![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মাটির মানুষ ভিজলে কাদা হয় না কেন প্রশ্ন জাগে, মানুষ গড়া অন্যকিছুয় আমার শুধু এমন লাগে।
আগের পর্বগুলো
হাজী খামির উদ্দিন বাহিরের বারান্দায় গম্ভীর মুখে পায়চারী করছেন। ভোর হবে একটু পরেই। বারান্দার এক পাশে চুপ চাপ বসে আছে সুলেমান। বাড়ির সব লোকজন জেগে গেছে। চাপা গলায় কথা বলছে নিজেদের মধ্যে। রহীমা খাতুন একটু পর পর দৌড়ে রান্না ঘরে গিয়ে পানি গরম করে নিয়ে আসছে। ভেতরের ঘরে ডাক্তার ভূপিন্দর গাঙ্গুলি মেয়েটার চিকিৎসা করছেন গত এক ঘন্টা যাবত। বাড়ির ছোটদের ভেতরে যেতে বারণ করেছেন রহীমা। ভেতরে কেবল ডাক্তার বাবু আর হাজী খামির উদ্দিনের তিন স্ত্রী এবং মেহের বকসের স্ত্রী রয়েছে। আর কেউ যায়নি ভেতরে।
হাজী মেহের বকস বড় ভাইয়ের দিকে এগিয়ে এলেন চিন্তাক্লিষ্ট মুখে, “ভাইজান, মেয়েটা কে? কিছু জানেন? এত রাত্রে সুলেমান হঠাৎ কোত্থেকে ধরে আনল মেয়েটাকে? পরিচয় কি?”
হাজী খামির উদ্দিন আড় চোখে বসে থাকা সুলেমানের দিকে তাকালেন। সুলেমান বসে বসে বৃষ্টি দেখছে। তাঁদের কথার দিকে মনোযোগ নেই, “বলতে পারি না। ঘন্টা খানেক আগে হঠাৎ দরজায় ধাক্কার শব্দ শুনে ঘুম ভাঙ্গে গেল। খুলে দেখি সুলেমান, কোলে অজ্ঞান মেয়েটা। দুই পা দিয়ে সমানে রক্ত পড়তেছে। দেরি না করে ডাক্তারকে খবর দিলাম। পরিচয় পরে জানা যাবে। আগে মেয়েটা সুস্থ হোক। পায়ে সাপের কামড়ের দাগ দেখলাম অনেকগুলা। আল্লাই জানে কি হয়। দোয়া কর মেয়েটার জন্য।” তজবী গুণতে গুণতে হাটতে লাগলেন।
খায়রুল আনাম তার ঘর থেকে বের হয়ে উঁকি দিল বারান্দায়। সবাইকে দেখে তাড়াতাড়ি ভেতরে ঢুকে পড়ল। বাবার ধমক খেতে চায় না।
ধীরে ধীরে সময় গড়াতে লাগল। বৃষ্টি থেমে গেছে। ভোরের আলো ফুটেছে। মেহের বকস চলে গেলেন মসজিদে। সুবহ সাদিক হয়ে গেছে। ফযরের আযান দেয়া দরকার। এভাবে এখানে দাঁড়িয়ে থাকার কোনো অর্থ নেই। খামির উদ্দিন ওযু করে বেরিয়ে গেলেন মসজিদের উদ্দেশ্যে। তাঁর সঙ্গে সঙ্গে খায়রুল আনাম, মান্নান, আবুল কালাম, দুলালও গেল মসজিদে।
সুলেমান বারান্দায় পাথরের মূর্তির মত বসে রয়েছে সেই তখন থেকে। এখনো নড়েনি এক চুল। মসজিদ থেকে ফিরে তাকে একই জায়গাতে পেলেন খামির উদ্দিন। ডাক্তার ভূপিন্দর গাঙ্গুলি রুমালে হাত মুছতে মুছতে বারান্দায় বেরিয়ে এলেন, হাজী খামির উদ্দিনের দিকে তাকিয়ে চিন্তিত গলায় বললেন, “তোমার রোগীর পায়ের এই দশা কেমনে হইল একটু বলতো খামির? পা দুইটার যে কত্তগুলা সেলাই দিতে হইল আমি নিজেই ভুলে গেছি। তার ওপর সাপের কামড়! বিষে ধরেনি বলে বাঁচে গেছে। ইঞ্জেকশন দিছি। বিষে কাজ করবে না আর। হুঁশ ফিরলে একটু খবর দিও আমারে।”
“কেমনে হল সেটা তো আমারও প্রশ্ন। মেয়েটার হুঁশ ফিরলে জানা যাবে। তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেললাম ভূপেন। মাঝ রাত্রে ডাকে আনা- কম ঝামেলার কাজ নাকি।” হাসলেন খামির উদ্দিন।
