নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জন্মের সময় আমি খুব কেঁদেছিলাম, এখন আমার সবকিছুতেই হাসি পায়। আমি জন্মের প্রয়োজনে ছোট হয়েছিলাম, এখন মৃত্যুর প্রয়োজনে বড় হচ্ছি ।

আজ আমার হারিয়ে যেতে নেই মানা।।

নির্লিপ্ত কাব্য

নির্লিপ্ত কাব্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

“ঘরে ফেরার গল্প”

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:২৮

এই রোশান উঠো! এত বেলা পর্যন্ত কেউ ঘুমায়? আমি সেই কখন থেকে তোমার জন্য বসে আছি। এবার উঠনা প্লিজ!!

কে গো তুমি অপ্সরী ? এই আধাঁর না কাটা ভোরে আমার ঘুম ভাঙ্গাতে মরিয়া হয়ে উঠিলে?

হি হি হি……আমি তোমার স্বপ্নপরী। দেখো আজ আমি শাড়ি পরেছি। হাতে কাচেঁর চুড়ি। গোপায় বাসি বেলী ফুল। বাসি ফুলের গন্ধ পাচ্ছ না তুমি?

না আমি তোমার বাসি ফুলের গন্ধ পাচ্ছি না। কিন্তু কেনো পাচ্ছি না তুমি জানো ?

হুম জানি। তুমি গন্ধ পাচ্ছনা কারন স্বপ্নে কোনো গন্ধ পাওয়া যায়না।

ও! আচ্ছা তুমি বারবার আমার স্বপ্নে কেনো আসো ?

হি হি হি…… কারন আমি যে তোমার স্বপ্নপরী তাই আসি। ওমা! অনেক ক্ষন কথা বলে ফেলেছি। আজ আমি যাই ?

ঠিক আছে। কিন্তু আবার কবে আসবে ?



ঐ শালা উঠ। তুর্য্য এসে রোশানের স্বপ্নের ব্যাঘাত ঘটাল। স্বপ্নপরী আবার কবে আসবে রোশানের জানা হলনা।

তুর্য্য বলল শালা তুই না সাথে মোবাইল আনিস নি। তাহলে এতক্ষন কথা বললি কিভাবে ?

দোস্ত সি ইজ মাই স্বপ্নপরী। তার সাথে কথা বলতে মুঠোফোন লাগে না। আমি ঘুমালেই তার সাথে কথা বলতে পারি।

তোর কথা বার্তা আর কাজ কর্ম কিছুই আমি বুঝিনা। তিন দিন ধরে আমার মেসে পরে আছিস। বাসায় কি সমস্যা তাও কিছু বলছিস না। দেখ দোস্ত আজ আমি বাসা পাল্টাব। তাই বলছি তুই তোর বাসায় চলে যা।

আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছিস ?

হ্যা দিচ্ছি। কারন তুই এখানে থাকলে একের পর এক বকবক করবি। শুধু যে বকবক করবি তা না। আমাকে সামনে বসিয়ে জোর করে তোর বকবক গেলানোর চেষ্টা করবি। তখন আমার জিনিস পত্র আর গুছানো হবে না। মালিক বলে দিয়েছে জিনিস পত্র নিয়ে সময় মত বাসায় না উঠলে অন্য কাউকে বাসাটা দিয়ে দেবে। আমি তোর পায়ে ধরছি প্লিজ তুই চলে যা। না হয় আমার এই বাসাটাও হাত ছাড়া হয়ে যাবে।

রোশান বলল কই! পায়ে ধরছি বলে দাঁড়িয়ে রইলি কেনো ? এই নে পা উচু করলাম। এবার ধর।

আমিতো কথার কথা বললাম। আর রোশান তুই কিনা আমাকে এভাবে অপমান করছিস ?

আরে রাগ করছিস কেনো ? আমিও তো পায়ের নখগুলো ফেলে দিয়েছি সেজন্যই তোকে পা উচু করে দেখাচ্ছিলাম। দেখতো আমার নখবিহীন পা জোড়া সুন্দর লাগছে না ?

কচু লাগছে।

ঠিক আছে আমি বরং চলেই যাই।

কি হল? চলে যাই বলে বসে আছিস কেনো ? যা। চলে যা।

হুম যাব। তবে একটা জিনিস ভাবছি বুঝলি ?

আবার কি ভাবছিস ?

আগে মা চাচীরা বলত সকাল বেলা ঘর থেকে খালি মুখে বের হতে নেই। তাতে নাকি গৃহকর্তার অমঙ্গল হয়। এখন আমি খালি মুখে বের হয়ে গেলে তোর অমঙ্গল হবে। আর আমি জেনে শুনে তোর অমঙ্গল ডেকে আনতে পারি বল? তাই বলছিলাম অন্তত এক কাপ চা খেয়ে যাই।

শোন মা চাচীরা এসব ভুল বলত। তুই এসবে কান দিস না।

কি বলিস এসব! জানিস এ কথা মা-চাচী ছাড়াও নানী-দাদীরাও কিন্তু বলতে। হে ঈস্বর ও একটা দুধের শিশু। কি বলতে কি বলে বলে ফেলেছে। তুমি ওকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ।

থাম!!! আমি দুধের শিশু ? তোর অনেক যন্ত্রনা সহ্য করেছি। আর না। এই ২০ টাকা রাখ। চা-নাস্তা যা ইচ্ছে বাইরে গিয়ে খা। তবুও আর জালাইস না বাপ।

ওক্কে! এতেই যা হবার হবে। দোস্ত থ্যাংক ইয়্যু। যাইরে ইনশাআল্লাহ! খুব শিগ্রই আবার দেখা হবে। তখন তোর ২০টাকা শোধ দিয়ে দেব।

আর শোধ দিতে হবে না। তুই যা। হে বগবান! এই জাওরা পোলার লগে আমার এই জন্মে যেন আর দেখা না হয়।







