নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

খ্যাতিমান সংগীত শিল্পী, গীতিকার ও বংশী বাদক বারী সিদ্দিকীর ৬৫তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:১৯


ফোক গানের কিংবদন্তি গায়ক নেত্রকোনার কৃতি সন্তান বারী সিদ্দিকী। গান গাওয়ার পাশাপাশি গান লেখা, সুর কারা এবং সঙ্গীত পরিচালনায়ও তিনি ছিলেন অনন্য। আর বংশী বাদক হিসেবে তো তার তুলনা ছিলেন তিনি নিজেই। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে সংগীত পরিচালক ও মুখ্য বাদ্যযন্ত্রশিল্পী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বারী সিদ্দিকী মূলত গ্রামীণ লোকসংগীত ও আধ্যাত্মিক ধারার গান করতেন। সঙ্গীতকে ভালোবেসে জীবনভর গানের সঙ্গেই ছিলেন, শুধু গান নিয়ে ছিলেন। দীর্ঘদিন সংগীতের সঙ্গে জড়িত থাকলেও সবার কাছে বারী সিদ্দিকী সংগীতশিল্পী হিসেবে পরিচিতি পান ১৯৯৯ সালে। ওই বছর হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবিটি মুক্তি পায়। এই ছবিতে তিনি ছয়টি গান গেয়েছেন। বারী সিদ্দিকী মূলত অডিও অঙ্গনেই দাপটের সঙ্গে গান করেছেন। তার একক অ্যালবামগুলো হচ্ছে- ‘দুঃখ রইলো মনে’, ‘অপরাধী হইলেও আমি তোর’, ‘সরলা’, ‘ভাবের দেশে চলো’, ‘সাদা রুমাল’, ‘মাটির মালিকানা’, ‘মাটির দেহ’, ‘মনে বড় জ্বালা’, ‘প্রেমের উৎসব’, ‘ভালোবাসার বসত বাড়ি’, ‘নিলুয়া বাতাস’, ‘দুঃখ দিলে দুঃখ পাবি’। বারী সিদ্দিকী অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন। তার গাওয়া ‘শুয়া চান পাখি, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘সাড়ে তিন হাত কবর’, ‘পুবালি বাতাসে’, ‘তুমি থাকো কারাগারে’, ‘রজনী’, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘ওগো ভাবিজান নাউ বাওয়া’, ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো' প্রভৃতি গানের জন্য তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিত। তার এই গানগুলো আজীবনই মানুষের মুখে মুখে রবে বলে সঙ্গীতজ্ঞ অনেকেই বিশ্বাস করেন। কেননা "বারী সিদ্দিকী বাংলা গানের একটা ভিন্ন ধারা একটা ভিন্ন প্রকৃতি প্রবর্তন করতে পেরেছেন। তিনি তার গানের উপস্থাপনা, ও আবেগ দিয়ে মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করতে পেরেছেন এবং মানুষের বিবেককে শানিত করতে পেরেছেন।" আজ কিংবদন্তি শিল্পী বারী সিদ্দিকীর ৬৫তম জন্মদিন। ১৯৫৪ সালের আজকের দিনে তিনি নেত্রকোনা জেলায় জন্মগ্রহন করেন। খ্যাতিমান সংগীত শিল্পী, গীতিকার ও বংশী বাদক বারী সিদ্দিকীর জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন বারী সিদ্দিকী। বাবা প্রয়াত মহরম আলী ও মা প্রয়াত জহুর-উন-নিসা। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে বারী সিদ্দিকীই ছিলেন সবার ছোট। ছোটবেলায় বয়স যখন তিন কিংবা চার হবে সেই বয়সেই মা’র কাছে তার প্রথম শুনা গান ছিলো ‘শ্বাশুড়িওে কইয়ো গিয়া’। সেই গানের সুরই বারী’র মনে গেঁথে যায় ছোটবেলায়। যদিও তার পরিবার গানের পরিবার ছিলো না। মাত্র ১২ বছর বয়সেই নেত্রকোনার শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্তের অধীনে তার আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষ সহ অসংখ্য গুণীশিল্পীর সরাসরি সান্নিধ্য লাভ করেন। ওস্তাদ আমিনুর রহমান একটি কনসার্টের সময় বারি সিদ্দিকীকে অবলোকন করেন এবং তাকে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেন। পরবর্তী ছয় বছর ধরে তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমানের অধীনে প্রশিক্ষণ নেন। সত্তরের দশকে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাথে যুক্ত হন। ওস্তাদ গোপাল দত্তের পরামর্শে ক্লাসিক্যাল মিউজিক এর উপর পড়াশোনা শুরু করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামে ইতিহাসে স্নাতক পাশ করে তিনি জড়িয়ে পড়েছিলেন সংগীতের সাথে। তখন প্রথম তিনি নিজেকে বাঁশিবাদক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে বাঁশির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন ও বাঁশির ওপর উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে প্রশিক্ষণ নেন। নব্বইয়ের দশকে ভারতের পুনে গিয়ে পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে তালিম নেন। দেশে ফিরে এসে লোকগীতির সাথে ক্লাসিক মিউজিকের সম্মিলনে গান গাওয়া শুরু করেন। মূলত বংশী বাদক বারী সিদ্দিকী কথাসাহিত্যিক ও চিত্রনির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের প্রেরণায় নব্বইয়ের দশকে সঙ্গীত জগতে প্রবেশ করেন এবং অল্পদিনেই বিরহ-বিচ্ছেদের মর্মভেদী গনের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নেন। ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে বারী সিদ্দিকী হুমায়ূন আহমেদের ‘রঙের বাড়ই’ নামের একটা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে জনসমক্ষে প্রথম সঙ্গীত পরিবেশন করেন। ১৯৯৮ সালে হুমায়ূন আহমেদ শ্রাবণ মেঘের দিন নামের একটি ছবি নির্মাণ করেন। সেই ছবিতে ''শুয়া চান পাখি'' এবং ''আমার গায়ে যত দু:খ সয়'', ''পুবালি বাতাসের'' মতো গানগুলো গেয়ে সারাদেশে পরিচিতি পান বারী সিদ্দিকী। এরপর তিনি একের পর এক লোকগান গেয়েছেন। শ্রাবণ মেঘেরে দিন ছাড়াও রূপকথার গল্প, নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ, ও আমার দেশের মাটি এবং মাটির পিঞ্জিরা চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে হুমায়ূন আহমেদের রচনা ও পরিচালনায় নির্মিত শ্রাবণ মেঘের দিন চলচ্চিত্রে ৭টি গানে কণ্ঠ দেন। এর মধ্যে "শুয়া চান পাখি" গানটির জন্য তিনি অতিদ্রুত ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। একই বছর (১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে) জেনেভায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাঁশি সম্মেলনে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে তিনি অংশগ্রহণ করেন। এই উপমহাদেশ থেকে তিনিই প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। এটা ছিলো বাংলাদেশের জন্য এক বিরাট অর্জন। একজন গায়ক হিসেবে জনপ্রিয়তা পাবার আগে বারী সিদ্দিকী একজন বংশবাদক হিসেবে বাঁশি বাজিয়েছেন দু’দশক ধরে। কিন্তু গায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবার পর দেশের বাইরে বংশীবাদক হিসেবে তার সফর কমে যায়। কন্ঠশিল্পী হিসেবেই তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন। বারী সিদ্দিকী ১৯৮৬ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ফরিদা ইয়াসমিনের সঙ্গে। ২০১৩ সালে সিদ্দিকী ফেরারী অমিতের রচনা ও পরিচালনায় পাগলা ঘোড়া নাটকে প্রথমবারের মত অভিনয় করেন। এছাড়াও্ একই বছর( ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে) মাটির পিঞ্জিরা ছবিতে একটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেন বারী সিদ্দিকী। তবে অভিনয় করতেন নিতান্তই অনুরোধে এবং শখের বশে। নেত্রকোণা জেলা শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে কারলি গ্রামে তিনি বাউল বাড়ি নামের একটি আশ্রম গড়েছেন বারী সিদ্দিকী।

