নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
বিশ শতকের মার্কিন সাহিত্যে অন্যতম প্রভাববিস্তারকারী লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে। বিশ শতকের ফিকশনের ভাষার ওপর তাঁর নির্মেদ ও নিরাবেগী ভাষার ভীষণ প্রভাব ছিল। বুল-ফাইটিং, বড় জন্তু শিকার ও গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা ছিল তাঁর নেশা। তাঁর অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় ও জনপ্রিয় ইমেজও পরবর্তী প্রজন্মের ওপর ভীষন প্রভাব ফেলেছিল। বিশ শতকের বিশের দশকের মাঝামাঝি থেকে পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়ে তিনি তাঁর অধিকাংশ সাহিত্যকর্ম রচনা করেছিলেন। ‘দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড সী’ গ্রন্থটি প্রকাশের পর ১৯৫৪ সালে আর্নেস্ট হেমিংওয়ে সাহিত্যে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি সাতটি উপন্যাস, ছয়টি ছোট গল্প সংকলন এবং দুইটি নন-ফিকশন গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পরে আরও তিনটি উপন্যাস, চারটি ছোট গল্প সংকলন এবং তিনটি নন-ফিকশন গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের অনেকগুলোই আমেরিকান সাহিত্যের চিরায়ত(ক্লাসিক) গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশ শতকের মার্কিন সাহিত্যে অন্যতম প্রভাববিস্তারকারী লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে তাঁর বর্ণাঢ্য কিন্তু ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটান আত্মহননের মাধ্যমে। ১৯৬১ সালের আজকের দিনে তিনি আইডাহোকে মুত্যুৃবরন করেন। আজ তার ৫৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। মার্কিন সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
(শিশু আনেস্ট হেমিংওয়ে)
আর্নেস্ট হেমিংওয়ে ১৮৯৯ সালের ২১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়ের ওক পার্কে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাব পেশায় চিকিৎসক এবং মা সংগীতবিশারদ ছিলেন। হেমিংওয়ের নাম তাঁর নানার নাম অনুযায়ীই রাখা হয়। যদিও পরবর্তীতে হেমিংওয়ে এই নাম পছন্দ করেননি। কারন অস্কার ওয়াইল্ডের নাটক দি ইমপোর্টেন্স অব বিং আর্নেস্ট (The Importance of being Earnest) এর প্রধান চরিত্রের নাম ছিল আর্নেস্ট। যে ছিল সাদাসিধে, বোকাসোকা টাইপের। ১৯১৩ থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত, হেমিংওয়ে ওক পার্ক অ্যান্ড রিভার ফরেস্ট হাই স্কুলে গিয়েছিলেন এবং সেখানে নানা ধরণের খেলাধূলায় অংশ নিতেন। স্কুলেই হেমিংওয়ে একটি সাংবাদিকতার কোর্স পড়েছিলেন, যেখানে ক্লাসরুমের