“আরে ফালাও তোমার কষ্ট। কাজই তো এইটা আমার। রাতে কাজ করি, দিনে ঘুমাই। রাতে বিপদ বেশি হয় কিনা। তাই রাতে ঘুমাই কম। এখন যাই। পরে দরকার পরলে ডাকিও। বৌ দি’কে অষুধ দিয়াসছি। ঠিকমত খাওয়া দিও।”
নজল আলী এগিয়ে এসে ডাক্তার বাবুর ব্যাগটা নিল। তাঁকে বাড়ি পৌছে দিয়াসতে গেল। ওরা চলে যাবার পর হাজী খামির উদ্দিন ধীর পায়ে ঘরটায় প্রবেশ করলেন, যেখানে মেয়েটাকে রাখা হয়েছে। মেয়েটার ভেজা কাপড় পালটে দেয়া হয়েছে। পায়ে বড় বড় ব্যান্ডেজ। ঘুমানোর মত শুয়ে রয়েছে। ঘরের জানালাগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। সকালের ঠান্ডা আলো এসে ঘরের প্রতিটা কোন ভরিয়ে দিয়েছে।
রহীমা খাতুন মেয়েটার মাথার কাছে বসে রয়েছেন। বাকিরা চলে গেছে যার যার ঘরে। হাজী সাহেব ছড়িতে ভর দিয়ে এগিয়ে এলেন। খুব সাবধানে মেয়েটাকে না জাগিয়ে বসলেন একপাশে। রহীমা খাতুন স্বামীর দিকে তাকালেন, “মেয়েটারে দেখছেন? কত মায়া মায়া চেহারা না? দেখলেই বুকের ভিতরটা কেমন জানি করে।”
হাজী সাহেব মাথা ঝাঁলাকেন। আসলেই তাই। সকালের কোমল আলো এসে মেয়েটার মুখে পড়েছে। বড় মায়া কাড়া মিষ্টি একটা মুখ। সকালের আলোর সাথে মিশে গিয়ে ঘরটা যেন ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।
“আহারে, না জানি কোন ঘরের মেয়ে। কোন বিপদে যে পড়ছিল মেয়েটা আল্লাহ পাকই জানেন।” রহীমার কন্ঠে মেয়েটার জন্য মমতা ঝড়ে পড়ল।
হাজী খামির উদ্দিন কিছু বললেন না। চুপ চাপ বসে রইলেন। মেয়েটার মুখের সাথে তাঁর বোনের চেহারার অদ্ভূত একটা মিল আছে। তিনি কিছু বলতে পারলেন না। কেবল এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন মেয়েটার দিকে।
নীরবে সময় পার হচ্ছে। সব যেন থেমে রয়েছে। এক সময় হাজী খামির উদ্দিন উঠে দাঁড়ালেন, “ক্ষিধা পাইছে রহীমা। খাবার লাগাও।”
রহীমা খাতুনও উঠে দাঁরালেন, “আসেন। পাক ঘরে গিইয়া বসেন, পিঠা বানায়ে দিতাছি।”
দু’জনে দরজার দিকে চলে এসেছেন এমন সময় পেছন থেকে অস্ফূট শব্দ শুনতে পেলেন। ঘুরে তাকালেন দু’জনেই। বিছানায় শোয়া মেয়েটা চোখ খুলে তাকিয়েছে! কিছু বলার চেষ্টা করছে।
তাড়াতাড়ি দু’জনে এগিয়ে গেলেন মেয়েটার কাছে। রহীমা খাতুন ওর মাথার কাছে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন, “এখন কেমন লাগতাছে?”
মেয়েটা একবার হাজী সাহেবের দিকে আরেকবার রহীমা খাতুনের দিকে ভীত চোখে তাকাল।
“তোমার কোনো ভয় নাই। তুমি ভাল জায়গাতেই আছো।” হাজী সাহেব অভয় দিলেন।
সাথে সাথে মেয়েটা রহীমা খাতুনের হাত খাঁপা হাতে ধরে কেঁদে ফেলল, “মা, ও মা! আমারে বাঁচাও। যাত্রাদলের ম্যানেজার আমারে কিনে আনছে। আমারে বাঁচাও। আমি পলায় আসছি। ও মা, আমারে একটু লুকায় রাখো?”
