নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নৈঋত্‌

নৈঋত্‌ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শেকড়ের সন্ধানে

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৫১

ধর্ম নিয়ে কিছু বলার আগে বলি, ধর্ম জিনিস টা কি? ধর্ম শব্দের আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে ধারণ করা। নিজের বিশ্বাসকে মনের মধ্যে ধারণ করাই হচ্ছে ধর্ম। আর কিছু বিশ্বাস করতে গেলে তার একটা ভিত্তি থাকা চাই। আর সেই ভিত্তির আছে অনেক রকম রূপরেখা। ধর্ম আমাদের দিক নির্দেশনা দেয় ভালো পথে চলার জন্য, একটা সুশৃঙ্খলভাবে জীবন যাপনের জন্য অত্যাবশ্যক হচ্ছে ধর্ম যা আমাদের শেখায় কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ। বলা যায়, পৃথিবীতে অনাচার, অবিচার আর নীতি নৈতিকতার মধ্যে মোটামুটি একটা ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করছে ধর্ম।

এখন অনেকের মনে এই প্রশ্ন জাগতে পারে, ধর্ম আমাদের ভালো মন্দ শেখায়, ETHICS ও তো তাই শেখায়... তাহলে ধর্মের প্রয়োজন কি? ধর্ম আর ETHICS এর এই সংঘাত হাজার বছরের পুরনো। ETHICS আমাদের বলে ভালো মন্দ, বিচার বিবেচনা বোধ যার যার ব্যাক্তিগত ব্যাপার, অন্যদিকে ধর্ম বলে “ এটাই সঠিক এবং ওটা ভুল” তার মানে ধর্ম আমাদের দেখিয়ে দেয় কিভাবে আমাদের জীবনটাকে চালাতে হবে, কোনটা করলে পাপ আর কোনটা পুণ্য। ওদিকে ETHICS পুরোপুরিই একটা variable বিষয়। অবস্থা বিশেষে মানুষ যদি কোনও খারাপ কাজ করতে বাধ্য হয় কোনও ভাল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে গিয়ে, তাহলে Ethics এর ভাষায় বিবেচনা করা যায়, সেটা ঐ মানুষটার জন্য “ Right Things To Do” , অন্যদিকে ধর্ম বলবে মানুষটার নিয়ত্‌ যতোই ভালো হোক না কেন, সে খারাপ কাজ করতে যতোই বাধ্য হোক না কেন, সে পাপ করেছে এবং তার বিচার হবে। মজার কথা হচ্ছে, ঐ খারাপ কাজের মাধ্যমে সে যার উপকার করেছে তার জন্য সে পুণ্য অর্জন করেছে যেটা ধর্মে পাপমোচন এর একটা পথ খুলে দেয়।

তাহলে ধর্ম এসেছে কেন? মানুষ কি তাহলে তার ভাল/মন্দ ব্যাপার নিজে বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিল বলে? আসলেই ঠিক তাই... বিভিন্ন ধর্ম পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, ধর্ম এসেছে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে, সমাজের বিশৃঙ্খলা আর বিগড়ে যাওয়া ব্যবস্থাকে ঠিক করতে... যেখানে মানুষের ETHICS ব্যর্থ হয়েছে সমাজ ব্যবস্থায় ভারসাম্য বজায় রাখতে, সেখানে ধর্ম এসেছে শান্তির বানী নিয়ে। বলা যায়, ধর্মের মাধ্যমে নতুন বিপ্লব সূচিত হয়েছে সমাজ পেরিয়ে দেশ দেশান্তরে। সব ধর্মেরই প্রারম্ভিক ইতিহাস ছিল শান্তির এবং সমৃদ্ধির। তবে আজকে ধর্ম নিয়ে এত হানাহানি কেন যেখানে সব ধর্মই শান্তির কথা বলে?

