নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২৬ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৯


মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ লক্ষ মায়ের সন্তান বিয়োগের চিরন্তন যাতনা মূর্ত হয়ে উঠেছে যাকে কেন্দ্র করে তিনি শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। শহীদ রুমির মা আবির্ভূত হয়েছিলেন লক্ষ শহীদের জননীরূপে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তার সন্তান রুমী ও সঙ্গী মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও খাদ্য দেয়া, অস্ত্র আনা নেয়া ও যুদ্ধ ক্ষেত্রে তা পৌঁছে দেয়া ইত্যাদি ছিল তার মুক্তিযুদ্ধকালিন প্রধান ভূমিকা। যুদ্ধের শেষদিকে রুমী পাকিস্তানীদের হাতে ধরা পড়েন এবং নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। বিজয় লাভের পর রুমীর বন্ধুরা রুমীর মা জাহানারা ইমামকে সকল মুক্তিযোদ্ধার মা হিসেবে বরণ করে নেন৷ রুমীর শহীদ হওয়ার সূত্রেই তিনি ‘শহীদ জননী’র মযার্দায় ভূষিত হন ৷ ১৯৯৪ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আজ শহীদ জননীর ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুদিনে শহীদ জননীকে স্মরন করছি গভীর শ্রদ্ধায়।

শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ১৯২৯ সালের ৩রা মে বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের সুন্দরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ত্রিশ ও চল্লিশ দশকের রক্ষণশীল বাঙালি মুসলমান পরিবার বলতে যা বোঝায়, সে রকম একটি পরিবারেই তিনি জন্মেছিলেন। জাহানারা ইমামের ডাক নাম ছিলো জুড়ু। পরে জুড়ু-কে জাহান নামে ডাকা হতো। জাহানারা ইমামের বাবা সৈয়দ আবদুল আলী ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। মা সৈয়দা হামিদা বেগম গৃহিনী। বাড়িতে বাবার কাছেই তাঁর শিক্ষা জীবনের শুরু। শিক্ষা জীবনে তাঁর বাবা সব ধরনের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। ১৯৪২ সালে রংপুর থেকে দ্বিতীয় বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করে জাহানারা ভর্তি হলেন রংপুর কারমাইকেল কলেজে। সেখান থেকে আই.এ. পাস করে ১৯৪৫ সালে ভর্তি হন কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে। লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে বি.এ. পাস করেন ১৯৪৭ সালে। ১৯৬০ সালে বি.এড. ডিগ্রি অর্জন করেন টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণীতে। ১৯৬৪ সালে ফুলব্রাইট স্কলারশীপ পেয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সানডিয়াগো স্টেট কলেজ থেকে সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন ডিগ্রি অর্জন করেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে ১৯৬৫ সালে বাংলায় এম.এ. পাস করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এম.এ. পার্ট ওয়ান পাশ করেন ১৯৬২ সালে।