মেয়েটার আকষ্মাত মা ডাক শুনে রহীমা খাতুনের চোখে পানি চলে এলো, “ভয় পাইও না। এইটা হাজী বাড়ি। কেউ তোমার দিকে চোখ তুলেও তাকাইবো না।”
হাজী খামির উদ্দিন আবেগি মানুষ নন। তাই থমথমে গলায় বললেন কেবল, “তুমি থাকো। কেউ তোমারে কিছু বলতে আসবে না।”
মেয়েটার ভেজা চোখে হাসি ফুটল। কৃতজ্ঞ চোখে তাকিয়ে রইল তাঁদের দিকে।
“তোমার নাম কি বেটি?” রহীমা খাতুন জিজ্ঞেস করলেন।
“জয়তী বিশ্বাস।”
রহীমা খাতুন স্বামীর দিকে তাকালেন একটু অবাক হয়ে। হাজী খামির উদ্দিনের একটা ভ্রুঁ কুঁচকে উঠেই আবার ঠিক হয়ে গেল, “বাড়ি কোথায় তোমার?”
“বোদার উত্তর পাশে হরিলাকান্ত গ্রামে। গ্রামের ঠাকুরের ছোট নাতনি হই আমি। আমার দিদির বিয়ের দিনে ডাকাত পড়ছিল বাড়িতে। অনেকের সঙ্গে আমারেও তুলে আনছিল। কিন্তু যাত্রাদলের ম্যানেজার আমারে মাঝপথে কিনে নিছে। কাল রাতে পলায় আসছি।”
“হুম। নতুন যে মহারাণী যাত্রাদল আসছে, ঐ যাত্রা?”
“জী।”
“ঠিক আছে। তুমি বিশ্রাম করো।” বলে বেরিয়ে এলেন হাজী খামির উদ্দিন। ভীষণ খিদে পেয়েছে তাঁর। আপাতত খাওয়ার চিন্তা ছাড়া মাথায় আর কোনো চিন্তা নেই। মেয়েটাকে নিয়ে পরে ভাবা যাবে। রহীমা খাতুন স্বামীর পেছন পেছন বেরিয়ে এলেন। স্বামীর নাস্তা তৈরি করে মেয়েটার জন্য খাবার নিতে হবে। না জানি কতক্ষণ না খেয়ে আছে বেচারি।
ভেতরের ঘরে বিছানায় শুয়ে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছছে জয়তী। চোখ বড় বড় করে ঘরের ভেতরটা তাকিয়ে দেখছে। হাজার রকমের জিনিষ পত্রে ঠাশা ঘরটা। পায়ে প্রচন্ড ব্যথা করছে, নাড়ানো যাচ্ছে না। খোলা জানালাগুলো দিয়ে স্নিগ্ধ আলো আসছে সকালের। আকাশটা দেখা যাচ্ছে। নীল চাদর যেন বিছিয়ে দেয়া আকাশ জুড়ে।
বারান্দার দিকের জানালাটায় চোখ পড়তেই চমকে উঠল। জানালার শিকে মুখ রেখে স্থির দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে গত রাতের সেই লোকটা। নির্জীব মূর্তির মত দাঁড়িয়ে রয়েছে।
জয়তী ভয় পেয়েছে। সুলেমানকে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভয়ার্ত গলায় ডাকতে লাগল, “মা? মা? ও মা?”
রহীমা খাতুন অবশ্য রান্নাঘর থেকে সেই ডাক শুনতে পেলেন না। কিন্তু সুলেমান ঘুরে চলে গেল।
জয়তী তখনো ভীত চোখে তাকিয়ে রয়েছে জানালাটার দিকে।
আয়েশা বেগম তাঁর বিছানায় শুয়ে চেঁচাচ্ছেন। “এই হাজী বাড়িতে হিন্দু মাইয়্যা আনছে কেডা? বাড়ি অপবিত্র করে ফেলল। জাত কূল সব ভুলে গেছে নাকি সবাই? যাত্রাদলের মাইয়্যা ঘরে এনে তুলে কোন সাহোসে? গায়ে চর্বি বেশি হইছে? তেল হইছে বেশি? বাড়িরে সরাইখানা বানাইবার চাস? বাইজি বাড়ি নাকি এইটা? খামির বেটারে ডাঁক, ওর তেল বেশি হইছে? চাবকায়া সব তেল বাইর করতেছি।”
জয়তী ওর বিছানায় শুয়ে কথাগুলো শুনতে পাচ্ছে। ঠোঁট কামড়ে ধরল। তারপর হাতের আঙ্গুল কামড়ে কান্না আটকাবার চেষ্টা করল। চোখ ফেঁটে কান্না আসছে ওর। পারছে না আটকাতে।
রান্নাঘরে স্বামীর পাতে পিঠা ভাজা তুলে দিতে দিতে রহীমা খাতুন গজগজ করতে লাগলেন, “সাত সক্কাল বেলা বুড়ি এত ডাক ছাড়তেছে ক্যান? একটা বিপদে পড়া মেয়েকে ঘরে আশ্রয় দেয়াটা কি খারাপ হইয়া গেলো? আম্মাটা এইরকম ক্যান?”
