![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে হাইফা নৌ ঘাঁটিতে, সমুদ্রের হালকা নোনা বাতাসে মিশে আছে সকালের সতেজতা। সূর্যের প্রথম আলো পড়েছে ডকইয়ার্ডের বিশাল জাহাজগুলোর উপর - ডেস্ট্রয়ার "মাখশীফ", ফ্রিগেট "হানিত", কর্ভেট "কিডন", প্যাট্রোল বোট "ডভর" এবং সাপ্লাই শিপ "ইশেল" সজ্জিত আছে সারিবদ্ধভাবে। দুটি সাবমেরিন "রাহাভ" ও "ওরেভ" ডকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রস্তুত, তাদের নাবিকরা সকালের রুটিন কাজে ব্যস্ত।
"সাবমেরিনের আন্ডারওয়াটার ইন্ট্রুশন ডিটেকশন নেটওয়ার্ক চেক করেছ?" সাবমেরিন "ওরেভ"-এর কমান্ডার ইয়োনাথান তার টেকনিশিয়ানকে জিজ্ঞেস করলেন।
"হ্যাঁ স্যার, সব সিস্টেম নর্মাল," টেকনিশিয়ান ডেভিড উত্তর দিল, "কিন্তু আজ সকালে কিছু অদ্ভুত অ্যাকোয়াটিক ডিসটার্বেন্স রেকর্ড করেছি।"
"সম্ভবত কিছু ডলফিন," ইয়োনাথান হেসে বললেন, "এগুলো নিয়ে চিন্তা করো না।"
ডেস্ট্রয়ার "মাখশীফ"-এর ডেকে তামির নামের এক তরুণ নাবিক তার সহকর্মি অমিতকে টিজ করছিল, "কাল রাতে তুমি যে মেয়েটার সাথে ফ্লার্ট করছিলে, তার বাবা তো আমার ইউনিটের কমান্ডিং অফিসার!"
অমিত হেসে উত্তর দিল, "তাহলে তুমি এখন আমার ভবিষ্যৎ শ্বশুরের কাছে রিপোর্ট করবে।"
হঠাৎ সাবমেরিন "রাহাভ"-এর কমান্ড সেন্টার থেকে আতঙ্কিত কণ্ঠে রেডিওতে বার্তা এল, "আমাদের আন্ডারওয়াটার সেন্সরসে কিছু একটা ডিটেক্ট করেছি! এটি কোনো সাধারণ-"
তার কথা শেষ হওয়ার আগেই প্রথম শকওয়েভ আঘাত হানল। পানির নিচ থেকে আসা ভয়ঙ্কর কম্পনে সাবমেরিন "রাহাভ" কেঁপে উঠল। "ওয়াট দ্য হেল!" ক্যাপ্টেন আরন চিৎকার করে উঠলেন, "ইমার্জেন্সি ইভ্যাক! ইমার্জেন্সি ইভ্যাক!!"
কিন্তু খুব দেরি হয়ে গিয়েছিল। বিশাল জলস্তম্ভ উঠে গেল আকাশে, ৩,০০০ টন ওজনের সাবমেরিনটিকে উল্টে ফেলে দিল। ধাতব হাল ভেঙে টুকরো টুকরো হতে লাগল যেন টিনের ক্যানের মতো। "মাই গড! দে আর সিঙ্কিং!" জেটি থেকে একজন ক্রু চিৎকার করল।
ডেস্ট্রয়ার "মাখশীফ"-এর ডেকে দাঁড়িয়ে থাকা নাবিকরা হঠাৎ দেখল জলের রঙ বদলে গেছে। "লুক আউট!" তামির চিৎকার করল, কিন্তু পরমুহূর্তেই দ্বিতীয় শকওয়েভ আঘাত হানল। ৪,৫০০ টন ওজনের জাহাজটি কুঁচকে গেল মাঝখান থেকে। "হোলি ক্র্যাপ!" অমিত চিৎকার করল। জাহাজটির মাঝখান থেকে হাল ফেটে চৌচির হয়ে গেল। আগুনের শিখা লাফিয়ে উঠল, ডেকের কয়েকজন নাবিক মুহূর্তেই ছাই হয়ে গেল। জাহাজটি কয়েক মিনিট কাত হয়ে ভাসার চেষ্টা করলেও, শেষে ধীরে ধীরে এক পাশে হেলে গিয়ে পুরোপুরি পানির নিচে ডুবে গেল।
ফ্রিগেট "হানিত" এবং কর্ভেট "কিডন"-এর মধ্যবর্তী জলে তৃতীয় শকওয়েভ আঘাত হানল। "ব্রেস ইয়োরসেল্ফ!" "হানিত"-এর ক্যাপ্টেন চিৎকার করলেন, কিন্তু বিস্ফোরণের শক্তিতে দুটি জাহাজ একে অপরের সাথে ধাক্কা খেতে লাগল। "আওয়ার হাল ইজ ব্রেকিং!" একজন নাবিক চিৎকার করল।
