![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
উদাস চোখে সোহেল বাসার কাছের চায়ের দোকানে বসে ছিল। তার চোখ বলে দিচ্ছে সে চিন্তায় ডুবে আছে। এসময় রহমান তার হোন্ডায় চড়ে হাজির হয় সাথে উঠতি দুই তরুনকে নিয়ে। ঘোড় কাটে সোহেলের। রহমান এবার দলের সভাপতি হতে চায় সোহেল জানে আর সোহেল এসব ছেড়ে দিয়ে একটা চাকরি-বাকরি করে বউ আর মেয়েটাকে নিয়ে সুখের সংসার করতে চায়।
রহমান কাছে আসে না দূর থেকে সোহেলকে ডাকে। আস্তে আস্তে সোহেল হেটে যায় রহমানের কাছে। রহমান খুব আস্তে কিন্তু স্পষ্ট ভাষায় বলে, তুমি তো ভাই এর খুব কাছের লোক কাজেই সভাপতি তো তুমিই হবা তাই না ? আমারে তোমার পরের পোস্ট টা দিও। সোহেল জোর করে হাসার চেষ্টা করে আর বলে, “ আমি কোন পোষ্ট নিচ্ছি না। আমি সব ছেড়ে দিবো।
হেসে ওঠে রহমান মিয়া পোষ্ট পাবা তাতে এত লুকোচুরির কি আছে। যাই হোক আমাদের দিকেও একটু নজর রাইখো বলেই সে তার হোন্ডায় উঠে চলে যায়।
সোহেল তার বাসার দিকে হাটতে শুরু করে। গেট খুলে ঢোকার সাথে সাথে ছোট্ট নিপা ছুটে এসে দু’হাত বাড়িয়ে দেয় কোলে তুলে নেয়ার জন্য। সোহেল কোলে তুলে নেয়। আর পকেট থেকে বের করে তাকে সাফারি চকলেট দেয়।নিপা প্রতিবাদ করে বলে, বাবা তুমি জানো না আমি এখন সাফারি খাই না, তুমি আমার জন্য কিটক্যাট নিয়ে আসবে ঠিক আছে? সোহেল হেসে দিয়ে বলে মারে আমার ভুল হয়েছে। একটু পরে বাইরে যাবো আসার সময় নিয়ে আসবো ঠিক আছে? নিপা খুশি হয়ে কোল থেকে নেমে খেলতে যায়।
সোহেল শোবার রুমে ঢুকে দেখে তার স্ত্রী আশা যেন কি করছে। তাকে বলে যে, আমি একটু বের হচ্ছি। আশা তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে। আর বলে, বের তো হবেই। নিশ্চই যাচ্ছো তোমার ভাই এর কোন কাজ করতে। কোনদিন তো আর শুনতে পারবো না যে, আশা আমি অফিসে যাচ্ছি।
সোহেল কিছুই বলে না। সে চুপচাপ রেডি হয়ে বের হয়ে যায়। বের হওয়ার সময় নিপা মনে করিয়ে দিলো তার চকলেটের কথা।
সে সত্যিই ভাই এর বাসায় যাচ্ছে তবে আজ আর আগের কারণে না অন্য কোন কারণে।
বেল বাজানোর পর ভাই নিজেই গেট খুলে দিলেন এবং সোহেলকে দেখে কিছুটা অবাক হলেন। ভেতরে আসতে বললেন। সোহেল চুপ করে বসে থাকতে দেখে ভাই জিজ্ঞেস করলো, কিছু বলবি তুই? সোহেল একটু আস্তে করে কিন্তু এক নিঃশ্বাসে বলে গেলো, ভাই আমি আর রাজনীতি করতে চাই না। চাচ্ছি একটা চাকরি-বাকরি করে বউ আর মেয়েটাকে নিয়ে বেঁচে থাকতে কোনরকম। ভাই এসে তাকে বললো তুই এই কথা আগে বললেও পারতি। ভাই উঠে গেলেন ভেতরে। সোহেলের মনের মধ্যে খচখচ করছিল ভাই কিছু না বলেই রাগ করে মনে হয় চলে গেলেন।
একটু পর ভাই ফিরে আসলেন হাতে একটি ভিজিটিং কার্ড নিয়ে। সেটা হাতে দিয়ে বললেন এখানে কাল গিয়ে দেখা করিস আমি বলে দিয়েছি। তোর একটা কাজের ব্যবস্থা ওরা করে দিবে। আর এই টাকাটা রাখ কয়েকটা দিন চলতে তো হবে।
সোহেল কিছুই যেন বলতে পারলো না। সম্মহোনের মত হাতে নিলো আর বলল, আমি কি চলে যাবো বাসায় তাহলে এখন?
বড় ভাই বললেন, রাতে আমার সাথে খেয়ে যা। তখন সোহেল বলল, আজ আশা আর নিপার সাথে খেতে চাচ্ছি ভাই। বড় ভাই শুধু হাসলেন।
সোহেল বের হয়ে মিষ্টি আর নিপার জন্য চকলেট কিনলো। মিষ্টিটা আশার হাতে দিইয়ে চাকরির কথা বললে মেয়েটা অনেক খুশি হবে।
বাসার কাছাকাছি আসতেই হঠাৎ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একটি গাড়ি তাকে আটকায়। তুলে নেয় তাকে গাড়িতে। নিয়ে যায় শহরের বাইরে নির্জন এলাকায় চোখ বেঁধে। চোখ খোলার পর সে সেখানে রহমানকেও দেখে। রহমান তাকে বলে, ভাইরে তুই বললি রাজনীতি ছাইড়া দিবি তাহলে ভাই এর বাসায় গেছিলে ক্যান বল। তুই বাঁইচা থাকলে আমার মনের ইচ্ছা পূরন হবে না। সোহেল অনেক কিছুই বলতে চায় কিন্তু তার কথা কেউ শনে না। আবারও তার চোখ-মুখ বেঁধে ফেলা হয় এবং সে শোনে তাকে কোথায় মারা হবে আর কি সাজানো হবে। তার মাথায় এগুলো কাজ করছে না তার চিন্তা মেয়েটাকে সে কথা দিয়েছিলো সেই কথাটা সে রাখতে পারলো না। সে ভাবছে আশাকে সত্যিই কোনদিনও বলা হলনা তার চাকরি হয়েছে।
আধা ঘন্টা পর টিভিতে স্ক্রল উঠতে লাগলো “আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর সাথে বন্দুক যুদ্ধে শীর্ষ সন্ত্রাসী সোহেল নিহত।” আশা স্থির হয়ে বসে রইলো আর তার দু’চোখ দিয়ে শুধু জল গড়িয়ে পরতে লাগলো। আর নিপা বসে আছে তার বাবার ঘরে ফেরার অপেক্ষায়। সে জানে তার বাবা তার জন্য কিটক্যাট নিয়ে আসবে কারণ তার বাবা যা বলে তাই করে সবসময়।
©somewhere in net ltd.