হাজী খামির উদ্দিন চুপচাপ শান্ত ভাবে পিঠা খেয়ে যাচ্ছেন। মায়ের গালা গালিতে কর্ণপাত করলেন না। কেবল বললেন, “মেয়েটা হয়তো কষ্ট পাবে কথাগুলা শুনলে। তুমি তারে বুঝায়ে বলিও যে আম্মার মাথায় একটু সমস্যা আছে। নয়তো অতি ভাল মহিলা।”
রহীমা খাতুন মুখ বাঁকালেন, “হুহ! কি ভাল মহিলারে আমার! এত খারাপ কথা বলে ক্যান তাইলে?”
হাজী সাহেব খাওয়া বন্ধ করে কট মট করে তাকালেন তাঁর দিকে। চুপ হয়ে গেলেন রহীমা খাতুন।
“বয়স বাড়লে মানুষের পাগলামী বাড়ে। তাই বইলা মানুষ যে খারাপ হয়ে যাবে – সেইটা ঠিক না। আম্মারে আমি পরিস্থিতি বুঝায়ে বলব একটু পর। তিনি তখন আর রাগ করবেন না।” হাত ধুয়ে উঠে পরলেন খামির উদ্দিন।
“সেকি! খাইলেন না যে?” অবাক হয়ে বলে উঠলেন রহীমা খাতুন।
“পেট ভরে গেছে। সক্কাল বেলা বৌ শ্বাশুড়ির এত কথা শুনলে পেট খালি থাকবে ক্যামনে?” বেরিয়ে গেলেন রান্না ঘর থেকে।
রহীমা খাতুন গরম করাইয়ের সামনে বসে রইলেন। ফুটন্ত তেলে পিঠা যে পুঁড়ে কয়লা হয়ে যাচ্ছে – খেয়াল করলেন না।
আয়েশা বেগম তখনো চেঁচিয়ে যাচ্ছেন। বাড়ি মাথায় করে ফেলেছেন এই সকাল বেলাতেই।
খায়রুল আনাম সাইকেল নিয়ে বেরিয়েছে। সকাল বেলার ঠান্ডা রোদে গ্রামের কাঁচা পথগুলোতে সাইকেলে করে ঘুরতে ভাল লাগে। একাই বেরিয়েছে। সঙ্গে কেউ নেই। মৃদু গলায় একটা গান গাইতে গাইতে সাইকেলে করে গ্রামের দক্ষিণে যাচ্ছে সে। ওদিকে ঘর বাড়ি নেই। কেবল বিছানো জমি। ফসল কাটা হয়ে গেছে। বৃষ্টির পানি জমে বিস্তির্ণ ঝিল হয়ে রয়েছে দক্ষিণের দিকটা। এ রাস্তাটা দিয়ে বাজারের পেছন দিকের মাঠে যাওয়া যায়। তাড়াতাড়ি যেতে চাইলে এদিক দিয়ে যায়। নয়তো পশ্চিএর বড় রাস্তা দিয়েই বাজারে যায় সবাই। এদিক দিয়ে যান না কারণ বেশি নির্জন রাস্তা। তারওপর সাপের আস্তানাটা কাছেই। সাপের ভয়ে এদিকের রাস্তায় কেউ আসে না। দিনের বেলাতেই আসে না, রাতের কথা আর নাই বললাম।
খায়রুল আনামের সাপ খোঁপের ভয় নেই। সে মাঝে মাঝে সময় পেলেই সাইকেল নিয়ে নয় তো হেটে হেটে চলে আসে এখানে। রাস্তার ঢালে বসে দূরের সাপের আস্তানা আর বিশাল বট গাছটা দেখে। আজ অবশ্য খাতা পেন্সিল সাথে করে নিয়ে এসেছে। খাতা পেন্সিল বের করে দূরের ঐ বট গাছ সহ সাপের আস্তানার ছবি আঁকতে লাগল।
এক মনে ছবি এঁকে যাছে সে। কোনো দিকে মন নেই। বাতাস স্থির হয়ে ছিল এতক্ষণ, তাই শুনতে পায়নি। বাতাস বইতে শুরু করার সাথে সাথে কানে খুব আবছা, হাল্কা একটা বাঁশির সুর ভেসে এল। খায়রুল আনামের হাত থেমে গেল। কান পাতল অবাক মুখে।
