসেবে রেখেছেন মহানাম সম্প্রদায় বাংলাদেশের সভাপতি কান্তিবন্ধু ব্রহ্মচারীকে। গতবার যার জন্য আমরা অনুষ্ঠান বর্জন করেছিলাম ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে। কান্তিবন্ধু রামকৃষ্ণ মিশনের বড় মহারাজের ঘনিষ্টজন এবং ফরিদপুরের হিন্দু সমাজে তার অনেক প্রভাব।

২০০৮ সালে আমার বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট কমল কৃষ্ণ গুহ ওরফে কবি বাবু ফরিদীর রহস্যজনক অকালমৃত্যু হয় শ্রী অঙ্গন দক্ষিণ পল্লীতে। আমি নাবালক থাকায় ও আত্মীয়-স্বজন হেল্প না করায় পোস্টমর্টেম করতে পারিনি। ২০১৯ সালে আমাদেরকে বাপের ভিটা থেকে চলে যাওয়ার জন্য চিঠি দেয় শ্রীঅঙ্গন কর্তৃপক্ষ। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কথা বলে ও শ্রী অঙ্গনের আর্থিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে থাকায় দুজন কাজের মহিলাকে ২০+২০= ৪০ হাজার টাকা দিয়ে মেয়েঘটিত মিথ্যা অভিযোগ দেওয়ায় তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বন্ধুসেবক ব্রহ্মচারীর বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে মিটিংয়ে তাঁকে নির্যাতন করা হয় বলে জানা যায়। এরপর তাঁর কক্ষ থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার হয় এবং একে 'গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা' বলে চালিয়ে দেয়া হয়। অথচ লাশের গলার দাগ আত্মহত্যার মতো ছিলো না, পা মাটিতে ছিলো, জিহ্বাও বের হয়েছিলো না। সেবক বন্ধু পঞ্চগড় বাড়ি হলেও ছোট থেকেই ফরিদপুরে, এল,এল,বি পাশ ছিলেন, অথচ প্র‍্যাক্টিস করতেন না, সংসারী হননি। প্রকৃত সাধু ছিলেন তিনি। আমাদেরকে ভিটা থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদে তিনি বাধা দেন। আমি তাঁকে 'মামা' ডাকতাম, যেহেতু আমার মা শ্রী অঙ্গনের দাতব্য চিকিৎসালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ১৯ বছর ডাক্তার ছিলেন, মাত্র ৫০০ টাকা মাসিক বেতন ও ৫ টাকা রোগীপ্রতি ভিজিটে শুধু ওখানেই রোগী দেখতেন, বাইরে চেম্বার করেননি কোনোদিন।

এরপর আমি অনেক কষ্টে কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়ে এসে ডিসি-এসপি স্যারদের সাথে দেখা করি, এর সুষ্ঠু তদন্তের ও বিচারের দাবি জানাই। ফেসবুক লাইভে এর প্রতিবাদ করি, ফলে সারা বিশ্ব এটা দেখে। নিউজ হয় বিভিন্ন মাধ্যমে। বারবার লাশ গুম করার চেষ্টা হয়। আমার নেতৃত্বে বিক্ষুব্ধ ভক্তরা তা রুখে দেয়। এরপর প্রশাসন-পুলিশের হস্তক্ষেপে লাশটা শ্রী অঙ্গনেই ধর্মীয় মতে সমাধিস্থ করতে বাধ্য হন তারা এবং শ্রী অঙ্গনের কমিটি ভেঙে দেয়া হয়। এরপর প্রশাসনের চাপে কান্তিবন্ধু বাদি হয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা দিলেও ভালোভাবে কেস চালাননি, ফলে মূল অভিযুক্ত বিজ্ঞানবন্ধু ছাড়া পেয়ে যায় এবং কিছুদিন জেলে থেকে বেরিয়ে এখন আবার সাধু হয়েছে! আমার এই প্রতিবাদের পর আমার বিরুদ্ধে চাকরিতে বিভাগীয় মামলা রুজু হয় এবং তিরস্কার দণ্ড দেওয়া হয়, বেতন বন্ধ থাকে টানা ১ বছর। চাকরি স্থায়ীকরণে ৩ বছরের জায়গায় ৭ বছর লাগে। এখনও শ্রী অঙ্গন আমাদের জমি দখলে রেখেছে এবং আমাদেরকে উচ্ছেদের চেষ্টায় বারবার বদলি, হামলা, নির্যাতন ইত্যাদি করেই যাচ্ছে। মায়ের উক্ত চেম্বার ২০১৯ সালেই বন্ধ করে দিয়েছে। শ্রী অঙ্গন দক্ষিণ পল্লী পূজা মন্দিরের মন্দিরভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্রটিও বন্ধ করে দিয়েছে, যেখানে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ২০১৯-এ বন্ধ হওয়া পর্যন্ত মা অনেক সততা ও যত্ন সহকারে শিক্ষকতা করেছে। আমাদেরকে শ্রী অঙ্গন দক্ষিণ পল্লীতে বিনা অপরাধে এখনও একঘরে করে রেখেছে, পূজা-বিয়েতে অংশ নিতে দেয়া হয় না। আমরা অনেক কষ্টে এখানে টিকে আছি। কতকাল পারবো আর, জানি না।

