নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
২৫ শে এপ্রিল, ২০১৮, বুধবারঃ পৃথিবীকে জ্ঞান বিজ্ঞানে যাঁরা অগ্রসর করে গেছেন তাঁদের অন্যতম বেতার আবিস্কারক গুগলিয়েলমো মার্চেজ মার্কনি বেতারের জনক মার্কনি নামেই যিনি সমাধিক পরিচিত। রেডিও আবিষ্কার করে পৃথিবীকে বদলে দিয়েছেন বিজ্ঞানী মার্কনি। মার্কনি ছিলেন ইতালীয় উদ্ভাবক এবং প্রকৌশলী যিনি বেতার যন্ত্রের সম্প্রচার পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন। তিনি একটি ব্যবহারিক রেডিওগ্রাফ পদ্ধতি তৈরি করেছিলেন। এই উদ্ভাবনকে কেন্দ্র করেই বিশ্বের অসংখ্য ব্যবসায়িক ও প্রাযুক্তিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। ১৯০৯ সালে কার্ল ফের্ডিনান্ড ব্রাউনের সাথে যৌথভাবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। বেতার সম্প্রচার পদ্ধতির ভিত্তি স্থাপনের জন্যই তাদেরকে এই পুরস্কার দেয়া হয়। বিশ্বখ্যাত এই বিজ্ঞানী ১৮৭৪ সালের ২৫শে এপ্রিল ইতালির বোলোনে জন্মগ্রহণ করেন। আজ তাঁর ১৪৪তম জন্মবার্ষিকী। জন্মদিনে এই বিজ্ঞানীর প্রতি আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা।
গুলিয়েলমো মার্কোনি ১৮৭৪ সালের ২৫শে এপ্রিল ইতালির বোলোনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষাপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী ছিলেন না। তার পিতা ছিলেন ইতালির একজন ধনী ব্যবসায়ী। সাত বছর বয়সে কিছু দিনের জন্য মার্কনি স্কুলে গিয়েছিলেন এবং তার পর থেকেই পদার্থবিজ্ঞানের প্রতি তার আগ্রহ জন্মে। সেই সময় তিনি লক্ষ্য করেন, স্ফুলিঙ্গ থেকে যে শব্দতরঙ্গের সৃষ্টি হয় তা বিনা তারেই কিছু দূর যেতে পারে। শুরু হলো তার গবেষণার কাজ। তিনি চার তলায় একটি ঘরে বসে বোতাম টিপে নিচতলার একটি বেল বাজিয়ে ফেললেন যেখানে তারের কোনো যোগাযোগ ছিল না। ইতালি সরকার এ ক্ষুদে বিজ্ঞানীর আবিষ্কারের প্রতি তেমন আগ্রহ না দেখানোর ফলে মার্কনি পিতার উৎসাহে অনেকটা বাধ্য হয়েই ইংল্যান্ডে চলে যান। গুগলিয়েলমো মার্চেজ মার্কনি বিশ বছর বয়সে মার্কিন বিজ্ঞানী হার্জের একটা প্রবন্ধ থেকে জানতে পারেন যে, সদ্যপ্রয়াত এক বৈজ্ঞানিক এমন একটা বৈদ্যুতিক যন্ত্র বের করতে পেরেছেন, যার সাহায্যে ঘরের একদিক থেকে প্রেরিত বৈদ্যুতিক তরঙ্গ বিনা তারে ঘরের অন্যদিকে আগুনের ফুলকি জ্বালিয়ে দেয়।
মার্কনি হার্জের মতো বৈদ্যুতিক যন্ত্র তৈরীর চিন্তায় বিভোর হয়ে থাকলেন। মার্কনির কাজ শুরু হলো লন্ডন জেনারেল পোস্ট অফিসের একটি কক্ষ থেকে পাশের বাড়ির কাছে বার্তা প্রেরণের মধ্য দিয়ে। একনিষ্ঠ অধ্যাবসায় ও গবেষণায় তিনি এমন একটা যন্ত্র তৈরী করলেন, যার মাধ্যমে এক মাইল দূর পর্যন্ত বিনা তারে সংকেত পাঠানো সম্ভব। কিন্তু তার স্বপ্ন ছিল আটলান্টিকের এপার থেকে ৩৩৭৮ কিলোমিটার দূরে ওপারে বার্তা প্রেরণ। অতঃপর ১৮৯৯ সালে ইংলিশ চ্যানেলের এপার থেকে ওপার পর্যন্ত বিনা তারে সংবাদ আদান-প্রদান করতে সক্ষম হন মার্কনি। সেকালের বিজ্ঞানীরা অনভিজ্ঞ মার্কনির এ স্বপ্নের সফলতা সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করেন এই ভেবে যে, ভূপৃষ্ঠের বক্রতার জন্য বহু দূরবর্তী অঞ্চলে এ ধরনের বার্তা পাঠানো সম্ভব নয়। কিন্তু তিনি এ অসম্ভবকে সম্ভব করলেন ১৯০১ সালে এবং আটলান্টিকের এপার থেকে ওপারে বেতারসঙ্কেত পাঠাতে সক্ষম হলেন। তার এ সাফল্য ছিল মানবজাতির জন্য যুগান্তকারী। ১৯০১ সালে গুগলিয়েলমো মার্কনি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে তার বিহীন সংযোগ (বেতার) স্থাপন করেন। বেতার হল তার ব্যতীত যোগাযোগের একটি শক্তিশালী মাধ্যম। রেডিও (বেতার), টেলিভিশন (দূরদর্শন), মোবাইল ফোন, ইত্যাদিসহ তারবিহীন যেকোনো যোগাযোগের মূলনীতিই হল বেতার।
বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে মহাকাশ পর্যবেক্ষণে ব্যবহৃত হয় বেতার দূরবীক্ষণ যন্ত্র বা রেডিও টেলিস্কোপ। এতে তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ ব্যবহার করে তথ্য প্রেরণ বা গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে দ্রুতগতিতে মার্কনি আবি®কৃত বেতারযন্ত্রের ব্যবহার বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। ঊনবিংশ শতাব্দির শেষপ্রান্তে অনেক দেশের বিজ্ঞানী প্রায় একই সময়ে বেতার আবিষ্কার করলেও গুগলিয়েলমো মার্কনিকেই বেতারের আবিষ্কারক হিসাবে ধরা হয়। পূর্বে শুধু রেডিওতে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে বেতার প্রযুক্তির ব্যবহার চলছে সর্বত্র। ১৯০৯ সালে সরকার কর্তৃক সম্মানিত হন গুলিয়েলমো মার্কোনি এবং ইতালি সরকার তাকে আজীবন সিনেট সদস্য নির্বাচিত করে। ১৯০৯ সালে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে মার্কনি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন (তিনি কার্ল ব্রাউন এর সাথে যুগ্মভাবে এ পুরস্কার পান)। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মার্কনি ইতালীয় বেতার-সার্ভিসের কমান্ডার নিযুক্ত হয়েছিলেন। ১৯২৯ সালে ইটালীর তৎকালীন রাজা তাকে ‘মারকুইস’ খেতাব দান করেন। অবশ্য মার্কনির আগেও ম্যাক্সওয়েল, হার্ৎস কেলভিন, বাঙালী স্যার জগদীশচন্দ্র বসু, আলেক্সান্দর পপোভ প্রমুখ বিজ্ঞানী এ বিষয়ে গবেষণা করে গেছেন। তবে তাদের সেই অসমাপ্ত কাজকে সাফল্যের দিকে ধাবিত করে বিজ্ঞানী মার্কনি অমর হয়ে আছেন।
রেডিও সম্পর্কে একটা অজানা তথ্যঃ মার্কনি রেডিও আবিস্কার করার আগেই আমাদের দেশের বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসু রেডিও আবিস্কার করেছিলেন কিন্তু তিনি তখন এর স্বীকৃতি নিতে পারেন নাই ।বেঁচে থাকতে জগদীশ চন্দ্র বসু কিন্তু সে লড়াইয়ে যাননি। তিনি কেবল তাঁর গবেষণা নিয়েই মেতে ছিলেন। সারা জীবন গবেষণা করেই কাটিয়েছেন। তাঁর গবেষণা নিয়ে তাই আজও গবেষণা হচ্ছে পৃথিবীজুড়ে। বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া এমন একজন দুনিয়াখ্যাত বিজ্ঞানী ছিলেন বাঙালি, ভাবতেই তো গর্ব হয়। সম্প্রতি জগদীশ চন্দ্র বসু প্রথম বেতার আবিস্কারক হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন । ১৯১২ সালে Institute of Electrical and Electronics Engineers স্যার জগদীসচন্দ্র বসুকে রেডিও আবিস্কারক স্বীকৃতি দিয়েছে। স্বীকৃতি স্বরূপ জগদীশ বসুর স্বরনে তারা কলকাতায় একটা মাইল ফলক স্থাপন করেছে । প্রসঙ্গত এশিয়ার টোকিও ছাড়া কলকাতাই হলো দ্বিতীয় শহর যেখানে এই মাইল ফলক স্থাপন করা হয়েছে । মার্কনির নাতি ফ্রান্সেসকো পারেশে মার্কনি ২০০৬-এ ব্যক্তিগত সফরে কলকাতায় বেড়াতে আসলে তিনিও স্বীকার করেন বেতার আবিস্কারের কৃতিত্ব জগদীশ চন্দ্র বসুরই। ২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বর কলকাতার বসু বিজ্ঞান কেন্দ্রে এসে ভিজিটরস বুক-এ তাঁর মন্তব্যে লেখেনঃ ‘‘এটা আমার কাছে এক বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা, আমার দাদু গুগলিয়েলমো মার্কনির আগে স্যার জে সি বোসই প্রথম বেতার যোগাযোগের পরীক্ষাটি করেছিলেন।...” ১৯৩৯ সালের ১৮ই জুলাই ৬৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন গুগলিয়েলমো মার্চেজ মার্কনি।
আজ এই মহান বিজ্ঞানীর ১৪৪তম জন্মবার্ষিকী। বেতার আবিস্কারের জনক গুগলিয়েলমো মার্চেজ মার্কনির জন্মদিনে আমাদের শুভেচ্ছা।
২৫ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৪
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ তারেক ভাই
চমৎকার মন্তব্য প্রদানের জন্য।
গুণীজনকে শ্রদ্ধা করা
আমাদের কর্তব্য।
২| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:০৭
