নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

খ্যাতনামা বাঙালি কবি, নাট্যকার, গল্পকার, অনুবাদক ও সমালোচক বুদ্ধদেব বসুর ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৮ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১:২১


১৯৩০-এর দশক থেকে শুরু করে পরবর্তী কয়েকটি দশক সাহিত্য পরিমণ্ডলে যার প্রভাব ছিল অবিসংবাদিত তিনি নতুন কাব্যরীতির সূচনাকারী খ্যাতনামা বাঙালি সাহিত্যিক বুদ্ধদেব বসু। প্রগতি ও কল্লোল নামে দু'টি পত্রিকায় লেখার অভিজ্ঞতা সম্বল করে যে কয়েকজন তরুণ বাঙালী লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবদ্দশাতেই রবীন্দ্রনাথের প্রভাবের বাইরে সরে দাঁড়াবার দুঃসাহস করেছিলেন তিনি তাঁদের অন্যতম। সাহিত্যের প্রায় সকল শাখায় তিনি কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, গল্পকার, অনুবাদক, সম্পাদক ও সমালোচক। সৃজনশীল সাহিত্যের সঙ্গে সমালোচনামূলক সাহিত্যে তাঁর সাফল্য সমপর্যায়ের। তিনি বাংলা গদ্যরীতিতে ইংরেজি বাক্যগঠনের ভঙ্গী সুপ্রসিদ্ধ করেছেন। শুধু বাংলা ভাষাতেই নয়, ইংরেজি ভাষায় কবিতা, গল্প, প্রবন্ধাদি রচনা করে তিনি ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় প্রশংসা অর্জন করেছিলেন। আজ খ্যাতনামা এই বাঙ্গালী সাহিত্যিকের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৪ সালের আজকের দিনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। খ্যাতনামা বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, গল্পকার, অনুবাদক, সম্পাদক ও সমালোচক বুদ্ধদেব বসুর মৃত্যুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

বুদ্ধদেব বসু ১৯০৮ সালের ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশের কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক আদি নিবাস বিক্রমপুরের মালখানগর গ্রাম। তার পিতা ভূদেব বসু পেশায় ঢাকা বারের উকিল ছিলেন। তাঁর মাতার নাম বিনয়কুমারী। তাঁর পৈতৃক আদি নিবাস ছিল বিক্রমপুরের মালখানগর গ্রামে। জন্মের চব্বিশ ঘন্টা পরেই তাঁর মাতা বিনয় কুমারী ১৬ বছর বয়সে ধনুষ্টঙ্কার রোগে মৃত্যু ঘটে। এতে শোকাভিভূত হয়ে তাঁর পিতা সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করে গৃহত্যাগ করেন। মাতামহ-মাতামহীর কাছে প্রতিপালিত হন বুদ্ধদেব। পুলিশ অফিসার বা দারোগা চিন্তাহরণ সিংহ ছিলেন তাঁর পিতামহ। বুদ্ধদেবের শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের প্রথমভাগ কেটেছে কুমিল্লা, নোয়াখালী আর ঢাকায়।

বুদ্ধদেব বসু ১৩ বছর বয়সে ১৯২১ সালে ঢাকায় আসেন এবং প্রায় দশ বৎসর ঢাকায় শিক্ষালাভ করেন। ১৯২৩ সালে তিনি ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯২৫ সালে ঐ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রথম বিভাগে পঞ্চম স্থান অধিকার করেন। এরপর ১৯২৭ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমানে ঢাকা কলেজ) থেকে প্রথম বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে আই. এ. পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে বুদ্ধদেব বসু প্রভুগুহ ঠাকুরতা, অজিত দত্ত প্রমূখকে বন্ধু হিসেবে পেয়েছিলেন। এ সময় ঢাকার পুরানা পল্টন থেকে তাঁর ও অজিত দত্তের যৌথ সম্পাদনায় ১৯২৭ - ১৯২৯ পর্যন্ত সচিত্র মাসিক 'প্রগতি' পত্রিকার সম্পাদনা করেন এবং 'কল্লোল' গোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক স্থাপিত হয়। বুদ্ধদেব বসু ১৯৩০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে থেকে ইংরেজিতে প্রথম শ্রেণীতে বি. এ. অনার্স এবং ১৯৩১-এ প্রথম শ্রেণীতে এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ছিলেন মেধাবী এক ছাত্র। বি. এ. অনার্স পরীক্ষায় তিনি যে নম্বর লাভ করেন তা একটি রেকর্ড যা ২০০৯ সাল অদ্যাবধি অক্ষূণ্ণ ছিলো।

(শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্যে সমর সেন, বুদ্ধদেব বসু, কন্যা মীনাক্ষী, প্রতিভা বসু, কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৩১ খৃষ্টাব্দে তিনি ঢাকা পরিত্যাগ করে কলকাতায় অভিভাসন গ্রহণ করে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। অধ্যাপনার মাধ্যমেই তাঁর কর্মময় জীবন শুরু। কর্মময় জীবনের শুরুতে স্থানীয় কলেজের লেকচারের পদের জন্য আবেদন করে দু'বার প্রত্যাখ্যাত হলেও ইংরেজি সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য পরিণত বয়সে তিনি আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় ভাষা ও সাহিত্য সম্পর্কে সারগর্ভ বক্তৃতা দিয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন। জীবনের শেষাবধি তিনি নানা কাজে-কর্মে ব্যাপৃত রাখলেও শিক্ষকতাই ছিল তাঁর জীবিকা অর্জনে মূল পেশা। ১৯৩৪ সালে খ্যাতিমান লেখিকা প্রতিভা বসু'র (বিবাহ-পূর্বঃ প্রতিভা সোম) সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৩৪ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত কলকাতা রিপন কলেজে ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যাপনা করেন। কলকাতায় বসবাসকালে তিনি প্রেমেন্দ্র মিত্রের সহযোগিতায় ১৯৩৫ সালে ত্রৈমাসিক কবিতাপত্রিকা সম্পাদনা করে প্রকাশ করেন। পঁচিশ বছরেরও অধিককাল তিনি পত্রিকাটির ১০৪টি সংখ্যা সম্পাদনা করে আধুনিক কাব্যআন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। তাঁরই অনুপ্রেরণায়, সদিচ্ছায়, অনুশাসনে এবং নিয়ন্ত্রণে আধুনিক বাংলা কবিতা তার যথার্থ আধুনিক রূপ লাভ করে। এটি কবি বুদ্ধদেব বসুর জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য কীর্তি। এরপর ১৯৩৮ সালে হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে ত্রৈমাসিক চতুরঙ্গ সম্পাদনা করেন। ১৯৪২ সালে ফ্যাসীবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পী সঙ্ঘের আন্দোলনে যোগদান করেন। পঞ্চাশের দশক থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতির একজন সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ১৯৪৫ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত স্টেটসম্যান পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। ১৯৫২ সালে দিল্লী ও মহিশূরে ইউনেস্কোর প্রকল্প উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ১৯৫৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পিটসবার্গের পেনসিলভেনিয়া কলেজ ফর উইমেনে শিক্ষকতা করেন তিনি। ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বুদ্ধদেব বসু তুলনামূলক ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক নিযুক্ত হন।