সকাল ৯টা ২০ মিনিট।

রোশান তার বন্ধু তুর্য্যর মেস থেকে বের হয়ে রাস্তায় এসে দাড়িয়েছে। তুর্য্যর দেয়া ২০টাকা ছাড়া আর এক পয়সাও তার পকেটে নেই। রোশান রাস্তার পাশে একটা দোকান থেকে সাত টাকায় একটা সিগারেট কিনল। বাকি রইল ১৩ টাকা। এখন কোথায় যাবে সেটা ঠিক করা দরকার। মা যেভাবে রেগে আছে, বাসায় যাওয়ারতো প্রশ্নই উঠে না। তাছাড়া মা হাই প্রেসারের রোগী। যখন তখন প্রেসার বেড়ে হুলুস্থুল কান্ড বাধিয়ে ফেলেন। এমন অবস্থায় যাওয়া ঠিক হবে না। তার চেয়ে বড় খালার বাসায় যাওয়া যায়। অনেক দিন যাওয়া হয়না। তবে সমস্যা একটাই ১৩টাকা দিয়ে খালার বাসায় পৌছানো সম্ভব না। যেতে হবে হেটে হেটে। তবে খালার রান্না করা খিচুরি। কি স্বাদ কি রঙ আর কি গন্ধ। ইস! জিবে জল এসে যায়। সত্যিই যেন অমৃত! কয়দিন আরাম আয়েশে কাটানো যাবে। ভাল-মন্দ খাওয়া যাবে। এটাই বা কম কিসে!





রোশান একবার বেল চাপতেই মোটামোটি বয়স্ক একজন মহিলা এসে দরজা খোলে দিলেন। ইনিই আয়েশা বেগম। রোশানের বড় খালা। রোশান বলল কেমন আছ খালা ?

আরে রোশান তুই! কতদিন পর এলি বলতো ? খালার কথা একবারও মনে পরে না। তাই না ?

মনে পরে না তোমাকে কে বলল? এই যে মনে পরল আর সোজা চলে এলাম। খালা তোমার কমিন মেয়েটা কোথায় ?

কে অতসীর কথা বলছিস ? ও তো কলেজে।

যাক বাঁচা গেল বাসায় নেই। থাকলে এতক্ষনে আমার সাথে অকারনে একটা ঝগড়া বাধিয়ে ফেলত।

রোশান তুই বোস। আমি তোর জন্য চা নিয়ে আসি।

খালা শুধু চা দিলে হবে না। আমি কিন্তু এখনো নাস্তা করিনি। আর শো্নো আমি তোমার এখানে কয়দিন থাকব। তোমার কোনো আপত্তি নেইতো?

শোনো ছেলের কথা। তুই আমার বাসায় থাকবি এতে আপত্তির কি আছে? আচ্ছা সত্যি করে বলত। তুই আমার বাসায় হঠাৎ কেনো থাকতে চাচ্ছিস? তোকে জোর করেওতো কোনোদিন রাখা যায় না। ঘটনা কি ?

ঘটনা তো খালা অবশ্যই আছে।

সেটাই তো জানতে চাচ্ছি। কি এমন ঘটনা ?

খালা আগে কিছুতো দাও খেয়ে তারপর বলি।

আচ্ছা কি খাবি বল?

গরম গরম পরটা। সাথে ডিম ভাজি।

তুই বোস। আমি রহিমার মাকে বলে আসছি।

হুম।





রোশান তোর ঘটনাটা কি এবার আমাকে খুলে বলত।

খালা তুমি দেখি না শুনে ছাড়বে না। তাহলে শোনো…তোমার বোন। মানে আমার মা আমাকে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তিন দিন আমি এক বন্ধুর বাসায় ছিলাম। আজ তোমার কথা মনে হতেই সোজা চলে এলাম। তুমিই বল তুমি থাকতে আমি কেনো বন্ধুর বাসায় থাকব। তাইনা খালা ?

হ্যা তাইতো। আমি থাকতে তুই বন্ধুর বাসায় কেনো থাকবি ? কিন্তু তোর মা হঠাৎ করে তোকে বাসা থেকে বের করে দিল কেনো ?

খালা তুমিতো জানোই আমার ভাইয়া জীবনে বিয়ে করবে না বলে কঠোর ঘোষনা দিয়েছে। কিন্তু ভাইয়া বিয়ে করবে না বলে যে আমিও বিয়ে করব না এটাতো হতে পারে না। আমি মা’কে গিয়ে বললাম মা! আমার বিয়ে পেয়েছে। আমি বিয়ে করব। মা রেগে মেগে বলল বাচ্চা ছেলেদের মত সব কিছুতে বায়না ধরিসনা। তাছাড়া চাকরি-বাকরি কিচছু নেই। এখনও তো বাপের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছিস। এদিকে তোর বড় ভাইকে এখনো বিয়ে কারাতে পারছি না। আর শোন তোর এখনও বিয়ের বয়স হয়নি। আমি তখন বললাম মা পাড়ার ছোট ভাইরা তো দুটা করে ছেলে-মেয়ের বাবা হয়ে গেছে। আর আমার কিনা এখনো বিয়ের বয়স হয়নি ? এ কথা শুনে মা তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে বলল হারামজাদা তুই এক্ষুনি বাসা থেকে বেড়িয়ে যা। আর কক্ষনো আমার চোখের সামনে আসবি না।

খালা বলল তাহলে তো জটিল ঝামেলা হয়ে গেল।

হুম। খালা তোমার মেয়েকে আমার কাছে বিয়ে দিয়ে দাও। তোমার তো ছেলে নেই। বড় মেয়েও কানাডা পরে আছে। আমি তোমার এখানে ঘর-জামাই থাকতে রাজী আছি। এতে তোমার একটা সুবিদা হবে। তা হল তোমার মেয়ে তোমার কাছেই রইল আর ফাকে আমার মত একটা ভলো ছেলেও পেয়ে গেলে। এখন খালা তুমি ভেবে বল মেয়েকে বিয়ে দেবে আমার কাছে ?

