নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাগজের তৈরি কাক

নকল কাক

নকল কাক

নকল কাক › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক উত্তেজনার দিন

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:১৬

শীতের কুয়াশা তখনো পুরোপুরি কাটেনি। ফুটপাতের ধারে গুটিসুটি মেরে শুয়েছিল কুকুরটা। শীতের কামড় গায়ে লাগছিল, কিন্তু তার চেয়েও বড় ছিল খিদে। চোখ আধখোলা রেখেই দোকানপাট খোলার অপেক্ষায় থাকল। বাজারের শব্দগুলো ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছিল—গাড়ির হর্ন, দোকানিদের হাঁকডাক, চায়ের কেটলির শোঁ শোঁ শব্দ। এই শব্দগুলোই তো তার চেনা পৃথিবী।

একসময় চায়ের দোকানের দাদাটা এসে টিনের বাক্স খুলল। কুকুরটা একটু দূরে বসে রইল, তাকিয়ে রইল অপেক্ষায়। লোকটা একবার তার দিকে তাকাল, তারপর হালকা হাসল। সেই হাসির মানে সে বোঝে—আজও কিছু একটা মিলবে। কিছুক্ষণ পরেই শক্ত হয়ে যাওয়া একটা রুটি তার দিকে ছুড়ে দিল দোকানি।

সে লেজ নাড়িয়ে তাড়াতাড়ি মুখে তুলল। এই শীতের সকালে পেটের ভেতর একটু কিছু পড়লে বেঁচে থাকার অনুভূতিটা আবার ফিরে আসে। অন্য কুকুরেরা দেখার আগেই রুটিটা দ্রুত খেয়ে সে ফুটপাতে গিয়ে বসে থাকল।

সকাল গড়াতে লাগল, রোদ উঠলেও হালকা ঠান্ডা থেকে গেল বাতাসে। একটু আরাম পাওয়ার আশায় ফুটপাতে গা এলিয়ে দিল সে। চোখ বন্ধ করল, কিন্তু খুব বেশিক্ষণ ঘুমিয়ে থাকা সম্ভব হলো না।

বাজারের ভেতর হঠাৎই শুরু হলো তুমুল চেঁচামেচি—দুই দল কুকুরের মধ্যে লড়াই লেগেছে!

প্রথমে কয়েকটা গম্ভীর গর্জন, তারপর আচমকা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়ে গেল। একদল আরেক দলকে তাড়া করছে, কিছু কুকুর লাফিয়ে উঠে অন্যদের ঝাঁপিয়ে ধরছে, কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। গলির ভেতর থেকে চিৎকার, কামড়াকামড়ি, লড়াইয়ের উত্তাপ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে।

কুকুরটার রক্ত গরম হয়ে উঠল!

সে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে ঘেউ ঘেউ করতে লাগল। যেন লড়াইটা তার জন্যই হচ্ছে! যেন এই গর্জনগুলোতে সেও আছে! একবার মনে হলো ছুটে যায়, কিন্তু পরক্ষণেই সাবধান হলো—ওরা অনেক বড়, অনেক শক্তিশালী। তবু সে দূর থেকেই চেঁচিয়ে চলল, কখনো সামান্য এগিয়ে, আবার একটু পিছিয়ে।

এভাবে কতক্ষণ কেটে গেল, সে জানে না।

একসময় লড়াই থেমে গেল। কুকুরগুলো ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে—কেউ জিতেছে, কেউ হেরে গেছে, কেউ রক্তাক্ত, কেউ ক্লান্ত।

কিন্তু কুকুরটা?

সে দাঁড়িয়ে থাকল আগের জায়গাতেই, বুক ধড়ফড় করছে উত্তেজনায়। আজও সে লড়েনি, কামড়ায়নি, কাউকে ধাওয়া দেয়নি—তবু গর্জন করেছে, লড়াইয়ের শিহরণ অনুভব করেছে, দূর থেকে হলেও অংশ নিয়েছে।

বিকেলের রোদ একটু নরম হলে ফুটপাতে গা এলিয়ে দিল সে। চোখ বুজে ভাবতে লাগল—একদিন কি সত্যি ওদের মতো হতে পারবে? হয়তো না, হয়তো কখনোই না।

কিন্তু আজকের দিনের উত্তেজনা? সেটা একদম সত্যি। লড়াইয়ে না নেমেও আজ সে একটা যুদ্ধের মতো কিছু অনুভব করেছে। আর সেটাই বা কম কী?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.