ধর্মের কথা যখন আসছে তখন Secularism এর কথা বলতেই হয়। অনেকেই আছেন যারা এটার সঠিক অর্থ না বুঝেই উচ্চবাচ্য করেন। Secular শব্দটি এসেছে লাতিন শব্দ saecularis থেকে, এর অর্থ হচ্ছে কোনও কিছুর ক্ষুদ্র অথবা বিচ্ছিন্ন অংশ। কালের বিবর্তনে secular এর অর্থ এবং ব্যবহার দুই-ই পালটেছে। এখন secular এর মানে যা বোঝায় তা সম্পূর্ণ ভাবে ব্যাক্তি স্বাধীনতাকে নির্দেশ করে। সেক্যুলারিজম একটি দেশের শাসনব্যবস্থা আর সামষ্টিক ধর্মীয় জীবন যাপন ব্যবস্থাকে পৃথক করে। আর সেক্যুলারিজম এর ধারণা কারো ব্যক্তিগত ধর্ম বিশ্বাসে হস্তক্ষেপ করেনা। এক্ষেত্রে প্রত্যেক ব্যাক্তি ধর্মীয় ব্যাপারে নিজের স্বকীয়তা বজায় রাখতে সক্ষম হয়, হোক না তিনি আস্তিক অথবা নাস্তিক। তার মানে সেক্যুলারিজমে সবার ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়।এক্ষেত্রে যারা সেক্যুলারিজমে বিশ্বাস করেন, আমি ব্যাক্তিগতভাবে তাদেরকে নাস্তিক বলার কোনও কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।

সেক্যুলারিজম ধর্মনিরপেক্ষতাকে সমর্থন করে। তবে ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়েও কিন্তু বিভ্রান্তির শেষ নেই। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে অন্য ধর্মকে সমর্থন করা নয়, এর মানে নিজ নিজ ধর্মবিশ্বাসকে অটুট রেখে, নিজ ধর্ম অন্য ধর্মের অনুসারীদের উপর চাপিয়ে না দিয়ে অন্য ধর্মের প্রতি সম্মান জানানো, পরধর্মসহিষ্ণুতা যাকে বলে। অনেকে মনে করেন, ধর্মনিরপেক্ষ হতে গেলে তো অন্য ধর্ম পালন করা হয়ে গেলো। এই বিষয়ে একটা মজার উদাহরণ দেয়া যায়। একজন বন্ধুর সাথে তর্ক করছিলাম এই বিষয়ে, এক পর্যায়ে ঐ বন্ধুটি আমাকে জিজ্ঞেস করে, “যদি তোমাকে মা আর বাবার মধ্যে যে কোনও একজনকে পছন্দ করতে বলা হয়, তুমি কাকে করবে?” আমি উত্তর দিলাম, “আমি দুজনকেই চাই”। বন্ধুবর বলল, “এটাই নিরপেক্ষতা”। “এবার যদি তোমাকে প্রশ্ন করা হয়, তুমি নিজ ধর্মকে পছন্দ কর নাকি অমুক ধর্মকে করো?” আমি বললাম, “লে হালুয়া! এইটা কেমন প্রশ্ন হল???” বন্ধুবরের মতে, ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে হচ্ছে দুটি ধর্মকেই “Choose” করা।আমি তার সাথে একমত হতে পারলাম না এই কারণে যে ভালবাসার সাথে বিশ্বাসের তুলনা চলেনা। আমার মা ও বাবা দুজনকেই দরকার আছে কারণ আমি দুজনকেই খুব ভালবাসি, কিন্তু ধর্ম বিশ্বাসের ক্ষেত্রে তো আর এটা খাটবেনা। সোজা বাংলায় বলতে গেলে ধর্মনিরপেক্ষতা মানে “তুমি তোমার ধর্ম পালন করো, আমি আমারটা করি, কারো ধর্মে কেউ হাত দিবেনা তবে তুমি চাইলে আমার ধর্ম গ্রহণ করতে পার”। এখন অনেকে আবার বলতে পারেন “এই জিনিসটা তো ধর্মনিরপেক্ষ না হয়েও করা যায়”। তাদের জন্য বলছি,না! করা যায় না। যারা ধর্ম নিরপেক্ষ না তাদের প্রবণতা থাকে নিজ ধর্মকে অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়ার, অন্য ধর্মের প্রতি সংযম প্রদর্শনের ন্যূনতম শক্তিও তাদের থাকেনা, আর তখন সেটা গোঁড়ামির পর্যায়ে চলে যায়। তারা হয়ত ভুলে যায়, “ধর্ম” শব্দটির সাথে আরেকটি সুন্দর শব্দ যুক্ত থাকে যেটা আমরা অনেক সময়ই মুখের আলসেমিতে উচ্চারণ করিনা এবং সেটি হচ্ছে “বিশ্বাস”। আর বিশ্বাস নিয়ে গোঁড়ামির কিছু নেই। অতএব, ধর্ম নিরপেক্ষ মানেই নাস্তিকতা নয়।নিজেকে যাচাই করে দেখুন, আপনি ধর্ম নিরপেক্ষ কিনা?