খুব হালকা বাঁশির সুর পাওয়া যাচ্ছে। করুণ একটা সুর। বহু দূর থেকে ভেসে আসছে। ঠিক বোঝা যাচ্ছে না কোন দিক থেকে। এদিক ওদিক তাকাল সে। একবার মনে হল সাপের আস্তানার ওদিক থেকে বাঁশি বাজাচ্ছে কেউ। কিন্তু ওখানে তো কেউই যায় না। খাতা বন্ধ করে ভাল করে শোনার জন্য উঠে দাঁড়াল। কিন্তু বাতাস এখন আবার থেমে গেছে। বাঁশির শব্দও মিলিয়ে গেল। ভুল শোনেনি তো? ভাবল একবার। দক্ষিণের বট গাছটার দিক থেকেই এসেছিল? নাকি বাজারের পেছনের মাঠা আসা যাত্রাদলের প্যান্ডেল থেকে এসেছিল? বিভ্রান্ত মুখে সাইকেলে করে ফিরে চলল বাড়ি। ছবি আঁকাতে ইচ্ছা করছে না আর। করুণ বাঁশির সুরটা কানে বাজছে। বুকের ভেতর গুমোট দুঃখের একটা ভাব এনে দিয়েছে হঠাৎ করে।
হাজী খামির উদ্দিন খোলাপাড়া হাইস্কুলের মাঠে দাঁড়িয়ে স্কুলের চালে টিন লাগানো দেখচ্ছিলেন। খোলাপাড়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় তাঁরই দেয়া। প্রাথমিক বিদ্যালয়টাও করেছেন তিনি। এলাকার বাচ্চা কাচ্চারা যাতে দূরে গিয়ে না পড়ে, তাই গ্রামেই স্কুল করে দিয়েছেন। এখনো ভাল শিক্ষক পাওয়া যায়নি। অল্প কয়েকজন শিক্ষক দিয়ে পড়াশোনার কাজ চলছে। তাঁর ছেলে খায়রুল আনাম অবশ্য বাবার দেয়া কোনো স্কুলেই পড়েনি। ময়দান দীঘি পেড়িয়ে বোদা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে পড়াশোনা করেছেন।
হাজী মেহের বকস ঘোড়ায় চড়ে সেদিক দিয়েই যাচ্ছিলেন। জমি দেখতে বেরিয়েছিলেন। বড় ভাইকে দেখে নেমে গেলেন ঘোড়া থেকে। এগিয়ে এলেন ভাইয়ের কাছে, “আসসালামুয়ালাইকুম বড় ভাই। আপনি এখানে?”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম। হুম। স্কুলের ঘরের ছাদের কাজটা ঠিক মত চলতেছে কিনা তদারকি করতে আসছি। তুমি কোত্থেকে আসলা?” ছোট ভাইয়ের দিকে ফিরলেন।
“মুন্সি বাড়ি গেছিলাম। একটা তিন দিনের জামাত যাবে। সোহরাব মুন্সি আমারে ধরছে আমীর হয়ে জামাতের সাথে যাইতে। আমার জিম্মায় নাকি জামাত ভাল চলবে।”
“যাবা নাকি?”
“ভাবতেছি। গেছিলাম আমাদের মসজিদের জন্য ইমামের বিষয়ে কথা বলতে। যায়ে দেখি তাঁর বাড়িতে ছোট খাট একটা মজলিস জমে গেছে আরো কয়েক মসজিদের ইমাম মিলে। আমি ঢুকার সাথে সাথে আমারে বয়ানের জন্য দাঁড় করায় দিল! আমি আইলাম আৎকা, আমারে কয় ভাত খা!” হাসতে লাগলেন মেহের বকস, “আমি কি করি তখন? শেষে বয়ান করতে হয়েছে কিছুক্ষণ। তারপরেই জামাতের কথা উঠল। ময়দান দীঘি পুরান মসজিদে তিন দিনের তবলিগ জামাত বাইর হবে এই এলাকা থেকে। আমারে নিয়া টানাটানি!”
খামির উদ্দিনও হাসলেন, “এক কাজ কর, তুমি গেলে খায়রুল আনামকেও নিয়া যাও। কলেজে ভর্তি হইতে দেরি আছে। এই সময়টায় একটু আল্লাহ পাকের রাস্তায় কাটায় আসুক। এত্ত বড় দুনিয়ার পিছের রহস্য জানলেও- বুঝটা তার মাঝে আসে নাই। দুনিয়াবী রঙ চোখে লাইগা অন্তর বন্ধ হওয়ার উপক্রম তার। তারে আল্লাহ পাকের নাজ নেয়ামত সম্পর্কে জানানো দরকার। ঘরে বসে খালি বই পড়ে তো আর আল্লাহ তাআলাকে চিনা সম্ভব না। ঘর থেকে বাইর হওয়া জরুরী। তারে বলবা আমি তারে যাইতে বলছি তোমার সাথে।”
“জী আচ্ছা।” মাথা কাঁত করলেন মেহের বকস। কিন্তু ভাইজান, মসজিদের স্থায়ী ইমামের বিষয়টার তো কোনো ফয়সালা হইতেছে না। কি করা যায় বলেন তো?”
