নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার কয়া গ্রামের একজন গুণী কথাশিল্পী আকবর হোসেন। সংস্কৃতির রাজধানী খ্যাত কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীর মাটি ও মানুষ শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে সব সময় গৌরবময় ভূমিকা রেখে আসছে। কুমারখালীর শিলাইদহে এসে সাহিত্য চর্চা করেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এছাড়াও বাউল সম্রাট লালন ফকির, বিষাদসিন্ধু রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেন, কাঙ্গাল হরিণাথ মজুমদার, কবি ডক্টর হরগোপাল বিশ্বাস, বাউল সাধক গগন হরকরা, কবি আজিজুল হক, ড. আবুল আহসান চৌধুরী, শিশু সাহিত্যিক জোবেদা খানম, কবি জলধর সেন, বিপ্লবী নেতা কাজী মিয়াজান, বাঘা যতীন (যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়), কলকাতার বিখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ছড়াকার নাসের মাহমুদ, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক রকিবুল হাসান কুমারখালীর অহংকার। এদের মধ্যে বাঘা যতিন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও রকিবুল হাসানের জন্ম কেয়া গ্রামে। অবিভক্ত বাংলার মন্ত্রিসভার প্রভাবশালী সদস্য মৌলবী সামসুদ্দীন আহমেদ। কাঙাল হরিনাথ মজুমদার, অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়, ড. কাজী মোতাহার হোসেন, কবি আজিজুর রহমানের জন্মও কুষ্টিয়ায়। এই সব মনীষীর সারিতে নিজের আসন করে নিয়েছেন ঔপন্যাসিক আকবর হোসেন।সাহিত্যিক ও সাংবাদিক রকিবুল হাসান কুমারখালীর অহংকার। এদের মধ্যে বাঘা যতিন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যয়ের জন্ম কুষ্টিয়ার কয়া গ্রামে। এই কুমারখালীরই আরেক সাহিত্য রত্ন আকবর হোসেন। দেশের শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতির ইতিহাসে অত্যন্ত মর্যাদার সাথে বিচরণ করেছেন তিনি। কুমারখালীর আরো এক অলংকার নজিবর রহমান সাহিত্যরত্নের পরে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে আকবর হোসেনই সবচেয়ে জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক ছিলেন। সাহিত্যে শব্দ বা কথার ব্যবহার যে একটি শৈল্পিক বিষয় হতে পারে, তা দেখিয়েছিলেন তিনি। বঙ্কিম-রবীন্দ্রনাথ-শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উত্তরপর্বে খুব ক্ষীণ পরিসরে যে ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিতে বাঙালি মুসলিম লেখকরা বেড়ে উঠেছেন, সেখানে আকবর হোসেনের উপস্থিতি ছিল ভিন্ন প্রতিভায় দীপ্ত। স্বতন্ত্র বিষয় ও আঙ্গিকে উপন্যাস লিখে তিনি ব্যক্তি ও সমাজের দ্বন্দ্বকে তুলে ধরেছেন। তাঁর উপন্যাসে সে বিষয়গুলো সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে আরও ভিন্ন ও ইতিবাচক মাত্রিকতায় নতুন রূপ লাভ করে। বাঙালি মুসলমানের আধুনিক হওয়ার পথে আকবর হোসেন প্রমুখ লেখকদের আড়ষ্টতা থেকে বের হয়ে আসার প্রয়াস একটি নতুন ও সাহসী পদক্ষেপ ছিল। শব্দ ব্যবহার, কাহিনি বিন্যাস, চরিত্র চিত্রণ, শিল্প-সুষমা প্রকাশে তাঁর অপার দক্ষতা তাঁকে কালজয়ী ঔপন্যাসিকের আসনে বসিয়েছে।১৯৮১ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আজ তার ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। জনপ্রিয় বাঙালি কথাশিল্পী, ঔপন্যাসিক আকবর হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
