![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আগে দু’টি ঘটনা বলি।দু’টি ঘটনাই আক্রন্ত দুই নারীর মুখে শোনা।তবে আমি এখানে ছদ্মনাম ব্যবহার করছি।
ঘটনা ১: নীলক্ষেত থেকে ফাল্গুন বাসে উঠেছে তামান্না। উদ্দেশ্য রামপুরাতে যাবে। সারাদিন ক্লাশ করে সে খুব ক্লান্ত থাকায় জ্যাম ঠেলে বাস ঢাকা কলেজ পাড় হবার আগেই ঘুমিয়ে পরে। সে ঘুমের ভেতরেই অনুভব করে কেউ তাঁর কোমরে এবং আরও স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেয়ার চেষ্টা করছে। প্রথমে ক্লান্তির ঘুমের কারণে না বুঝলেও একটা সময় বুঝে এক লাফে উঠে যায়। এবং তাঁর ঠিক পেছনে বসে থাকা মানুষের মত দেখতে পুরুষ সেজে বসে থাকা লোকটিকে জোরে ধমক দেয় । এবং অনেকটা কেদেই ফেলে তামান্না। লোকটি উল্টো প্রতিবাদ করে বাস থেকে নেমে যায়। কেউ তাকে একবার আটকায়ও না আর কেউ কিছু বলেও না।
ঘটনা-২: রোমানা অফিস শেষ করে আজীমপুর থেকে ১৩ নাম্বার বাসে করে করে মোহম্মদপুর বাসায় ফিরছিলো। আজীমপুরেই তাঁর পাশে বেশ ইয়াং এবং দেখতে বেশ ভদ্র ছেলে ওঠে(রোমানার ভাষায়)। ছেলাটা এক মিনিট পরেই ঠিক রোমানার পেছনের সিটে গিয়ে বসে। রোমানা হুট করে একটু পরে টের পায়, পেছন থেকে কেউ একজন সিটের নীচ থেকে স্পর্শকাতর অংশ হাত দেয়ার চেষ্টা করছে। প্রথমবার নড়ে বসলেও, দ্বিতীয়বার সে ঘুরে সেই ছেলেটিকে ধমক দেয়। সাথে সাথে বাসের অন্যান্য লোকজনও ছেলেটিকে আটকায়। আর চড়-থাপ্পর দিয়ে ছেলেটিকে মাফ চাইয়ে বাস থেকে নামিয়ে দেয়। আজও রোমানা অফিস থেকে ফিরছিলো। সাইন্সল্যাব থেকে হঠাত করেই সেই ছেলেটি ওঠে। এবং একবারেই রোমানা চিনে ফেলে। এবং ছেলেটিও চিনে ফেলা এবং পুরাটা পথ খুব বাজে ভাবে তাকিয়ে থাকে রোমানার দিকে। ঝিগাতলার পর বাস খালি হলে ঠিক রোমানার পেছনের সিটেই এসে বসে ছেলেটি । এবং একইভাবে আজকেও কিছু করার চেষ্টা করার সাথে সাথে রোমানা ঘুরে ওকে থাপ্পর দেয়। এবং চিৎকার করে বলতে থাকে। কিন্তু পুরো বাসের মানুষ নির্বাক বসে ছিল আর ছেলেটি নিরপদে নেমে চলে যায়।
ঘটনা দুটি একবারেই বাস্তব। আমার বানানো কোন গল্প নয়জরায় কাছাকাছি ঘটনা ঘটতে অনেকেই দেখছে মোহম্মদপুর থেকে উত্তরায় যাওয়া ভুঁইয়া পরিবহনে। আমাকে দ্বিতীয় ঘটনার ভিকটিম জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা এদেরকে কি অপরাধে পুলিশে দেয়া যায়? আমি চিন্তা করলাম , পুলিশে দিলেই কি পশু মানুষ হয়ে যাবে? তাহলে তো আমাদের যে প্রানী ভালো লাগে তাকেই ধরে পুলিশে দিয়ে মানুষ করে ফেলতাম।
এদের মানুষ নাহয় পরে করি । আগে আমাদের মানুষ হওয়ার ঘটনায় আসি। তিনদিনের ঘটনায় একদিন মানুষ প্রতিবাদ করেছে। তাও খুব সাধারণ নিউমার্কেটের দোকানদাররা। কারণ রাতে ১৩ নাম্বার বাসে সাধারণত আসে নিউমার্কেট ও আশেপাশের এলাকার দোকানদাররা। অন্য বাস দুটি তে সাধারণত চলেন আমাদের সমাজের তথাকথিত ভদ্রলোকরা। যারা সারাদিন শেষ অফিস থেকে বাসায় এসে টিভিতে ধর্ষণের নিউজ পরে আর বলে, “দেশটা শেষ হইয়া গেলো। অবশ্য মেয়েদেরও পোশাক ঠিক নাই।তাই এমন হয়।”
কিন্তু বিশ্বাস করেন যে মেয়ে দুইটার কথা বলছি, এদের কোন দিন আমি দেখি নাই এমন কোন পোষাক পরতে তাতে খুব যৌণ উত্তেজনা জাগে। আসলে আমাদের এই ভদ্রলোকেরা একজনও ভদ্র না সব ভদ্রলোক সাইজা বইসা থাকে। না কেউ এদের বউ আর মেয়ের সাথে খারাপ কিছু করে ততক্ষণই এরা ভদ্রলোক সাইজা বইসা থাকে। প্রতিটা ক্ষেত্রে এরা ভাবে, এটা তো আমি বা আমার কারো সাথে হয়নি। আমি এখানে কিছু বলবো ক্যান?