“ভাবতেছি বিষয়টা নিয়ে। আল্লাহ পাক নিশ্চই কোনো ব্যবস্থা করে দিবেন। ভাবিও না তুমি। জামাতের দিকে মন দেও। কবে জামাত যাবে? তারিখ ঠিক হইছে?”
“বলতেছে পরশু দিন বাইর হইলে ভাল হয়। বৃহস্পতিবার দিনটা এই কাজে বাইর হওয়ার জন্য ইত্তম। যারা যাবে তাদের একটা নামের তালিকা আজকে মাগরীব বাদ বয়ানের পর মসজিদে নেয়া হবে। আপনি থাকিয়েন সেই সময়।”
“কিন্তু আমি তো জামাতে যাইতে পারবো না। হাতে অনেক কাজ।”
“অসুবিধা নাই। না গেলেও থাকিয়েন। বয়ানের সময় আপনি বসলে লোকজন থাকবে।” মেহের বকস ঘোড়ার পিঠে উঠে পড়লেন। “এখন যাই ভাইজান। দুপুরে খাওয়ার সময় দেখা হবে ইনশাল্লাহ।”
মাথা ঝাঁকালেন খামির উদ্দিন। ভাইয়ের চলে যাওয়া দেখলেন কিছুক্ষণ। তারপর আবার স্কুলের দিকে তাকালেন। নতুন টিনের চালে রোদ লেগে ঝলমল করছে পুরো স্কুলটা। আপনা আপনি বুকটা ভরে গেল তাঁর।
জয়তী বিছানায় বালিশে হেলান দিয়ে বসে খাবার খাচ্ছে। পরোটা আর ভাজি। রহীমা খাতুন একটু আগে এসে দিয়ে গেছেন। ওনার সামনে খেতে লজ্জ্বা পাচ্ছিল বলে রহীমা খাতুন চলে গেছেন। একা একা ঘরটায় বসে খাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে খুব খিদে পেয়েছিল, দ্রুত খেয়ে যাচ্ছে। পানি খাবার নামই নেই।
“আস্তে খাও। গলায় আটকাবে তো!” বাড়ির ছোট ছেলে দুলাল যে কখন ঘরে ঢুকেছে খেয়ালই করেনি জয়তী। ওর গলা শুনে চমকে উঠল। তাকিয়ে দেখল বিছানার কাছে হাফ প্যান্ট, সাদা গেঞ্জি পরা, পেট মোটা একটা ছেলে দাঁড়িয়ে। সাত আট বছর বয়েস হবে।
“কি নাম তোমার?” চমকে ওঠাটা দ্রুত কাটিয়ে নিল মেয়েটা।
“মোহাম্মদ আলী আসগর। ছোট নাম দুলাল। তোমার নাম কি?” বড়দের মত করে বলল।
“আমার নাম জয়তী বিশ্বাস।”
“ও। খুব ভাল নাম। হিন্দু? গরু খাও না?” গম্ভীর মুখে জিজ্ঞেস করল।
জয়তী চোখ বড় বড় করে তাকাল, অবাক হয়েছে, “না। খাই না।”
“আমিও খাই না। গা চুলকায়। বিচি উঠে গায়ে। কিন্তু আমি হিন্দু না।”
জয়তী হাসি চাপল, “ও! তাঁর মানে এলার্জি আছে তোমার।”
শব্দটা বুঝতে পারল না দুলাল, সরু চোখে তাকিয়ে বলল, “কিসে পড়ো তুমি জয়তী?”
হেসে ফেলল এবার, “আমি তোমার অনেক বড়। বুঝলা। আমাকে জয়তী দিদি ডাকবা।”
“ও! তুমি কিসে পড়ো জয়তী দিদি?” উঁচু বিছানাটায় দুই তিনবার চেষ্টা করার পর উঠতে পারল দুলাল। উঠে জয়তীর সামনে এসে বসল। গম্ভীর মুখে তাকাল জয়তীর দিকে।
“আমি ক্লাস টেনে পড়ি। আগামী বছর মেট্রিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা।”
“অ!” আরো গম্ভীর হয়ে গেল দুলালের গোলগাল মুখটা, “তুমি তো আসলেই অনেক বড়। খায়রুল ভাইজান এই বছর মেট্রিক পাস করছেন। তাঁর এক বছর ছোট হইলা তুমি।” হতাশ হল যেন।
“তুমি কিসে পড়ো?”
“মাদ্রাসায়, ক্লাস টু।”
“বাহ। অনেক ভাল তো।”
“বাড়ি কৈ তোমার?”