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: শ্রদ্ধেয় বিজ্ঞানীর প্রতি সম্মান জানাচ্ছি। পাশাপাশি এই প্রসঙ্গ উঠলেই বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুর জন্য বিষন্নতা লাগে।আপনি অবশ্য বিষয়টি ছুঁয়েও গেছেন।
শুভেচ্ছা নিয়েন,ভাই।
২৫ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:৩৯
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে চৌধুরী ভ্রাতা
লেখাটি মনোযোগসহকারে পাঠ করার জন্য।
শুভেচ্ছা রইলো।
৩| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:০৭
কামরুননাহার কলি বলেছেন: এই বিজ্ঞানীর জন্য জন্মদিনের শুভেচ্ছা রইলো।
আর আপনার এরকম লেখা থেকে আমি অনেক তথ্য জানতে পারি। সেই জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
২৫ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:৪১
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
কলি আপু আপনারা আগ্রহ নিয়ে
লেখাগুলো পড়েন বলেই প্রায় প্রতিদিন
একজন গুণীজনের কতা আপনাদের
সামনে তুলে ধরি। যতদিন আপনাদের
আগ্রহ থাকবে ততদিন এ প্রচেষ্টা অব্যহত
রাখার আশা রাখি। ভালো থাকবেন।
৪| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:২৪
মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: মার্কনির নাম শুনলেই আফসোস হয়। বেচারা জগদীশ চন্দ্র বসু?????
২৫ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:৪২
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ মন্ডল ভাই
সত্যিই জগদীশ চন্দ্রের জন্য।
শুভেচ্ছা রইলো আপনার জন্য।
৫| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:০৪
এস এম মামুন অর রশীদ বলেছেন: হাইনরিশ হার্জ জার্মান বিজ্ঞানী ছিলেন, মার্কিন না। এ ছাড়া পোস্টে ধন্যবাদ।
২৬ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৭
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
হাইনরিখ রুডল্ফ হের্ত্স (Heinrich Rudolf Hertz) একজন জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী। তাঁর নামেই কম্পাঙ্কের আন্তর্জাতিক এককের নামকরণ করা হয়েছে হার্জ। সন্দেহাতীত ভাবে তিনি জার্মান বিজ্ঞানী। আপনি তাকে মার্কিন বিজ্ঞানী বলে কেন বিতর্কিত করছেন!
৬| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:৪১
শামচুল হক বলেছেন: বিজ্ঞানীকে শুভেচ্ছা জানাই
২৬ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:২৮
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ মামচুল হক ভাই
এত অনিয়মিত কেন?
শরীর ভালোতো?
৭| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৯
রাজীব নুর বলেছেন: মহান এই বিজ্ঞানীর জন্য শ্রদ্ধা।
২৬ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৭
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ রাজীব ভাই
মহান এই বিজ্ঞানীকে
শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।
৮| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:১৫
কাওসার চৌধুরী বলেছেন:
উনার নাম জানতাম। কিন্তু ডিটেল জানতাম না। খব সুন্দর লেখা। জানার পরিধিটা বাড়লো। শুভেচ্ছা রইলো।
২৬ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:৪০
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
চৌধুরী ভাই
জানার কোন শেষ না্ই,
তাই না জানা দোষের নয়,
তবে চানতে না চাওয়া
অবশ্যই দোষের আকর।
৯| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:৩৯
এস এম মামুন অর রশীদ বলেছেন: আমি আবার কোথায় বিতর্কিত করলাম, আপনিই তো পোস্টের ২য় প্যারায় লিখলেন মার্কিন বিজ্ঞানী হার্জ। নিজের পোস্টও ঠিকমতো পড়েন না!
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:১৯
তারেক_মাহমুদ বলেছেন: বেতার যন্ত্র আবিষ্কার একটি যুগান্তকারী ঘটনা। মার্কনীর প্রতি অনেক শ্রদ্ধা।