বুদ্ধদেব বসু আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একজন শ্রেষ্ঠ লেখক ছিলেন। বুদ্ধদেব বসু'র গদ্য ও পদ্যের রচনাশৈলী স্বতন্ত্র ও মনোজ্ঞ। বরীন্দ্রনাথের পরের কবিদের মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন একদিকে নজরুল, অ্ন্য দিকে পঞ্চপাণ্ডব নামে খ্যাত পাঁচজন কবি। এই পঞ্চপাণ্ডবেরই একজন ছিলেন বুদ্ধদেব বসু। রবীন্দ্র-উত্তর আধুনিক কাব্য ধারার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য। বাঙলা গদ্যশিল্পী হিসেবে তিনি সমধিক সৃজনশীল প্রতিভার পরিচয় প্রদান করেন। পরিমার্জিত সঙ্গীতময়তা ও পরিশীলিত স্বতঃস্ফূর্ততা তাঁর গদ্যের বৈশিষ্ট্য। এ ছাড়াও তিনি সৃষ্টিশীল সাহিত্য রচনার পাশাপাশি সমালোচনামূলক সাহিত্য রচনায়ও মৌলিক প্রতিভার পরিচয় প্রদান করেন। বাংলা গদ্যরীতিতে ইংরেজি বাক্য গঠনের ভঙ্গী গ্রথিত করে বাংলা ভাষাকে অধিকতর সাবলীলতা দান করেন যা বাঙলা ভাষার তুলনামূলক সাহিত্য সমালোচনার ক্ষীণস্রোতকে বিস্তৃত ও বেগবান করেন। বুদ্ধদেব বসুর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ সমুহঃ

১। কবিতাঃ মর্মবাণী (১৯২৫), বন্দীর বন্দনা (১৯৩০), পৃথিবীর পথে (১৯৩৩), কঙ্কাবতী (১৯৩৭), দময়ন্তী (১৯৪৩), দ্রৌপদীর শাড়ি (১৯৪৮), শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৫৩), শীতের প্রার্থনা: বসন্তের উত্তর (১৯৫৫), যে-আঁধার আলোর অধিক (১৯৫৮), দময়ন্তী: দ্রৌপদীর শাড়ি ও অন্যান্য কবিতা (১৯৬৩), মরচেপড়া পেরেকের গান (১৯৬৬), একদিন: চিরদিন (১৯৭১), স্বাগত বিদায় (১৯৭১)
২। উপন্যাসঃ সাড়া (১৯৩০), সানন্দা (১৯৩৩), লাল মেঘ (১৯৩৪), পরিক্রমা (১৯৩৮), কালো হাওয়া (১৯৪২), তিথিডোর (১৯৪৯), নির্জন স্বাক্ষর (১৯৫১), মৌলিনাথ (১৯৫২), নীলাঞ্জনের খাতা (১৯৬০), পাতাল থেকে আলাপ (১৯৬৭), রাত ভর বৃষ্টি (১৯৬৭), গোলাপ কেন কালো (১৯৬৮), বিপন্ন বিস্ময় (১৯৬৯), রুক্‌মি (১৯৭২)
৩। গল্পঃ অভিনয়, অভিনয় নয় (১৯৩০), রেখাচিত্র (১৯৩১), হাওয়া বদল (১৯৪৩), শ্রেষ্ঠ গল্প (১৩৫৯), একটি জীবন ও কয়েকটি মৃত্যু (১৯৬০), হৃদয়ের জাগরণ (১৩৬৮), ভালো আমার ভেলা (১৯৬৩), প্রেমপত্র (১৯৭২)
৪। প্রবন্ধঃ হঠাৎ-আলোর ঝলকানি (১৯৩৫), কালের পুতুল (১৯৪৬), সাহিত্যচর্চা (১৩৬১), রবীন্দ্রনাথ: কথাসাহিত্য (১৯৫৫), স্বদেশ ও সংস্কৃতি (১৯৫৭), সঙ্গ নিঃসঙ্গতা ও রবীন্দ্রনাথ (১৯৬৩), প্রবন্ধ-সংকলন (১৯৬৬), কবি রবীন্দ্রনাথ (১৯৬৬)
৫। নাটকঃ মায়া-মালঞ্চ (১৯৪৪), তপস্বী ও তরঙ্গিণী (১৯৬৬), কলকাতার ইলেক্ট্রা ও সত্যসন্ধ (১৯৬৮)