১৯৪৮ সালের ৯ আগস্ট রংপুরের মুন্সিপাড়ার সিভিল ইঞ্জিনিয়ার শরীফুল আলম ইমাম আহমদের সঙ্গে জাহানারা বেগমের বিয়ে হয়। ১৯৫১ সালের ২৯ মার্চ জাহানারা ইমামের কোল জুড়ে আসে শাফী ইমাম রুমী। এই রুমীই ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে একজন দুঃসাহসী গেরিলার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। পরবর্তীতে নির্মমভাবে শহীদ হন রুমী। জাহানারা ইমামের স্বামী শরীফ ইমামকেও পাকিস্তানী হানাদাররা নির্মম নির্যাতন করে আহত অবস্থায় মুক্তি দেয়। বিজয়ের মাত্র তিনদিন আগে শরীফ ইমাম হৃদরোগে ইন্তেকাল করেন। জাহানারা ইমামের জীবিত একমাত্র সন্তান সাইফ ইমাম জামীর জন্ম ১৯৫৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর। জামী বর্তমানে বিদেশিনী স্ত্রী ও দুই কন্যাসহ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। কর্ম জীবনে শিক্ষক হিসাবে তার প্রথম কাল কাটে ময়মনসিংহ শহরে। সেখানে বিদ্যাময়ী বালিকা বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসাবে ১৯৪৮ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত তিনি কর্মরত ছিলেন। এরপর তিনি ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (১৯৫২-১৯৬০), বুলবুল একাডেমি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক (১৯৬২-১৯৬৬)এবং ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের প্রভাষক (১৯৬৬-১৯৬৮) হিসাবে তার কর্মজীবন অতিবাহিত হয়। তিনি কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটেও খন্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে কাজ করেন। সংসার জীবন এবং লেখক জীবনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জাহানারা ইমাম নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছিলেন। সাংবাদিকতার সংগেও যুক্ত ছিলেন। কলাম লিখতেন দৈনিক বাংলায়। টিভি সমালোচনা লিখেছেন সাপ্তাহিক বিচিত্রায়। টেলিভিশনে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করে দর্শকদের সপ্রশংস দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছিলেন মিষ্টভাষী সুদর্শনা জাহানারা ইমাম। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার আগে অর্থাৎ পাকিস্তান টেলিভিশনে প্রায় নিয়মিতই টিভি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন; কিন্তু স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করার ব্যাপারে জাহানারা ইমাম আগ্রহ বোধ করেননি।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি রাজাকার ও কোলাবরেটররা তাঁর সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা রুমীকে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেয়। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের টর্চার সেলে রুমীকে অমানুষিক অত্যাচার করে। রুমীর দুই পা শিকল দিয়ে বেঁধে মাথা নিচের দিকে ঝুলিয়ে ফুটন্ত গরম পানির মধ্যে ফেলে দেয়, আবার ওপরের দিকে তুলে ঝুলিয়ে রাখে। তার পরও এ বীর মুক্তিযোদ্ধার মুখ থেকে নরপশুরা কোনো কথা বের করতে পারেনি। পরবর্তীতে নির্মমভাবে শহীদ হন রুমী। স্বাধীনতার পর শহীদ রুমী বীরবিক্রম (মরণোত্তর) উপাধিতে ভূষিত হন। প্রাণপ্রিয় সন্তান রুমীকে ঘিরেই জাহানারা ইমাম রচনা করেন মুক্তিযুদ্ধের ওপর তাঁর স্মৃতিচারণমূলক অমর গ্রন্থ 'একাত্তরের দিনগুলি'। এছাড়া ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত হয় লরা ইঙ্গলস ওয়াইল্ডারের 'লিটল হাউস অন দ্য প্রেইরীর' সিরিজের অনুবাদ 'তেপান্তরের ছোট্ট শহর, ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত হয় একই সিরিজের 'অন দ্য ব্যাঙ্ক অব প্লাম ক্রীক' এর অনুবাদ 'নদীর তীরে ফুলের মেলা', ১৯৬৭ সালে সাতটি কিশোর গল্পের সংকলন 'সাতটি তারার ঝিকিমিকি' প্রকাশিত হয়, ১৯৬৮ সালে কনরাড রিক্টার-এর 'দ্য টাউন'-এর অনুবাদ 'নগরী' প্রকাশিত হয়, ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত হয় কিশোর উপন্যাস 'গজকচ্ছপ', ১৯৮৩ সালে বিদেশীদের বাংলা শেখার বই 'এ্যান ইনট্রোডাকশন টু বেঙ্গলী ল্যাংগুয়েজ এ্যান্ড লিটারেচার' (পার্ট ওয়ান) প্রকাশিত হয়, ১৯৮৩ সালে 'ডালাস' অনুবাদ করেন, ১৯৮৫ সালে শৈশব এবং যৌবনের স্মৃতিকথা 'অন্য জীবন', ৭জন বীরশ্রেষ্ঠকে নিয়ে জীবনী গ্রন্থ 'বীরশ্রষ্ঠ' এবং 'বুকের ভেতর আগুন, ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয় ডায়েরি আকারে লেখা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের অবিস্মরণীয় স্মৃতিকথা, 'একাত্তরের দিনগুলি'। এই গ্রন্থটির কারণে জাহানারা ইমাম দেশে-বিদেশে ব্যাপক পরিচিতি অর্জন করেন, ১৯৮৮ সালে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছোটগল্পের বই 'জীবন মৃত্যু' এবং ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয় 'একাত্তরের দিনগুলি'-র কিশোর সংস্করণ 'বিদায় দে মা ঘুরে আসি', ১৯৮৯ সালে শেক্সপীয়ারের 'ট্রাজেডি'-র কিশোর সংস্করণ 'চিরায়ত সাহিত্য' প্রকাশিত হয়। ১৯৯০ সালে 'নাটকের অবসানে' 'দুই মেরু', 'মূল ধারায় চলেছি','নিঃসঙ্গ পাইন', 'নয় এ মধুর খেলা', এবং একাত্তরের দিনগুলির ইংরেজি অনুবাদ 'অব ব্লাড এন্ড ফায়ার' প্রকাশিত হয়। অনুবাদ করেন প্রয়াত পররাষ্ট্র সচিব মুস্তাফিজুর রহমান। ১৯৯১ সালে প্রকাশিত হয় আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ 'ক্যান্সারের সাথে বসবাস' এবং ১৯৯২ সালে ডায়েরি আকারে লেখা স্মৃতিকথা 'প্রবাসের দিনলিপি' তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।