পরিবেশ ছিল সংবাদপত্র অফিসের মত। তিনি স্কুলের দেয়াল পত্রিকাতে লিখতেন। সেখানে সম্পাদনার কাজও করতেন। স্কুল পেরোনোর পর হেমিংওয়ে শিক্ষানবিশ সংবাদদাতা হিসেবে দি আরকানসাস সিটি স্টার পত্রিকায় কাজ শুরু করেন। ১৯২১ সালে তিনি টরন্টো স্টার উইকলির ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। সেই বছরের ডিসেম্বরে তিনি ইউরোপে পাড়ি দেন এবং গ্রিক-তুরস্ক যুদ্ধ এবং পরবর্তীকালে লুজান শান্তি বৈঠক সম্পর্কে রিপোর্ট প্রেরণ করেন। এই সময়কালে তাঁর লেখা সমুদয় কবিতা ও গল্পসমেত তাঁর একটি স্যুটকেস ট্রেন ভ্রমণকালে হারিয়ে যায়। একমাত্র বেঁচে যায় ‘মাই ওল্ডম্যান’ গল্পটি। আবার সবকিছু তাঁকে নতুন করে শুরু করতে হয়।
হাভানার শহর সান ফ্রান্সিসকো দ্য পৌলান বাসভবনের শোবারঘরে আর্নেস্ট হেমিংওয়ে লেখালেখি করেন। যদিও বাড়ির দক্ষিণ-পশ্চিম কোনায় চৌকোনো এক অলিন্দে একটি কামরা তাঁর লেখালেখির জন্য নির্ধারণ করা আছে, তিনি শোবারঘরেই লেখালেখি করতে পছন্দ করেন। ১৯২৩ সালে হেমিংওয়ের প্রথম বই থ্রি স্টোরিজ অ্যান্ড টেন পোয়েমস প্রকাশিত হয়। মুদ্রিত পুস্তকের সংখ্যা ছিল তিনশো। পরবর্তী বই গল্প-সংকলন ইন আওয়ার টাইম প্রকাশিত হয় ১৯২৪ সালে। প্রহসনগ্রন্থ টরেন্টস অফ স্প্রিং প্রকাশিত হয় ১৯২৬ সালে। সেই বছরের শরৎকালে প্রকাশিত হয় তাঁর উপন্যাস দি সান অলসো রাইজেস। আর একটি গল্প-সংকলন মেন উইদাউট উইমেন প্রকাশিত হয় ১৯২৭ সালের অক্টোবরে। এই সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ‘দি কিলারস’ এবং ‘দি আনডিফিটেড’ নামক দুটি গল্প, যা আধুনিক ছোটগল্পের উদাহরণ হিসেবে সর্বস্বীকৃত। ১৯২৯ সালে এ ফেয়ারওয়েল টু আর্মস প্রকাশিত হওয়ার পর আমাদের সময়ের একজন প্রথম কাতারের লেখক হিসেবে পূর্ণ স্বীকৃতি লাভ করেন তিনি। হেমিংওয়ের ছোটগল্পের সংকলন দি ফাস্ট ফরটিনাইন প্রকাশিত হয় ১৯৩৮ সালে। ১৯৪০ সালে তিনি স্পেনের গৃহযুদ্ধভিত্তিক দীর্ঘ উপন্যাস ফর হুম দি বেল টোল্স সমাপ্ত করেন। দশ বছর পর প্রকাশিত হয় "অ্যাক্রস দি রিভার অ্যান্ড ইনটু দি ট্রিজ"।
১৯৫২ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর "দি ওল্ডম্যান অ্যান্ড দি সি"। এই উপন্যাসে তিনি অপরাজেয় মানুষের সংগ্রামী চরিত্র রচনা করেন। মূলত সাগরে জনৈক জেলের শিকার করা মাছকে হাঙ্গরের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি বইয়ে হেমিংওয়ে অঙ্কন করেন। উপন্যাসটি নোবেল কমিটি মনোনীত হয়ে ১৯৫৪ সালে ষষ্ঠ মার্কিন লেখক হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন তিনি। পুরস্কার প্রদানকালে সম্মাননাপত্রে বলা হয় : ‘তার শক্তিশালী এবং শৈলীসৃষ্টিকারী শিল্পকর্মের জন্য...’
