![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষ।
গল্পের নামঃ চোখের ইশারা।
.
> কেন আসলেন? (নিধি)
- এমনিই ইচ্ছে হল তাই। (শিহাব)
> আমার এসব একদম পছন্দ না।
- কেন?
> আমাদের বিয়ে কিন্তু এখনো হয়নি। সুতরাং এভাবে না বলে চলে আসা আমি পছন্দ করি না।
.
শিহাব কিছু বলতেই যাবে ঠিক তখনই নিধির আব্বু শিহাবকে ডাক দিয়ে বলল
~ লং জার্নি করে এসেছ যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।
- জ্বি আচ্ছা।
.
শিহাব হল নিধির ফিয়ান্সে (হবু বর)। তাদের এংগেইজমেন্ট হয়েছে মাসখানেক আগে। বিয়েটাও হয়ে যেত কিন্তু নিধি বলেই দিয়েছে তার ছোট ভাইবোন বুঝদার না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে করবে না। শিহাবও মেনে নিয়েছে। তাই এই ব্যাপারে নিধির বাবা তেমন কিছু বলে না। শিহাব ও নিধি ভিন্ন শহরে থাকে। হঠাৎ হঠাৎই শিহাব নিধিদের শহরে চলে আসে নিধিকে দেখার জন্য। নিধিও বুঝে বাট না বুঝার ভান করে থাকে। আর শিহাব নিধিকে বুঝতে না দেয়ার জন্য বিজনেসের নাম দেয়।
.
ডিনার শেষে সবাই মিলে ডাইনিং রুমে বসে টিভি দেখছে। নিধি অন্য রুমে বসে মোবাইল চালাচ্ছে। হঠাৎ বাবার ডাক। নিধি ডাইনিং রুমে এলো।
~ শিহাবকে নিয়ে একটু ঘুরে আসিস। ও তো এই শহর তেমন একটা চিনে না।
= আমিও যাব। (রাফাত; নিধির মেজ ভাই)
নিধি মাথা ঝুলিয়ে ভেতর রুমে চলে গেল। নিধি জানে শিহাবই তার বাবাকে কিছু একটা বলেছে তাই বাবা এটা বলেছে। নিধরা চার ভাইবোন। নিধি, রাফাত ও দুটা পিচ্চি ভাইবোন।
.
পরেরদিন যোহরের নামাজের পরপরই তারা বের হল কারণ এখন রমজান মাস। সন্ধ্যায় ইফতার ও তার কিছুক্ষণ পর তারাবি আছে। ঘর থেকে বেরিয়ে রাফাত বলল
= ভাইয়া কোথায় যাবেন?
- এখানে ভাল শপিংমল কোথায়?
> মানুষ বুঝি শপিংমলে ঘুরে?
- তা নয় যাস্ট পাঞ্জাবির কিছু কালেকশন দেখব।
> আপনার শহরে পাঞ্জাবির অভাব নাকি?
- তা নয় তবে এই শহরের সবকিছুই সুন্দর।
ইঙ্গিতটা নিধির দিকে।
= শপিংমলের মধ্যে বর্তমানে আখ**** ভাল।
- ওকে চল তাহলে। (রাফাতকে) ঠিক আছে? (নিধিকে বলল)
> আপনার ইচ্ছা।
.
অতঃপর শপিংমলে এলো। অনেক ঘুরাঘুরি করে পা ব্যাথা করায় নিধি একটা দোকানের টুলে বসলো। নিধির সামনেই একটা লেহেঙ্গা ছিল।
- এটা পছন্দ হয়েছে?
> আমি কি তা বলেছি? (কিছুটা রাগ)
- তাহলে এটার দিকে তাকিয়ে আছ যে?
> আমি তাকাইনি। যাস্ট একটু বসলাম।
.
নিধি আবার হাটা দিল। কিছুক্ষণ পর শিহাব এসে বলল
- এই নিন। (শপিং ব্যাগ)
> কি এটা?
