নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাত রকমের বন্ধুতা যার স্বাদ গ্রহণ করেছে প্রায় প্রতিটি মানুষঃ মিলিয়ে নিতে পারেন আপনিও

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৮


মানুষ একা বাস করতে পারে না। সমাজে বাস করতে হলে, প্রতিদিন কারো না কারো মুখাপেক্ষী হতে হয়। কাউকে আপন করতে হয়। একে অন্যকে আপন করে নেবার নামই বন্ধুত্ব। বন্ধু শব্দটির মধ্যে মিশে আছে পরম নির্ভরতা আর বিশ্বাস। এমনকি মাঝে মাঝে পরিবারের কিছু সদস্যের চাইতেও বেশি নির্ভরতা খুঁজে পাওয়া যায় একজন বন্ধুর মাঝে। বন্ধুত্ব হচ্ছে সুস্বাস্থ্যের মতো; হারালেই কেবল এর মূল্য অনুধাবন করা যায়। কথায় আছে, মানুষ চেনা যায় তাঁর সঙ্গী-সাথি দেখে। অসাধারণ বাগ্মিতার জন্য সুপরিচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ষোড়শ প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনও খানিকটা এরকমই বলেছিলেন। তাঁর মতে, ‘একজন ব্যক্তির জীবনের ভালো দিকটা গড়ে ওঠে তাঁর বন্ধুত্ব দিয়ে।’ ফরাসি দার্শনিক ও লেখক আলবেয়ার কামুর বিখ্যাত উক্তি" ‘আমার সামনে সামনে হেঁটো না, আমি হয়তো অনুসরণ করব না। আমার পেছন পেছন হেঁটো না, আমি হয়তো পথ দেখাতে পারবে না। আমার পাশে হাঁটো এবং বন্ধু হও।’ তবে বন্ধু নির্বাচনে হতে হবে সাবধানী। একজন বন্ধু যেমন পারে অপর ব্ন্ধুর জীবনটাকে স্বর্গে পরিণত করতে, তেমনি নরক গুলজার করতে বন্ধুর ভূমিকাকে দায়ী করা হয়। বিখ্যাত দার্শনিক ইমাম গাজ্জালি (রহঃ) বলেন, ‘সবাইকে বন্ধু নির্বাচন করা যাবে না; বরং তিনটি স্বভাব যার মাঝে বিদ্যমান, এমন লোককে বন্ধু নির্বাচন করা চাই। এই তিনটি গুণ হলো ১। বন্ধুকে হতে হবে জ্ঞানী, বিচক্ষণ। ২। বন্ধুর চরিত্র হতে হবে সুন্দর ও মাধুর্যময়। ৩। বন্ধুকে হতে হবে নেককার, পূণ্যবান।’ জীবন চলার পথে নানান চড়াই উৎরা্ইয়ের পথে এক এক সময় বা পরিবেশে যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তাকে সাতটি ভাগে ভাগ করেছেন বিদগ্ধ জনেরা। এই সাত রকমের বন্ধুতা সম্পর্কে আলোকপাত করা হলোঃ