যে ছেলেকে বিয়ে করাতে তার মা-ই ভরশা পাচ্ছে না। আমি কিনা সেই ছেলের হাতে আমার মেয়েকে তুলে দেব। তুই ভাবলি কি করে! যা! এক্ষুনি আমার বাসা থেকে বেড়িয়ে যা। আর কখনো যেন আমার বাসার ত্রি-সীমানায় তোকে না দেখি।

খালা মা’র মত তুমিও দেখি রাগ করছ।

তুই বের হ বলছি।

খালা রহিমার মা পরটা নিয়ে এসেছে। একটা খেয়ে যাই।

এ বাসা থেকে এক ফোটা পানিও তোর মুখে যাবে না। এক্ষুনি বের হ বলছি। সয়তান ছেলে কোথাকার! খালা রোশানকে বের করে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিলেন।





এখন ঘড়িতে কয়টা বাঁজবে? আনুমানিক ২টা। রোশান রাস্তায় হাটছে। আর ভাবছি খালার সাথে এমন সস্তা রশিকতা না করলেই হতো। এই ভর দুপুরে আর রাস্তায় হাটা লাগতো না। খিদেও লেগেছে প্রচণ্ড। কেনো যে এই রশিকতা করতে গেলাম। পকেটে মাত্র ১৩ টাকা আছে। এই টাকা দিয়ে তেমন কিছু খাওয়া যাবে না। তিন টাকায় কি চা পাওয়া যায়? পাওয়া গেলে ক্ষিদে নষ্ট করার জন্য এক কাপ চা খাওয়া যায়। কিন্তু তিন টাকার বেশী এক টাকাও খরচ করা যাবে না। কারন রুপন্তির সাথে কথা ছিল মা’কে বিয়ের কথা বলে রাজী করিয়ে ওকে খবর দেব। কিন্তু মা’ও রাজি হয়নি, আর তিন দিন ধরে ওর সাথে আমারও যোগাযোগ হয়নি। কিন্তু আজ রুপন্তির জন্মদিন। জন্মদিনে অন্তত একটা তাজা গোলাপ হাতে নিয়ে ওর সাথে দেখা করতেই হবে। না হয় বেচারী কষ্ট পাবে। খুব কষ্ট পাবে।







তিন টাকায় চা পাওয়া গেল না। রাস্তার পাশে যে টং দোকান সেখানেও সিঙ্গেল কাপ চা পাচঁ টাকা। আর ফুল কাপ আট টাকা। কি আর করা! আপাদত চায়ের পিপাসা নিয়েই রোশান রুপন্তির সাথে দেখা করতে যাচ্ছে।

তবে ভুলেও রুপন্তিদের বাসার ভেতর যাওয়া যাবে না। রুপন্তির বাবার (মির মোশারফ হোসেন) সামনে পরলে বিরাট ঝামেলা হয়ে যাবে। উনি কেনো জানি রোশানকে দুচোখে সহ্য করতে পারেন না। কেউ একজন অনেকক্ষন ধরে রোশানের পিছু পিছু আসছে। কিন্তু কে তাকে অনুসরন করবে? ধ্যাৎ!! যার ইচ্ছে সে আসুক। রোশানের এখন পিছনে ফিরে তাকাতে ইচ্ছে করছে না।

এই রোশান……রোশান দাড়া…।। লোকটা এখন তার নাম ধরে ডাকাছে। এখন পিছু ফিরে তাকানো মানেই ঐ লোকটাকে গুরুত্ব দেয়া। কিন্তু রোশান এখন নিজেকে ছাড়া অন্য কাউকে গুরুত্ব দিতে চাচ্ছে না। সব সময় সবাইকে গুরুত্ব দিতে হবে কেন? এতে একসময় নিজের গুরুত্ব কমে যায়।

এই রোশান! তোকে যে এতক্ষন ধরে ডাকছি শুনতে পাচ্ছিস না?

ভাইয়া তুমি এখানে ?

অফিসের কাজে যাচ্ছিলাম। কিন্তু তুই এখানে কি করছিস? তিন দিন ধরে তোকে খুজঁতে খুজঁতে আমার পাগল হয়ে যাওয়ার অবস্থা। আবার মোবাইলটাও রিসিভ করছিস না।

ভাইয়া তোমাকে আর পাগল হতে হবে না। তুমি বাসায় চলে যাও। আর মোবাইলটা আমার কাছে নেই। ভুল করে বাসায় ফেলে এসেছি।

তুই বাসা থেকে মা’র সাথে রাগ করে বের হয়ে এসেছি?

উহু…আমি ইচ্ছে করে আসিনি। মা আমার উপর রাগ করে বেরিয়ে যেতে বলেছে।

বুঝলাম মা নাহয় রাগের মাথায় কি না কি বলেছে। তাতে তুইও বের হয়ে আসবি ? চল বাসায় চল।

না ভাইয়া। আমার জন্য একজন অপেক্ষা করছে। তা ছাড়া আমার এখন বাসায় যাওয়াটা ঠিক হবে না।

ঠিক হবে না কেনো?

তুমি তো জানো মা হাই প্রেসারের রোগী তার মাঝে নতুন একটা উপসর্গ যুক্ত হয়েছে হার্ট এর অসুখ। এখন আমি যদি মা’র সামনে গিয়ে দাড়াই তাহলে মা আরো রেগে যাবে। তখন কি থেকে কি হয় কে জানে।

তাহলে তুই এখন কি করবি ? থাকার ব্যাবস্থা কি ?

কিছু একটা তো করতেই হবে। ভাবছি “আমার আল্লাহ নবীজির নাম”এই গীত গেয়ে ভিক্ষা করবো।

খবরদার!!! আমার সাথে ভুলেও ফাজলামী করবি না।

ভাইয়া আমি তোমার সাথে মোটেও ফাজলামী করছি না। সিরিয়াসলী বলছি। এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ কাজ। এর জন্য কারো কাছে ইন্টারভিয়্যু দিতে হয়না। ঘুষ দেয়া নেয়ার ব্যাপারটাও এখানে নেই। এবং এ কাজে উপার্জনও বেশ ভালো হয়। ধরো প্রতিদিন যদি ৫০০ টাকা হয় (কোনো কোনো দিন বেশীও হতে পারে) তাহলে মাস শেষে দাড়াল ১৫০০০ টাকা। আর তুমি অফিসে সারা মাস গাধার মতো পরিশ্রম করে পাও ১০০০০ টাকা।

তাই বলে তুই রাস্তায় ভিক্ষা করবি?

ভাইয়া শুরুতেই নেতিবাচক ভাবলে তো হবে না। আগে ইতিবাচক ভাবার মন মানুষিকতা তৈরী করতে হবে। বুঝলে? আর শোনো ভিক্ষা করা তেমন কোনো খারাপ কাজ না। চুরি, ডাকাতি কিংবা ছিনতাইয়ের মত খারাপ কাজ করার চেয়ে সৎ পথে ভিক্ষা করাই কি ভালো না ?

তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু মান-সম্মানের দিকটা একটুও দেখবি না ?

ভাইয়া আমার মত বেকার যুবকের কাছে মানসম্মান নিয়ে ভাবার কোনো সময় নেই। তাই বলি কি! মান-সম্মান নিয়ে ভাবার কাজটা তুমি আর মা মিলে কর।

তোর থাকার ব্যাবস্থা কোথায়?

