![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শামসের কাছে শহর মানেই ছিল একটা জটিল খেলা। রাস্তা, ফুটপাথ, ওভারপাস—সবকিছুর মধ্যে একটা ছন্দ খুঁজে পাওয়া যেত, একটা ব্যালান্স। সে বসে বসে হিসাব কষত, কোন মোড়ে ট্রাফিক চাপ বেশি, কোথায় বাসস্টপ দরকার, কোথায় একটু খোলা জায়গা রাখলে শহরটা একটু নিশ্বাস নিতে পারবে।
দিনরাত এই নিয়েই থাকত। অন্য কিছু নিয়ে ভাবার সময় কই?
ফোন? সে এখনও সেই পুরনো নোকিয়াটাই চালায়। কল করা যায়, ব্যস! একসময় ব্ল্যাকবেরির শখ হয়েছিল, কিন্তু দাম শুনেই স্বপ্ন বাতিল। ফোন নিয়ে আর ভাবেনি।
কিন্তু সেদিন ভাগ্নেরা যা করল, তাতে সে যেন পুরো দুনিয়া থেকে হারিয়ে গেছে বলে মনে হলো।
শুক্রবার, খালার বাসায় দুপুরের খাওয়া শেষ। শামস বারান্দায় বসে পুরনো একটা ম্যাপ নিয়ে চিন্তায় ডুবে আছে। ভাগ্নে আদনান পাশে বসে ফোন ঘাঁটছিল, হঠাৎ বলল,
“মামা, তোমার ফোন দাও তো।”
শামস না তাকিয়েই বলল, “কেন?”
“অ্যাপ নামাবো।”
শামস এবার চোখ তুলল। “অ্যাপ?”
রাফি পাশ থেকে মুখ টিপে হাসল। “মামা, বলো তো, তোমার ফোনে একটা অ্যাপও নাই?”
শামস কেমন যেন অস্বস্তি বোধ করল। “আমার ফোন তো শুধু কল করতে পারে।”
দুইজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে এমনভাবে হেসে উঠল, যেন শামস এইমাত্র ঘোষণা দিয়েছে যে সে এখনো ক্যাসেট প্লেয়ার ব্যবহার করে।
“মামা, সিরিয়াসলি?” আদনান বলল। “দশ হাজার টাকায়ও এখন স্মার্টফোন পাওয়া যায়, সব কিছু চলে!”
দশ হাজার টাকা? শামস কিছু বলল না, কিন্তু মাথায় কথাটা গেঁথে গেল।
পরদিন সকালে, কেমন যেন একটা অদ্ভুত খেয়ালে সে মোবাইলের দোকানে ঢুকে পড়ল।
চকচকে স্মার্টফোনের সারি। সন্দেহ নিয়ে একটা তুলনামূলক সস্তা ফোন দেখিয়ে বলল, “এইটা কেমন?”
দোকানদার হাসিমুখে হাতে ধরিয়ে দিল, যেন এটা পৃথিবীর সবচেয়ে স্বাভাবিক ব্যাপার।
সেই রাতে, ফোনটা চালিয়ে শামস থ মেরে গেল।
অ্যাপ। এত কিছু সম্ভব?!
লাইভ ট্রাফিক ম্যাপ, যা রিয়েল টাইমে দেখায় কোথায় জ্যাম লেগেছে। এমনকি আগে থেকেই আগাম বলে দেয়! বাস, রিকশা, মোটরসাইকেল—সবকিছুর রুট ট্র্যাক করা যায়। স্মার্ট প্ল্যানিং টুল, যা আগেভাগে শহরের ভবিষ্যৎ অনুমান করতে পারে!
সে এতদিন কাগজ-কলমে মরছিল, অথচ এইসব মানুষের হাতের মুঠোয় ছিল!
শামসের রক্ত যেন দ্রুত বয়ে যেতে লাগল।
সে একবার ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাল, একবার জানালার বাইরে শহরের আলো-আঁধারির দিকে।
একটা নতুন জগৎ খুলে গেছে, আর তার সামনে অসম্ভব অনেক রাস্তা পড়ে আছে।
©somewhere in net ltd.