১। বিনি সুতোর মালায় গাঁথাঃ
শৈশবে কখন যে এই সম্পর্ক শুরু হয়েছিল তা আজ আর মনে নেই। জীবনের দীর্ঘপথ একত্রে পাড়ি দিয়েছেন। হাত ধরাধরি করে পার হয়েছেন নানা ঝড়-ঝাপটা। হেসেছেন, কেঁদেছেন, ভালোবেসেছেন পরস্পরকে। এ ভালোবাসায় যেন ভালোবাসার অধিক কোনো চাওয়াপাওয়া নেই। এদের একের প্রতি অন্যের টান এতটাই গভীর যে, অনেক সময়ই হয়তো দুজনেরই জীবনসঙ্গীর চেয়েও এদের নিজেদের সম্পর্কটাই অনেক বেশি গভীর।
২। না প্রেম না বন্ধুতাঃ
প্রেমিক-প্রেমিকা নাকি কেবলই বন্ধু? আসলে হয়তো দুটোই। কলেজের দিনগুলোতেই কি এমনটা শুরু হয়েছিল নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পা রেখে সেটা বলাটা কঠিন। সারাক্ষণই তো দুজনে একসঙ্গে। কার দিক থেকে কে কবে বন্ধুতার বেশি কিছু চেয়েছিল কিংবা কে কবে থেকে মনে মনে এমন কিছু ভাবছিল সেটাও যেন স্পষ্ট নয়। কিন্তু একটা বিষয় এখন দুজনের কাছেই স্পষ্ট। দুজনেই জেনে গেছেন প্রেমের টান যতই থাকুক সম্পর্কটা আসলে কোনো দিনই ভালোবাসার গণ্ডি পেরোবে না!
৩। ভাবের বন্ধু লাভের বন্ধুঃ
তাঁর সঙ্গে ভাব হয়েছে, লাভ হয়েছে। হালফিলের এই বন্ধুতার মোদ্দা কথা যেন এটাই। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফিট’। দুজনেরই জানা আছে এ বন্ধুতায় কোথায় কতটা লাভ-ক্ষতি। কে কতটা ছাড় দেবেন আর কে কতটা ছাড় নেবেন। বিষয়গুলো খোলামেলা আলোচনায় আগে থেকে বলে কয়ে নেওয়া না হলেও আজকাল সবাই-ই তো স্মার্ট। ফলে এই সম্পর্ক অনেকটাই কেজো বন্ধুত্বের, দেওয়ার আর নেওয়ার।
৪। পুরোনো দিনের সেই বন্ধুঃ
এতগুলো বছর পেরিয়ে আজ আর তাঁকে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। সেই কবে কোন কালে আপনারা বন্ধু হয়েছিলেন। ঘনিষ্ঠতম হয়তো কোনো দিনই ছিলেন না, কিন্তু আপনাদের সবকিছুতেই তো তিনিও ছিলেন। ছেলেবেলায় বুঝতে না পারলেও এখন জানেন, এই সময়ে দেখা হলে হয়তো তাঁর সঙ্গে বন্ধু হওয়াই সম্ভব হতো না। কিন্তু দোষ-গুণ সব মিলিয়েই তো বন্ধু। আর পুরোনো সেই সব দিনের সেই সব স্মৃতিগুলোকে জীবন থেকে বাদই বা দেবেন কীভাবে। অতএব বন্ধু তো বন্ধুই, তা সে যেমনই হোক।
৫। ঘর না বাঁধা ঘরের বন্ধুঃ
আপনি গভীরভাবে তাঁর প্রেমে মজে আছেন। তিনিও আপনাকে ভালোবাসেন। কিন্তু সেটা তাঁর মতো করেই। আপনিও জানেন আর সেও জানে যে, জুটি বাঁধলে আপনাদের দুজনকে সত্যিই দারুণ মানাবে। কিন্তু আপনার মতো দিওয়ানা মজনুর লাইলি তিনি হতে চান না। বিপত্তিটা এখানেই। কিন্তু মানসিকভাবে আপনি কোনোভাবেই এটা মেনে নিতে পারছেন না। আবার দুজনের বন্ধুত্ব এতটাই প্রবল যে, তিনিও এই বন্ধুত্ব থেকে বেরিয়ে যেতে পারছেন না। আসলে এই বন্ধুত্ব থেকে ঘর বাঁধা যেমন সম্ভব না তেমনি বন্ধুতার এই ঘরখানি ভেঙে ফেলাও সম্ভব না।
৬। কেবলই ইন্টারনেট বন্ধুঃ
সাইবার জগৎ তো আসলে একটা আলাদা জগৎই! সেখানেও আলাদা নিয়মকানুন আছে, আছে হাসি-কান্না-বন্ধুত্বের নানা ধরনও। বিষয়টাকে হালকা করে দেখারও কিছু নেই। সব হারিয়ে একেবারেই হাল ছেড়ে দেওয়ার দিনগুলোতে সেই তো আপনাকে নতুন করে বাঁচার আশা জুগিয়েছিল! রাত জেগে জেগে চ্যাট করা, দীর্ঘ মেসেজে মনের কথা খুলে বলা। পরস্পরকে জেনে নেওয়া। সামনাসামনি দেখা না হোক, কথা না হোক, সাত-সমুদ্র তেরো নদীর পাড় থেকেও তো কেউ না কেউ কারও হাতখানি ধরতেই পারে, হোক না সে অন্তর্জালেই।
৭। বন্ধু তুমি শত্রু তুমিঃ
‘ফ্রেন্ড’ আর ‘এনিমি’, দুইয়ে মিলে ‘ফ্রেনিমি’। এরা সেই বন্ধু যাদের প্রতি ভালোবাসা আর এক রকম ঘৃণা যেন মিলেমিশে থাকে। অনেকটা পথ পেরিয়ে দুজনেরই মনের খাতায় লেখা আছে অম্ল-মধুর নানা ইতিহাস। তাঁর প্রতি আছে গভীর টান, আছে মমতাও। কিন্তু কোথায় যেন আছে একটা গোপন হিংসা-দ্বেষও। আপনিও জানেন আর সেও জানেন, এমনিতে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও হয়তো যেকোনো সময় এক ধাক্কাতেই আলগা হয়ে যেতে পারে এই সম্পর্কের ভিত।