বিনা সুপারিশে চাকরীর ব্যাবস্থা করে ফেললাম। আর তুমি কিনা থাকা নিয়ে চিন্তা করছো? হা হা হা…ঐ যে গাছটা দেখতে পাচ্ছো ঐটার নিচেই রাত কাটিয়ে দেবো।

গাছ তলায়! নরম বিছানা ছেড়ে তুই থাকবি গাছ তলায়? পাগলের মত কি সব বকবক করছিস কিছুই বুঝতে পাচ্ছি না।

আমি পাগলের মত কিছুই বলছি না ভাইয়া। আসলে চার দেয়ালের ভেতর থাকতে থাকতে আমাদের মন মানষিকতা ছোট হয়ে গেছে। তাইতো কোনো কিছু শোনার আগেই নেতিবাতক ভাবতে শুরু করে দেয়। তাই এখন আমাদের সবারই উচিত অন্তত কয়দিনের জন্য খোলা আকাশের নীচে থাকা। এতে যদি মানুষের চিন্তা ভাবনার কিছু পরিবর্তন হয়। ভাইয়া চাইলে তুমিও এই লাইনে চলে আসতে পার। দু ভাই মিলে ভিক্ষে করলে কয়দিনে লাখোপতি তারপর কোটিপতি।

তুই বললে অবশ্যই আসব। জানিসই তো আমি একটু বোকা টাইপের। কখন কি করতে হয় আমি কিছুই বুঝি না।

ভাইয়া তুমি মহা বোকা হলেও মানুষ ভালো। এক কাজ কর মা’কে সব কিছু বুঝিয়ে শুনিয়ে চলে আসো। আমিতো আর মা’র সামনে যেতে পারব না। আসার সময় তুমি অবশ্যই একটা ছেড়া শার্ট আর লুঙ্গি পরে চলে আসবে। এতে ভিক্ষা বেশী পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

এটা ঠিক বলেছিস। এই নে তুই আমার মোবাইলটা তোর কাছে রেখে দে। আমি পরে ফোন করে তোর অবস্থান জেনে নেব।

ঠিক আছে।





রোশানের বড় ভাইয়ের নাম মোহাম্মদ মদন মোহন চৌধুরী। এই নাম তার দাদাজানের রাখা। তিনি হয়তো আগেই বুঝেছিলেন তার বড় নাতী হবে মদন নাম্বার ওয়ান। তাই এ নাম রেখেছেন। মদন মোহন জগতের প্যাচ, জটিলতা এসব কিছুই বুঝে না। রোশান পৃথিবীতে অনেক মানুষ দেখেছে। কিন্তু তার ভাই মদনের মত এত সহজ সরল বোকা মানুষ জীবনেও দেখেনি। সে নিজে থেকে কোনটা ভাল আর কোনটা মন্দ সেটাই বুঝতে পারে না। এমন মানুষও কি পৃথিবীতে জন্মাতে পারে? এ ভেবে মাঝে মাঝে রোশানের কষ্ট হয়। খুব কষ্ট। তবে আজ রোশান তার ভাইয়ার মাথায় একটা পোকা ঢুকিয়ে দিতে পেরেছি। এতে বেশ ভালো লাগছে। এখন আর এই কড়া রোদে হাটতে ইচ্ছে করছে না। ক্লান্তিতে রোশানের শরীর ভেঙ্গে আসছে। গাছ তলায় কিছুক্ষন বিশ্রাম নিলে কেমন হয়? মনে হয় খুব একটা খারাপ হবে না। তাছাড়া এখানে ঘুমানোর পুর্ব অভিজ্ঞতারও প্রয়োজন আছে। রোশান গাছ তলায় কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে পরল। শোবার সাথে সাথেই সে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল।





রোশানের ঘুম ভাঙ্গল সঁন্ধ্যায়। এখন কয়টা বাজে? রোশানের হাতে ঘড়ি নেই। ভাইয়ার মোবাইলটা পকেটে থাকলেও ঠিক সময় বলা যাচ্ছে না। কারন মোবাইলে এখন বাজে দুপুর তিনটা। আকাশে আজ অপূর্ব জ্যোৎস্না। আচ্ছা এটাই কি সেই জ্যোৎস্না? যে জ্যোৎস্না দেখে সিদ্ধার্থ গৃহত্যাগী হয়েছিল বা হতে চেয়েছিল? হবে হয়তো।





রোশান ১০ টাকায় একটা তাজা গোলাপ কিনেছে। সে এখন রুপন্তির সাথে দেখা করতে যাবে। ১০-১৫ মিনিটের রাস্তা। যদিও রুপন্তি এখন নিচে নেমে দেখা করবে কিনা বলা যাচ্ছে না। কারন এই মায়াবতীর মর্জি বুঝা বড়ই কঠিন। কখন কি মন চায় সে নিজেও হয়তো জানে না। কিন্তু তারপরও রোশান যাবে। তার আগে রুপন্তিকে একটা ফোন করলে কেমন হয়? মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে রুপন্তির বারান্দার সামনে গিয়ে উপস্থিত হবে। এতে নিশ্চয় রুপন্তি চমকাবে।



_ হ্যালো! রুপন্তি…

_ হুম। বলো…

_ কেমন আছ ?

_ ভাল।

_ শুভ জন্মদিন।

_ ধন্যবাদ।

_ একটু নীচে আসবে রুপন্তি ? আকাশে আজ অপুর্ব জ্যোৎস্না। কিছুক্ষন তোমার হাত ধরে জ্যোৎস্না স্নান করবো। তারপর চলে যাব। আসবে??

_ না আসব না।

_ কেন ???