সাবমেরিন "ওরেভ"-এর কমান্ড সেন্টারে ইয়োনাথান হতবাক হয়ে দেখলেন তার সোনার স্ক্রিনে একটা কিছু তাদের দিকে ধেয়ে আসছে। "এভরি ওয়ান টু ইমার্জেন্সি ইভ্যাকুয়েশন!" তিনি চিৎকার করলেন, কিন্তু চতুর্থ শকওয়েভ ইতিমধ্যে আঘাত হেনেছে। ২,৮০০ টন ওজনের সাবমেরিনটি পানির নিচে ভয়ঙ্করভাবে কেঁপে উঠল। "উই আর হিট! পানি প্রবেশ করছে!" ডেভিড চিৎকার করল।
সাপ্লাই শিপ "ইশেল"-এর ডেকে দাঁড়িয়ে থাকা নাবিকরা হঠাৎ দেখল জলের নিচ থেকে বিশাল বুদবুদ উঠছে। "রান! রান ফর ইয়োর লাইভস!" একজন অফিসার চিৎকার করল, কিন্তু পঞ্চম শকওয়েভ ইতিমধ্যে ১০,০০০ টন ওজনের বিশাল জাহাজটিকে উল্টে দিয়েছে। ডেকে থাকা সি-হক হেলিকপ্টার বিস্ফোরণে উড়ে গেল, তার একটা ব্লেড ১০০ মিটার দূরে গিয়ে পড়ল।
ছোট প্যাট্রোল বোট "ডভর"-এর ক্রুরা কিছুই বুঝে ওঠার আগেই ষষ্ঠ শকওয়েভে আক্রান্ত হল। "হেল্প আস! সামবডি হেল্প আস!" রেডিওতে একজন নাবিকের শেষ কথাগুলো ভেসে এল।
অ্যাডমিরাল বারাক কমান্ড সেন্টারে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তার সামনের মনিটরে একের পর এক জাহাজের আইকন লাল হয়ে যাচ্ছিল। "কী হচ্ছে এখানে?" তিনি হতবাক হয়ে বললেন, "এটা কীভাবে সম্ভব?"
"স্যার, আমাদের সমস্ত আন্ডারওয়াটার সেন্সর নেটওয়ার্ক ফেইল হয়েছে," একজন টেকনিশিয়ান কাঁপা কণ্ঠে বলল, "কিছু আমাদের সমস্ত ডিফেন্স সিস্টেমকে বাইপাস করেছে।"
ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে ক্যাপ্টেন আরন তার মেয়ে রিভকার আঁকা ছবিটি হাতে নিয়ে কাঁদছিলেন। ছবিতে লেখা: "আমি তোমাকে ভালোবাসি বাবা"। সমুদ্রের ঢেউ যেন আরও জোরে আছড়ে পড়ছিল, এই বিভীষিকার সাক্ষী হয়ে থাকবে চিরকাল।
"তারা কীভাবে আমাদের সবচেয়ে অ্যাডভান্সড আন্ডারওয়াটার ডিটেকশন সিস্টেমকে বাইপাস করল?" অ্যাডমিরাল বারাক ফিসফিস করে বললেন, তার চোখে অবিশ্বাস আর আতঙ্কের মিশ্রণ, "এটা... এটা অসম্ভব..."
কিন্তু ধ্বংসস্তূপের সামনে দাঁড়িয়ে সেই অসম্ভবই সত্যি হয়ে উঠেছিল। হাইফা নৌ ঘাঁটির যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন এখন সমুদ্রের গভীরে চিরনিদ্রায় শায়িত। সমুদ্রের জলে ভাসছে পোড়া কাঠের টুকরো, তেলের দাগ আর ব্যক্তিগত জিনিসপত্র। রেসকিউ টিমের সদস্যরা খুঁজে চলেছে জীবিতদের, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা পাচ্ছে শুধু মৃতদেহ। এই বিভীষিকা ইসরায়েলি নৌবাহিনীর ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে, যেখানে তাদের সমস্ত প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিল এক অজানা শক্তির কাছে।
©somewhere in net ltd.