উপসংহারে বলা যায়, সৃষ্টির শুরুতে বন্ধুত্ব ছিল, এখনও আছে, থাকবে অনন্তকাল। কারণ পৃথিবীর অনেক সম্পর্কের মধ্যে এটি অন্যতম। হজরত আলী (রাঃ) বলেন‘ বন্ধু অবশ্যই বানাও। কারণ বন্ধু দুনিয়াতেও উপকারে আসে এবং আখেরাতেও।’ বন্ধুত্ব এমন একটি বন্ধন, যাতে থাকে স্বার্থহীন ভালোবাসা। বন্ধুত্বের কোনো বয়স নেই। তা যখন তখন, যেখানে সেখানেই হতে পারে। মা-বাবা যেমন হতে পারে ভাল বন্ধু, তেমনি পারে স্বামী-স্ত্রীও। আবার স্কুল-কলেজ, চাকরির ক্ষেত্রে সবখানেই বন্ধুত্ব হতে পারে। তবে বন্ধুকে হতে হয় অনেক বিশ্বাসী, দায়িত্ববান। যার উপর ভরসা করা যায় নিশ্চিন্তে। হজরত ইমাম জাফর সাদেক (রঃ) বলেন, পাঁচ ব্যক্তির সঙ্গ (বন্ধুত্ব) অবলম্বন করো না যারা মিথ্যাবাদী, নির্বোধ, কৃপণ, কাপুরুষ ও ফাসেক। হজরত আলী (রাঃ) বলেন ‘যে ব্যক্তি চিন্তাভাবনা করে যথাযথ বিচার-বিশ্লেষণ করে বন্ধু নির্বাচন করবে, তাদের বন্ধুত্ব বজায় থাকবে এবং তাদের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর হবে।’ তা্ই বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক হোন। ধন্যবাদ সকল বন্ধুকে!

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৫

নন্দলাল সরকার বলেছেন: অপূর্ব---- দারুন লেখা-- মন ভরে যায়-- খুব ভালো লাগলো, সুন্দর লিখেছেন

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: ধন্যবাদ নন্দলাল দাদা
অনুপ্রানিত করা মন্তব্য!!
দারুন ভাবে উপভোগ করলাম।
সাথে থাকবেন আগামীতে সেই প্রত্যাশা............

২| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১৪

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দারুন!

আরেকটা বন্ধুত্ব তো ভুইলে গেলেন! সামু ফ্রেন্ডস ;)

চেনা নেই জানা নেই অথচ তবু বারবার ভার্চুয়াল বন্ধুর পোষ্টে যেয়ে দেখা, কমেন্টো করা, তার লেখার অপেক্ষায় থাকা ;)

+++++++++++++++++++

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: ধন্যবাদ ভৃগু ভাইয়া আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য
৬ নম্বর (কেবলই ইন্টা্রনেট বন্ধু) কি সেই শ্রেণিতে
পড়েনা !! সামু, ফেসবুক, টুইটার বন্ধু সব
এক গোত্রের (সামাজাকি যোগাযোগ) যা ইণ্টারনেটের
মাধ্যমে যোগাযোগ হয়)

৩| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৫০

বিপরীত বাক বলেছেন: একজন বন্ধু যেমন পারে অপর ব্ন্ধুর জীবনটাকে স্বর্গে পরিণত করতে, তেমনি নরক গুলজার করতে বন্ধুর ভূমিকাকে দায়ী করা হয়


নিচু জাত, অশিক্ষিত জাত, চোগলখোর কুকুর, এই সব লোক কে কখনও বন্ধু করতে নেই।
এ ধরনের লোকেরা অাবার পরহেজগার হয় অনেক ক্ষেত্রে।

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: একদম খাঁটি কথা!!
বিচার বিবেচনার সাথে বন্ধু নির্বাচন করতে হবে।
নবী করিম (সা.) এবং তাঁর উত্তর প্রজন্মের ইমামগণ বন্ধু নির্বাচন করার ব্যাপারে মূল্যবান কিছু দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে নবীজী বলেছেনঃ “একাকী নিঃসঙ্গতার চেয়ে ভালো বন্ধু উত্তম আর নিঃসঙ্গতা মন্দ বন্ধুর চেয়ে উত্তম।” তার মানে হলো-ভালো এবং যথার্থ বন্ধু যদি নাও থাকে তাহলেও তা একজন মন্দ ও অযোগ্য বন্ধু থাকার চেয়ে ভালো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.