_ কারন তোমাকে আমি আর বিশ্বাস করতে পারছি না।

_ তাহলে একটু বারান্দায় এসো প্লিজ……

_ আমি পারব না।। টেলিফোন নামিয়ে রাখার শব্দ হল…।





রোশান এখন রুপন্তির বারান্দার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আজ রুপন্তির মন ভালো নেই। রোশান কথা দিয়ে কথা রাখতে পারেনি এজন্য তার উপর প্রচন্ড রেগেও আছে। তবুও রোশান জানে রুপন্তি নীচে না নামুক অন্তত বারান্দায় এসে দাঁড়াবে। তবে সে কোনো কথা বলবে না। আগেও অনেক বার এমন হয়েছে। রুপন্তি কারো উপর রাগ করলে এই কাজটা করে। এতে করে যার উপর রাগ তাকে শাস্তি দেয়; নাকি নিজেই নিজেকে শাস্তি দেয় ব্যাপারটা জানা হয়নি। একসময় জেনে নিতে হবে।





রুপন্তি বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আজ ও নীল শাড়ি পড়েছে। নীল শাড়িতে যে ওকে কত সুন্দর লাগছে সে নিজেও হয়তো জানে না। রোশান রুপন্তিকে ডেকে বলল তোমার জন্য একটা ফুল এনেছিলাম। তাজা ফুল। এখনও নষ্ট হয়নি। রুপন্তি কোনো কথা বলছে না। তার চোখ ফেটে জল গড়িয়ে পরছে। চাদেঁর আলোয় সে জল চিক চিক করছে। প্রিয় মানুষের চোখের জল সহ্য করা যায় না। রোশান চলে যাচ্ছে। তবে সকাল হলেই সে আবার আসবে। এসে রুপন্তির হাতে বাসি গোলাপটা দিয়ে বলবে “আই লাভ ইউ” রুপন্তি।







রোশান রাস্তায় রাস্তায় হাটছে। কারন তার এখন যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। আকাশে অপুর্ব জ্যোৎস্না। সে জ্যোৎস্না গায়ে মেখে রাস্তায় হাটবে। অনেক ক্ষন ধরে হাটবে। হাটতে হাটতে যদি ঘুম চলে আসে। তখন রাস্তার পাশেই কোথাও কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে পরবে। তবে বিকেলে তার বেশ ভালো ঘুম হয়েছিল। তাই এখন আর ঘুম আসবে বলে মনে হয় না। রোশান মনে মনে কয়েক লাইন কবিতা লিখে ফেলল -



আজ রাতে চোখে ঘুম নেই।

নেই রুপন্তির সাথে আলাপন।

পথের ধূলো পায়ে মেখে

একলা পথের পথিক হব।

সঙ্গী হবে নির্জনতা; আর

মায়াবতি ঐ চাঁদের আলো।







রুপন্তির মন খারাপ। ভীষন খারাপ। কারন, রুপন্তির বাবা মির মোশারফ হোসেন মেয়ের বিয়ে দিতে উঠে পরে লেগেছে। এক মাসের মধ্যে মেয়ের বিয়ে যেভাবেই হোক উনি দিয়ে ছাড়বেন। তা নাহলে মস্ত বড় অন্যায় হয়ে যাবে। যে অন্যায়ের কোনো ক্ষমা নেই। তিনি মেয়ের জন্য পাত্রও দেখে ফেলেছেন। উনার বাল্যকালের বন্ধু আজিজুর রহমান তারই ছেলে শফিকুর রাহমানের সাথে। ছেলে এম.বি.বি.এস ডাক্তার। দেখতে খুব একটা খারাপ না। স্বভাব-চরিত্রও ভাল। রুপন্তির বাবা বিয়ের তারিখও ঠিক করে ফেলেছেন। এ মাসের ২৫ তারিখ শুক্রবার। কিন্তু রুপন্তির এই বিয়েতে মত নেই। কারন সে রোশানের মত একটা নির্বোধ ছেলেকে ভালবাসে। যে কিনা এখনো বেকার। তবে রুপন্তির কাছে এটা কোনো সমস্যা হতেই পারে না। পুরুষ মানুষের এখন চাকরি নেই তো কি হয়েছে? পরে হবে যাবে। এজন্য বিয়ে করা যাবে না এটা কেমন কথা! রুপন্তির বাবা এসব তুচ্ছ কথা বা যুক্তি শুনতে চাচ্ছে না। উনি সোজা বলে দিয়েছে উনার পছন্দ করা ছেলেকেই বিয়ে করতে হবে। রুপন্তিও তার বাবার মেয়ে। সেও তার কথা থেকে এক পা’ও নড়বে না। সে জীবন গেলেও ঐ এম.বি.বি.এস ছেলেকে বিয়ে করবে না। সে রোশানকে ভালবাসে। অনেক ভালবাসে।





সূর্য্য এখনো ভালো করে ফোটে নি। বাইরে আবছায়া অন্ধকার। রোশান হাতের ঐ বাসি গোলাপ নিয়ে রুপন্তির বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আচ্ছা বাসি গোলাপ নিয়ে কোনো কবি কি কবিতা লিখেছেন? যেমন এই টাইপের কবিতা -

একটি মাত্র গোলাপ ফোঁটেছিল

গোলাপের মত।

সেই গোলাপটি টুকটুকে লাল,

ছিল পাপড়ি রাশি রাশি।



আজ গোলাপের বিবর্ন রঙ,

তবুও এতেই কিনব তোমার হাসি।

প্লিজ রাগ করো না, ক্ষমা কর।

গোলাপের গন্ধটাও যে বাসি।।



রোশান বলল না না … এমন জগন্য কবিতা কোনো কবি লিখতেই পারে না। এই তারাতারি চল একদম দেরি করা যাবে না। রোশানের কানে একটা মেয়েলী কন্ঠস্বর ভেসে আসল। সে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল রুপন্তি দাঁড়িয়ে আছে। সে রাতে পরা নীল শাড়িটা এখনো ছাড়ে নি। চোখের কাজল ল্যাপ্টে আছে। চোখ দুটাও অতিরিক্ত ফুলা দেখাচ্ছে। মনে হয় পাগলীটা রাতে খুব কেদেঁছে। রুপন্তির হাতে একটা ব্যাগও ঝুলছে। ল্যাডিস ব্যাগ না কাপড় রাখার ব্যাগ। রোশান গোলাপটা রুপন্তির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল কাল রাতে তোমার জন্য এনেছিলাম। এখন বোধয় বাসি হয়ে গেছে।

রুপন্তি গোলাপটা হাতে নিয়ে বলল স্টুপিড! কাল রাতে আমাকে কিছু না বলে হঠাৎ কোথায় চলে গিয়েছিলে ?