(আর্নেস্ট হেমিংওয়ে এবং ফিদেল ক্যাস্ট্রো)
হেমিংওয়ে সারা পৃথিবীজুড়ে অসম্ভব পরিচিত একজন সাহিত্যিক। আধুনিক সময়ে খুব কম সাহিত্যিকই তার মত পরিচিতি অর্জন করেছে। কিন্তু খ্যাতি তাকে খুব একটা স্পর্শ কখনোই করেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত সাম্রাজ্যবাদী ভোগবাদী রাষ্ট্রে বসবাস করার পরও তৎকালীন নোংরা হাওয়া তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। প্রচলিত সমাজের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং সাংস্কৃতিক আচরণ যখন তার কাছে অসহনীয় হয়ে তখন তিনি তা থেকে মুক্তি পাওযার জন্য ১৯৬০ সালে কিউবায় চলে যান। কারণ, কিউবা তখন বাতিস্তা সরকার ও পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে লড়ায়ের মাধ্যমে জাতীয় বিপ্লব সম্পন্ন করে স্বাধীন জাতীয় অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষ নিয়ে দ্রুত বেগে সামনে অগ্রসর হচ্ছে। ফিদেল এবং বিপ্লবীদের স্পর্শে নিজেকে আরো শুদ্ধ করার চেষ্টায় রত থাকার উদ্দেশ্য নিয়ে হেমিংওয়ের কিউবায় আগমন। কিন্তু বারবার আমেরিকা থেকে কিউবা গমন মার্কিন সরকার তা কোনভাবেই সহ্য করেনি। এমনিতে এর আগে ফেয়ার ওয়েল টু আর্মস লিখে যুদ্ধ এবং সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়াটা মার্কিন সরকার পছন্দ করেনি। তাকে সমাজতন্ত্রের বা রাশিয়ার চর হিসেবেও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই প্রচার করে। তার উপর চলে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার কড়া নজরদারি। বিদ্যমান পরিস্থিতির অসমাঞ্জস্যতার কারণে শেষ বয়সে তিনি ডিপ্রেসনে ভোগেন।
ডিপ্রেসন কিংবা দূর্ঘটনাজনিত শারীরিক বৈকল্যের যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে বিংশ শতকের শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিকদের অন্যতম মার্কিন সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে ১৯৬২ সালের ২ জুলাই আইডাহোর কেচামে মুখে বন্দুকের নল ঢুকিয়ে ট্রিগার টিপে রোগক্লিষ্ট জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটান। কেন তিনি তাঁর জন্মস্থান ইলিনয়ের ওক পার্ক কিংবা পরবর্তী জীবনে বসবাসের জন্য নির্বাচিত মায়ামির কি-ওয়েস্ট, অথবা প্রিয় দেশ কিউবার পরিবর্তে জেম স্টেট হিসেবে খ্যাত আইডাহোকে বেছে নিলেন তা এক রহস্য বটে। তাঁর এমন রহস্যময় মৃত্যুর কারণ হতে পারে দুর্ঘটনাজনিত শারীরিক বৈকল্য। সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত এই লেখকের আজ ৫৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। মার্কিন সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
০২ রা জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৪
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি সিগন্যাস ভাই
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
২| ০২ রা জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৫
রাজীব নুর বলেছেন: আমার প্রিয় লেখক ।
ধন্যবাদ আপনাকে আমার প্রিয় লেখককে সুন্দরভাবে তুলে ধরার জন্য।
০২ রা জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৭
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ রাজীব ভাই,
সর্বদা সাথে থেকে উৎসাহ প্রদানের জন্য।
ভালো থাকবেন।
৩| ০২ রা জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:০৫
সৈয়দ ইসলাম বলেছেন: যারা ইতিহাসের পাতায় আজীবন বেঁচে থাকবেন তাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন আর্নেস্ট হেমিংওয়ে
নূরু ভাইকে অনেক ধন্যবাদ।
৪| ০২ রা জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:২৪
আখেনাটেন বলেছেন: আমার অন্যতম প্রিয় লেখক। উনার 'A Farewell to Arms' কতবার পড়েছি ইয়াত্তা নেই। আমার পড়া অন্যতম সেরা রোমান্টিক উপন্যাস। শেষে মৃত্যুর আগে ক্যাথরিনের জন্য ফ্রেডেরিকের হাহাকার পড়তে গিয়ে চোখের কোণ ভিজে উঠার জন্য যথেষ্ঠ।
৫| ০৩ রা জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:৫১
গরল বলেছেন: আর্নেষ্ট হেমিংওয়ে একসময় ট্যাক্সি চালাত,ঊনি এয়ারপোর্ট থেকে ইউরোপিয়ান এক যাত্রিকে তুলেছিলেন। কথার ফাকে সেই যাত্রি উনাকে বলল যে আমেরিকা হচ্ছে মূর্খের স্বর্গ। আর্নেষ্ট হেমিংওয়েও সাথে সাথে উত্তর দিল এজন্যইতো তোমরা দলে দলে সব আমেরিকাতে আসছ। যাত্রি আর কোন উত্তর দিল না। স্কুলে থাকতে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের কল্যানে পড়েছিলাম দ্যা ওল্ড ম্যান এন্ড দ্যা সি, পড়েই উনার ফ্যান হয়ে গিয়েছিলাম।
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:২৭
সিগন্যাস বলেছেন: কেমন আছেন নূরু ভাই?