“হরিলাকান্ত।”
“হুম। অনেক দূর।” গম্ভীর মুখে মাথা ঝাঁকাল সে। যদিও জানে না জায়গাটা কোথায়। জয়তী মুখ টিপে হাসল কেবল।
“কোনো কিছুর দরকার পরলে আমারে বলবা, বুঝলা? আমি বাড়িতেই থাকি সারাদিন। কেউ কিছু তোমারে বললে সেইটাও আমারে বলবা। আমারে সবাই ভয় পায় এই বাড়িতে।” বিছানা থেকে নেমে গেল, “আমি গেলাম। পরে আসমু। অনেক কাজ আমার। তুমি খাও।” ব্যস্ত ভঙ্গিতে চলে গেল।
বিছানায় বসে ফিক করে হেসে দিল জয়তী। অবশ্য দরজায় হাজী খামির উদ্দিনকে আসতে দেখে হাসি থামিয়ে ফেলল। হাজী সাহেব বোধ হয় দুলালের কথাগুলো শুনেছেন। দেখা গেল মিটিমিটি হাসছেন। হাতে একটা ব্যাগ তাঁর। ভেতরে ঢুকে জয়তীকে বললেন, “খাওয়া দাওয়া হইছে কিছু তোমার?” জয়তীর সামনে রাখা খাবারের প্লেট বাটি দেখলেন।
“জী।”
ব্যাগটা জয়তীর দিকে বাড়িয়ে দিলেন, “তোমার জন্য আনলাম। এক কাপড়ে আর কতক্ষণ থাকবা। আরেকজনের শাড়ি পরতে হয়তো অস্বস্তি লাগবে। তাই কিনে আনলাম।” হাসলেন।
জয়তী কৌতুহলি মুখে ব্যাগটা নিল হাতে। ভেতরে শাড়ি, ব্লাউজ দেখা যাচ্ছে।
“আমার তিনটা মেয়ে আছে, তোমার বয়সী। বিবাহ দিয়া দিছি। নাইলে ওরা থাকলে কথা বলার মানুষ পাইতা। একা একা কি আর মানুষ থাকতে পারে? আমার ছোট ছেলেটা বাঁচাল স্বভাবের। বড় মানুষের মত কথা বলে। সারাক্ষণ দেখবা ঐ ছেলেটাই তোমার আশে পাশে ঘুর ঘুর করতেছে।”
হাসল জয়তী। কিছু বলল না।
হাজী সাহেব উঠে দাঁড়ালেন, “আমি তাইলে যাই। কোনো কিছু দরকার পরলে দুলালকে ডাক দিবা। রহীমাটা সব সময় এই কাজ সেই কাজ নিয়া কোথায় কোথায় যে থাকে। কাপড়্গুলা তাঁরে দিয়া পাঠাবো তোমার কাছে- সে নাই! বাকি দুই জনকে নিয়া পাশের বাড়িতে গেছে চাল কুটাইতে। বাড়িতে এত মানুষ, দরকারের বেলায় কেউ নাই।” চলে আসতে নিলেন।
পেছন থেকে ডাকল জয়তী, “একটা কথা বলবো আপনারে?”
ফিরে তাকালেন হাজী সাহেব, “বলো?”
“আমারে আমার বাড়ি পৌছায়া দিবেন?” করুণ মুখে তাকাল।
চুপ হয়ে গেলেন তিনি। কয়েক মুহূর্ত নীরব থাকার পর বললেন, “দিবো মা। তুমি ভাবিও না।” বেরিয়ে গেলেন। জয়তী একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। মনে হল হাজী সাহেব কিছু একটা বলতে গিয়েও চেপে গেলেন।
মধ্য দুপুর। সূর্যটা ঠিক মাথার ওপর। চারপাশে বিচিত্র একটা নিস্তব্ধতা। হাজী বাড়ির পেছনের গোয়াল ঘরের পরেই পুকুর। সিমেন্টের বাঁধানো ঘাট। ওপরে ছাউনি দেয়া। হাজী খামির উদ্দিন সিমেন্টের বেঞ্চে পা তুলে বসে নীরবে লিখে যাচ্ছেন তাঁর হজ্জের ভ্রমণ কাহিনী। জাহাজে করে দীর্ঘ সমুদ্রপথ পাড়ি দেয়া সেই দিনগুলি চোখের সামনে ভাসছে। শুনতে পাচ্ছেন জাহাজের সারেং এর হুইসেল। ব্যস্ত মানব কোলাহল আর জন সমুদ্রের ঢেউ যেন তাঁর সামনে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। সব যেন শুনতে পাচ্ছেন। দেখতে পাচ্ছেন। মানুষের ধাক্কা বাঁচিয়ে হাটছেন জাহাজের দিকে.......