রোশান বোকার মত হাসি দিল। বলল তোমার চোখে জল দেখতে ভালো লাগছিল না। তাই ভাবলাম জ্যোৎস্না দেখে আসি হয়তো ভাল্লাগবে।

আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছ কেনো? আমার মুখেও কি জ্যোৎস্না দেখা যাচ্ছে? বোকা কোথাকার! হি হি হি…

রুপন্তি তুমি কি জানো? আমি যতবার তোমাকে দেখি ঠিক ততবারই নতুন করে তোমার প্রেমে পরি।

রুপন্তি বলল কাপুরুষরা কেবল লুকিয়ে প্রেমই করতেই জানে। তারা প্রেম ছাড়াও বিয়ে নামক কিছু একটা করা যায়। তারা সেটা জানেই না। আর তুমি হচ্ছ সে ধরনের কাপুরুষ।

আচ্ছা! তাহলে নিজেকে পুরুষ প্রমানের জন্য আমার কি করতে হবে ?

তুমি নিজেকে পুরুষ প্রমান করতে পারবে ?

রোশান বলল অবশ্যই।

তাহলে এই নাও ব্যাগটা ধরো। তারপর পুরুষ মানুষের মত আমাকে এখান থেকে নিয়ে চল।

নিয়ে চল মানে কি! কোথায় নিয়ে যাব?

আপাদত একটা কাজি অফিসে। তারপর তুমি যেখানে যাবে সেখানে।

রুপন্তি আমি কিন্তু কিছুই বুঝতে পাচ্ছি না।

রুপন্তি বলল এত বেশী বুঝতে হবে না। আমি বাসা থেকে একেবারে চলে এসেছি। ঐ বাসায় আমি আর ফিরে যাচ্ছি না। অনেক ভেবে চিন্তে দেখলাম বাবার পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করা আমার পক্ষে কোনোদিনও সম্ভন না। তার আগেই আমার গলায় দড়ি দেয়া উচিত। কিন্তু আমি কাজটা করতে পারছি না। কারন তোমার মত একটা নির্বোধ বোকা ছেলেকে আমি ভালবাসি। অনেক ভালবাসি।

কিন্তু রুপন্তি তুমি যত সহজে সিদ্ধান্তটা নিয়েছ, জীবনটা আসলে ততটা সহজ না। আমি বেকার একটা ছেলে। তার উপর চারদিন ধরে গৃহহারা। এমন অবস্থায় তোমাকে নিয়ে আমি কোথায় যাব? কি করব? আমার মনে হয় তোমার আরেকটু ভাবা উচিত।

রুপন্তি বলল শোনো রোশান এখন আমার হাতে ভাবার মতো একদম সময় নেই। আমি যা করছি ভেবে চিন্তে সুস্থ মস্তিষ্কেই করছি। এখন তুমি শুধু বল আজ এই মুহুর্তে আমাকে বিয়ে করবে কি না ?

সরি রুপন্তি। আমি তোমার পাগলামীকে কোনো ভাবেই সাপোর্ট দিতে পারছি না।

তার মানে তুমি আমাকে বিয়ে করবে না ?

কেনো করব না! অবশ্যই করব। কেননা “উই ম্যাড ফর ইচ আদার”। তবে এভাবে পালিয়ে বিয়ে করব না। আমাকে আর কয়েকটা দিন সময় দাও প্লিজ।

রুপন্তি বলল অনেকটা সময় তোমাকে দেয়া হয়েছে আর না। এখন তোমাকে সময় দিতে গেলে দেখা যাবে, তোমারই চোখের সামনে তোমার খাবারে পাশের বাড়ির দুষ্টু বিড়াল এসে মুখ ডুবিয়ে দিয়েছে। তখন তুমি ভু্লেও সেই খাবারে মুখ দিতে চাইবে না। তাই যা করার আজই করতে হবে।

ছিঃ ছিঃ এটা কি ধরনের কথা!

রুপন্তি বলল এটাই কথা। এবং এটাই ফুল এন্ড ফাইনাল। এর উপর আর কোনো কথা হবে না। তারপরও যদি কোনো কথা বলতো খুন করে ফেলব বলে দিলাম। তারপর নিজে গলায় দড়ি দেব। এখন চল আমাকে সোজা কাজী অফিসে নিয়ে যাবে।

রোশান মনে মনে বলল মেয়েরা কেনো যে ছেলেদের মনের অবস্থাটা একটুও বুঝতে চায় না? যদি বুঝতে চাইতো তবে তারাই হত ছেলেদের চেয়েও অধিক সুখী মানুষ। হে ঈশ্বর! রক্ষা করো আমায়।







আয়েশা বেগম পানের বাটা নিয়ে বসে আছেন। গরুর মত লতা-পাতা ঘাস চিবানোর কোনো মানেই হয়না। এজন্য তিনি কখনোই পান খান না। তারপরও এটা নিয়ে কেনো বসে আছেন কে জানে। মদন মোহন দরজায় উকি দিয়ে চলে যাচ্ছিল। আয়েশা বেগম ছেলেকে ডাকলেন। মোহন!

জি মা।

তুই দরজায় উকি-ঝুকি দিয়ে চলে যাচ্ছিস কেনো ?

না মানে একটা কথা বলতে এসেছিলাম। তুমি মনে হয় ব্যাস্ত। তাই চলে যাচ্ছিলাম।

আয়েশা বেগম ছেলেকে বলল আয়। ভেতরে আয়!

মদন মোহন ঘরে ঢুকল।

বোস! এখন বল কি বলবি ?

মা বড় খালা ফোন করেছিল।

কখন ফোন করেছিল? কি বলল তোকে ?

খালা রোশান আর অতসীর ব্যাপারে তোমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছিল।

ওরা আবার কি করেছে ?

না মানে অতসী কিছু করেনি। তবে রোশান নাকি খালার বাসায় গিয়ে একদিন বলে এসেছে সে অতসীকে বিয়ে করতে চায়। এখন খালা জানতে চাচ্ছিল এতে তোমার মত আছে কিনা?

