নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্বনন্দিত ইতালিয়ান পরিব্রাজক মার্কো পোলোর ৬৯৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:১৩


বিশ্বনন্দিত ইতালির পর্যটক মার্কো পোলো। সমগ্র ইউরোপের কাছে এশিয়া এবং চায়নার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া ভেনিসিয় পর্যটক মার্কো পোলো। মোঙ্গল জাতির ইতিহাসের সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি প্রায় ১৫,০০০ মাইল ভ্রমন করেছিলেন।পশ্চিমাদের মধ্যে সর্বপ্রথম সিল্ক রোড পাড়ি দিয়ে চীন দেশে এসে পৌঁছানো লোকজনের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। মার্কো পোলো সিল্ক রোড ধরেই চিনে গিয়েছিলেন। এই পথে ছিল বৃষ্টি, তুষার আর ফুঁসে-ওঠা নদীর হুমকী। যাত্রাপথে বাদশাখান নামে একটি জায়গায় প্রায় এক বছর অসুস্থ্য হয়ে পড়েছিলেন মার্কো পোলো। এসব কারণেই চিনে পৌঁছতে তাঁর চার বছর সময় লেগেছিল। এছাড়া তিনি সর্বপ্রথম ইউরোপীয় হিসেবে মঙ্গোলদের সাম্রাজ্যে পদার্পণকারীদের অন্যতম। মার্কো পোলো এশিয়া ঘুরে লিখেছেন, ‘মার্কো পোলোর ভ্রমনকাহিনী।’ যা যুগে যুগে পঠিত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তার গ্রন্থ পড়ে মানুষ যেমন মুগ্ধ, আবার অনেক ঘটনা বা স্থান ও নামের ব্যাপারে সন্দেহও প্রকাশ করেছে। মধ্যযুগের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অনেক শহর, গ্রাম, স্থান ও মানুষের নাম ছিল অদ্ভুত। তবে বর্তমান গবেষণায় এর অনেক সত্যতা মিলেছে। মার্কো পোলো লিখিত সেই ভ্রমনকাহিনী পরবর্তী যুগের পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করেছে-এমন কী খ্রিস্টফার কলম্বাসকেও। আজ এই পর্যটকের ৬৯৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৩২৪ সালের আজকের দিনে তিনি ইতালির ভেনিসে মৃত্যুবরণ করেন। ইতালীয়ান পরিব্রাজক মার্কো পোলোর মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

(ইতালির ভেনিস শহর)
বেশিরভাগ ইতিহাসবিদ মনে করেন মার্কো পোলো ১২৫৪ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর ইতালির রিপাবলিক অব ভেনিসের ভেনিস শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তথ্য উপাত্যে তার জন্মের যে তারিখ ও স্থান দেওয়া আছে তার প্রায় সবই অনুমানভিত্তিক। তাই মার্কো পোলোর সঠিক জন্ম তারিখ ও স্থান সম্পর্কে জানা সম্ভব হয় না। তার বাবা নিকোলো একজন বণিক ছিলেন এবং তিনি মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে ব্যাবসা করতেন বেশ ধনসম্পদ অর্জন করেছিলেন। পিতার কাছেই তিনি বানিজ্য, অর্থনিতী ও বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন। ১২৭১ সালে মার্কো পোলো তাঁর বাবা ও চাচার সাথে ১ম বারের মত এশিয়ার পথে রওনা দেন। প্রথমে ভেনিস থেকে সমুদ্রেপথে সিরিয়া। সেখান থেকে কখনও পায়ে হেঁটে কখনও উটে কি খচ্চরের পিঠে চেপে দক্ষিণঅভিমুখে তাবরিজ। তাবরিজ থেকে রওনা হয়ে য়াজদ ও কেরমান শহর পেরিয়ে হিন্দুকুশ পাহাড়ের উত্তরে রেশমপথে উঠে এল দলটি। এরপর ভয়ানক গোবি মরুভূমি পেরিয়ে কুবলাই খানের গ্রীষ্মকালীন বিলাস বহুল প্রাসাদ -জানাদু। তরুন মার্কো পোলোকে দেখে কুবলাই খান অত্যন্ত খুশি হলেন। অবিলম্বে মার্কো পোলোকে রাজ্যের কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দিলেন সম্রাট। মার্কো পোলো চিন সম্রাটের প্রতিনিধি হিসেবে চিন সাম্রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গেলেন। তিনি প্রথম ইউরোপীয় যিনি এশিয়ার দুর্গম অঞ্চলে প্রথম পা রেখেছেন। মার্কো পোলোর রাজকীয় চাকরির উন্নতি হল। এমন কী একটি চৈনিক প্রদেশের গর্ভনরও হলেন তিনি। অনেক দিন হয় দেশ ছেড়েছেন মার্কো পোলো। তিনি জন্মভূিমি ইটালি ফিরতে চাইলেন।তিনি মাল্লাকা প্রণালী হয়ে প্রথমে পশ্চিমে ভারত সাগর তারপর পারস্য উপসাগর পৌঁছান। মার্কো পোলো প্রায় ৯ মাস পারস্যে কাটল। তারপর ইতালির পখে রওনা হয়ে ১২৯৫ সালে ২৪ বছর পর ভেনিসে ফিরে আসেন। ২৪ বছরের এই অভিযাত্রায় তিনি পায়ে হেঁটে প্রায় অর্ধেক পৃথিবী ভ্রমন করেন।