জাহানারা ইমাম তাঁর কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন যথাঃ ১৯৮৮ সালেবাংলাদেশ লেখিকা সংঘ সাহিত্য পুরস্কার, কমর মুশতরী সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯১ সালে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, ১৪০১ সালের ১ বৈশাখআজকের কাগজ হতে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা পুরস্কার, ১৯৯৪ সালের মার্চ মাসে নারী গ্রন্থ প্রবর্তনা পুরস্কার, ১৯৯৭ সালে স্বাধীনতা পদক, ১৯৯৮ সালে রোকেয়া পদক, ২০০১ সালে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার,ইউনিভার্সাল শিল্পী গোষ্ঠী পুরস্কার, শাপলা ইয়ূথ ফোর্স পদক, কারমাইকেল কলেজ - গুণীজন সম্মাননা, মাস্টারদা সূর্যসেন পদক, মুক্তিযুদ্ধ উৎসব-ত্রিপুরা সাংগঠনিক কমিটি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, রোটারাক্ট ক্লাব অব স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় শিল্পী গোষ্ঠী পুরস্কার, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংঘ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পদক ইত্যাদি। ১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেম্বর গোলাম আযমকে জামায়াতে ইসলামী তাদের দলের আমীর ঘোষণা করলে বাংলাদেশে জনবিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। বিক্ষোভের অংশ হিসাবে ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি ১০১ সদস্যবিশিষ্ট একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠিত হয় জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে। তিনি হন এর আহ্বায়ক। এর পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী প্রতিরোধ মঞ্চ, ১৪টি ছাত্র সংগঠন, প্রধান প্রধান রাজনৈতিক জোট, শ্রমিক-কৃষক-নারী এবং সাংস্কৃতিক জোটসহ ৭০টি সংগঠনের সমন্বয়ে পরবর্তীতে ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২ ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি’ গঠিত হয়। সর্বসম্মতিক্রমে এর আহ্বায়ক নির্বাচিত হন জাহানারা ইমাম। এই কমিটি ১৯৯২ সালে ২৬ মার্চ ’গণআদালত’ এর মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একাত্তরের নরঘাতক গোলাম আযমের ঐতিহাসিক বিচার অনুষ্ঠান করে। গণআদালাতে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দশটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপিত হয়। ১২ জন বিচারক সমন্বয়ে গঠিত গণআদালতের চেয়ারম্যান জাহানারা ইমাম গোলাম আযমের ১০টি অপরাধ মৃত্যুদন্ডযোগ্য বলে ঘোষণা করেন। ১৯৯৩ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে গণআদালত বার্ষিকীতে জাহানারা ইমামের নেত্রত্বে গণতদন্ত কমিটি ঘোষিত হয় এবং আরো আটজন যুদ্ধাপরাধীর নাম ঘোষণা করা হয়। এই ঘৃণ্য আটজন যুদ্ধাপরাধীর নামঃ আব্বাস আলী খান, মতিউর রহমান নিজামী, মোঃ কামরুজ্জামান, আবদুল আলীম, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, মওলানা আবদুল মান্নান, আনোয়ার জাহিদ এবং আব্দুল কাদের মোল্লা ।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ কেড়ে নিলো তাঁর বুকের মানিক রুমীকে। প্রিয়তম স্বামী শরীফকে। পুত্র এবং স্বামী হারানোর কষ্টকে বুকে ধারণ করে বেঁচে ছিলেন তিনি। আশির দশকের শুরুতে, ১৯৮২ সালে তিনি আক্রান্ত হলেন দুরারোগ্য ব্যাধি ওরাল ক্যান্সারে। প্রতি বছর একবার যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হতো তাঁকে। এভাবেই যাচ্ছিলো তাঁর দিন। মুখের ক্যান্সার কেড়ে নিয়েছিলো অপরূপ লাবণ্যময়ী এই নারীর মুখশ্রীর অনিন্দ্য সৌন্দর্য। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে চলা ধারাবাহিক কার্যক্রম চলাকালীন ১৯৯৪ সালের ২৬শে জুন পৃথিবীর মায়া ছেড়ে অনন্তালোকে যাত্রা করেন ক্যান্সারাক্রান্ত শহীদজননী জাহানারা ইমাম। মৃত্যুশয্যায় তিনি বাংলাদেশের জনগনের প্রতি যুদ্ধাপরাধী ও মানবতার শত্রুদের বিচার কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার জন্য আহবান জানিয়ে নিচের চিঠিটি লিখেছিলেনঃ

