নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাগজের তৈরি কাক

নকল কাক

নকল কাক

নকল কাক › বিস্তারিত পোস্টঃ

এ্যমবুশ-৭

১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:৫০

তেলআভিভে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর এখন রাগ ও আতঙ্কে ফুটতে থাকা এক প্রেশার কুকার। লোহিত সাগরের মানচিত্র, ধ্বংসাবশেষের স্যাটেলাইট ছবি, ও হতাহতের রিপোর্ট ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে টেবিলজুড়ে। বাতাসে ঘামে ভেজা শরীর আর বাসি কফির তীব্র গন্ধ। প্রধানমন্ত্রী এইতান বারাক ক্রোধ চাপা দেওয়া মুখোশ পরে খাঁচাবন্দি বাঘের মতো পায়চারি করছেন।

স্ক্রিনে হাইফা নৌঘাঁটির লাইভ ফিডে দেখা যাচ্ছে উদ্ধারকারী দলগুলি পোড়া লাশ টেনে তুলছে পানির ভেতর থেকে। ক্যামেরা এক পর্যায়ে দেখালো একজন কাঁদতে থাকা নাবিকের হাতে ধরা একটি শিশুর আঁকা ছবি—“বাবা, নিরাপদে ঘরে ফিরে এসো।” বারাক মুষ্টিবদ্ধ হাত দিয়ে টেবিলে সজোরে আঘাত করলেন।

“এটা আক্রমণ নয়। এটা অপমান!” তিনি গর্জে উঠলেন। “পাঁচটা জাহাজ! দুইটা সাবমেরিন! আর আমরা কিছুই আঁচ করতে পারলাম না?!”

তার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন মোসাদের পরিচালক তালিয়া রেগেভ। তার হাতে ধরা ট্যাবলেটে ইয়োয়াভ গটম্যানের পদত্যাগপত্র। “গটম্যানের ইউনিট প্রতিটি সংকেত মিস করেছে। লেভিয়াথান আক্রান্ত হওয়ার পরে যে হাইফায় আক্রমন হতে পারে, এবং সেজন্য যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া লাগবে - এটা তার মাথাতেই আসে নাই”

বারাকের কণ্ঠ বিষাক্ত ফিসফিসে স্বরে নেমে এলো। “তাকে বরখাস্ত করো। প্রকাশ্যে। এবং পুরো ইউনিটটা ভেঙে দাও। ভোরের মধ্যে তাদের ব্যাজ আমার টেবিলে চাই।”

রেগেভ কিছুটা ইতস্তত করলেন। “স্যার, গটম্যান কিন্তু—”

“একজন ব্যর্থতা!” বারাক চিৎকার করে স্ক্রিনে আঘাত করলেন, যেখানে ডুবে যাওয়া যুদ্ধজাহাজ ‘মাখশীফ’-এর ছবি থেমে গেল। “আমরা কোনো দেশের সঙ্গে যুদ্ধ করছি না। আমরা যুদ্ধ করছি ছায়ার সঙ্গে। আর নিজেদের ব্যর্থতার সঙ্গে!”

১২ ঘন্টা পরে ওয়াশিংটন ডিসি – হোয়াইট হাউস সিচুয়েশন রুম
-------------------------------------------------------------------
ওভাল অফিসের আড়ম্বর যেন ব্যঙ্গ করে হাসছে, বারাক বসে আছেন প্রেসিডেন্ট স্ট্যানলি হ্যারিসনের মুখোমুখি। আমেরিকান প্রেসিডেন্টের মুখে সহানুভূতির ছোঁয়া থাকলেও কেমন যেন একরকম দূরত্ব।

“এইতান, আমরা স্যাটেলাইট নজরদারি বাড়াব, লোহিত সাগর নজরে রাখতে দূরপাল্লার P-8 টহল মোতায়েন করব,” হ্যারিসন বললেন, একগুচ্ছ গোয়েন্দা পরিকল্পনার ফোল্ডার এগিয়ে দিয়ে। “কিন্তু পুরো হুমকিটা বুঝে ওঠার আগে আমি আমাদের ক্যারিয়ার গ্রুপ পাঠাতে পারব না।”

বারাকের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল। “আপনি বলতে চান, আমেরিকান নৌবাহিনী একটা মাছ ধরার নৌকার ভয়ে কাঁপছে?”