৬। অনুবাদঃ কালিদাসের মেঘদূত (১৯৫৭), বোদলেয়ার: তাঁর কবিতা (১৯৭০), হেল্ডালিনের কবিতা (১৯৬৭), রাইনের মারিয়া রিলকের কবিতা (১৯৭০)
৭। ভ্রমণ কাহিনীঃ সব-পেয়েছির দেশে (১৯৪১), জাপানি জার্নাল (১৯৬২), দেশান্তর (১৯৬৬),
৮। স্মৃতিকথাঃ আমার ছেলেবেলা (১৯৭৩), আমার যৌবন (১৯৭৬)
৯। সম্পাদনাঃ আধুনিক বাংলা কবিতা (১৯৬৩)

আধুনিক কবিতা প্রসঙ্গে বুদ্ধদেব বসুর ভূমিকা তুলনাহীন। সাধারণ বাঙালি লেখকদের মতো তিনি কেবল আত্মরচনায় তৃপ্ত ছিলেন না। অন্যদের কবিতায়ও অসম্ভব অভিনিবেশ দিয়েছেন। বুদ্ধদেব বসুর সাহিত্যসাধনার বিপুলতা কেবল রবীন্দ্রনাথের খন্ডাংশের সঙ্গে তুলনীয়। কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, কাব্যনাটক, অনুবাদ, আত্মজৈবনিক রচনা, ভ্রমণকাহিনী−সব মিলিয়ে তিনি অতুল বৈভবময় সৃষ্টিজগতের অধীশ্বর। সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য বুদ্ধদেব বসু ১৯৬৭ সালে তপস্বী ও তরঙ্গিণী কাব্যনাট্যের জন্য সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার, ১৯৭০ সালে পদ্মভূষণ উপাধি এবং ১৯৭৪ সালে স্বাগত বিদায় গ্রন্থের জন্য রবীন্দ্র-পুরস্কার (মরণোত্তর) লাভ করেন। পরিমার্জিত ও পরিশীলিত সাহিত্যিক বুদ্ধদেব বসু ১৯৭৪ সালের ১৮ই মার্চ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

আজ খ্যাতনামা বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, গল্পকার, অনুবাদক, সম্পাদক ও সমালোচক বুদ্ধদেব বসুর আজ ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। কবির মৃত্যুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:১৩

মাআইপা বলেছেন: ভাবছিলাম ওনার লেখার একটা লিস্ট পেলে ভাল হতো; দেখি, দিয়ে দিয়েছেন। ২/১টা বই পড়লেও মনে নেই।
লিস্ট অনুযায়ী পড়ার সময় বের করে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ সঙ্গে শ্রদ্ধাঞ্জলি রইল খ্যাতনামা বাঙালি কবি, নাট্যকার, গল্পকার, অনুবাদক ও সমালোচক বুদ্ধদেব বসুর ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে

২| ১৮ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৫:১২

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: খ্যাতনামা বাঙালি কবি, নাট্যকার, গল্পকার, অনুবাদক ও সমালোচক বুদ্ধদেব বসুর ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মুল্যবান লেখাটির জন্য ধন্যবাদ । বাঙলা ভাষায় যাঁরা আধুনিক কবিতা সৃষ্টি করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে পাঁচজন প্রধান। রবীন্দ্রনাথের পর তাঁরাই বাঙলা ভাষার প্রধান কবি। তাঁরা হচ্ছেন বুদ্ধদেব বশু (১৯০৮–১৯৭৪), জীবনান্দ দাশ (১৮৯৯–১৯৫৪), সুধীন্দ্রনাথ দত্ত (১৯০১–১৯৬০), বিষ্ণু দে (১৯০৯–১৯৮২) ও অমিয় চক্রবর্তী (১৯০১–১৯৮৬)। এ–পাঁচজন কবি মিলে সৃষ্টি করেন বাঙলা ভাষার আধুনিক কবিতা। এভাবে কথাগুলো বলেছিলেনঃ ডঃ হুমায়ুন আযাদ তাঁর লাল নীল দীপাবলি বইতে। বিংশ শতাব্দীর বিশ ও ত্রিশের দশকের নতুন কাব্যরীতির সূচনাকারী অন্যতম কবি হিসেবে তাঁকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়। তবে সাহিত্য সমালোচনা ও কবিতা পত্রিকার প্রকাশ ও সম্পাদনার জন্য তিনি বিশেষভাবে সম্মানীয়।