- নিজেই দেখুন।
তাকিয়ে দেখল সেই লেহেঙ্গাটা।
> এসবের মানে কি? (প্রচন্ড রাগ)
= দেখ আপু এখানে রাগারাগি করিস না। মানুষ খারাপ বলবে।
> আমি বাসায় যাব।
কথাটা বলেই নিধি হাটা শুরু করলো।
.
অতঃপর বাসায় এসে নিধি রুম আটকিয়ে বসে রইলো। রাফাত অনেকক্ষণ ধরে ডাকাডাকি করল তবুও লাভ হল না। কিছুক্ষণ পর শিহাব এসে বলল
- দেখ দরজা খুলো। স্যরি আর এমন করব না। প্লিজ দরজা খুলো।
নিধি কোনো সাড়া দেইনি।
.
আরও কিছুক্ষণ পর
- সবার ক্ষিধে লেগেছে। এবার তো এসো। পিচ্চিরাও না খেয়ে আছে।
নিধি দরজা খুলে পাকঘরে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর ডিনার দিল। খাবারের পর নিধি পাকঘরে বাসনকোসন পরিষ্কারে ব্যস্ত তখন শিহাব এলো।
- স্যরি মাফ করে দাও।
> পাকঘরে আসার অনুমতি কে দিয়েছে? আগেই বলেছি আমাদের বিয়ে এখনো হয়নি। অতএব নিজের সীমার মধ্যে থাকুন।
- চাইলে তো বিয়েটা এখনই করা যায়। শুধু তোমার অনুমতির প্রয়োজন।
> যান এখান থেকে। (খুব রেগে বলল)
.
শিহাব চলে গেল।
সকালে,
~ দেখ মা, আজ যদি তোর মা বেঁচে থাকত তবে তোর মা-ই তোকে সব গুছিয়ে বলত আমি গুছিয়ে বলতে পারি না তবুও বলছি শিহাবকে মেনে নে। ছেলেটা তোকে ভালবাসে। তাইতো বারবার ছুটে আসে। বড় হয়েছিস বুঝার চেষ্টা কর।
নিধি শুধু মাথা দুলালো।
.
কিছুদিন আগে নিধির অসুখ হয়েছিল। ডাক্তার দেখানোর পর জানা গিয়েছিল টাইফয়েড হয়েছিল। তা শুনে শিহাব ছুটে এসেছিল। নিধিও জানে শিহাব তাকে খুব ভালবাসে কিন্তু নিধি কেন যেন ভালবাসতে পারছে না, আপন ভাবতে পারছে না।
.
- আসতে পারি?
নিধি নড়েচড়ে বসলো। নড়াচড়ার মধ্যে শিহাবের চোখে পরলো যে নিধি ড্রয়ারে একটা ছবি লুকিয়েছে। নিধি মাথা দুলিয়ে আসার অনুমতি দিল।
শিহাব টেবিলের অপরপ্রান্তে দাঁড়াল। জানালা দিয়ে আকাশ দেখা যায়।
- আকাশটা ইদানিং খুব বিষণ্ণ তাই না? সারাক্ষণ কান্নাকাটি করে। যেমনটা তোমার মন করে।
নিধি অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ালো চোখের পানি মুছার জন্য।
- আবিদকে খুব ভালবাসেন তাই না?
নিধি ছলছল চোখে শিহাবের দিকে তাকালো।
- আসলে ছেলেটা ছিলই এমন। ভুলার মত না। তুমি অবাক হচ্ছ আমি কিভাবে জানলাম আবিদের কথা? স্যরি তোমার ডাইরিটা পড়েছিলাম।
.
