নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিখ্যাত ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও লেখক মৃণাল সেনের ৯৪তম জন্মবার্ষিকী আজ

১৬ ই মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২০


বাংলাদেশী জন্মোদ্ভূত বিখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও লেখক মৃনাল সেন। নিয়ম ভেঙে চলচ্চিত্র বানানোতেই যিনি সবচেয়ে বেশি উৎসাহী ছিলেন। এ চলচ্চিত্রকার পাল্টে দিয়েছেন বাংলা ছবির ধারা। বাংলা চলচ্চিত্রের আধুনিক রূপরেখা দিয়েছিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক খ্যাতিম্পন্ন এই পরিচালকের প্রতিটি ছবিতে ক্ষুদ্র গলি থেকে রাজপথ, বস্তি থেকে অট্টালিকার চিত্র তিনি তুলে ধরেছেন যা আর শেষ পর্যন্ত শুধু কলকাতার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকেনি, পেয়েছে বৈশ্বিক রূপ। আর এখানেই মৃণাল সেন নির্মাতা হিসেবে অনন্য, আর সবার থেকে আলাদা। ছাত্র রাজনীতিতে বেশ দাপটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মৃণাল সেন। ছাত্রাবস্থায় কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক শাখার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এরপর তিনি সমাজবাদী সংস্থা ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন (আইপিটিএ) এর সাথে যুক্ত হন। এ সংস্থার মাধ্যমে তিনি সমভাবাপন্ন মানুষদের কাছাকাছি আসতে সক্ষম হন। কিংবদন্তি এই চিত্র পরিচালকের আজ ৯৪তম জন্মবার্ষিকী। ১৯২৩ সালের আজকের দিনে জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশের ফরিদপুরে। বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও লেখক মৃণাল সেনের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

বরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক মৃণাল সেন ১৯২৩ সালের ১৪ মে বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুরের একটি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ফরিদপুরেই কেটেছে মৃণাল সেনের ছোটবেলা। এখানে উচ্চবিদ্যালয়ে লেখা পড়া শেষে উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশ বিভাগের সময় তারা সপরিবারে কলকাতায় আসেন এবং স্কটিশ চার্চ কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা পড়াশোনা করেন তিনি। ছাত্রাবস্থায় তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক শাখার সঙ্গে যুক্ত হন। যদিও তিনি কখনও কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন নি। চল্লিশের দশকে তিনি সমাজবাদী সংস্থা আইপিটিএর (ইন্ডিয়ান পিপ্‌লস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন) সঙ্গে যুক্ত হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবার পর তিনি একজন সাংবাদিক, একজন ওষুধ বিপননকারী এবং চলচ্চিত্রে শব্দ কলাকুশলী হিসাবে কাজ করেন। গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের বিশেষ বন্ধু মৃণাল সেন ছবি করেছেন বিদ্রোহী মেজাজে। তার পরিচালিত প্রথম ছবি রাতভোর মুক্তি পায় ১৯৫৫ সালে। যদিও ছবিটি বেশি সাফল্য পায় নি। তবে তাঁর দ্বিতীয় ছবি নীল আকাশের নীচে তাঁকে স্থানীয় পরিচিতি এনে দেয়। তাঁর তৃতীয় ছবি বাইশে শ্রাবন থেকে তিনি আর্ন্তজাতিক পরিচিতি পান। তারপরের ২০ বছরে একের পর এক ছবি করেছেন প্রচলিত ধারণার বাইরে বেরিয়ে এসে। আকাশকুসুম, মৃগয়া অন্যযাত্রা, কলকাতা-৭১, আকালের সন্ধানে, একদিন প্রতিদিন, মহাপৃথিবী, খারিজ, খণ্ডহর, ওকাউরি কথা ও অন্য ভুবন-এ মৃণাল ছুঁয়ে গেছেন সময়কে। সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতাকে মৃণাল যেভাবে সাহসের সঙ্গে তার ছবিতে তুলে ধরেছেন তা অন্য কোন ভারতীয় পরিচালক পারেননি। রাজনৈতিক ছবি নির্মাণ করলেও তার ছবি কখনো রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েনি। অর্থাৎ রাজনৈতিক বিরূপ সমালোচনায় পড়তে হয়নি। কেননা রাজনীতির গভীরে যেয়ে তার মূল অন্বেষণ করাই ছিল তার লক্ষ্য, ছবির রাজনীতিকরণ নয়। তাই ‘ভুবন সোম’ এ তিনি আমলাতন্ত্রকে আঘাত করতে চেয়েছেন। আমলাতান্ত্রিকতার ভেতরের ভাঁপা দিকগুলো উন্মোচন করতে চেয়েছেন ১৯৬৯ সালে তাঁর পরিচালিত ছবি ভুবন সোম মুক্তি পায়। বনফুলের একটি বড় গল্প থেকে নির্মিত ছবি ‘ভুবন সোম’ এর নায়ক ভুবন সোম রেল বিভাগের উর্ধতন, ডাকসাইটে একজন কর্মকর্তা। অবিবাহিত। অত্যন্ত সৎ। সততার কারণে নিকট আত্মীয়কেও বরখাস্ত করতে দ্বিধাবোধ করেন না। তাই রেলের একজন অসাধু টিকেট কালেক্টার যাদব প্যাটেলের ঘুষ গ্রহণের কারণে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট তৈরি করে তার শাস্তির ব্যবস্থা করেন। এই ছবিতে বিখ্যাত অভিনেতা উৎপল দত্ত অভিনয় করেছিলেন। এই ছবিটি অনেকের মতে ‘ভুবন সোম’মৃণাল সেনের শ্রেষ্ঠ ছবি। বাংলা ভাষা ছাড়াও হিন্দি, ওড়িয়া ও তেলেগু ভাষায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন মৃণাল সেন । ১৯৬৬ সালে ওড়িয়া ভাষায় নির্মাণ করেন মাটির মনীষ, যা কালীন্দিচরণ পাণিগ্রাহীর গল্প অবলম্বনে নির্মিত হয়। ১৯৬৯ এ বনফুলের কাহিনী অবলম্বনে হিন্দি ভাষায় নির্মাণ করে ভুবন সোম। ১৯৭৭ সালে প্রেম চন্দের গল্প অবলম্বনে তেলেগু ভাষায় নির্মাণ করেন ওকা উরি কথা। ১৯৮৫ সালে নির্মাণ করেন জেনেসিস, যা হিন্দি, ফরাসি ও ইংরেজি তিনটি ভাষায় তৈরি হয়।