কিন্তু এরা একবারও ভাবে না, আজ যদি এরা এই পশুটাকে শাস্তি দেয়। সবাই মিলে আওয়াজ তোলে তাহলে কাল এরা তাঁর মেয়ে, বউ এর সাথে কিছু করার সাহস পাবে না।
আর এই পশুগুলোর কথা কি আর বলবো!! একবার মহাখালী পাড় হচ্ছিলাম সাইকেলে। ৩/৪টা ছেলে আমার পাশেই দাড়ুয়ে আছে। একটা মেয়ে রাস্টা পাড় হচ্ছিলো। তাদের একজন মেয়েটার বুকে একটা ধাক্কা দিলো। আর তাতেই তাদের সেকি আনন্দ। আমি হাইসা বললাম, কি একটা ধাক্কা দিয়াই অর্গাজম হইয়া গেছে ভাই? এই পুরুষত্ব? তারা ৪ জন থাকলেও আমার কথার না প্রতিবাদ করেছিল না কিছু করার সাহস পেয়েছিল । তারা পালিয়েছে দ্রুত। অন্যাকারী ১০০ জন হলেও আপনি একা ঘুড়ে দাঁড়ান, দেখবেন তারা না পালাক। ধাক্কা খাবে।
আমাদের দেশে প্রায় ২০ কোটি মানুষ। ধরলাম এই খারাপের মানুষগুলার সংখ্যা ২ কোটি। কিন্তু আমরা ১৮ কোটি ঘুরে দাঁড়ালে, এরা কি টিকতে পারবে? পারবে না। কিন্তু পারছে কারণ তারা এক হয়ে অন্যায় করছে আর আমরা ১৮ কোটি মানুষ ভদ্রলোক সাইজা বইসা আছি। আমরা ভদ্রলোক যতক্ষণ না কেউ আমার পুচ্ছদেশে লাথি দেয় , ততক্ষণ আমি কিছুই বলি না।
অনেক আগে, আমরা একটা গ্রুপ খুলে একটা সিদ্ধান্ত নিছিলাম। আমরা যারা ভালো কিছু করতে চাই, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করতে চাই। তারা এক হয়ে চাঁদা তুলে বাঁশি আর লাল রুমাল কিনবো। যেখানেই এমন অন্যায় দেখবো, সেখানেই আমরা বাঁশি বাজিয়ে লাল রুমাল উড়াবো। কিন্তু প্রজেক্ট সফল হয়নি। কারণগুলো ছিল, কেউ বলেছে এটা অন্য একজনের আইডিয়া আমরা এটায় কেন আমরা কাজ করবো? কেউ বলেছে এত সহজ নাকি ? আবার কেউ বলেছে বাঁশি বাজানোর পর অন্য কেউ যদি পাশে না থাকে উল্টা বিপদ হবে। আসল কথা আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেই চাই না, তাই সাহস করে ভালো কাজটাও শুরু করতে পারি না। আর তাই এমন পশুগুলো সাহস পাচ্ছে প্রতিদিন সুন্দর সমাজ নষ্ট করার। প্রতিদিন এমন পশু জন্ম নিচ্ছে এসমাজে। যাদেরকে আমরা পুরুষ আর মানুষ বলি।
২| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৫৪
আশফাক ওশান বলেছেন: আসল কথা আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেই চাই না
৩| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:১৩
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: আমরা খুব দ্রুত নষ্ট জাতিতে পরিণত হচ্ছি। ধর্মীয় বিষয়ে উদাসীনতা এর অন্যতম কারণ...
৪| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪২
কালীদাস বলেছেন: মানবজাতির বিশেষত বাংলাদেশিদের মব সাইকোলজি বোঝা সম্ভব না। চেতনা জাগ্রত থাকলে ২টাকার মরিচ চুরির জন্যও পিটিয়ে মানুষ মেরে ফেলি আমরা, আবার ধর্ষণের শাস্তিতে মৃদু ধমক দিয়ে ছেড়ে দেই। আমরা হিপোক্রেট, এজন্যই বলি।
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:০৭
মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: সবার নিজের জায়গা থেকে এই একটু একটু প্রতিবাদই একসময় এই সমাজটাকে পাল্টে দিবে