নিধি ড্রয়ারে হাত দিয়ে দেখল তার ডাইরি নেই। শিহাব হাত বাড়িয়ে ডাইরিটা দিল। নিধি তাতক্ষনিক ডাইরিটা নিয়ে ড্রয়ারে রাখল।
- আমি আবিদ সম্পর্কে আগেই জানতাম। তোমার আব্বু, রাফাত সবার কাছেই শুনেছি। ভেবেছিলাম আমার ভালবাসা দিয়ে আবিদের নামটা মুছে দিব কারণ তোমাকে প্রথম দেখায় খুব ভালবেসে ফেলেছি। বাট ডাইরিটা পড়ে বুঝলাম যে আবিদকে মুছে দেয়া সম্ভব না। তার মত ছেলে হয় না। আমি আবিদের তুলনায় তুচ্ছ। তবে তোমাকে খুব ভালবাসি। যদিও তা আবিদের ভালবাসার সামনে কিছু না। তবুও আমি আমার সবটুকু দিয়েই তোমাকে ভালবাসি। আসলে আমি সাজিয়ে গুছিয়ে কথা বলতে পারি না। বিজনেস ম্যান তো তাই টাকার ব্যতীত বাদে অন্য কিছু মাথায় আসে না। কিন্তু মনের মধ্যে তুমি এসেছ।
.
কথাগুলো বলে শিহাব চলে গেল। নিধির চোখ বেয়ে টলমল করে পানি ঝরছে। নিধি আবিদকে ভুলতেই পারছে না। যদিও আজ আবিদ এই দুনিয়াতে নেই কিন্তু নিধির মন থেকে আবিদ আজও মুছে যায়নি। নিধি সারাদিন বালিশ চেপে অঝোর বেগে কান্না করলো। কি করবে সে বুঝে উঠতে পারছে না। কান্নায় সমাধান পাওয়া যায় না তবে সাময়িকভাবে শান্তি পাওয়া যায়। তাই নিধি প্রায় রাতে অঝোর বেগে কান্না করে।
.
পরেরদিন সকালে,
- আচ্ছা এই কান্নাকাটি না করলে হয় না? এতে ওপারের মানুষগুলোও তো কষ্ট পায়।
> কই আমি তো কান্না করিনি।
- তোমার চোখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সারারাত কান্না করেছ।
নিধি চুপ হয়ে গেল।
- আগামীকাল চলে যাব।
নিধি শিহাবের দিকে তাকাল। কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু বলতে পারছে না।
- যেহেতু আগামীকাল চলে যাব তাই ভাবছি আজ কোথাও ঘুরতে যাব।
> আপনার ইচ্ছে।
- যদি সাথে তুমি যাও তাহলে খুশি হব।
নিধি চুপ করে রইলো।
- বিকাল ৩টায় বের হব। রেডি থেকো।
শিহাব চলে গেল।
.
যথা সময়ে নিধি রেডি হল। পিচ্চি ভাইবোন দুটাকেও রেডি করালো।
- আরে বাহ! ওরা গেলে তো আরও মজা হবে।
> হুম চলুন।
ঘর থেকে বের হয়ে
> কোথায় যাবেন?
- আপনার শহর আপনিই বলুন।
> শহর আমার না আমি থাকি যাস্ট এটাই।
- ঐ আর কি! তো কোথায় গেলে ভাল হবে?
> আপনার ইচ্ছে।
- আশেপাশে কোথাও পার্ক আছে?
> হুম আছে।
y
.
অতঃপর পার্কে,
পিচ্চিরা এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি করে খেলা করছে। নিধি শিহাবও তাদের সাথে খেলছে। এভাবে কিছুক্ষণ যাওয়ার পর পিচ্চিদেরকে খাওয়ানোর জন্য একটা জুস ও দুটা কাস্টার্ড কেক আনলো। পিচ্চিরা খাচ্ছে।
- ওদের দিকে তাকালে যেন মনে হয় দুনিয়ার সব সুখ এখানেই তাই না?
> হুম।
- আল্লাহর কাছে বেশি কিছু না শুধু এমন ছোট্ট মিষ্টি একটা পরিবার চাই।
কথাটা বলে শিহাব নিধির দিকে তাকালো। নিধির চেহারায় এক অদ্ভুত ভাব দেখা যাচ্ছে। যার অর্থ শিহাব বুঝে উঠতে পারলো না। নিধি শিহাবের দিকে আড় চোখে তাকালো। চোখাচোখি হতেই নিধি দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে বলল
> আমাদের এখন যাওয়া উচিত। ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসছে।
.