শব্দযাদুকর আববর হোসেন ১৯১৭ সালের ১ অক্টোবর কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার কয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা হাজী আব্দুল বিশ্বাস ও মাতা ময়জান নেছা। আকবর হোসেনের বাড়ি ছিল গড়াই তীরবর্তী কয়া গ্রামের কয়ার ঘাটের কাছাকাছি। নদীর সৌন্দর্য, খোলামেলা প্রাকৃতিক পরিবেশ, গ্রামীণ জীবনযাপন তার বালক-মনে দারুণভাবে প্রভাব ফেলেছিল, যা তার লেখক সত্তার উন্মেষে সাহায্য করে। তার জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা ধরা হয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ। বলা হয়ে থাকে, কবিগুরুর সাক্ষাৎ-স্মৃতি তার লেখক সত্তাকে পরিপক্ব করে তুলতে সাহায্য করেছিল। তিনি কুমিল্লা হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরবর্তীতে কলকাতা রিপন কলেজ থেকে বি.এ. ডিগ্রি নিয়ে চাকুরী জীবনের সূচনা করেন। দীর্ঘদিন তিনি সরকারি চাকুরিতে কর্মরত ছিলেন। মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশুনাকালীন সময় থেকেই সাহিত্য চর্চা করতেন আকবর হোসেন। শিক্ষা জীবনের অবসান ঘটিয়ে পুরোদমে সাহিত্য চর্চা শুরু করেন তিনি। "সন্ধানী" "শিক্ষা" "দৈনিক আজাদ" ও "নবযুগ" ইত্যাদি পত্র-পত্রিকায় লেখা প্রকাশের ভেতর দিয়ে তাঁর সাহিত্য প্রতিভার উন্মেষ ঘটে। তার প্রথম উপন্যাস ‘অবাঞ্চিত’ বিপুল পাঠকপ্রিয়তা লাভ করে। তিনি সাহিত্য চর্চা করেছেন প্রকৃতি ও অন্তরের টানে। তার লেখায় সমাজ ও সংসার জীবন, পারিপার্শ্বিকতা আর তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি ধরা দিয়েছে সাবলীলভাবে। গ্রামীণ সমাজ সংস্কার, সাধারণ মানুষের আশা আকাঙ্খা, নাগরিক জীবনের দুঃখ-বেদনা, সমসাময়িক জীবনচিত্র, সমকালীন চিন্তা-চেতনা, চারপাশের চেনাজগত, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আমাদের অহংকার ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং প্রেম ও রোমান্টিকতা প্রভৃতি দারুন মুন্সিয়ানার সাথে উপস্থাপিত হয়েছে আকবর হোসেনের উপন্যাস ও লেখনিতে। আকবর হোসেন-এর প্রথম উপন্যাস অবাঞ্চিত বিপুল পাঠকপ্রিয়তা লাভ করে। তাঁর বহুল জনপ্রিয় আরও কয়েকটি গ্রন্থ হলোঃ অবাঞ্ছিত (১৯৫০), কী পাইনি (১৯৫২), মোহমুক্তি (১৯৫৩), ঢেউ জাগে (১৯৬১), আলোছায়া (১৯৬৪), দু’দিনের খেলাঘরে (১৯৬৫), মেঘ বিজলী বাদল (১৯৬৮), নতুন পৃথিবী (১৯৭৪), দুষ্টক্ষত এবং আভা ও তার প্রথম পুরুষ। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘অবাঞ্ছিত’ এক সময়ে প্রায় ঘরে ঘরে পঠিত হতো। ১৯৬৯ সালে জুপিটার ফিল্মস কামাল আহমেদের পরিচালনায় এটিকে চলচ্চিত্রে রূপ দেয়, যা সারাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার রচিত ‘মেঘ বিজলী বাদল’ উপন্যাস নিয়ে ১৯৮২ সালে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন কাজী নূরুল হক।
আকবর হোসেনের কাব্যে তার ভাষার সাবলীলতা কাব্যময়তা, গতিময়তা এবং শৈল্পিক সন্নিবেশ উপন্যাসগুলোকে জনপ্রিয় করেছে। সময়কে সংরক্ষণ করার শৈল্পিক প্রয়াসে তিনি সফল, শিল্পী হিসেবে নিজ কর্তব্য পালনে তিনি একনিষ্ঠ। বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে নীরবে নিরলসভাবে সাধনা করে গেছেন এই নিভৃতচারী। আজ এদেশে উপন্যাস, সাহিত্যে ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তার শীর্ষে যারা অবস্থান করছেন আকবর হোসেন এদের চেয়ে বেশি নিরেট ও শক্তিশালী ঔপন্যাসিক ছিলেন। তাঁর উপন্যাসের পাঠক বরাবরই দুই বাংলায় একটা সন্তোষজনক অবস্থানে ছিল। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে যখন ভারতীয় লেখক ছাড়া আর কারো বই বাজারে বিক্রি হত না, সে সময় আকবর হোসেনই একমাত্র লেখক যাঁর বই ওপার বাংলার বইয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাজার দখল করতে পেরেছিল। এবং তিনিই একমাত্র লেখক, যিনি উপন্যাস বিক্রি করে ষাটের দশকে ঢাকায় বাড়ি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। অথচ পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের পাঠকমনে কাঁপন ধরিয়ে দেয়া কীর্তিমান এই ঔপন্যাসিক আজও এদেশ অবমূল্যায়িত রয়ে গেছেন। কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে এই গুণী থেকে গেছেন অবহেলিত। এমনকি বাংলা একাডেমিও এই কথাশিল্পীর শিল্পকর্ম সংরক্ষণে কখনো উদ্যোগ নেয়নি। ফলে বর্তমান তরুণ প্রজন্মের কাছে প্রায় অপরিচিত এই সাহিত্যিক। আজ কথাসাহিত্যিক আকবর হেসেনের ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকি। ১৯৮১ সালের ২ জুন তিনি মৃত্যুবরণা করেন। হারিয়ে যাওয়া নক্ষত্র: কথাশিল্পী আকবর হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
০২ রা জুন, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৬
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ চোরাবালি, ২য় প্যারাতে
"কয়া" উল্লেখ করা হলেও
প্রথম প্যারায় টাইপো হয়ে গেছে!!
সংশোধন করা হয়েছে।
২| ০২ রা জুন, ২০১৮ দুপুর ১:০৮
আখেনাটেন বলেছেন: পুরান কথা মনে করে দিলেন গো নুরু ভাই। এই ভদ্রলোকের লেখা একসময় গোগ্রাসে গিলেছি। মারও খেয়েছি। কারণ বেশির ভাগ উপন্যাসই একটু উপর লেভেলের আর কি!! আর আমি তখন ছিলাম বাছুর শ্রেণিজাত। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটি চমৎকার প্রেমের উপন্যাস পড়েছিলাম। নামটা মনে নেই। আপনার উল্লেখকৃত নামগুলোর কোনো একটিই হবে। এখনও তার রেশ কিছু রয়ে গেছে।
এক সময় নাকি ইনি বহুল পঠিত উপন্যাসিক ছিলেন।
অসংখ্য ধন্যবাদ উনাকে আবার স্বরণ করে দেওয়ার জন্য।
০২ রা জুন, ২০১৮ দুপুর ২:৩৭
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
অসংখ্য ধন্যবাদ আখেনাটেন ভাই
পুরানো মানুষ তাই পুরানো কথা
স্মরণ করিয়ে দেই।
বর্তমান প্রজন্মের কাছে প্রায়
অপরিচিত এই লেখক। অথচ ৫০-৬০ দশকে
পাঠকের মনে কাপন ধরিয়ে দিয়েছিলন এই
কৃতিমান লেখক। যাহোক ধন্যবাদ আপনাকে
লেখাটি পড়ে মন্তব্য প্রদানের জন্য
৩| ০২ রা জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৫
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার এইরকম পোষ্ট গুলোর জন্য সামু একদিন আপনাকে স্মরন করবে।
০৩ রা জুন, ২০১৮ সকাল ১১:২৪
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
নদীর পানি আর ঘূর্ণি বাতাস
সাময়িক ভাবে মানুষের মনে
রেখাপাত করলেও কে আর কতদিন
তা মনে রাখে!!
তবুও ধন্যবাদ আশাজাগানিয়া
মন্তব্যের জন্য। শুভকামনা রইলো।
৪| ০৩ রা জুন, ২০১৮ সকাল ১১:৪৮
ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: কাফকার লেখায় উল্লেখ্য করতে ভুলে গেছি, এগুলো ছোটোগল্প.কম থেকে নেয়া। দুঃখিত।
০৩ রা জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:০০
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আমি জানি,
ধন্যবাদ প্রান্তর পাতা!!
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা জুন, ২০১৮ দুপুর ১২:২৪
চোরাবালি- বলেছেন: প্রথম লাইনে একটু কারেকশন লাগবে সম্ভবত-- কেয়া নয় কয়া হবে আমার জানামতে।