হৃদয় যে কথা বলতে চায়; সেটাই যেন বার বার গানে গানে বলে গেছেন বারী সিদ্দিকী। মানুষকে কাছে টানতে তিনি সুরকে করেছিলেন হাতিয়ার। মৃত্যুর আগেও তিনি নিজের গাওয়া গানের অ্যালবামের জন্য কাজ করেছেন। গত বছর (২০১৭) ১৭ নভেম্বর রাতে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এরপর তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়, তখন তিনি অচেতন ছিলেন। তাঁকে দ্রুত নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। অবশেষে ২৪ নভেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বারী সিদ্দিকী। হৃদরোগ ছাড়াও তিনি কিডনি জটিলতা ও ডায়াবেটিস রোগেও ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে আর অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আজ গুণী শিল্পীর ৬৫তম জন্মবার্ষিকী। বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার ও বংশীবাদক বারী সিদ্দিকীর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৫৪

আরজু পনি বলেছেন: আমার অনেক প্র‌িয় একজন শিল্পী।

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:২৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
দেশ বিদেশ তার অনেক ভক্ত শ্রোতা আছে।
ধন্যবাদ আরজু পনি মন্তব্য প্রদানের জন্য।

২| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৫৪

আরজু পনি বলেছেন: আমার অনেক প্র‌িয় একজন শিল্পী।

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:২৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আমারও।

৩| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: হুমায়ূন আহমেদ তাকে টেনে তুলেছেন।
উনার গান তার মুভিতে ব্যবহার করেছেন।

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:২৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
যথার্থই বলেছেন।
হুমায়ুন আহমদ এরকম
বহুজনকে টেনে তুলেছেন।
যেমন ড. এজাজ, এস আই টুটুল,
শাওন.............................

৪| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৩৭

হাবিব বলেছেন: আমার পছন্দের একজন মানুষ

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৫৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ হাবিব ভাই
আমারও খুব প্রিয় লোক সংগীত শিল্পী।
ইটিভিতে অনেক প্রোগাম করেছিলেন।
তখন কাছ থেকে দেখেছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.