বলিস কি! এই বাচ্চা মেয়েটার উপর হারামজাদার নজর পরেছে। ছিঃ ছিঃ ছিঃ। শেষ পর্যন্ত মান-সম্মান বলতে বুঝি আর কিছুই রইল না।

মা তুমি কাকে বাচ্চা মেয়ে বলছ? অতসীর বয়স আঠার পেরিয়ে উনিসে পরেছে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী আঠার বছরের মেয়েকে বিয়ে দেয়া যায়।

মদন তুই চুপ কর!! আমাকে আইন শিখাতে আসবি না। ঐ হারামজাদাটাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা কর।

মদন মোহন মুখ কালো করে মা’র ঘর থেকে বেড়িয়ে এল।







সকাল ১১টা নাগাদ রোশান আর রুপন্তির বিয়ে হয়ে গেল। নতুন বৌকে নিয়ে রোশান রাস্তার পাশে একটা গাছের নিচে বসে আছে। বিয়েতো হল কিন্তু বউকে নিয়ে কোথায় যাবে, কি করবো কিছুই সে বুঝতে পারছে না। রাগে তার মাথার চুল টেনে ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। তার মাঝে মোবাইলে একের পর এক ফোন এসে আরো বিরক্ত করছে। ফোনের সব মানুষই তার অচেনা। তাই সে ঠিক করেছে আবার যদি ফোন আসে সে ধরবে না। কিছুতেই না। রোশানের এই অবস্থা দেখে মনে হয় রুপন্তি খুব মজা পাচ্ছে। সে কিশোরী বালিকাদের মত হা হা হো হো শব্দ করে হাসছে। রুপন্তির হাসি দেখে রোশানের খানিকটা রাগ হচ্ছে। মোবাইলটা আবার বাজতে শুরু করল। আবারো অচেনা নাম্বার। রুপন্তি বলল কি হল ফোনটা ধরছ না কেনো? ধরো ফোনটা।

না থাক এখন আর ধরতে ইচ্ছে করছে না।

রোশান আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে এখন ফোনটা তোমার বাসা থেকে কেউ করেছে।

রোশান অনিচ্ছা স্বত্তেও ফোনটা রিসিভ করল। ওপাশ থেকে তার বড় ভাইয়ের গলা শুনা গেল…



_ হ্যালো রোশান…

_ ওহ ভাইয়া তুমি।

_ হ্যা। তোর কাজ কেমন এগুচ্ছে ?

_ ভাইয়া খুব ভালো। তোমার কথা বল।

_ আগে মা’র সাথে কথা বল।



_ হ্যালো রোশান।

_ হ্যা মা। কেমন আছো তুমি ?

_ ভালো নেই। তুই এখন কোথায় আছিস ?

_ ইয়ে মা। মানে আমি এখন একটা গাছ তলায় ঘর বেঁধেছি।

_ এই কয়দিন ধরে তুই গাছ তলায় পরে আছিস? অনেক পাগলামু হয়েছে। আর না। তুই আজ এক্ষুনি বাসায় ফিরে আয়।

_ কিন্তু মা………

_ আর কোনো কিন্তু ফিন্তু না। তুই অতসীকে বিয়ে করতে চাস তো? আমি তাতেই রাজি আছি।তবুও তুই ঘরে ফিরে আয় বাবা। অন্তত আমাদের মান-ইজ্জতের দিকে তাকিয়ে আয় বাবা।

_ কিন্তু মা আমিতো আসতে পারব না।

_ আসতে পারবি না মানে কি ? কেনো আসতে পারবি না ?

_ মা আমিতো এখন আর একা না। সাথে বৌ-বাচ্চা আছে। তাদের ফেলেতো আর আমি একা আসতে পারব না। তাই না ?

_ বৌ-বাচ্চা মানে? এই কয়দিনে বৌ-বাচ্চা কোত্থেকে এল?

_ হ্যালো…হ্যালো…



মোবাইলের লাইনটা কেটে গেল। চার্জ শেষ। চারদিন ধরে চলছে। আরো আগেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ হয়নি। কারন চায়না মোবাইলের ব্যাটারীতে নাকি অনেকক্ষন চার্জ থাকে। এই মোবাইলটাও চায়নার নাম কিংস্টার মোবাইল।



রুপন্তি বলল রোশান তুমি মা’কে মিথ্যে বললে কেন?

জানিনা। কেনো জানি মিথ্যে বলতে খুব ইচ্ছে করল। তাই বলেই ফেললাম।

কাজটা তুমি একদম ঠিক করো নি।

রোশান বলল তুমিও কাজটা একদম ঠিক করো নি।

আমি আবার কি করলাম ?

এই যে পুর্ব পরিকল্পনা ছাড়া হুট করে আমাকে বিয়ে করে ফেললে।

তুমি খুশি হওনি ?

হ্যা হয়েছি। খুব খুশি হয়েছি। কিন্তু এতে তো সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। বরং সামনে আরো কি কি সমস্যা হতে পারে সেগুলো স্পষ্ট আমার চোখের সামনে ভাসছে।

রুপন্তি বলল চল আমরা বাসায় ফিরে যাই।

বাসায়! তুমি কার বাসার কথা বলছো রুপন্তি?

কার আবার! তোমাদের বাসার কথা বলছি।

তুমি আসলে কল্পনাও করতে পারছ না। এখন তোমাকে নিয়ে বাসায় গেলে কি তান্ডবই না শুরু হবে।

দেখো কিচ্ছু হবে না। আমার উপর ভরসা রাখতে পার। তোমার মা তোমার উপর রাগ করে আছে। কিন্তু আমার উপর তো রাগ করে নি। আমার মনে হয় উনাকে বুঝিয়ে বললে আমাদের ক্ষমা করে দেবে।

রোশান বলল তোমার তাই মনে হচ্ছে ?

হুম ।

ঠিক আছে আমি যাব। তবে আমার একটা শর্ত আছে।

কি শর্ত ?

মা’কে বুঝানোর দায়িত্ব্য কিন্তু আমি নিতে পারবনা। কেননা, মায়ের সামনে আমার গুছানো কথাগুলোও এলমেলো হয়ে যায়।

রুপন্তি বলল ইডিয়েড! হি হি হি……… চল।





নব-দম্পতি রিক্সায় করে যাচ্ছে। বাইরে প্রচন্ড রোদ। গরমে একেক জনের শরীরে থেকে ঘাম বৃষ্টির মত টুপটাপ ঝরে পরছে। রোশান রিক্সার হুট বার বার তুলে দিচ্ছে। আর রুপন্তি বার বার তা নামিয়ে দিচ্ছে। রুপন্তির কাছে নাকি এটা বানরের খাচার মত মনে হচ্ছে। সে জানিয়ে দিয়েছে বানরে খাচার ভেতর বসে সে যেতে পারবে না। রোশান মনে মনে বলল হে ঈশ্বর! এই মায়াবতীর মনে একটু দয়া-মায়া দান করো। রুপন্তি বলল ওগো শুনছ?