দীর্ঘকাল পর মার্কো পোলো পিতা ও চাচার সঙ্গে স্বদেশ ও স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন করেন তখন অনেকটা গ্রিক বীর ইউলিসিসের মতোই তারা ভাগ্যবিড়ম্বিত। ২০ বছর পর নিজ দেশে ফিরে এলে কেউ ইউলিসিসকে চিনতে পারেনি। ইতালির অনেক কিছুই বদলে গেছে। পোলোদেরও হয়েছিল সে অবস্থা। অনেক চড়াই-উৎরাই, ক্লান্তি-ক্লেশ, ভিন দেশের পরিবেশ, খাদ্য ও সংস্কৃতির পালাবদলে পোলোরাও হয়েছিলেন পরিবর্তিত। তাই ভেনিসে ফিরে আসার পর কেউই তাদের চিনতে পারছিল না। এক ভোজ অনুষ্ঠানে তাদের পুরনো জামাকাপড় ও সেলাই করা পকেট কেটে মূল্যবান মণি-মুক্তা প্রদর্শন করে পরিচয় সম্পর্কে বিশ্বাস করাতে সক্ষম হন তারা। ১২৯৮ সালে জেনোয়ার সঙ্গে ভেনিসের যুদ্ধ। মার্কো পোলো জন্মভূমির পক্ষ নিলেন। যুদ্ধ চলাকালে মার্কো পোলো বন্দি হন। জেলে বন্দি থাকাকালীন আর একজন বন্দি রুস্টচিলো দা পিসা (Rustichello da Pisa) কে তিনি তাঁর ভ্রমনের অভিজ্ঞতা খুলে বলেন। পরবর্তীতে রুস্টচিলো'ই পোলোর ভ্রমনের অভিজ্ঞতা সংকলিত করে একটি বই বের করেন যার নাম ছিল 'দ্যা ট্রাভেলস অফ মার্কো পোলো (The Travels of Marco Polo)'। এই বইয়ে মার্কো পোলোর এশিয়া হয়ে চীন যাবার গল্প ছিল যা ইউরোপীয়ানদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয় এবং এশিয়া, চীন ও জাপান সম্পর্কে ইউরোপীয়ানদের আগ্রহী করে তোলে। মার্কো পোলোর ভ্রমণবৃত্তান্ত মধ্যযুগের একটি দলিল হিসেবে কল্পনা করা যায়। আমরা তার বইয়ের মাধ্যমে সে যুগের জিওগ্রাফি ঘুরে নতুন জ্ঞানের অন্বেষণ করতে পারি। এজন্যই মার্কো পোলো আমাদের যুগের এক পথপরিদর্শক। ‘মার্কো পোলোর ভ্রমনকাহিনী’ বইটি লেখার ১৭৫ বছর পর কলম্বাস আটলানটিক সমুদ্র পাড়ি দেবার পরিকল্পনা করেন। কলম্বাস ভেবেছিলেন তিনি মার্কো পোলো বর্ণিত জাভা, সুমাত্রা ও অন্যান্য পূর্ব ভারতীয় দীপপুঞ্জে পৌঁছেছিলেন। আসলে তা কিন্তু নয়। তার বদলে কলম্বাস ক্যারিবিয় সমুদ্রের হাইতি ও কিউবা আবিস্কার করেছিলেন। কাজেই কলম্বাসের আমেরিকা আবিস্কারের পিছনেও মার্কো পোলোর অবদানকে অস্বীকার করা যায়না।

মার্কো পোলো জীবনের শেষটা ভেনিসেই কাটিয়ে দেন। ১৩২৩ সালে মার্কো পোলো অসুস্থাবস্থায় শয্যাশায়ী হন। মার্কো পলো পরবর্তী সময়ে প্রচুর ধনসম্পত্তির অধিকারী হন। শয্যাশায়ী অবস্থায় তিনি তার সম্পত্তি স্ত্রী, তিন মেয়ে, চার্চ এবং আরো কিছু ধর্মীয় সঙ্গগঠনের নামে উইল করেন। মার্কো পোলোর মৃত্যুর সঠিক দিন তারিখ নিয়েও নানা মত প্রচলিত আছে। তবে অধিকাংশ ইতিহাসবিদের মতে ১৩২৪ সালের ৯ জানুয়ারী মতান্তরে ৮ জানুয়ারীর কোন এক সময় ইতালির ভেনিসে মৃত্যুবরণ করেন মার্কো পোলো। আজ এই পর্যটকের ৬৯৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। ইতালীয়ান পরিব্রাজক মার্কো পোলোর মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৬

মেমননীয় বলেছেন: Netflix এর Marco polo নামের সিরিজ দেখেছি। অনেক কিছু, অনেক ইতিহাস জেনেছি।

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:২৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ মেমননীয়
আমার ব্লগে স্বাগতম
সাথে থাকবেন আগামীতে
সেই প্রত্যাশায় শুভেচছা।

২| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: আমিও শ্রদ্ধা জানাই।
তবে একটা কৌতুক শেয়ার করতে চাই-

টিচার : শাহজাহান কে?
টিংকু : জানিনা।
টিচার : পড়া লেখায় মন দে, তাহলে জানবি।
টিংকু : স্যার, রিংকু কে?
টিচার : জানিনা।
টিংকু : আপনার মেয়ের দিকে মন দেন, তাহলে জানবেন!!

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:২৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: ফলাফল এই দাড়ালো যে
জানতে হল মন দিতে হবে
পড়াশোনায় মন।
তা না হলে কিছু্ই জানা হবেনা

জীবনটাা ষোল আনাই মাটি।
কথা কিন্তু খাটি@!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.