“জাহাজখানি সুদীর্ঘ নাম জাহাঙ্গীর,
সর্ব্বশুদ্ধ পাঁচটি তালা দেখে চক্ষু স্থির।
কুটরি আছে অসংখ্য কলে আছে ভরা,
হাজি লোক থাকে ফের সঙ্গে পাক ঘরা;
জাহাজ চলে কলেতে দেখা নাহি যায়,
আল্লা পাক বুদ্ধি দিচ্ছে লোকের মাথায়;
কৌশলে করিয়া তৈরি জলের উপর,
কিবা গতিতে চালায় জানিয়া খবর।
কিবা দিকে কিবা আছে কোথা চলে যায়,
দিবা রাত্রী যাত্রী লয়ে, চলিছে কোথায়;
দুইশত তেত্রিশ টাকা আরো চারি আনা
জাহাজে যাতায়াত টিকিটে চাই দেনা।
খাওয়া খরচ ল;আগে না টিকিটেই হয়,
গোস্ত ভাত সকলেরি নিত্য খেয়ে দেয়।
ভেড়া, দুম্বা, হাঁস, মুর্গি, ছাগলেতে ভরা,
আরো আছে কত কি নাম যায় না করা।
ডাক্তার ও ম্যানেজার সঙ্গেতে কাপ্তান,
দেখে যাচ্ছে দুই বেলা কি হচ্ছে খাওয়ান।
কুটুরিতে মতাইন বহু লোক আছে,
ভাত পানি দুই বেলা ঠিক নিয়ে যাচ্ছে।
কেউ খাচ্ছে গোস্ত ভাত, কেউ খাচ্ছে রুটি,
যার যাহা ইচ্ছা হয়, খাচ্ছে পরিপাটী।
মেথর কুলী, মিত্রিরা ব্যস্ত স্ব স্ব কাজে
ফুর্ত্তি কচ্ছে সাহেবেরা ইংরেজী বাইজে।
হঠাৎ এক স্ত্রী লোক নিমুনিয়া রোগে,
মারা গেল, শুনে সবে ব্যস্ত হল সোগে।
অশ্রুনীরে জানাজাগ্যে, যত্নেতে গোছল,
কাফনেতে ছেড়ে দিল, নিয়ে চল্ল জল;
জান্নাত বিবি অনাথা ছিল ভাগ্যবতী
খুলনা বাসিনী ছিল, হইল জান্নাতি;
খোদা পাক রহমান, দয়া অতিশয়;
যত্ন ক’লে রত্ন মিলে নাহিক সংশয়.......”
পুকুর ঘাটে বসে হাজী খামির উদ্দিন জান্নাত বিবি নামের সেই মহিলার কাফন বাঁধা লাশ সমুদ্রে ভাসিয়ে দেয়ার মুহূর্তটায় চলে গেছেন। সাগরের গর্জন শুনতে পাচ্ছেন। কানে ভেসে আসছে মানুষ জনের মৃদু কান্নার আওয়াজ। “আহা! জীবন কত অদ্ভূত! কত বিচিত্র!”
(চলবে)
২| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১:০৬
রেজোওয়ানা বলেছেন: বই বের হবার কত দূর?
০৮ ই জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ১১:৫৫
নিথর শ্রাবণ শিহাব বলেছেন: কীভাবে বের করবো আপা? আব্বা ঢাকায় কম যায়। ওনার সাথে গিয়ে বই প্রকাশনায় যাওয়া দরকার। কত টাকা যে চায় আল্লাই জানে
৩| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১:৪৩
ল্যাটিচুড বলেছেন: নতুন লিখা কবে পাব ?
৩০ শে জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ২:৩৬
নিথর শ্রাবণ শিহাব বলেছেন: দেরি হবে ভাই। আমি খুব ব্যস্ত ইদানীং
৪| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ ভোর ৬:৪২
ল্যাটিচুড বলেছেন: রোদে রোদে অনেক বেলা হল, শঙ্খচুড়েরা চলে গেছে হিম ঘরে .....
চাতক পাখির মত অপেক্ষায় আছি শঙ্খচুড়ের পরের পর্বের জন্য ।
৫| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:২০
ল্যাটিচুড বলেছেন: শেষ কমেন্ট করেছি ১৪ই ফেব্রুয়ারী ২০১২ ভোর ৬:৪২মি:, এর পর দির্ঘ অপেক্ষার শুরু, শেষ হবে কবে? ?????????????????
০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৫২
নিথর শ্রাবণ শিহাব বলেছেন: :'(
৬| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১:২৬
ল্যাটিচুড বলেছেন: অনেকদিন পর আবার ঢু মারলাম। আচ্ছা - "শঙ্খচূড়" - কি বই আকারে প্রকাশ হয়েছে ?
নাকি এত সুন্দর একটা লিখা অসম্পূর্ণই রেখে দিলেন ......
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:১৬
যাযাবরমন বলেছেন: আগের পর্বের লেখা কৈ?