উল্লেখ্য যে সেসময়ে যে কয়েকজন তরুণ বাঙালি লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবদ্দশাতেই রবীন্দ্রনাথের প্রভাবের বাইরে সরে দাঁড়াবার দুঃসাহস করেছিলেন তিনি তাঁদের অন্যতম । বুদ্ধদেব বসুর সাহিত্যচর্চা যে বাংলা সাহিত্যের জন্য উপকারী হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। বাংলা গদ্যে তিনি নতুন গতিশীলতা এনেছেন। সাহিত্যের প্রতি শিক্ষিত বাঙালির অনুরাগ বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছেন। অনুবাদের মাধ্যমে বিদেশী সাহিত্যের সঙ্গে আমাদের পরিচয়কে ঘনিষ্ঠতর করেছেন। সাহিত্য সমালোচনার ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান মোটেই সামান্য নয়। এবং এমন অনেক উপভোগ্য রচনা রেখে গেছেন, যাদের আবেদন কালজয়ী হবে এমনটা ধারণা না-করবার কোনো কারণ নেই। সর্বোপরি তাঁর প্রত্যেকটি লেখারই ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে ও তা থাকবে।

বুদ্ধদেব বসুর রচনায় আমরা নিম্নমধ্যবিত্ত উপাদানগুলো সহজেই দেখতে পাই। আত্মসচেতনতা, বিচ্ছিন্নতা, আত্মসন্তুষ্টি, ইউরোপ-আমেরিকা সম্পর্কে মোহ, বুর্জোয়াদের সম্পর্কে বিরূপ ধারণা প্তিরকাশ করেছেন সহজভাবে । ইংরেজী প্রিতীর জন্য তাকে নিয়ে যত কথাই বলা হোক না কেন বুদ্ধদেব একজন খাঁটি বাঙালি; অনেক অগ্রসর, সুশিক্ষিত, সমৃদ্ধ, এবং রুচিঋদ্ধ।
এ কথা হয়তো সত্য যে, রবীন্দ্রনাথ যাকে সাহিত্যের ‘সত্যমূল্য’ বলেছেন, অর্থাৎ জীবন সম্পর্কে গভীর সত্যের উন্মোচনের কারণে যে সাহিত্য মূল্যবান, সেই ‘সত্যমূল্যে’র কিছুটা অভাব বুদ্ধদেব বসুর রচনায় রয়েছে, কিন্তু তিনি অবশ্যই একজন কালজয়ী লেখক। যে বৃত্তের ভেতরে আমাদের অসহায় অবস্থান তাকে ভাঙতে তিনি সাহায্য করেছেন । তাঁর লেখা আমরা উপভোগ করি, অনেককাল করবো, এবং তার লেখার মধ্য দিয়ে ঔপনিবেশিক যে বৃত্তের ভেতর আমাদের অবস্থান ছিল, এবং এখনো যা শেষ হয় নি সে সংস্কৃতি সম্পর্কে বুঝবার ব্যাপারেও সহায়তা পাবো এবং পাচ্ছিও। তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ স্বদেশ ও সংস্কুতিতে ও তার কিছুটা প্রমান তিনি দিয়ে গেছেন ।

বুদ্ধদেব বসুর ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে রইল শ্রন্ধাঞ্জলী ।

৩| ১৯ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: তার 'তিথিডোর' বইটা আমার খুব প্রিয়।

৪| ১৯ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:৫৭

সোহানী বলেছেন: ভালো লাগলো। কয়েকটা বই পড়েছিলাম বাবার সংগ্রহের কল্যাণে। আপনার এ তালিকা সত্যিই কাজে দিবে ভবিষ্যতে পড়ার জন্য।++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.