বাংলা চলচ্চিত্রের ট্রিলোজিতে সত্যজিৎ রায় ও ঋত্বিক ঘটকের পাশেই রয়েছেন মৃণাল সেন। সমাজ বাস্তবতাকে মৃণাল সেন সব সময়ই গুরুত্ব দিয়েছেন। আর তাই তার ছবিতে নকশাল আন্দোলন যেমন এসেছে, তেমনি এসেছে শ্রেণীদ্বন্দ্ব, এসেছে দরিদ্র আদিবাসীদের কথাও। তাঁর কলকাতা ট্রিলোজি অর্থাৎ ইন্টারভিউ (১৯৭১), ক্যালকাটা ৭১ (১৯৭২) এবং পদাতিক (১৯৭৩) ছবি তিনটির মাধ্যমে তিনি তৎকালীন কলকাতার অস্থির অবস্থাকে তুলে ধরেছিলেন। মধ্যবিত্ত সমাজের নীতিবোধকে মৃণাল সেন তুলে ধরেন তাঁর খুবই প্রশংসিত দুটি ছবি এক দিন প্রতিদিন (১৯৭৯) এবং খারিজ (১৯৮২) এর মাধ্যমে। খারিজ ১৯৮৩ সালের কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ জুরি পুরস্কার পেয়েছিল। ১৯৮০ সালের চলচ্চিত্র আকালের সন্ধানে। এই ছবিতে দেখানো হয়েছিল একটি চলচ্চিত্র কলাকুশলীদলের একটি গ্রামে গিয়ে ১৯৪৩ খ্রীষ্টাব্দের দুর্ভিক্ষের উপর একটি চলচ্চিত্র তৈরির কাহিনী। কিভাবে ১৯৪৩ এর দুর্ভিক্ষের কাল্পনিক কাহিনী মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় সেই গ্রামের সাধারণ মানুষদের সাথে সেটাই ছিল এই চলচ্চিত্রের সারমর্ম। আকালের সন্ধানে ১৯৮১ সালের বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ জুরি পুরস্কার হিসাবে রুপোর ভালুক জয় করে। মৃণাল সেনের পরবর্তীকালের ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য মহাপৃথিবী (১৯৯২) এবং অন্তরীন (১৯৯৪)। এখনও অবধি তাঁর শেষ ছবি আমার ভুবন মুক্তি পায় ২০০২ সালে। আজন্ম মার্কসবাদে বিশ্বাসী হলেও তিনি রুদ্ধ কমিউনিস্টের জীবনদর্শনে বিশ্বাসী নন। আর তাই সারা জীবন ধরে তিনি স্পষ্টভাবে সবকিছু বলে গিয়েছেন।

জীবনে দেশে বিদেশে অজস্র পুরস্কার ও সম্মান পেয়েছেন মৃণাল সেন। ১৯৮১ সালে তিনি ভারত সরকার দ্বারা পদ্মভূষণ পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৫ সালে তিনি দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পান। তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ অবধি ভারতীয় সংসদের সাম্মানিক সদস্যপদ লাভ করেন। ফরাসি সরকার তাঁকে কম্যান্ডার অফ দি অর্ডার অফ আর্টস অ্যান্ড লেটারস (Ordre des Arts et des Lettres ) সম্মানে সম্মানিত করেন। এই সম্মান ফ্রান্সের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান। ২০০০ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁকে অর্ডার অফ ফ্রেন্ডশিপ সম্মানে ভূষিত করেন। তার পরিচালিত চলচ্চিত্রগুলি প্রায় সবকটি বড় চলচ্চিত্র উৎসব থেকে পুরস্কার জয় করেছে। তিনি ইন্টারন্যাশন্যাল ফেডারেশন অফ দি ফিল্ম সোসাইটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। ভারত এবং ভারতের বাইরের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে।
---
জীবনের ৯৩টি বছর পূর্ণ করে এখনো নিজেকে মনেপ্রাণে তরতাজা যুবক মনে করেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা মৃণাল সেন। প্রতিনিয়ত নিয়ম ভেঙ্গে নতুন নিয়ম সৃষ্টিতে যার ছিল অদম্য নেশা এখনো তার ভাবনায় সব সময় সিনেমার ভাষা। আজ এই ৯৩ বছর বয়সেও তিনি সমানভাবে ঋজু তার ভাবনাতে। এখনও প্রতিদিনই ঘুম থেকে উঠে মনে মনে ভাবেন ছবি বানানোর কথা। তার শেষ ছবি তৈরির পর অনেক বছর পেরিয়ে গেছে। এর মাঝে মাঝে ছবি তৈরির জন্য তেড়েফুঁড়ে উঠেছেন। কিন্তু বয়সের কথা ভেবে আর সাহস করে উঠতে পারেন না। দক্ষিণ কলকাতার পদ্মপুকুরের কাছে এক বহুতলের পাঁচতলার ফ্ল্যাটে মৃণাল সেন এখনও সচেতন সিনেমা ভাবনা নিয়েই নিজেকে নিবদ্ধ রেখেছেন। কিংবদন্তি এই বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও লেখক মৃনাল সেনের ৯৪তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৬

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: আকালের সন্ধানে অসাধারণ ছবি।

১৭ ই মে, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ঠিক তাই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.