সহযোদ্ধা দেশবাসীগণ,
আপনারা গত তিন বছর ধরে একাত্তরের ঘাতক ও যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমসহ স্বাধীনতাবিরোধী সকল অপশক্তির বিরূদ্ধে লড়াই করে আসছেন। এই লড়াইয়ে আপনারা দেশবাসি অভূতপূর্ব ঐক্যবদ্ধতা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। আন্দোলনের শুরুতে আমি আপনাদের সঙ্গে ছিলাম। আমাদের অঙ্গীকার ছিল লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত কেউ রাজপথ ছেড়ে যাব না। মরণ ব্যাধি ক্যান্সার আমাকে শেষ কামড় দিয়েছে। আমি আমার অঙ্গীকার রেখেছি। রাজপথ ছেড়ে যাইনি। মৃত্যুর পথে বাধা দেবার ক্ষমতা কারো নেই। তাই আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি এবং অঙ্গীকার পালনের কথা আরেকবার আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই। আপনারা আপনাদের অঙ্গীকার ও ওয়াদা পূরণ করবেন। আন্দোলনের শেষ পর্যায় পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে থাকবেন। আমি না থাকলেও আপনারা আমার সন্তান- সন্ততিরা আপনাদের উত্তরসূরিরা সোনার বাংলায় থাকবেন।এই আন্দোলনকে এখনো দুস্তর পথ পাড়ি দিতে হবে। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, মুক্তিযোদ্ধা, ছাত্র ও যুব শক্তি, নারী সমাজসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষ এই লড়াইয়ে আছে। তবু আমি জানি জনগণের মত বিশ্বস্ত আর কেউ নয়। জনগণই সকল শক্তির উৎস। তাই একাত্তরের ঘাতক ও যুদ্ধাপরাধী বিরোধী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও ‘৭১- এর ঘাতক দালাল নির্মূল সমন্বয় আন্দোলনের দায়িত্বভার আমি আপনাদের বাংলাদেশের জনগনের হাতে অর্পণ করলাম। জয় আমাদের হবেই। (জাহানারা ইমাম)
আজ এই মহিয়সী নারীর ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুদিনে শহীদ জননীকে স্মরন করছি গভীর শ্রদ্ধায়।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৫

সিগন্যাস বলেছেন: উনি এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন।উনার একাত্তরের দিনগুলি অনেক আগে পড়েছিলাম।পোষ্টে প্লাস নেন

২| ২৬ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:০৪

তারেক ফাহিম বলেছেন: শহীদ জননীকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি।

৩| ২৬ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:০৫

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: গভীর শ্রদ্ধা শহীদ জননীর জন্য।
আর পোস্টে ++

৪| ২৬ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:০৮

হাসান জাকির ৭১৭১ বলেছেন: এই দিনে তার প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা ও অন্তহীন ভালবাসা।
তার অর্পিত সেই দায়িত্ব বর্তমান প্রজন্ম নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাবে এই প্রত্যাশা।

ধন্যবাদ ভাই তার মত মানুষকে নিয়ে এই অসাধারণ পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

৫| ২৬ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:১৯

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
শ্রদ্ধা জানাই এই মহিয়সী নারীকে।

৬| ২৬ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৯

কাইকর বলেছেন: গভীর শ্রদ্ধা শহীদ জননীর জন্য। সুন্দর পোস্ট

৭| ২৬ শে জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: উনি একজন সাহসী মা।

৮| ২৬ শে জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২২

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: মহীয়সী এই নারীর মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধা রইলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.