NSA-এর এক কড়া চেহারার নারী সহকারী হস্তক্ষেপ করলেন। “প্রধানমন্ত্রী, আমরা ধ্বংসাবশেষ বিশ্লেষণ করেছি। সেই ‘মাছ ধরার নৌকাটির’ গায়ে রাডার-বিরোধী আবরণ ছিল, এবং সম্ভবত এআই চালিত টর্পেডো ছিল। এটা হামাস নয়। এটা একেবারে নতুন এক যুদ্ধ বাস্তবতা।”

হ্যারিসন সামনে ঝুঁকে বললেন, “আমাদের জানতে ও প্রমাণ করতে হবে এর পেছনে কে আছে। এটা ইরান, হুথি, বা এমন কোনো গোপন বাহিনী হতে পারে যার নামই আমরা শুনিনি।”

বারাক হঠাৎ দাঁড়িয়ে উঠলেন। “প্রমাণ? আমার নৌবাহিনী সমুদ্রের তলায়। আরও কী প্রমাণ দরকার আপনার?”

আরও ৩ ঘন্টা পর, ওয়াল স্ট্রিট – রুদ্ধদ্বার বৈঠক
---------------------------------------------------
ম্যানহাটনের এক সুউচ্চ ভবনে জড়ো হয়েছিলেন AIPAC-এর লবিস্ট ও হেজ ফান্ডের সিইওরা। ব্ল্যাকরকের ডেভিড ক্লেইনম্যান নার্ভাসভাবে কলম টোকাচ্ছিলেন। “এইতান, বাজার অস্থির হয়ে পড়েছে। যদি পরিস্থিতি খারাপের দিকে যায়, আমরা একটি আঞ্চলিক যুদ্ধের মুখোমুখি হব। তেলের দাম বাড়বে, বৈশ্বিক অস্থিরতা দেখা দেবে।”

বারাক নাক সিটকালেন। “আমি এখানে শেয়ার বাজারের রিপোর্ট নিতে আসিনি।”

“তাহলে এটাও শুনুন,” বলে কথা কেটে দিলেন সাবেক স্টেট ডিপার্টমেন্ট কৌশলবিদ সারাহ এলিসন। “এই মুহূর্তে উত্তেজনা কমান। মিসর, সৌদি—যার সঙ্গেই হোক, ব্যাকচ্যানেল খুলুন। হামলাকারীদের খোঁজে সহায়তা চাইতে হবে।”

“আর বলব কী?” বারাকের হাসি ছিল ঠাণ্ডা, ভাঙা। “‘দয়া করে আমাদেরকে সেই অদৃশ্য শত্রুর খোঁজে সাহায্য করুন, যারা আমাদেরকেই বোকা বানিয়ে দিলো’?”

ঘরটা হঠাৎ কেমন বোবা হয়ে গেল। ক্লেইনম্যান ঠোঁট চেপে ধরলেন, একবার চোখ বুলালেন ঘরজুড়ে সবার মুখে।

“আরেকটা পথ আছে,” তিনি ধীরে বললেন, গলায় যেন দ্বিধা। “একটা শক্ত বার্তা দিন। ঘোষণা করুন—লোহিত সাগরে যদি কোনো জাহাজ সিগন্যাল না দেয়, কিংবা পরিচয় না জানায়, সেটাকে শত্রু জাহাজ ধরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এলিসন চুপচাপ শুনছিলেন। এবার একটু এগিয়ে এলেন।

“আপনি বুঝছেন তো, এর মানে কী? এই অঞ্চলে শুধু আমাদেরই না, মিসর, সৌদি, এমনকি চীন ও রাশিয়ার বাণিজ্যিক জাহাজও চলাচল করে। একবার ভুল হলে সেটা শুধু সামরিক উত্তেজনা না—পুরো আন্তর্জাতিক সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে।”

বারাকের ফোন বেজে উঠল—মোসাদের এলার্ট। তিনি সেটা পড়লেন, গভীরভাবে নিশ্বাস ফেললেন। “দেরি হয়ে গেছে। আরেকটি হামলা। এলাতের ডিস্যালাইনেশন প্ল্যান্ট অচল হয়ে গেছে। কোনো ক্ষেপণাস্ত্র, কোনো ড্রোন নয়। শুধু… নীরবতা।”

ঘর জমে গেল।

“ওরা শুধু আমাদের সেনাবাহিনীকেই নয়,” বারাক ফিসফিস করে বললেন, “ওরা ইসরায়েলকে টুকরো টুকরো করে খুলে দিচ্ছে।”

------------------------------------------------------
ইরিত্রিয়ার উপকূলের গুহায় জামশেদ একটি হ্যান্ডহেল্ড রেডিও ঘুরিয়ে BBC ধরল। শিরোনাম—“ইসরায়েলের ওপর ‘অকারণ আগ্রাসনের’ জন্য জাতিসংঘে অভিযোগ”—তাঁকে হেসে ফেলতে বাধ্য করল।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৪৫

সামিয়া বলেছেন: ভালো হয়েছে

২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:৫০

নকল কাক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.