বল।

এখন থেকে আমরা পরস্পরকে নাম ধরে ডাকব না।

মানে কি! নাম ধরে ডাকব না তো কিভাবে ডাকব ?

রুপন্তি বলল ওগো! হ্যাগো! এভাবে ডাকব।

আমি এভাবে ডাকতে পারব না।

তাহলে আমি একাই ডাকব। ওগো! তুমি চাইলে হুট উঠিয়ে দিতে পার।

তারা রিক্সা কাপিয়ে হাসতে লাগল। রাস্তার লোকজন তাদের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তু এসব খেয়াল করার সময় এখন এদের নেই।







রোশানের মা’র মাথায় পানি ঢালা হচ্ছে। সে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে ঢুকার সাহস পাচ্ছে না। কারন রোশানের সাথে ফোনে কথার বলার পরই তিনি অজ্ঞান হয়ে পরে যান। হঠাৎ করে অবিবাহীত ছেলের বৌ-বাচ্চার কথা শুনলে সব মায়েরই অজ্ঞান হয়ে পরে যাওয়াটা স্বাভাবিক। এতক্ষন কাজের মেয়েটা (রেহানা) মায়ের মাথায় পানি ঢেলে দিচ্ছিল। এখন রুপন্তি এগিয়ে গেল। আয়েশা বেগমের জ্ঞান ফিরল। তিনি চোখ মেলে তাকালেন। রুপন্তি বলল মা এখন কেমন লাগছে ? আগের চেয়ে একটু সুস্থবোধ করছেন?

আমার পাশে বসে মাথায় পানি ঢেলে দিচ্ছ। তুমি কে মা ?

মা আমি রুপন্তি। আপনার বৌমা।

আয়েশা বেগম বললেন ও বৌমা। খুব তৃষ্ণা পেয়েছে পানি খাব। এক গ্লাস পানি এনে দাও তো। উনার এমন স্বাভাবিক কথা-বার্তায় আসে পাশের সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। তারা কিছুই বুঝতে পারছেনা। মদন মোহন ভাবছে মা’র মাথা খারাপ হয়ে যায়নি তো?

রুপন্তি পানি এনে দিল। আয়েশা বেগম ধীরে সুস্থে পানি শেষ করে বলল বৌমা! আমার বাদর ছেলেটা কোথায়? সে আসেনি?

এসেছে মা। কিন্তু আপনার সামনে আসার সাহস পাচ্ছে না। ও বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। মা ওকে ডেকে আনব ?

না থাক! বড্ড ঘুম পাচ্ছে আমার। তুমি ভারি মিষ্টি মেয়ে। কি সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বল। তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে মা। যাও বাদরটাকে গিয়ে বল ওকে আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। আর শোনো বৌমা! আমার পাগল ছেলেটাকে তুমি একটু দেখে রেখো।

রুপন্তি বলল মা আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। আমি আপনার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছি। আপনি ঘুমানোর চেষ্টা করুন।

আয়েশা বেগম গভির ঘুমে তলিয়ে গেলেন।





রোশান বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছে। স্বাদ পাতার বিড়ির মত মনে হলেও তা আসলে বিড়ি না। কম দামের সিগারেট। কি যেন নাম ঠিক বুঝা যাচ্ছে না। তবে ধোয়া আছে বটে! ছোট বারান্দাটা ধোয়ায় মোটামুটি অন্ধকার হয়ে গেছে। রুপন্তি এসে রোশানের পাশে দাড়াল। রোশান জিজ্ঞেস করল এখন মায়ের অবস্থা কেমন ?

আগের চেয়ে ভালো। কিন্তু তুমি সিগারেটের ধোয়ায় এ কি অবস্থা করেছ? আর এই বিষাক্ত জিনিসই বা কবে থেকে খাওয়া ধরলে ?

না মানে মাথাটা একটু ধরেছিল তাই…

ঠিক আছে। ঠিক আছে। আজকের মত ক্ষমা করে দিলাম। কিন্তু এর পর আর ক্ষমা করা হবে না।

হুম। মায়ের সাথে এতক্ষন তোমার কি কথা হল ?

রুপন্তি বলল মা তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। আর বলেছে আমাকে উনার খুব পছন্দ হয়েছে। আমারও মাকে খুব পছন্দ হয়েছে। তুমি শুধু শুধু আমাকে ভয় দেখিয়েছিলে কেনো ? বলেছিলে তোমার মা নাকি অনেক রাগী মহিলা।

ভুল বলেছিলাম। আসলে আমার মায়ের মত মমতাময়ী নারী আমি এজন্মে খুব কমই দেখেছি।

তাহলে আমাকে মিথ্যে বলেছিলে কেনো ?

তোমাকে ভয় দেখানোর জন্য বলেছিলাম। রুপন্তি তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি।

কি কথা ?

তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। মনে হচ্ছে আমি স্বপ্নে যে স্বপ্নপরীটাকে দেখতাম। সে এখন আমার চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

রুপন্তি রোশানের বুকের উপর মাথা রেখে বলল তাই বুঝি ?

রোশান রুপন্তিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। বলল হুম তাই। বলেছিলাম না? “উই ম্যাড ফর ইচ আদার”

রুপন্তির চোখ ফেঁটে অশ্রু গড়িয়ে পরছে তার মসৃন গালে। সে সাথে ভিজিয়ে দিচ্ছে রোশানের বুকে ল্যাপ্টে থাকা পাঞ্জাবীটাও। এ অশ্রু আনন্দের। কখনো যেন এই আনন্দ অশ্রু চোখ থেকে শুকিয়ে না যায়।





================ ☺ ==================



মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৪৯

কাওছার০ বলেছেন: চমৎকার। ভালো লিখেছেন

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:০০

নির্লিপ্ত কাব্য বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

২| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:১৩

নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন: অনেক বড় গল্প । আস্তে ধীরে সময় নিয়ে পড়লাম। শেষটায় এসে গল্পটাকে ভালবেসে ফেললাম। আমার এই গল্পটা পড়ে দেখতে পারেন। প্রথম অংশটা কাছাকাছি। বিশ্বাসঘাতক

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:০২

নির্লিপ্ত কাব্য বলেছেন: আপনার গল্পটা সম্ভবত আমি পড়েছি। শেষের দিকে বেশ ভালো লেগেছিল।

মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.