অতঃপর পার্ক থেকে বেরিয়ে পরলো। সামনেই একটা শপিংমল।
> আমার কিছু কাজ আছে শপিংমলে।
- তো চল।
.
শপিংমলে ঢুকে নিধি বলল
> তুমি ওদেরকে নিয়ে এখানে দাঁড়াও আমি আসছি।
- কোথায় যাবে?
> বেশি প্রশ্ন করা ভাল না। এখানেই দাঁড়াও।
.
নিধি চলে গেল। শিহাবও চুপচাপ পিচ্চিদের নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ শিহাবের মাথা ঘুরে উঠল। একটু আগে নিধি কি তাকে তুমি করে বলেছে? কারণ নিধি তাকে আপনি করেই বলে। ইসসস! সুন্দর মুহূর্তটা মিস করে ফেলল। জিজ্ঞেস করার উপায়ও নেই। শিহাবের মন আনচান করতে লাগল। কিছুক্ষণ পর নিধি ফিরে এলো। হাতে একটা শপিং ব্যাগ। তবে শিহাব জিজ্ঞেস করল না ব্যাগে কি আছে। কারণ যেহেতু নিয়ে যায়নি সুতরাং জিজ্ঞেস করাও ঠিক হবে না। তাছাড়া শিহাবের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে নিধি কি তাকে তুমি করে বলেছিল?
.
> এবার বাসায় যাওয়া যাক।
- হুম। চল।
> কি কিনেছি জানতে চাইবে না?
শিহাব অবাক হয়ে নিধির দিকে তাকিয়ে রইলো। না এবার ভুল শুনেনি নিধি তুমি করেই বলেছে। নিধি কাশি দিয়ে শিহাবের দৃষ্টি আকর্ষণ করলো।
- হুম হুম।
> কিসের হুম হুম?
- না কিছু না।
> দেখবে না কি কিনলাম?
- নিয়ে গেলে তো দেখতামই।
.
নিধি ব্যাগটা শিহাবের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল
> দেখ।
শিহাব দেখল ব্যাগে একটা পাঞ্জাবি।
শিহাব নিধির দিকে তাকিয়ে রইলো।
> তোমার শহরে নাকি ভাল পাঞ্জাবি পাওয়া যায় না। তাই এটা নিলাম। তাছাড়া এই শহরের সবকিছুই সুন্দর।
শিহাব অপলক ভাবে নিধির দিকে তাকিয়ে রইলো। নিধির চেহারায় লজ্জা, মায়া, ভালবাসার সংমিশ্রণ দেখা যাচ্ছে। শিহাবের মুখে এক বিজয়ী হাসি ফুটে উঠলো। যা দেখে মনে হচ্ছে শিহাব বিশ্ব জয় করে ফেলেছে। হ্যাঁ ভালবাসার জয় বিশ্ব জয়ের তুলনায় কম নয়। শক্তি দিয়ে বিশ্ব জয় করা যায় কিন্তু কারও মন নয়।
.
নিধি আবার কাশি দিয়ে বলল
> আমাদেরকে কিন্তু তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে। ইফতারের সময় ঘনিয়ে এসেছে।
- হুম চল তাড়াতাড়ি।
.
অতঃপর হাটছে দুজন। সাথে আছে নিধির পিচ্চি ভাইবোনও। কিছুক্ষণ পর তাদের দুটি হাত এক হয়ে গেল। হাটছে তারা একই গন্তব্যে। তারা কিন্তু মুখে কিছু বলেনি। তাদের ভালবাসার যাত্রা শুরু হয়েছে চোখে চোখে। গানের লাইন বাস্তব জীবনের সাথেও মিলিত। "চোখ যে মনের কথা বলে।" হ্যাঁ শিহাবের ক্ষেত্রেও এটাই হয়েছে। নিধির চোখের ইশারা শিহাবের মন বুঝে নিয়েছে। তাই তো শিহাবের নিধির হাতে হাত ধরে ভালবাসার শুভ যাত্রাটাশুরু করলো। সুখে থাকুক তারা।
©somewhere in net ltd.