![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সততি লিখলেই মাইনাছ আর বেশী সততি লিখলে মডু স্ট্যাটাস নাবায়া দেয়!
বাঙলাদেশের কোচিং নগরী কোনটি? অথবা কোচিং নগরী হিসাবে কোন নগরীকে চিহ্নিত করা যায়? অথবা কোন নগরী কোচিং-এর সূতিকাগার, জন্মভূমি? শাহীন-সৃষ্টি-শহিদ ইত্যাদি নামের কোন মর্ম যদি আপনার কাছে থাকিয়া থাকে, তাহা হইলে আপনি বিসিএস পরীক্ষায় বিন্দুমাত্র চিন্তা না করিয়া পাশ করিতে পারিবেন। কিছু দিন পরে বিসিএস বা অনুরূপ প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষায় এই জাতীয় প্রশ্ন আসিতেও পারে। সেই কোচিং নগরীতে বর্তমানে চরম দুর্দশা চলিতেছে।
দুর্দশা কোচিং ব্যবসা লইয়া নহে। সমস্যা অন্যত্র। এই শহরে ইদানিং বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা প্রায় ভঙ্গুর হইয়া পড়িয়াছে। মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাস শুরু হইবার আগেই সরকার বাহাদুরের বেশ কিছু উজির এবং আর্মত্যবর্গ প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন যে, এই মৌসুমে কোন বিদ্যুৎ বিভ্রাট হইবে না। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বাহাদুর সেই কথা বলিয়া দোকানসমূহ গভীর রাত্রিকাল পর্যন্ত খোলা রাখিয়া বাঙলার আপামর ব্যবসায়ীদের উত্তমরূপে ব্যবসা করিবার সুযোগ দান করিবার ঘোষণা দিয়াছিলেন। কিন্তু কোচিং নগরের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সেইরূপ না হইবার দরূন ব্যবসায়ীগণ কিছুতেই ব্যবসা জমাইয়া উঠিতে পারিতেছেন না। প্রায় মধ্য আয়ের দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নগর, যাহার মূল ব্যবসা কোচিং নির্ভর, সেখানে এইরূপ ঘটনায় সকল প্রকারের ব্যবসারই প্রভূত ক্ষতি সাধিত হইতেছে।
কোমল-প্রাণ শিক্ষার্থীরা সরকার বাহাদুরের বাহাদুরী সম্পর্কে অবগত না হইলেও তাদের দিশাহারা অভিভাবককূল বিদ্যুতের অভাব দিবারাত্র অনুধাবন করিয়া চলিতেছেন। শহরের প্রশাসক নিজ শহরের কোন বদনাম না চাহিলেও বিদ্যুৎ সমস্যার ব্যাপারে কিছু করিয়াছেন বলিয়া জানা যায় না। খুব সম্ভবতঃ সামন্ততান্ত্রিক গণতন্ত্রের এই দেশে প্রজাকূলের মঙ্গল দেখভালের দায়িত্ব সরকার বাহাদুরের নিয়োগকৃত সিভিল সার্ভেন্ট (সিভিল = সুশীল, সার্ভেন্ট = চাকুরে ) গোষ্ঠির সম্পাদনকৃত দায়িত্ব বা কর্তব্যের ভেতরে পড়ে না। তাহাদের বাসস্থানের এলাকায় বিদ্যুতের অভাব হয় না, এবং সেইটূকু অঞ্চল যে সমগ্র কোচিং নগরী নহে তাহা বুঝিবার ক্ষমতা তাহাদের প্রয়োজন হয় নাই। এই কথা তো সত্য যে ঢাকা যেমন সমগ্র বাংলাদেশ নহে, তেমনি বাঙলাদেশ মানে শুধু মাত্র ঢাকা শহরটিও নহে।
কোচিং নগরে ইদানিং কালে কিছু কিছু উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা পাইয়াছে। এই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি সরকার বাহাদুরের কোন সুদৃষ্টি আছে কিনা, তাহা প্রজাকূলের বোঝা সাধ্যাতীত। তাই মাঝে মাঝে সামান্য বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা অবলোকন করিয়া কোচিং নগরের প্রজাকূলের প্রতিটি রোমকূপ শিহরিয়া ওঠে। কেননা পেপার পত্রিকায় পড়িয়া এই গর্দ্ধব প্রজাকূলের ধারণা জন্মাইছে যে, যে শহরে জলাবদ্ধতা নাই, তাহারা আসলেই ফেলনা শহর। ঢাকার দিকে তাকাও, চট্টগ্রামের দিকে তাকাও, সিলেটের দিকে তাকাও, কুমিল্লার দিকে তাকাও, নারায়ণগঞ্জের দিকে তাকাও -- যে দিকেই তাকাও না কেন লক্ষ্য করিবে জাতে ওঠা প্রতিটি শহরেই সামান্য বৃষ্টিতেই কি পরিমাণ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সেই তুলনা করিলে কোচিং নগরী যে জাতে উঠিয়াছে, তাহাতে এই শহরের বসবাসকারী প্রজাকূলের উত্তেজনার আর শেষ নাই। উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান থাকিলেই যে সরকার বাহাদুর শহরের প্রতি কৃপাদৃষ্টি নিক্ষেপ করিবেন, এমন কথা কেউ কি কোথাও শুনিয়াছে? বরঞ্চ জলাবদ্ধতাই এই শহরকে জাতে তুলিয়াছে। এইবারে সিটি করপোরেশন না হইলেও দ্রুত যে উহার বাস্তবায়ন হইবে, তাহা কে না জানে?
সহস্রাব্দ লক্ষ্যের একটি অন্যতম লক্ষ্য হইল অতিদ্রুত মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়া। সেই লক্ষ্যকে সামনে রাখিয়া আমাদের সরকার বাহাদুর অনেক পরিকল্পনা করিয়াছেন। সামন্তবাদী গণতন্ত্রের আওতায় বসবাসকারী সকল প্রজাকূলের উচিত সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকার বাহাদুরকে সহযোগীতা করা। আমাদের মত সরকারের সমালোচনারকারীদের সহ্য করিবার মত সহনশীলতা দেখাইবার লেশ মাত্র চিহ্ন তাহাদের থাকিলে তাহা পরিতাজ্য। কোচিং নগরের প্রজাকূল বিদ্যালয়ের পাঠ বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের মতই আজ নাগরিক সুবিধাদি থুক্কু বিদ্যুৎ সুবিধা প্রাপ্ত হইতেছেন না। ইহা কি মহামান্য সরকার বাহাদুর একবার চাহিয়া দেখিবেন? এই মূহুর্তে ফুরসৎ না পাইলে এই রমজান মাস কিংবা জান-প্রাণ অতিষ্ঠকারী গরম কাল পার হইবার পরে দৃষ্টিপাত করিলেও চলিবে। এমন আশ্বাস পাইলে সেই পর্যন্ত প্রজাকূল মুখে কুলুপ আঁটিয়া থাকিবে, তাহাতে সন্দেহ নাই।
________________________________________
লেখক জন্মসূত্রে সামন্ততান্ত্রিক গণতন্ত্রের এই বাঙলাদেশের নগন্য প্রজাকূলের একজন, নিয়মিত আয়কর পরিশোধকারী, দানসূত্রে নহে ট্যাঁকের অর্থ খরচ করিয়া বিদ্যুৎ সেবা ক্রয়কারী ভুক্তভোগীদের একজন।
©somewhere in net ltd.