বাবার রহস্যজনক অকালমৃত্যুর তদন্তের জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানালেও ২ বছরেও তার কোনো অগ্রগতি নেই। এ বিষয়ে কি কেউ আমাকে হেল্প করতে পারবেন? তাহলে ইনবক্সে জানাবেন। আমি প্রশাসনের তথা ডিসি স্যারের কাছে ও সরকারের কাছে এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।

উপরে উল্লিখিত সবকিছুই হয়েছে কান্তিবন্ধু সভাপতি থাকা অবস্থায়। তাই তিনি এর দায় এড়াতে পারেন না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি কান্তিবন্ধুকে যেখানে রাখবে, আমি সেখানে যাব না। শ্রী অঙ্গনেও জগদ্বন্ধু সুন্দরের কাছে যাই না অনেক বছর, দূর থেকেই প্রণাম করি।

অথচ আমার সমাবর্তনের সময় ২০১৩ সালে তাকে ঢাবিতে পেয়ে সবার সামনে পা ছুঁয়ে প্রণাম করে মঞ্চে নিয়ে গিয়েছিলাম, 'দাদু' ডেকে কত শ্রদ্ধাই না করতাম! বাবা মরার পর তিনি আমার মাকেও আমিষ খাওয়া বাদ দিতে বলেন মালা দিয়ে! সেই থেকে আমার মা অপুষ্টিতে ভুগছে, কয়েকবার মাথা ঘুরেও পড়েছে। কারণ আমি ঢাকায় তখন, একা বাড়িতে মায়ের রান্না করতে ইচ্ছা করতো না। শ্রী অঙ্গনের স্টাফদের জন্য যে মানের খাবার থাকতো তা আজকাল ভিখারিও খায় না। অনেক কষ্টে নিজ যোগ্যতায় কোটা ছাড়া একটা চাকরি পেয়েছি, তাও শান্তিতে করতে পারছি না। যেখানেই পাঠায়, সেখানেই এরা যোগাযোগ করে আমার কাজ করা ও টিকে থাকা দুষ্কর বানিয়ে ফেলে। আমার বিশ্বাস গত হামলাতেও এদের ইন্ধন ছিলো। কারণ হামলাকারীরা বলছিলো আমি নাকি নাস্তিক, ফরিদপুর থেকেও নাকি কমপ্লেইন গিয়েছে! পূজার নামে ডিজের অত্যাচার ও শব্দদূষণ করার প্রতিবাদ করলে যদি আমি নাস্তিক হই, তাহলে আমি তা-ই। নটরডেমে পড়ার সময় রামকৃষ্ণ মিশনের হোস্টেলে থাকতাম। তখনও সব প্রার্থনায় সময়মতো থাকতাম, এখনও থাকি। লালমনিরহাট সরকারি কলেজে আমি না থাকলে এবার সরস্বতী পূজা এতটা সুন্দর হতো না বলে অনেক ছাত্রছাত্রীর মত। রাত ৩টা পর্যন্ত পূজামন্দির পাহাড়া দিয়েছি, আবার ভোর থেকে পূজা ও অনুষ্ঠানের শেষ পর্যন্ত ছিলাম। তবুও আমি নাস্তিক?

রামকৃষ্ণ মিশনের জন্য শুভকামনা।
জন্মতিথির আয়োজন সুন্দর ও সাফল্যমণ্ডিত হোক আমাদের ছাড়াই।
দেব দুলাল গুহ
[গতবারের পোস্টের লিংক কমেন্টে]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.