একবার তিথিকে (আমার বন্ধু) বলেছিলাম পৃথিবীতে ধর্ম বিশ্বাসের ভিত্তিতে তিন রকমের মানুষ আছে-ধার্মিক/ আস্তিক , নাস্তিক এবং ধর্মদ্রোহী। কথাটা প্রথমে আমলে না নিয়ে মনের অজান্তে বলে ফেললেও পরে ভাবলাম এটা নিয়ে ভাবা দরকার। ধার্মিক অথবা আস্তিকদের নিয়ে তো কোনও সমস্যা নেই, তবে নাস্তিকতা এবং ধর্মদ্রোহিতা নিয়ে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দে ভোগার সম্ভাবনা আছে। আক্ষরিক অর্থে নাস্তিকতা মানে যারা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করে না। যারা নাস্তিক তারা একটি আদর্শ মেনে চলেন কিন্তু কোনও ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলেন না, মোটামুটি সেক্যুলার বলা চলে। কিন্তু যারা ধর্মদ্রোহী তারা সাধারণত একটি নির্দিষ্ট ধর্মে বিশ্বাস করতেন, কিন্তু পরে সংশ্লিষ্ট ধর্মের বিরুদ্ধে আলোচনা সমালোচনা শুরু করেন। তার মানে ধর্মদ্রোহীরা নাস্তিকের চেয়েও নিচু শ্রেণীর কিছু (অনেককেই বলতে শুনেছি নাস্তিকদেরও “Class” আছে,সেই সূত্রে বললাম), কিন্তু নাস্তিকরা ধর্মদ্রোহী নয়।এরপর যখন নাস্তিকতা নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করলাম তখন আরেকটা শ্রেণী বের হয়ে আসলো,পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ ও আছেন যারা শুধু মানেন সৃষ্টিকর্তা আছেন কিন্তু কোনও ধর্মেই বিশ্বাস করেন না, তাদেরকে কোন শ্রেণীতে ফেলা যায়?? ভাবনার বিষয়...

পরিশেষে, পৃথিবীতে “সুন্দর” এবং “কুৎসিত” নামক দুটি বিমূর্ত ধারণা আছে। আর সেই সুন্দর আর কুৎসিত যাচাই করার জন্য দুটি ইন্দ্রিয় অপরিহার্য- চোখ এবং মন মানসিকতা। কেউ ধর্ম পালন করুক আর না করুক, নিজের মন মানসিকতাকে যদি উন্নত করা যায়, পৃথিবীর কথা দূরে থাক, রাষ্ট্রের কথাও বাদ দিলাম... সমাজে শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস সুন্দর করা সম্ভব বলে আমি মনে করি। আমাদের কাজ কর্মের মাধ্যমে আমাদের মন মানসিকতা প্রতিফলিত হয়, আর আমাদের মন মানসিকতায় প্রতিসারিত হয় পারিবারিক শিক্ষা দীক্ষা, আমরা কোন সংস্কৃতিতে বড় হচ্ছি। সুতরাং, আমাদের নিজেদের স্বার্থে , ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে , সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করে কিছু মানুষের অপ্রাপ্তবয়স্ক সুলভ আচার আচরণকে আমলে না নিয়ে সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা গঠনের দিকে মনোযোগ দেয়া উচিত, তাহলেই আমরা শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধিশালী রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন আমরা দেখতে পারি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.